নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেমিকার চিরশত্রু
"যখন কৃতকর্মের ফলাফল বাজেভাবে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে, যেন মনে হয় প্রতিটি কৃতকর্ম একেকটা মানুষ এবং সকল মানুষ আমার পুরো শরীরের বিভিন্ন অংশের দিকে বন্দুক তাক করে রেখেছে এবং আমার হাত উঁচু করে ও হাটু গেড়ে বসে পরা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই! তেমন অসহায় আজ নিজেকে মনে হচ্ছে। প্রিয় দুধ চায়ের কালার আজ এত সুন্দর এবং লাইটার ও কয়েকটা সিগারেট সামনে রাখা তবুও দু'হাত কোনোটাই নিতে বা ছুঁতে চাচ্ছে না! চা বানিয়েছি নিজে, সিগারেট কিনলাম নিজে তবুও নিজেই ধরছি না তাদের! আহ ওসি কামাল, কি দিন এল তোমার! এত বছর কাটিয়ে দেয়া সময়কে মাত্র একদিন মনে হচ্ছে আর যে বিপদ সামনে আসছে তার সময়কে অনন্তকাল মনে হচ্ছে! ভাবনা চিন্তায় ঢুকেছে এলাহি এবং রাজীনকে দেয়া টাস্ক। ঠিকমত করতে পারবে তো?"
রুমে এসে ফাইলটা খুললো রাজীন। তিন চারটা ভাজ করা একটা নীল কাগজ বের হল। ভাজ খুলতেই দেখলো বিল্ডিংটার ডিজাইনের কাগজ এটা। প্রতিটি ফ্লোরের ডিজাইন দেয়া আছে এবং রাজীন ভালভাবেই দেখা শুরু করল। অন্যান্য কাগজ পড়ে দেখলো এবং খুবই সুন্দর ভাবে বর্ণনা দেয়া আছে কেসটা নিয়ে৷ শুধু দরকার টীম মিটিং এর! এভাবেই কেটে গেল প্রথম সপ্তাহ।। রাজীন এবং এলাহি কয়েক দফায় কনফারেন্সে কেস স্টাডি করেছে। সোর্সদের সাথেও যোগাযোগ করে নিয়েছে। এলাহি জানালো, "তানজিলের পরিবারের কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না!" রাজীন বলল, "খোজ নিয়েও কিছু হবে না যদি স্পটে তানজিল না থাকে? আমাদের সিচুয়েশনে হল ক্রিকেট ম্যাচের লাস্ট বলে সাত রান দরকার এর মত! নো বল হবে কিনা জানি না।" এলাহি বলল, "আমাদের আরও কয়েকজন লোক লাগবে রাজীন, বাহিরের ফিডব্যাকের জন্য৷ নিম্নে একজন ড্রোন অপারেটর! পেট্রোলিং এর জন্য।"
রাজীন বলল, "আমার কোনো বিশ্বস্ত লোক নেই! তোর আছে?" "আছে কিন্তু সমস্যা হল এলাকার! ফলো করলেই ধরা!"
সোর্সদের উদ্দেশ্য বলল, "তোমরা এমন কাউকে এনে দিতে পারবে? অপারেটর স্যার, আপনার চেনাজানা বিশ্বস্ত কেউ আছেন?" এলাহির প্রশ্নে সোর্সরা আশা জাগাতে না পারলেও অপারেটর ঠিকই আশা জাগিয়ে রাখলো! রাজীন জিজ্ঞেস করলো, "বিশ্বাসযোগ্য হবে তো স্যার? কাকে আনবেন?" তিনি বললেন, "নিঃসন্দেহে! এবং আমার টিম থেকেই দুইজনকে আনবো।"
"আজ ড্রেসের জন্য মাপ নিয়ে গেল, এটা কি সেই পার্টির জন্য?" তানজিল জিজ্ঞেস করল। আনিকা উত্তর দিল না বরং জিজ্ঞেস করলো, "আচ্ছা ধরে নে আমরা ওখান থেকে পালাতে পারলাম না, মরে গেলাম! কেমন কষ্ট হবে? কেউ কি কষ্ট পাবে আমাদের জন্য? মৃত্যুর কারণ কি হবে?" তানজিল ঘাবড়ে গিয়ে বলল, "এমনটা বলছেন কেন?"
"বাঁচার কোনো অপশন রাখিস নি!! বেঁচে গিয়ে কোথায় যাবো?" তানজিল জানালো, "আমি মা বাবার কাছেই যাবো, তারা আমাকে কোনোদিনও অবিশ্বাস করবে না! আপনিও যাবেন আমার সাথে, একা ছাড়বো না আপনাকে।" আনিকার চোখ বেয়ে কিছুটা পানি ঝরা শুরু হল৷ একটুপর বলল, "বারবার ওই দৃশ্য আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে! বাবার মৃতদেহ! পাশে আহাজারি করা ফুফুরা, আমার দিকে তেরে আসা বাকি আত্মীয়স্বজন! তাদের প্রহার, অপমান! আমার প্রেমিক আদনান তার নতুন প্রেমিকার সাথে এবং তাদের গালিগালাজ!" তানজিল আনিকাকে জড়িয়ে ধরে বলল, "ভুলে যান সেসব প্লিজ, আমরা কিছু একটা করে খাবো৷ ভরসা রাখেন নিজের উপর৷" আনিকার গাল বেয়ে ঝরতে থাকা অশ্রু আর তানজিল অপেক্ষা যেন থামছেই না!
"ড্রেস এসে গেছে?"
"দেখতো আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?" এলাহির প্রশ্নে পালটা প্রশ্ন রাজীন জিজ্ঞেস করলো।
"আজকেরই দিন এটা, খুবই ভাল হতো যদি এটা অফিশিয়াল মিশন হতো!" এলাহি জিজ্ঞেস করলো, "সোর্স, তোমাদের বারবার তো সোর্স বলে ডাকা যায় না, নামগুলো জানতে পারি?"
"আমি টগর, আর ও হল টিপু।"
"অপারেটর স্যার, আপনার নামটা জানতে পারি যদি কিছু মনে না করেন?" রাজীন প্রশ্ন করল।
"নুরুল আফসার। হেড নেটওয়ার্ক কনসালটেন্ট।"
"এবং আপনার টিম?" এলাহির প্রশ্নে তিনি বললেন, "তারা ওয়েট করছে, কেয়া এবং নাঈম!"
বিকেল ৫টা,
নভেম্বরের শেষদিক, দিন একেবারেই ছোট। টিভি চালিয়ে ব্রেকিং নিউজ দেখতে পেল রাজীনের টিম। ওসি কামাল গ্রেফতার! তালুকদার সাংবাদিকদের সামনে বললেন, "রাষ্ট্রীয় ছায়ায় আছেন বলে আপনি যা ইচ্ছা করবেন, সেটা তো মেনে নেয়া যায় না! আশা করবো প্রশাসন দ্রুত ওসি কামালের মামলায় রায় জানাবেন।" এলাহি বলল, "রাজীন, আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এরা ক্ষমতায় আসার পর যত ঘটনা ঘটেছে সবই এদের সাজানো নাটক!"
