নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময় যেখানে যেমন, তেমনি হতে চাই...

রোহান খান

আবারো ফিরে তোমাতে - ভালবাসার ছবি একেছে - জীবনের মাঝপথে আজ আমি বসে, জীবন এর আলো আজ অনেকটা বদলে গেছে - হারিয়ে নিজেকে।

রোহান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিক্স ফিফটিন (৬.১৫) টু জার্নি বাই বাস @ বিরম্বনা অব ৫ মিনিটের বেশী ঘুম:|

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২৭





সকাল ৫.৪০ থেকে ৫.৫৭ পর্যন্ত মিনিমাম ৬ বার এলার্ম দেয়া থাকে আমার ঘড়ি আর মোবাইল মিলে।একটা একটা করে বাজে আর আমি একবার করে তাকায় আবার ঘুমাই। এই করে করে লাস্ট ৫.৫৬ পর্যন্ত ঘুমাই। লাস্ট এলার্মটা একদমি বিচ্ছিরি/:)। ঠিক যেমনটা লাস্ট লস্ট ইন দি টাইম মানে শেষ বারের মত সময় হারিয়ে যাবার মত। কিন্তু আজ সকালটা ছিল একে বারে ভিন্ন। শনি ভর করেছিল :-*



আমার অফিসের লাস্ট বাস ছেড়ে যায় সকাল ৬.২৫ এ। আজ যখন ঘড়ির দিকে দেখছিলাম তখন চোখদুটো একটু বড় বড়ই হয়ে গেল। একি ৬.১৪ বাজে যে। এখন? একলাফে কম্বোলকে বেশিবল দিয়ে ধাক্কা দিয়ে তুলে দুই পা মেঝেতে ফেলে এক হাতে কম্পুটারের ভাঙা কেসিং এর উপর থেকে টুথপেস্ট আর ব্রাশ নিয়ে লাইট জালিয়ে টিভি অন করে দেখি ৬.১৬ হয়ে গেছে। এবার দরজার হাতল ঘুড়িয়ে দরজা খুলে পায়ে সেন্ডেল গজিয়ে ঘসতে ঘসতে খস খস আওয়াজ তুলে সোজা বাথরুমের আয়নায় নিজের উদ্ভব চেহারায় আবিস্কার করি। নিজেকে দেখেই নিজেই থমকে যাই আরে! এটা কে? লম্বা চুলের অধিকারী হওয়ায় চুল গুলোও নিজেকে আইন্স্টাইন দেখাতে সাহায্য করে।



এবার ১ মিনিট চলে যায় শুধু মাত্র ব্রাশ করতে।ঠিক যেন পেপসুডেন্টের এ্যাডের মত এ্যা এ্যা করে ব্রাশ করি তারপর পেছনের বাথটবে দাড়িয়ে শাওয়ারে ১-২ মিনিটে গোছল সেরে গামছা চিড়সাথী;)। দৌড়ে রুমের সামনে গিয়ে জুতোর র‌্যাক থেকে এক হাতে জোড়া জুতো নেই অন্য হাত দিয়ে দরজা খুলেই ভিজা গায়েই পান্ট পরি। পরে দেখি আন্ডার প্যান্টটা মিসিং:D তাই আবার প্যান্টখুলে মিসিং টাকে কিসিং করে জামা জুতা পরলাম। দেখি ৬.২১ হয়ে গেছে যাহ গাড়ি তো ৬.২৫ এ- ব্যাটা ড্রাইভার মোস্তফা (মিশরি) একদম টাইম টু টাইম গাড়ি ছেড়ে যায়। আর আমার ঘর থেকে গাড়ির স্টান্ডতক যাবার জন্য অন্তত মিনিমাম ৫ মিনিট লাগে। আজও মিস হবে বোধহয়। এরপর মোবাইল দুটো ডান পকেটে বাম পকেটে সিগারেটের প্যাকেট আর চাবির রিং আর মোজার মধ্যে লাইটার। ব্যাস ঘরজা লাগিয়ে ঘড়িতে দেখি ৬.২৩ হয়ে গেছে।