"হতে পারে, টিভির পর্দায় এসব ধরা যায় না।"
এমন সময় অপারেটর এল৷ রাজীন জিজ্ঞেস করলো, "আমাদের জন্য কমিউনিকেশন চ্যানেল তৈরি করেছেন?" রাজীন প্রশ্নে তিনি উত্তরে বলল, "আরও কয়েক মিনিট লাগবে। তারপর আপনারা বের হতে পারেন।"
"ওখানে নেতাদের পূর্বে আমাদের পৌছাতে হবে কিন্তু তার আগে আমাদের স্টাফ এজেন্সিতে পৌছাতে হবে।"
"এইযে রেডি!"
সবাই গ্যাজেট কানে পরে নিল। অপারেটর সবকিছু চেক করে তাদের বের হওয়ার অনুমতি দিলেন।
"টগর এবং টিপু, আগে আগে বের হও আর মনে আছে তো ওয়াকিটকি কিভাবে ব্যবহার করতে হয়?" "জি স্যার!"
"এলাহি, আয় আমার সাথে।" এই বলে সবাই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বের হয়ে গেল৷
"গুড লাক!" জানালো অপারেটর।
গার্ডের পোষাকে টগর এবং টিপু নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই হাজির হয়ে নিজের ছদ্মনাম রেজিস্টার খাতায় লিখে নিল। সিকিউরিটি লিড তাদের পজিশন বলে দিল৷ ঠিক সেই গেট যেটা তাদের জন্য এক্সিট পয়েন্ট! দুজনকেই দুটো ওয়াকিটকি দিলেন লিড।
"গার্ড ৬, ইন পজিশন.." "গার্ড ৭, ইন পজিশন.." টগর ও টিপু ওয়াকিটকির মাধ্যমে সিকিউরিটি কন্ট্রোল রুমে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করলো এবং সেই সাথে রাজীন ও এলাহি জেনে নিল।
"জায়গাটা অনেক বড় এবং গাছগাছালি দিয়ে ভরা! আমরা অনেক হাইডিং প্লেস পাবো।" এলাহির কথায় রাজীন জানালো, "কম্প্রোমাইজড হয়ে গেলে হাইডিং স্পেস শুধু আমরা না, যারা আমাদের ধরতে আসবে তারাও পাবে, তাই যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।"
এলাহি বলল, "তাদের এখানে আসতে প্রায় দুই ঘন্টা বাকি আছে! সব ওয়েটার ঘুরাঘুরি করছে, চল আমরাও ভিতরে আর বাইরে ঘুরে ঘুরে দেখে আসি?" "ঠিক চল!"
রাত ৭টা,
সমস্ত ওয়েটাররা এক সারিতে মেইন এন্ট্রান্সে দারিয়ে আছে। রাজীন নিজ স্থান থেকে হালকা একটু দূরে দাঁড়ালো। একে একে কয়েকজন মেয়ে বের হল। রাজীন দারিয়ে তানজিলকে খুঁজছে কিন্তু ছবি এবং বর্তমান সাজসজ্জায় তানজিলকে চিনতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে! একে একে সবাই বের হল কিন্তু তানজিলকে দেখা গেল না!"
"মনে হচ্ছে তানজিল নেই!" এলাহি বিরবির করে বলল। সবাই যে যার স্থানে চলে গেল। রাজীন বলল, "অপারেটর, কাম ইন!"
"ইয়েস, অনলাইন, এখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাক৷"
রাজীন এবং এলাহি রিসোর্টের এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন সময় কানে এল, "কেয়া বলছি, তিনটা গাড়ি দেখা যাচ্ছে। আপনাদের থেকে প্রায় ৬০০মি দূরে।"
"রজার! অপারেটর, মাইক্রো রেকর্ডার প্লেস করা হয়েছে। এলাহি, এলার্ট!"
গাড়ি গেটে ঢুকলো। ওয়েটাররা দুই সারিতে দারিয়ে গেল। ২য় সারির দুই প্রান্তে রাজীন আর এলাহি দারানো। এক এক করে ভিআইপিরা বের হচ্ছে। এলাহি দেখলো বারী গাড়ি থেকে নামলেন এবং সাথে রাসেলও। চুপচাপ থেকে গেল এলাহি, কোনোরকম ইশারা দিল না রাজীনকে। সবাই নেমে গেলে এলাহি বলল, "তানজিলকে পাওয়ার সম্ভবনা আছে, বারী এসেছেন, সাথে রাসেল!"
"আরে বারী সাহেব!! কতদিন পর আপনার সাথে দেখা!" এই বলে বারীকে জড়িয়ে ধরলো কানন ওরফে বন্ড! রাসেলকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, "কেমন আছো নেতা?" "তোর কি অবস্থা এটা বল" রাসেলও জিজ্ঞেস করলো। বারী তাদের আয়োজন দেখে অবাক হয়ে গেল এবং বললো, "বাহ রে বাহ! বেশ কড়কড়া আয়োজন করেছিস দেখছি!" বন্ড বেশ তৃপ্ত মনে বলল, "ব্যস আপনার হাত যতক্ষণ মাথার উপরে আছে, আমার আর কোনো চিন্তা নাই! ওহ হো বারী সাহেব, আপনার জন্যেই একটার সাথে আরেকটা ফ্রি অফার রেখেছি! আপার ফ্লোর, রুম ডি ওয়ান! কিন্তু তার আগে সবার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে নেন!" এই বলেই হাসতে হাসতে তারা বাকিদের সাথে সাক্ষাৎ করতে চলে গেলেন।
রাজীন এবং এলাহি ট্রেতে ড্রিংকস নিয়ে একেকবার একেকজনের কাছে যাচ্ছে কিন্তু বারী এবং রাসেলের দিকে যাচ্ছে না। এরমধ্যেই যতটুকু নজরে রাখা যায় ততটুকুই করছে। রাজীন কিছুক্ষণের জন্য ওয়াশরুমের দিকে গেল যেটা স্টাফদের জন্য এবং আলাদা সাইডে। নিচু স্বরে বলল, "Operator, come in", ওপাশ থেকে উত্তর এল, "yes..."
"Any update?" আফসার বললেন, "Copying data, hang on..." কিছুক্ষণ পর কেয়া বললো, "Drone view update and be advised, multiple vehicles are heading towards your location!"
এলাহি জিজ্ঞেস করলো, "আরও কেউ আসার কথা ছিল নাকি?"
রাজীন কিছু বুঝতে পারছে না! "টগর, টিপু এলার্ট থাকো! আরও কেউ আসছে! রিপ্লাই করার দরকার নেই!"
"Got it! মনে হচ্ছে একটা ক্লু দিতে পারবো! রুম নাম্বার ডি......" আফসার হতে আর কোনো আওয়াজ এল না! রাজীন ধীরে ধীরে বলল, "Operator, do you copy?" কোনো উত্তর এল না! আরও দুই তিনবার জিজ্ঞেস করলো কিন্তু উত্তর এল না! এবার বাকীদের জিজ্ঞেস করলো, "Keya, come in! Elahi!! Togor!! Tipu!!" বারবার জিজ্ঞেস করার পরও কোনো উত্তর দিল না কেউ! রাজীনের মনে অজানা একটা ভয় জমা হতে শুরু করেছে! স্বাভাবিক ভাবে ওয়াশরুম এরিয়া থেকে বের হল। বাইরে বেরিয়ে দেখে সবই স্বাভাবিক! কিছুক্ষণপর এলাহিকে দেখতে পেল। এলাহি দূর থেকে ইশারা করলো সেও কিছু শুনতে পাচ্ছে না! তারা দুজনই বুঝে নিল কিছু একটা ঘটতে চলেছে! এমন সময় দুইটা সাউন্ড গ্রেনেড এবং তিনটা ফ্ল্যাশব্যাং পরলো। এলাহি দেখতে পেলেও রাজীন খেয়াল করে নি কোথায় পরেছে! দুজনই লাফিয়ে সরে গেল। আকস্মিক আওয়াজে কানে শুনতে পাচ্ছিল না কেউই! একটুপর তাকিয়ে দেখলো গোলাগুলি চলছে! কোনমতে নিজেকে একটা সেফ জায়গায় নিল রাজীন। এলাহি এসে বলল, "ঠিক আছিস?" রাজীন কিছুটা ভারসাম্যহীন! এলাহি ওর চোখে কিছুটা পানি ছিটিয়ে দিল। রাজীন বলল, "একটা রুম নম্বর..." "হ্যা আমিও শুনেছি কিন্তু পুরোটা শুনতে পাই নি!"
রাজীন স্বাভাবিক সেন্সে ফিরে এসে বলল, "রুমগুলো খুজতে হবে! আগে বল বারী কোথায়?" এলাহি বলল, "জানি না!"
"বাদ দে, হাতে সময় অনেক কম! চল ডি নম্বর রুমে!"
গোলাগুলি চলছেই! দ্বিতীয় তলায় এসে দেখে ডি দিয়ে তিনটা রুম! দুইজন দুই রুমের দরজা ভেঙে ঢুকার চেষ্টা করলো। কয়েকবারের চেষ্টায় দরজা ভেঙে গেল! রাজীন রুমে ঢুকে দেখে একজন লোক! কাছে যেতেই দেখে বারী ভিতরের আরেকটা দরজা খোলার চেষ্টা করছে! রাজীন সরাসরি গিয়ে বারীকে টেনে ফ্লোরে ফেলে দিল! যেভাবে পারে কিল ঘুষি লাথি মারা শুরু করলো! বারী মেঝেতে পরে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। রাজীন দরজার সামনে গিয়ে বলল, "কে আছেন ভিতরে? বের হয়ে আসুন। সেফ এখন!" ভিতরে থাকা কেউই উত্তর করছে না! রাজীন আবারও বলল, "আমি পুলিশ, বের হয়ে আসুন, অপরাধী হলে সারেন্ডার করুন আর নিরাপরাধ হলে কোঅপারেট করুন। প্লিজ বাইরে আসুন!" গুলির আওয়াজ চলমান। রিসোর্ট বেশ বড় এবং গার্ডের সংখ্যাটাও অনেক। নিচে কি হচ্ছে এটা জানা নেই রাজীন এবং এলাহির! একটুপর দরজার লক খুললো, ভেতর থেকে বেরিয়ে এল একজন মেয়ে! রাজীন দেখতে পেল ভয়ে তার হাত পা কাঁপছে! এমন সময় আরেকজন ভিতরে ঢুকলো। রাজীন দেখলো এটা রাসেল! সজোরে এসে লাথি মারলো রাজীনকে! কয়েকটা ঘুষি মারলো কিন্তু রাজীন ঠেকাতে পারলো না! লুটিয়ে পরে গেল মেঝেতে! "দাদা, উঠো! এদের পরে দেখে নেব। চল পালাতে হবে!" রাসেল বারীকে নিয়ে বের হয়ে গেল৷ মেয়েটা এসেই রাজীনকে ধরে তুললো! "অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।" রাজীন বলল।
এলাহি দরজায় এসে বলল, "চল আমরাও বের হই, ওকে পেয়ে গেছি!" রাজীনের মুখে হালকা হাসি ফুটলো। রাজীন অচেনা সেই মেয়েকে বলল, "আপনাকে এখানে রেখে গেলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। তাই চলুন আমার সাথে!" মেয়েটা কিছু বললো না, বের হয়ে গেল রাজীনের সাথেই।
রাজীন এবং এলাহি বারবার চেষ্টা করে যাচ্ছে বাকিদের সাথে যোগাযোগ করার কিন্তু পারছে না! দেয়াল ঘেঁষে ধীরে ধীরে আগাতে লাগলো বাহিরের গেটের দিকে এলাহি ডানে বামে তাকিয়ে গেট বরাবর গেল। রাজীনকে ইশারা করলো ওর কাছে যাওয়ার জন্য। গেটের কাছে যেতেই দেখে কে যেন মাটিতে পরে আছে! এলাহি কাছে যেতেই দেখলো এটা টিপু এবং পায়ে ও হাতে গুলিবিদ্ধ! বেশি দেরি না টিপুকে কাধে তুলে নিল সে। রিসোর্টে এখনও গুলির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে! রিসোর্ট থেকে বের হয়ে খানিকটা দুরেই এল তারা। এলাহি বলল, "একটা গাড়ি থাকার কথা কিন্তু নেই! কেয়া আনবে বলেছিল!" এলাহি তার কাধ থেকে টিপুকে নামিয়ে নিল৷ কিছুক্ষণ পরই জ্ঞান ফিরল টিপুর! রাতের আধারে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। রাজীন টিপুকে জিজ্ঞেস করলো, "টগর কোথায়?"
"একসাথেই ছিলাম কিন্তু গুলির আওয়াজে সে গাড়ির দিকে দৌড় দিয়েছে মনে হয়।"
একটুপর তাদের দিকে একটা গাড়ি এল। রাজীন সংকেত দিল এবং গাড়ির হেডলাইটের মাধ্যমে ফিরতি সংকেত পেয়ে নিশ্চিত হল এটা কেয়া এনেছে! সবাইকে গাড়িতে নিয়ে রওনা হল তারা! রাজীন টগরকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, "আরে টগর গাড়িতে? আর কেয়া, আমরা কারো কথা শুনতে পাচ্ছিলাম না কেন?"
"কিভাবে শুনবেন স্যার? জ্যামার বহনকারী গাড়ি ছিল, আশেপাশের ২০০-৪০০ মিটার এলাকার যাবতীয় নেটওয়ার্ক ব্লক করেছে। আমার ড্রোনটাও ক্ষতিগ্রস্ত তবে উদ্ধার করতে পেরেছি৷" কেয়া জানালো। এলাহি বলল, "আমাদের এই এড্রেসে নিয়ে যান প্লিজ! এবং যাত্রাপথে কোনো ক্লিনিক পরলে থামাবেন। টিপু আহত!"