ড্রামবিটের হাহ সরি - হার্ডবিটের স্পস্ট শব্দ শুনতে পারছি। একদৌড়। একদৌড়ে গাড়ির ২০০ মিটারের মধ্যে পৌছালাম উদ্দেশ্য ব্যাক মিররে নিজের খোমাটা হাজির করার কারন তাহলে মোস্তফা একটু ওয়েট করবে। কিন্তু একি মোস্তফা দেখি গাড়ি গেয়ারে ফেলে টান দিয়েছে:((। আশা গুড়ে বালি হয়ে গেল। একটু এগুতেই যেন ভাগ্য নিজেকে ফিরে পেল মনে হল। ব্যাটা মোস্তফা আমাকে বোধহয় ব্যাক মিররে দেখেছে ফলে গাড়ি ব্যাক গেয়ারে পেছনে আনছে:|। ঘড়ির দিকে তাকালাম দেখি ৬.২৬ হয়ে গেছে। মানে আমি এখানে মাত্র তিন মিনিটে পৌছালাম। নিজেকে কেমন যেন জেমস বন্ড ০০৭ মনে হল :P



যাই হোক। গাড়িতে উঠেই এবার চোখ ছানাবড়া। পুরা গাড়ির লোকজন আমার দিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। যেন মনে হচ্ছে হয়ত আমি কোন বড় অপরাধী যেমন খুনী বা আমি প্যান্ট ছারাই আন্ডার প্যান্ট আর টাই পরেই বাসে এসে উঠেছি। সামনে সিটের একজন পেশায় আমাদের প্রজেক্ট ম্যানেজারে ড্রাইভার তো বলেই বসলো মুদির মুদির ( আরবিতে মুদির বড়লোকদের বলে ) বলে চেচিয়ে উঠলো B-)। কিন্তু এসবের কোনকিছুই আমার দৃস্টি আকর্ষন করতে পারলো না কারন চেয়ার একটাও খালি খুজে পাচ্ছিলাম না।



কিন্তু তিন নাম্বার সিটের মাত্র একজন লোক বসা ছিল। বাংলাদেশী । নাম হুমায়ুন কাদের সাহেব। যদিও তাকে 'কেকে' নামেই সবাই বেশী ডাকে। কি মনে করতেছেন হুমায়ুন কাদের তো হবে এইচকে তবে এই কে কে কেন? হাহাহা। বলে দিচ্ছি। ইনি আমাদের একবন্ধুর কাকা হন। তাই উনাকে অনেকেই কাকা ডাকেন। কাদের কাকা মানে 'কেকে' - বোঝা গেছে ব্যাপারটা। যদিও আমি ভাই বলেই সম্মোধন করে থাকি। যাই হোক আমি কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে পারছিনা পুরা বাসের সব ছিট ভরে গেল আর উনার টা কেন খালি। তারপরেও আর কিছু না ভেবে পাশে গিয়ে বসে পরলাম।



তিনসিটের চেয়ার। উনি মাঝখানে বসে ছিলেন। আমার অস্তিত্ব টের প্যায়ে একটু সরে বসলেন। আমিও বসে ভাবছি কোন কারন তো অবশ্যই থাকবে। বেশীক্ষন আর অপেক্ষা করতে হল না। কারনটা পেয়ে গেলাম। আমার ঠিক মাথার উপরি বাসের এসির আউটকন্ট্রোলার ভাঙা। হুর হুর করে ঠান্ডা বাতাস আসছে। এখন কি করবো। এখন তো বসেই পরেছি। উঠে তো যেতে পারবো না। সবাই কি বলবে বোকা বোকা। আর উঠে যে যাবো বাসে তো একটা সিট ও খালি নেই। অগত্যা ওখানে ২৫ মিনিট কিভাবে কাটাবো তার ইন্তেজাম করতে লাগলাম।



একবার এদিকে তো আরেক বার ওদিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে নানা ভাবে চেস্টার ফল পেলাম সেটা হল আগামী দিন থেকে আর কোন দিনও ৫.৪০ বাজার পর ৫ মিনিটের বেশী ঘুমাবো না। কানে ধরলাম আর মনে মনে বললাম আল্লাহ এ যাত্রায় আমারে এই সক্কাল বেলার ঠান্ডা ঠাডা থেকে বাচিয়ে দেও। কাজ হলনা। যত বাসে স্পিড বাড়ছে মনে হল ঠান্ডাও বাড়ছে। আর ওদিকে 'কেকে' উনি তো গন্ধরাজ হ্যারিকেন তেল মাথায় দিয়ে ঘুমাচ্ছে।