রাত ১১টা,
ক্লিনিকের সামনে রাজীন এবং টিপুকে নামিয়ে দিল কেয়া। মোবাইল হাতে দিয়ে রাজীন বলল, "তাড়াতাড়ি আসবো, চিন্তা করিস না!"
কেয়া আবার চলতে শুরু করলো। এলাহি জিজ্ঞেস করলো, "অপারেটর স্যার কি ডেটা পেয়েছেন?"
"জানি না! যদি ওখানের কেউ ডিভাইসগুলো না পায় এবং জ্যামার চলে যায় তবে রেকর্ডিং পাওয়ার সম্ভবনা আছে! কিন্তু ওখানে এলো কারা?" এলাহি উত্তরে বলল, "জ্যামার ছিল তারমানে পুলিশের কোনো স্পেশাল ইউনিট! স্যোয়াট বা এটিইউ!"
পিছনের সিটে বসা তানজিল এবং আনিকা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে! তাকদির এভাবে সহায় হবে সেটা তাদের জানা ছিল না!
রাত ১টা,
বারীর কপালের আশেপাশে কেটে ছিড়ে গিয়েছে। রাসেল ধীরে ধীরে তুলা এবং স্যাভলন দিয়ে সেটা পরিষ্কার করে দিচ্ছে। বারী জিজ্ঞেস করলো, "রাসেল, আমাদের উপর এটাক কে করেছে বলে মনে হয়?"
"আমি জানি না দাদাভাই! রুমের হামলাটাও বুঝতে পারলাম না! তানজিল কোন রুমে ছিল?" রাসেল জিজ্ঞেস করলো।
"আরে রুমে যাবো তার আগেই তো গোলাগুলি শুরু হল! বন্ড তো বলেই রেখেছিল না?" রাসেল বলল, "দাদা, আর বেশিদিন এভাবে থাকতে পারবো না। তালুকদার আর হাওলাদার, এরা খুজে বের করবেই। চল যেভাবেই হোক দেশ ছাড়ি? সাথে বাকি হাত গুলোও নিই?" রাসেলের কথায় বারী বললো, "ঠিক আছে, টাকা রেডি আছে। যেভাবে পারিস ম্যানেজ করে নে।"
একই সময়,
এলাহির দরজার সামনে দারিয়ে রাজীন৷ এলাহি দরজা খুললো এবং রাজীন অবস্থা জিজ্ঞেস করবে তখনই দেখে এলাহি চোখ কিছুটা লাল হয়ে আছে!
"কিরে? সব ঠিকঠাক?"
এলাহি কিছু বলছে না! একটুপর বলল, "ভিতরে আয়!"
রাজীন তানজিলের সামনে বসলো, "আমাকে চিনতে পেরেছেন?" তানজিল অনেকক্ষণ ভেবে বলল, "আপনি রাজীন না কি যেন নাম?"
"হুম!" তানজিল কেঁদে ফেলল! বেশ কথাবার্তা হল তাদের মাঝে। তানজিল বলল, "উনি আমার সাথেই, আনিকা নাম। একসাথেই পালানোর প্ল্যান করেছিলাম৷ এবং অনেক ধন্যবাদ আপনাদের।" রাজীন আনিকার সাথেও বেশ কিছু সময় কথাবার্তা বললো৷
"তানজিল, আমার লক্ষ্য আপনাকে আপনার মা বাবার কাছে সহিসালামত পৌছে দিয়ে আসা। তো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে!" রাজীনের কথায় তানজিল কিছুটা অবাক হল! বলল, "আমি বাসা চিনি তো, আপনি কেন আর কষ্ট করবেন? এমনিতেই যা করেছেন এটাই শোধ করা সম্ভব নয়!"
রাজীন কিছুটা থেমে গিয়ে বলল, "আসলে তানজিল, আপনার মা বাবা বাসা ছেড়ে দিয়েছেন! এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন যা আমাদের জানা নাই!" একথা শোনার পর তানজিল আনিকার দিকে তাকালো! আনিকা কিছুই বললো না! আনিকার অভিজ্ঞতার কথা মনে হল তার! চোখ জোড়া ভিজে যাচ্ছে তানজিলের!
রাজীন বললো, "এলাকার মানুষের নানান কথা, আপনার আত্মীয়স্বজন, থানার বর্তমান ওসি ইত্যাদি মিলে পরিবেশ অনেক খারাপ করে ফেলেছিল। তাই যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার মা বাবার কোনো খোঁজ পাচ্ছি, আমি আপনাকে যেতে দিতে পারছি না। Please try to understand."
তানজিল কেঁদেই যাচ্ছে! আনিকা কিছু বলবে কিন্তু বলতে পারছে না! যা একটু আনন্দ কাজ করছিল মনে সেটাও ভয় আর হীনতায় রুপ নিয়েছে!
একটুপর এলাহি খাবার এনে তানজিল আর আনিকার সামনে রেখে দিল। আনিকার দিকে তাকিয়ে বলল, "খেয়ে নে!" আনিকা চুপ করে আছে! তানজিল জিজ্ঞেস করলো, "আপনি আনিকাকে চিনেন?"
এলাহি তাকিয়ে থাকলো আনিকার দিকে। আনিকা ধীরে ধীরে কেঁদে উঠলো আর সাথে এলাহি নিজের চোখও মুছে নিল। এলাহি বলল, "খেয়ে নে প্লিজ!" তানজিল কিছুই বুঝতে পারছে না! আনিকাকে জিজ্ঞেস করলো, "কিছু বলেন, উনি কে?" এলাহি খাবার সরিয়ে সামনে বসলো আনিকার। আনিকাকে বলল, "আমার কিছুই যায় আসে না, কোথায় ছিলি আর কি ই বা হয়েছে, প্লিজ এবার হারিয়ে যাস না!" তানজিল কিছুটা বুঝতে শুরু করেছে, তাই উঠে কিছুটা দূরে বসলো। এলাহি কাঁপছে আর আঙুল দিয়ে আনিকার গাল ছুয়ে নিল, মুছে দিল গাল বেয়ে পরা অশ্রু!
"কিছু একটা বল... তুই আজও তেমন আছিস যেমনটা আমি শেষবার দেখছিলাম আর সেটাই মনে ধরে আছি!" আনিকা যতবারই এলাহির দিকে তাকায় ততবারই কান্না বেড়ে যায়! এলাহি আনিকার হাতটা দুহাতে ধরে বললো, "আমি জানতেও চাই না অতীত! আমি ভাবিনি তুই এভাবে আমার কাছে আসবি! যেভাবেই এসেছিস, যেমনটাই আছিস আমি তেমনটাই নিবো! আজও ঠিক আগের মতই ভালবাসি!"
রাজীন ভিতরে এলো৷ চোখ মুছতে মুছতে রাজীনকে বলল, "তোর মনে আছে আমি একজনের কথা বলেছিলাম? এইযে ও হচ্ছে সে, গুলশান করিম আনিকা!" রাজীন এই সিরিয়াস মুহূর্তে এলাহির সিরিয়াস কথা মনে করতে পারছে না! মনে মনে বলল, "কবে যে বলছিলি নিজেরও মনে নাই!" এলাহি আবার ফিরে আনিকাকে বললো, "আমরা কালই বিয়ে করবো। আমি আর হারাতে পারবো না তোকে!" তানজিল অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো কিভাবে এতটা ভালবাসতে পারে কেউ! তানজিল পাশে এসে বলল, "আপনি আমাকেও বললেন নি!" আনিকা আর অপেক্ষা করল না, এলাহির দুইহাত নিজের দুইহাতে ধরে কপালে ধরে আবারও কেঁদে ফেললো এবং বললো, "সরি, ভুল হয়ে গেছে। ভুল মানুষকে চিনেছিলাম!"
রাজীন এলাহির কাধে হাত রেখে বলল, "ভাই এলাহি, আমি বুঝছি তোর কষ্ট, আবেগ...." তাকে কথা শেষ করতে দিল না, "কিসের কষ্ট? কোনো কষ্ট নেই! হৃদয় ভরে গেছে পূর্ণতায়!" রাজীন আবারও বলল, "আমাদের চারজনের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তাও বেশ জরুরী! বেশিদিন তো এভাবে থাকা যাবে না?"
এলাহি বলল, "আমার তাতে কিছু যায় আসে না, চাকরি ছেড়ে দিব, দিনমুজুরের কাজ করবো তাও আমি ওকে আমার থেকে দূরে যেতে দিব না!"
রাজীন বুঝতে পারছে এলাহিকে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই৷ ভয় হচ্ছে তার খুব! শেষমেশ বলল, "আচ্ছা ঠিক আছে, তোর কথাই। কিন্তু উনাদের পোশাকাদি চেঞ্জ করতে হবে না? কাল তাহলে কেনাকাটা করা যাক?" এলাহি বলল, "হ্যা করবো, তার আগে টিভি চালু কর, নিউজ দেখি, নেতাদের নিয়া কি বলছে।"
রাজীন টিভি চালু করে দেখলো রিসোর্টটা ব্রেকিং নিউজ হয়ে আছে! রাজীন ফোন বের করে আফসারকে কল করলো৷ উনি বললেন, "রেকর্ডিং সমস্তটা রিকভার করা যায় নি। গোলাগুলির আগ পর্যন্ত আছে এবং স্পটের ডিভাইসগুলো ব্ল্যাংক, কেউ কিছুই পাবে না। কিন্তু ডিভাইস পেলে সন্দেহ শুরু হবে কারণ এসব স্পেশাল ইউনিট এবং মিশন ছাড়া ওসব কারও কাছে থাকে না!" তারা আরও দেখলো মাত্র ছয়জন মেয়েকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং তিনজন নিহত! এলাহি আনিকাকে জিজ্ঞেস করলো, "কয়জন ছিল মোট?" "জানি না।" নিহতের কারও চেহেরা দেখালো না খবরে কিন্তু পোষাকের ধরণ দেখে তানজিল বলল, "এটা মনে হয় বন্ড! মারা গেছে!" আনিকাও কনফার্ম করে বলল, "হ্যাঁ, সেই৷ আসল নাম কানন।"
এলাহি তাদের বলল, "শোনেন, যদি কোনো কারণে আপনারা ধরা পরে যান, সহজে একটা কথাই বলবেন যে ক্যামেরার সামনে কিছুই বলবেন না এবং কেস-কোর্ট আর চাই না! আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আপনাদের আড়ালে রাখতে৷" এলাহি আবারও বলল, "রাত অনেক হয়েছে, দুইটা রুম এখানে। আমি ঘুমানোর ব্যবস্থা করছি। কোনোরকম রাত পার করি, সকালে নতুন প্ল্যান করবো।"
রাত ৩টা,
নির্ঘুম চোখ নিয়ে শুয়ে আছে আনিকা। অল্প করে বাইরে বাতির আলো রুমে ঢুকেছে। সাথে জেগে আছে তানজিলও। তবুও নিশ্চিত হওয়ার জন্য নিচু স্বরে আনিকা জিজ্ঞেস করল, "জেগে আছিস তানজিল?"
"এত কিছু ঘটার পরও এত নিশ্চিন্তে জেগে থাকি নি কত বছর!" এটা বলে সে আবারও জিজ্ঞেস করলো, "আপনি না বলেছিলেন আপনার বিশ্বস্ত ভালবাসাই আপনাকে ওই অবস্থানে পৌছে দিয়েছিল? উনিই কি সেই ব্যক্তি?" তার দিকে আনিকা একটু মুখ ঘুরিয়ে বলল, "এলাহি সেই ছেলে যাকে আমি কোনোদিনই পাত্তা দিতাম না! কিন্তু বুঝতে পারতাম সে খুবই ভালবাসতো আমাকে! আমি খেলতাম ওর অনুভূতি নিয়ে! স্টুডেন্ট খুব ভাল ছিল সে। আমার ওপর রাগ করেই সে কনস্টেবল পদে আবেদন করেছিল৷ যখন জেনেছি তখন খুব মজা করতাম, অপমান করতাম। এদিকে আমি যাকে ভালবাসতাম সে যে আমাকে নিয়েই খেলবে সেটা আমি জানতাম না। এলাহি সামনে থাকলে তাকে জালানোর জন্য আমি কত কি করতাম! দুই বছরে সে কম হলেও দশবার বলেছে আমাকে ভালবাসে! মারও খেয়েছে কয়েকবার!" একটু থেমে আবার বলল, "এসব আমার হাতের কামাই, কর্মফল। নারী স্বাধীনতার নামে আমাকে ডুবিয়ে দিয়ে দিব্বি আরামে ঘর সংসার করে বেড়াচ্ছে প্রাক্তনজন! আমার কিছু স্বপ্ন ছিল, লক্ষ্য ছিল যার কোনোটাই আর পুরণ হবে না! এলাহির কাছে বলার মুখ নেই আমার! অসহায় এবং পঙ্গু হয়েছি! কেন যে আবার দেখা হল!"
"যার জন্য আপনি এখানে তাকে সামনে পেলে কি করবেন?" তানজিল জিজ্ঞেস করল।
স্বাভাবিক উত্তরে বলল, "তাকে আমি দেখতেও চাই না, কিছু বলা তো দুরের বিষয়। সে জানে সে কি করেছে! শুধু এলাহি জানে না কিন্তু আমি জানালে সে চিনতে দেরি করবে না! কিন্তু চিনাবো না।" চোখ জোড়া আবার মুছে নিল আনিকা৷
রাত ৯টা,
রাজীন এবং এলাহি চায়ের দোকানে বসে আছে। দোকান থেকে একটু দূরে গিয়ে রাজীন বলল, "এলাহি, আগামীকাল রাতে আমার ডিউটিতে ফেরত যেতে হবে৷ তোরও মনে হয় ছুটি শেষ?"