একটু চেপে বসলে আমি ঠান্ডা থেকে হয়ত কিছুটা হলেও বাচতে পারতাম। সিকিউরিটি চেকিংক এ যখন পৌছালাম আমি তো পুরা বরফX(। কোন রকমে গলে গিয়ে বাস থেকে নেমে চেকিং পার করে অফিস। ব্যাস। সরাসরি কিচেন। একটা ক্যারামেল ফ্লেভার্ড কেক (যা আমার প্রতিদিনের পছন্দের) নিয়ে কিচেনে বসে খেতে লাগলাম। মনে মনে পন করলাম " আমি শপথ করিতেছি যে আমি দেশের সার্থ রক্ষা ও ...........। আর এও শপথ করেতেছি যে বাস টাইমের অন্তত ৪৫ মিনিট আগে ঘুম থাকে উঠবো।



এরি মাঝে 'কেকে' এসে হাজির। উনি সিধা বেসিং এর কাছে গিয়ে নিজের গ্লাসটা ধুতে ব্যাস্ত। এর মাঝে অফিসবয় আসলো। ও আসলে বাইরে ছিল চা বিতরনের কাজে।ওদিকে কাদের ভাই ও ব্যাস্ত আর এছাড়া অত্তন্ত ভদ্রলোক তিনি। প্রতিদিনিই সকাল বেলা আমি এভাবেই এখানে বসে কেক আর চা খাই, উনিও আসেন আর নিজের গ্লাস মেজে নিয়ে নিজের রুমে চলে যান। পেশায় দক্ষ টেলিফোন অপারেটর। বিদেশে বাংলাদেশী টেলিফোন অপারেটর হওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার না। ইংরেজি ভালো জানতে হয়। উপস্থ্যিত বুদ্ধি সহ স্মার্ট আর এক্টিভ থাকতে হয়।



তো ভাই সাহেব দেখি আজ মাজতেছেন তো মাজতেছেনেই। আজকে মাজা আর শেষ হয় না। প্রত্যেকটাদিনি অফিসে এসে নিজের গ্লাস নিজের হাতে মাজলেও টাইমিংটা কিন্তু ১-২ মিনিটের বেশী হয়না । আজ দেখি পাক্কা ৫ মিনিট পার হয়ে গেছে আর এখনো উনি মেশিন চালাতে ব্যাস্ত। আমার খাওয়া হয়ে গেছে। তার পরেও বসে আছি। দেখলাম যে উনি উনার গ্লাস ধুবার পরে ওখানে রাখা প্লেট কাপ এসবও ধুয়ে দিচ্ছেন। দেখে আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। একটু র‌্যাগিং করার জন্য উদ্দত হলাম। বললাম ভাই কি আগের কাম ছাইড়া দিয়া এই কাম লইছেন। কথাটা বলে না আমি নিজেই লজ্জিত হলাম। উনি বল্লেন না ভাই প্রতিদিন সকালেই একটা ভালো কাজ করতে চাই। আজ গ্লাস ধুতে এসে এখানে ব্যাবহিত কাপ্লেট দেখে হাত লাগালাম। অন্তত আজকের ভালকাজটা তো করতে পারলাম।।



আমার মন থেকে তার জন্য অজান্তেই সালাম বের হয়ে গেল। আসলেই আমরা সবাই যদি প্রতিদিন একটা ভালো কাজ করার মন মানসিকতা নিয়ে ঘুম থেকে উঠি তাহলে আমার দেশে ১৬ কোটি জনগন কতগুলো ভালকাজ করতে পারবো চিন্তা করুন। 'কেকে' যদি দেশ থেকে দুরে থেকে নিজ দেশের কলিগকে সাহায্য করতে পারে তাহলে আমরা নিজ দেশে থেকেও কেন তা করতে পারি না। কেন একটা রাজনৈতিক দল আরেকটা রাজনৈতিক দলের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারিনা।কেন আমরা আমাদেরি প্রতিবেশীদেরি খুন করি বা তাদের মেয়েদের ধর্ষন করি বা তাদের ছেলেদের জন্য মরন নেশা আমদানি করে তাদের হাতেই তুলে দেই। আরে ! আমরা সবাই তো বাংলাদেশী।