"হ্যা! পরশু।"
"তো তাদের কি ব্যবস্থা করবি? তুই আনিকাকে নিয়ে যেতে পারলেও তানজিলকে নেয়া সম্ভব না। এমন কিছু করা যাবে না যেটায় আমরা ধরা পরে যাই! যেহেতু আমিও রুম ভাড়া নিয়ে থাকি সেখানে নেয়া অসম্ভব। কি করবো বুঝতে পারছি না...!"
এলাহি বলল, "আমি তানজিলকেও সাথে রাখি? জানি এটা খুবই বিপদজনক কিন্তু..." তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, "না ভাই, একদমই না। এরচেয়ে আমিই বাসা চেঞ্জ করে ফ্যামিলি বাসা নিয়ে নিই ছোট দেখে। না হয় বললাম আমি বিবাহিত আর একটু টাকা খরচ হল! ঠাণ্ডা পরিবেশ, যে পোশাকাদি কেনা হল তাতে এক সপ্তাহ চলে যাবে। আর সোর্সদের খবর রাখিস।"
এলাহি অনিচ্ছা এবং নিরুপায় হয়ে সম্মতি জানালো।
সকাল ৭টা,
নাস্তা সেরে তৈরি হয়ে নিচ্ছে তারা৷ তানজিল বোরকা এবং স্কার্ফে নিজেকে ঢেকে নিল! আনিকা তানজিলকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই বলল, "কি বলে ধন্যবাদ দিব সেটা আমার জানা নাই, তুই আমার বোনের স্থানে থাকবি সবসময়।" চোখ মুখ দিল আনিকা। রাজীন বলল, "বিবাহিত জীবনের আগাম শুভেচ্ছা নিস আর সাবধানে থাকিস।"
সেখান থেকে বের বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করে অন্য আরেকটা কাউন্টারে দারালো রাজীন৷ বলল, "নিরাপত্তার স্বার্থে বড় কাউন্টারে যাচ্ছি না।" দুই মিনিট পরই এল বাস! সিটে বসে রাজীন বলল, "আমাদের সফরটা একটু লম্বা হবে তানজিল। আল্লাহ ভরসা, ঠিকমতই পৌছাবো।" তানজিল মৃদু একটা হাসি দিল, কিছু বললো না!
অবশেষে কোনো ঝামেলা ছাড়াই পৌছে গেল রাজীন এবং তানজিল৷ রুমে গিয়ে দেখে নিজের রুম ছাড়া সকল রুম তালা মারা! কেয়ারটেকারের মাধ্যমে জানতে পারে দুইজন রুম ছেড়ে দিছেন। রাজীন বলল, "নিচে আসেন, পুরা বাসাই আমি নিবো! বিয়ে করেছি, ওয়াইফ নিয়ে আসবো কাল!" তানজিল রাজীনের দিকে তাকিয়ে বলল, "আপনি বিবাহিত? কবে বিয়ে করেছেন?"
"সরি আমি আপনাকে সেফ রাখার জন্য তার নজরে বিবাহিত! ভিতরে আসুন এবার...!"
নিচ থেকে টু লেটের বোর্ডটাও নামিয়ে নিল রাজীন!"
এক সপ্তাহ পর,
ওসি জামশেদ এর মেজাজ চরম খারাপ হয়ে আছে৷ বেশ জোর গলায় ডাকলো, "এলাহি, মাসুদ, হামিদ কোথায় তোমরা? এদিকে এসো!"
তড়িঘড়ি করে তিনজনই এল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "আরাফাত উল্লাহ (আরাফ) এবং তার স্ত্রী শান্তা নাজনিন, উনাদের কোনো খবর পাওয়া গেছে? তারা জানে না তাদের এলাকা ত্যাগ করা নিষেধ?" কেউ কোনো উত্তর করছে না! একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ! তিনি আবারও বললেন, "উত্তর দাও!"
এলাহি বললো, "স্যার এলাকায় জিজ্ঞেসবাদ করে আসবো?"
"আরে বাহ! এটা এতদিন কর নি? কি বুদ্ধি তোমার! এতদিন পর ব্রেন কাজ করা শুরু করেছে?" হালকা তাচ্ছিল্য করে বললো! হামিদ বললেন, "স্যার, কনস্টেবল স্যার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন!" এলাহি হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল, "চুপ কর ব্যাটা!"
"কি!!! এলাহি! বিয়ে! বিবাহিত!!!!" এলাহি কিছুটা ভীত হয়ে বলল, "জ্বি.... জ্বি স্যার! দ দুই সপ্তাহ আগে!"
"কারও বিয়ের সংবাদ শুনলে কি যে ভাল লাগে! তা বউ আ.. মানে ভাবি কোথায়?" "স্যার গ্রামে আছে৷"
জামশেদ ঠাণ্ডা হয়ে বললেন, "দারুণ! তাহলে আমরা এখানে সবাই নিপীড়িত, আহত? মানে বিবাহিত?" সবাই হেসে দিল। এলাহি বুঝতে পারলো না জামশেদের এমন পালটে যাওয়া! পরে তিনি বললেন, "যাও, আরাফের এলাকায় গিয়ে খোজ নাও, যা যা পারো নিয়ে আসো!"
বাইরে ঝুম বৃষ্টি! এমন বৃষ্টি বিকেলকেও সন্ধ্যা বানিয়ে দেয়। বারান্দায় বসে হাত মেলে রেখে বৃষ্টির ফোটা হাতের তালুতে পরা দেখছে আনিকা। পাশে বসা এলাহি অপলক তাকিয়ে আছে আনিকার দিকে! আনিকা জিজ্ঞেস করলো, "কি দেখিস?"
এলাহির ধ্যান ভেঙে গেল এবং জিজ্ঞেস করলো, "কি ভাবছিস?"
"শুধু কি প্রশ্নই করে যাবো আমরা? উত্তর জানা হচ্ছে না!" এলাহি একটু হেসে বলল, "আমি তো বাসায় জানিয়ে দিয়েছি আমাদের বিয়ের কথা, তোর বাসায় জানালে ভাল হতো না?"
"নাহ, থাক। কেউ নেয় আমার....
কিছু ব্যাপার অজানা থাক, মৃত জানুক কিংবা না জানুক লোকে!
ভুলে যাক তারা আর মুছে যাই তাদের স্মৃতি থেকে!"
বিষণ্ণ মনে কথাগুলো বলল আনিকা যা কিছুটা কবিতার মত শোনা গেল! এলাহি উঠে আনিকা জড়িয়ে ধরে বললো, "সরি, তোকে কষ্ট দেয়ার জন্য আমার জিজ্ঞাসা ছিল না।"
"আমি জানি, শুধু সেসময় জেনেও জানি নি...
চা বানাবো, তোকেও দিবো?"
রাজীন চা নিয়ে এল। তানজিলকে চা এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "আপনার এখানে সময় যাচ্ছে না, ঠিক না বলেন?" তানজিল বলল, "ঠিক ধরেছেন, তবে ভালই যাচ্ছে পূর্বের চেয়ে, শুধু অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না!"
"আমি চাইলেই আপনাকে রেখে আসতে পারি কিন্তু এতে আপনারই ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আমার ধারণা ওখান থেকে জামশেদ স্যার কাউকে অবশ্যই খোঁজ নেয়ার জন্য পাঠাবে। খবর পেলেই এলাহি আমাকে জানাবে।" একটুপর রাজীন প্রশ্ন করলো, "আপনি বই পড়েন? উপন্যাস, সাহিত্য বা ইতিহাস? আমার কাছে কিছু বই আছে। আর যদি আপনার পছন্দের কোনো লেখক বা জনরা থাকে তবে আমি আনবো আপনার জন্য?"
"জ্বি আপনার টেবিলে রাখা কয়েকটা বইয়ের মধ্যে একটা বই পড়া শুরু করেছি! সময় যাচ্ছিল না তাই ভাবলাম একটু পড়ি! এবং সরি আপনাকে না জানিয়েই পড়া শুরু করেছি!" রাজীন একটু হেসে বলল, "আরে সরির কিছু নেই! ওসব বই এখন আপনার, আপনি পড়েন।"
"একটা প্রশ্ন করতে পারি?" তানজিলের প্রশ্ন। রাজীন হেসে সম্মতি জানালো। "আচ্ছা আপনার কোনো পছন্দের মানুষ নেই যার সাথে আপনি বাকি জীবন কাটাতে চান? অর্থাৎ বিয়ে।"
রাজীন চা শেষ করে বলল, "আসলে ভয় হতো অনেক এবং ছেলেদের কাঁদতে নেই এই মতবাদের উপর প্র্যাক্টিকাল ধারণা এবং বাংলা অর্থে বাস্তববাদী হতে গিয়ে সোশ্যালিজমটাই হারিয়ে ফেলেছি! প্র্যাক্টিকাল মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একা হয়ে যায় এবং তারই একজন আপনার সামনে বসা!"
"এত কঠিন ভাব সম্প্রসারণ যার অর্থ তাহলে এই দাঁড়ায় আপনি মনে মনে চাইতেন কেউ আসুক বা সুসম্পর্ক গড়ে উঠুক কিন্তু আপনার ইচ্ছা এবং অনিচ্ছায় সেসব হয় নি!"
কিছুটা উদাস কণ্ঠে বলল, "হা, একদম তাই! এবং আপনি একদা বলেছিলেন অতিরিক্ত প্র্যাক্টিকাল মানুষরাই সবচেয়ে বড় বোকা, তারা জীবনের আনন্দ বুঝে না, সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়, সো এটাই আমি!" তানজিল জানালো, "আসলে সরি, আমার ঠিক মনে নেই। মানে এত ঝড় বয়ে গেছে যার জন্য অনেক কথাই মাথা থেকে মুছে গেছে!"
"সমস্যা নেই, স্বাভাবিক।" এমন সময় নেমে এল ঝুম বৃষ্টি! রাজীন আবার জিজ্ঞেস করলো, "আপনার কেস স্টাডি করার সময় আমি জেনেছি কাজলের সাথে আপনার ভাল বন্ধুত্ব হয়েছিল৷ এবং আপনার নিখোঁজ হওয়ার আগেরদিন আপনি তার সাথে দেখা করেছেন?"
"আগেরদিন নয়, সেদিনই নিখোঁজ হই! জানি না কে করেছে এমন সাথে, কেন ই বা করেছে! কাজল, যাকে আমার সহ্য হতো না সেই পরে আমার অস্থিরতার কারণ হয়েছিল যদি একদিন না দেখতাম! আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মাইশা, জানি না কোথায় আছে, কি করছে! কাজল ই বা কেমন আছে! দেশে এসেছে কিনা! জানে কি আমি নিখোঁজ, আমার জন্যেই সে নিজেকে পরিবর্তন করেছিল।" রাজীন বুঝতে পারছে তানজিলের মনে অবস্থা। সান্ত্বনা দিয়ে বলল, "আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে আপনাকে... সে দিন গুলো সপ্তাহ নাকি মাস সেটা আমার জানা নাই!" এটা বলে কাপ নিচ্ছিল তখন তানজিল বলল, "রেখে যান, আমি ধুয়ে দিব৷" কিছুক্ষণপর বলল, "একটা অনুরোধ"
"জ্বি বলেন।" তানজিল ম্লানমুখে বলল, "আমি একা-একা হাটতে চাই, যেতে পারবো?" "কিন্তু এখানের রাস্তা, এলাকা তো আপনি চেনেন না। এই রিস্ক কিভাবে নিবো আমি?"
"প্লিজ!" রাজীন কিছু টাকা আর মোবাইল দিয়ে বলল, "হারিয়ে যাইয়েন না।"
রাত তখন আড়াইটা, আনিকার মাথা নিজের বাহুতে রেখে জাগ্রত এলাহি। আনিকাকে নিয়ে চিন্তা আর সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমে ঢলে পরছে সে! কিছুক্ষণ আগেই আনিকার চিৎকারে ঘুম ভেঙেছে তার! প্রায়ই এমনটা হয়। দুঃস্বপ্নে জেগে উঠে এলাহিকে জিজ্ঞেস করে, "কেউ এসেছে নাকি দরজায়? আমার খুব ভয় করছে! দরজা খুলিস না!" এলাহি খুব যত্নে আনিকাকে ধরে বলল, "আনিকা আমি আছি! কিচ্ছু হতে দিব না তোর, বিশ্বাস কর।" এলাহি মনে মনে বলছে, "আমি থাকতেই তোর এত ভয়! না জানি সারাদিন কিভাবে থাকিস!" আনিকাও তাকে শক্ত করে ধরে ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পরলো। কষ্ট হলেও এলাহি ওভাবেই শুয়ে থাকলো। অন্যহাত দিয়ে আনিকার চুলে হাত বুলাতে লাগলো।
সকালে এলাহির ঘুম ভাঙলো আনিকার হাতের ছোয়ায়! উঠে দেখে আনিকা দেখছে তাকে! সে বলল, "শুভ সকাল!"
"কখন উঠলি তুই?" আনিকা বলল, "আধাঘন্টা হল।"
এলাহি জিজ্ঞেস করলো, "আর কোনো সমস্যা হয় নি তো?" আনিকা একটু আবেগে বলল, "কেন এত ভালবাসিস? এসব কি আমি ডিসার্ভ করি?" এলাহি বলল, "না!" আনিকা কেঁদে ফেললো। কান্না দেখে এলাহি বলল, "একটা বইয়ে কয়েকটা লাইন পড়েছিলাম, আমার ইচ্ছা আমি তোর অশ্রু হই তাহলে আমার জন্ম তোর চোখেই হতো! সেখান থেকে তোর গাল বেয়ে ঠোট অব্দি আমার জীবনকাল হতো! কাউকে সেখানে থাকতে দিতাম না! আমার রাজত্ব সেই রাজ্যে। তাই আমি সেই অশ্রু হতে চাই!" আনিকা বলল, "কিন্তু আমার পাপ অনেক বড়! কোনোভাবেই...." এলাহি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, "যা হয়েছে সেটার জন্য পরিস্থিতি দায়ী! আনিকা, আমাকে একটু সুযোগ দে, আমি তোর সকল দুঃখকে দূরে সরিয়ে দিব! তুই ভাবতেও পারবি না কতটা ভালবাসি আমি তোকে!" আনিকার চোখ মুছে দিল সে। "স্পটে কানন মারা গেল, ওর কাছে আমাদের কোডনেমের লিস্ট ছিল! ভয় লাগে আমার!"