বাংলাদেশী ছাড়া তো কোন পাকিস্তানি নেই যে তাদের সাথে আমাদের শত্রুতা। নিজেরা নিজেদের শত্রু কিভাবে, কবে থেকে, কি কারনে, কত দিন থেকে? কেন কেন কেন ? আমরা আসলে সব পারি। শুধু পারি না দৃস্টি ভংগি বদলাতে যেমনটা পেরেছেন আমাদের হুমায়ুন কাদের ভাই। নিজের অজান্তেই তার দিকে স্যালুট দিলাম। আর গর্বো করলাম তিনিও আপনার বা আমার মত মানুষ হয়েও একটু আলাদা মন মানসিকতার একজন বাংলাদেশি বলে।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২০

হেডস্যার বলেছেন:
মাঝখানে আমি ও কয়েক সপ্তাহ প্রত্যেকদিন একটা করে ভালো কাজ শুরু করছিলাম।

লেখা ভালো হইছে। +

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২২

রোহান খান বলেছেন: ধণ্যবাদ ভাই।

২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৩৭

আমাবর্ষার চাঁদ বলেছেন: প্রতিদিন ১টা করে ভাল কাজ.................. চেষ্টা করি কিন্তু ভুলে যাই
কাহিনিটা ভালই..........

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪১

রোহান খান বলেছেন: এটা কাহিনি বললে ভুল হবে। আজকের সকাল বেলার ঘটনা যা সত্যি ।

৩| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৯

টুম্পা মনি বলেছেন: B:-) B:-)

একটু প্যারা প্যারা করে লিখলে আমার মত নগন্য পাঠকদের পড়তে এক্ট্রু বেশি সুবিধা হয় আর কি! :|| :||

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৬

রোহান খান বলেছেন: আপনি কি লেখাটা পড়েছেন নাকি ছেড়েদিয়েছেন সেটা বলুন। আপনার কথিত উপদেশ তদন্ত শেষে গ্রহন করা হইল।

৪| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৯

শুক তারা বলেছেন: সুন্দর উপলব্ধি :)

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৭

রোহান খান বলেছেন: ভালোলাগলো শুকতারা।

৫| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৯

মাহতাব সমুদ্র বলেছেন: দারুন লেখা। আরো লেখা চাই.।।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৭

রোহান খান বলেছেন: মাহতাব ভাই আপনার কমেন্টাও দারুন। এমন কমেন্ট এরকম লেখা লিখতে প্রেরনা যোগায়। ভাল থাকবেন।

৬| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৫

টুম্পা মনি বলেছেন: হু পড়েসি। সুন্দর লিখসেন।

আসলে ভাবতেসিলাম বান্দর ভাইকে একটু জ্বালাই আসি। আপনাকে জ্বালায় মজা পাই।

:#) :#)

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৮

রোহান খান বলেছেন: আপনার জ্বালানোটা আমারো বেশ মজা লাগে..... বিশেষ করে বেশী ভালোলাগে জ্বালানোর জন্য ব্যাবোহিত চশমাপড়া ইমোটা। জালাতেই থাকুন আর রবি সংযোগ ব্যাবহার করে জ্বলে উঠুন আপন শক্তিতে।

৭| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩১

কক্ষ পথের শেষ ইলেকট্রন বলেছেন: ভাবছি আজকে থেকে একটা ভাল কাজ করব।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৫

রোহান খান বলেছেন: যাক আমার অর্ন্তনিহিত শক্তি অন্তত একজনের আহবানের সারা পেয়েছে। কিন্তু আশা ছিল অনেক। এ পর্যন্ত ১৩৩ বার হিট পরেছে লেখাটাতে। কমসে কম একশ মানুষকে যদি এ চিন্তাশক্তি দারা চিন্তিত করতে পারতাম তাহলে আমার কস্টটা সার্থক হত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.