"আল্লাহ না করুক, যদি নাম সামনে আসে তবে এলাহি সবকিছু ছেড়ে দিয়ে আনিকাকে লুকিয়ে রাখবে৷ বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়াবো তবুও তোর কিছু হতে দিব না।" এলাহি আবারও বলল, "একটা ওয়াদা কর, তুই পুরানো দিন ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবি।" এলাহিকে জড়িয়ে ধরে বলল, "হ্যাঁ, তাই হবে! তোর চাওয়াই আমার ওয়াদা!"
বাসা থেকে বের হওয়ার আগে একজন ডেলিভারিম্যান এসে এলাহিকে পার্সেল দিয়ে গেল। পার্সেল নিয়ে ভিতরে এসে বসলো সে। প্রথমে পেল একটা চিঠি! যাতে লেখা ছিল, "সব ডেটা এখানে আছে। যত্ন করে রেখে দিন এবং পার্সেল সামলে রাখেন।"
এমন সময় থানা থেকে কল এল।
"এলাহি জলদি এসো, আমরা আরাফ এর খোঁজ পেয়েছি।" "জ্বি স্যার, আসছি।"
এলাহি আনিকাকে ডাক দিল৷ আনিকা আসতেই এলাহি তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো! আনিকা কিছু বুঝতে পারছে না। শুধু জিজ্ঞেস করলো, "কি হয়েছে?"
এলাহি তাকে ছাড়ছেই না৷ এলাহির নিশ্বাসে বুঝতে পারলো সে কাঁদছে! এলাহিকে ছাড়িয়ে নিয়ে দেখলো আসলেই কাঁদছে! জিজ্ঞেস করলো, "আরে এখন তুই কাঁদছিস কিজন্য? কি হয়েছে?" এলাহি কিছু বলতে পারছে না। আনিকা চোখ মুছে দিল এলাহির। এলাহি বলল, "জরুরি কিছু না!"
"পাগল কোথাকার, যা ডিউটিতে, ফিরতে দেরি করবি না, ভয় হয় আমার।"
এলাহি বাসা থেকে বের হল। মনে মনে বলল, "যে পার্সেল আমি নিয়েছি সেটা স্বযত্নে রাখতে বলেছে! আর সেটা তুই!"
প্রতিদিনই ডিউটি শেষে রাজীন বাসায় কিছু না কিছু নাস্তা কিনে যায়। নিজের বিস্বাদ হাতের রান্না খাওয়ানোটা এক প্রকার জুলুম করা হচ্ছে তানজিল প্রতি! তানজিল রান্না করতে চাইলেও রাজীন তাকে করতে দেয় না। দুই রুমে তোষক, বালিশ আর টেবিল ছাড়া আহামরি কিছুই নেই এবং একটা টেবিল আর ছোট আলনা! রাজীন বাসায় এসে তানজিলকে বলল, "আসেন নাস্তা করে নিই?"
ফ্রেশ হয়ে সামনাসামনি বসে খাওয়া শুরু করলো তারা৷ রাজীন একটু কাশি দিয়ে বলল, "আপনার জন্য একটা সংবাদ আছে।" তানজিল খাওয়া থামিয়ে দিল।।"আব্বু আম্মু?"
"জ্বি হ্যাঁ! আপনার বাবাকে আপনাদের গ্রামের বাড়িতে দেখা গেছে। তবে, আপনাকে উনার কাছে নেয়া সম্ভব নয়। এমনকি কথা বলিয়ে দেয়াটাও!" রাজীন বললো।
"তাহলে কি সম্ভব? আমার এভাবে ভাল লাগে না!" তানজিল কান্নাচাপা কণ্ঠে অনুরোধ করে বলল, "প্লিজ, আমাকে একবারের জন্য হলেও আব্বুর সাথে দেখা করিয়ে দেন৷" রাজীন বলল, "আমি আপনাকে কথা দিতে পারছি না তবে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবো। এখন পর্যন্ত আমি আপনার জন্য যা যা করেছি সবই আমার শেকলের বাহিরে বেরিয়ে করেছি৷ কেন করছি সেটা জানি না..... কিন্তু আমাকে আপনার বিষয়টাতেও যত্নশীল হতে হবে৷ আমি বাসা থেকে বের হলে আপনাকে নিয়েই বেশি চিন্তিত থাকি! আপনি জানেন বিষয়টা?"
তানজিল চুপচাপ বসে রইলো৷ চোখ মুছে বলল, "আমার উচিৎ হয় নি কাউকে ভালবাসা! যদি তখন বুঝতাম...."
রাজীন বলল, "জ্বি ঠিক বলেছেন। আপনি কি জানেন কেন এবং কিভাবে আপনি সেখানে গিয়েছেন?"
"মানে?" রাজীন বলল, "আপনার বিশ্বস্ত ভালবাসা, কাজল আপনাকে ওখানে পাঠিয়েছে! চড়, থাপ্পড় এবং অপমানের বদলা নেয়ার জন্য! নিজেকে চেঞ্জ করে ভাল মানুষ সাজা তার একটা নাটক ছিল! সে বিদেশে গিয়েছে ঠিকই কিন্তু আপনার সর্বনাশ করার পর!"
কথাগুলো শুনে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ার অবস্থা হয়ে গেল তানজিলের!
"না এটা হতে পারে না। বিশ্বাস করি না।" তানজিল বললো।
"আপনাকে অপহরণ করে ফ্লা.. ফ্ল্যাটে বন্দি রেখেছিল কয়েকদিন! সেটা ছিল কাজলের কাজ! আরও কি কি...." রাজীন আর বললো না, কিছুটা অশ্রু তার চোখ দিয়েও বের হল! পরে বলল, "ওর বাবা, বারী। সে আপনাকে হিউম্যান ট্রাফিকিং...."
আনিকার বলা কথাটা তানজিলের কানে বাজছে, "আমার বিশ্বাস এনেছে এখানে, যাকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসতাম সে! সো কল্ড বয়ফ্রেন্ড যাদের আমরা বোকা ভাবে ভালবেসে ফেলি!" আনিকা বলেছিল, "আমি জানি না তবে শিওর যে তোকেও সেই এনেছে!"
এরচেয়ে মরে যাওয়া সহজ। রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় চলে গেল তানজিল! দেয়াল ঘেষে বসে পরলো রাতের আধারে। রুমের বাতি চালু নেই এবং দুঃখেরও... বাহিরে যাওয়ার সুযোগও নেই! পাশের জানালায় গ্রিল ধরে দারিয়ে আছে রাজীন। যেন একই মানচিত্রে দুইটি দেশ!
--- ধন্যবাদ | ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন ---
©somewhere in net ltd.