| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষের আমৃত্যু প্রত্যাশা কেউ তার ভার নিবে। আসলে কি একজন মানুষের পক্ষে অন্য আরেকজনের ভার নেয়া সম্ভব? 'মানুষের ভার' এই শব্দগুচ্ছের অর্থ ই বা আসলে কি!
আমরা যে অর্থে আমাদের ভার বোঝাচ্ছি তার আক্ষরিক অর্থ করতে গেলে বোঝায় দায় নেয়া বা দায়িত্ব নেয়া। তবে মানুষ এই শব্দগুচ্ছ সম্ভবত আবেগিক অর্থে ব্যবহার করে। উত্তর-আধুনিক কালে 'আমার ভার নাও' অর্থে বোঝাতে চায় আমার আবেগ অনুভূতিগুলোকে ধারণ করো। শব্দে অর্থের বিচ্যূতি স্পষ্ট।
আবেগিক কোন কিছুর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এগুলো Abstract বা নিরাকার ধারণা। একে মাপজোখ করা যায় না। ফলে একজন মানুষ কি পরিমাণ ভার অন্যের উপর দিতে চায়, আর অন্য
জনই বা কি পরিমাণ ভার নিতে চায় বা নিতে পারবে এটা নিয়ে দুপক্ষের সুস্পষ্ট ধারণা থাকেনা।
ফলত মানুষের ভার দেয়া নেয়ার ক্ষেত্রে আর যাই হোক Satisfaction scale এ সঠিক মাত্রায় পৌছায় না। সোজা বাংলায় খাপে খাপ খাওয়ানোটা দুরুহ হয়ে পড়ে।
সুতরাং মানুষ যখন বলে কেউ তার ভার নিক, এই আবেগিক ভার এর মাত্রা হিমালয়-আল্পসের চেয়েও বহুগুণ ভারী হতে পারে। এটা এতো বেশি যে, যে মানুষ সহজে জয় করে ফেলে এভারেস্ট, আন্দিজ সেও হয়ত এই আবেগীয়-মনোস্তাত্ত্বিক ভারের উচ্চতাকে অতিক্রম করতে পারেনা।
যে সাহসী ডুবুরি এক লাফে নেমে যায় মহাসাগরের গভীর তলায়, প্রচন্ড পানির চাপ উপেক্ষা করে বিজয়ের ভিক্টোরি সাইন দেখায় সেও হয়ত পাশের কারো Emotional Burden কে বেশিক্ষণ সামলে রাখতে পারেনা। পিষ্ট হয়ে যায়। পালিয়ে যায়।
পর্বত শৃংগ হোক বা মারিয়ানা ট্রেঞ্চ হোক তার একটা পরিমাপ, গভীরতা, উচ্চতা মানুষের জানা থাকে। সে লক্ষ্য স্থির করে আগায়। কিন্তু আবেগের কোন পরিমাণ মাপা যায়না। সবচেয়ে বড় বিষয় আবেগকে Predict করা যায়না।
সমাজে সমালোচকরা হয়ত বলে বসেন- 'দুনিয়া জয় করে অথচ মানুষের মন বোঝেনা! What an Odd Hero!' অথচ দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। একটার সাথে আরেকটার তুলনা চলেনা।
তাহলে কি 'কেউ আমার ভার নিবে' এটা একটা invalid ধারণা? এরকম ও নয়। বরং যখন কোন শিশু জন্ম নেয় তার প্রথম কান্নায় থাকে ভার নেয়ার ডাক। আমরা জেনেটিকালি প্রোগ্রামড হয়েই এভাবে পৃথিবীতে আসি। কেউ ভার না নিলে শিশু টিকে থাকতে পারবেনা। আমাদের মা-যখন আমাদের ভার নেয়, তৈরি হয় Attachment, আবার সামাজিক প্রাণী হিসেবে অন্যের সাথে সংযুক্ত হওয়ার তাড়নাটাও আমাদের মধ্যে জেনেটিকালি ডিজাইন করা। মানুষের নি:সংগতা কোন দু:খবিলাস নয়, এক জিনগত ডাক! তাই অন্যকে ভার দিতে চাওয়াটা প্রচন্ডভাবেই ভ্যালিড।
আগের কৃষিভিত্তিক বা শিকারী গোত্রজীবেন ভার নেওয়াটা ছিল সামষ্টিক বিষয়। আত্মকেন্দ্রিকতা তখনো এতোটা ব্যাপক ছিলোনা। পোস্টমডার্ন যুগে ব্যক্তিস্বাধীনতা যখন প্রচন্ডভাবে প্রাসংগিক তখন মানুষ একইসাথে Attachment এর মাধ্যমে Safe Haevan চায় আবার নিজের স্বাতন্ত্র্যবোধকেও সমুন্নত রাখতে চায়। অনেকটা এরকম- 'আমি সংযুক্ত ও থাকব আবার স্বাধীন ও থাকব!'
রোমান্টিক ভাষায় বলতে গেলে- 'আলতো ছু্ঁয়ে থাকো কিন্তু ধরে ফেলোনা!'
সমস্যা হলো এই দুটো বিপরীতমুখী ধারণাকে সাম্যাবস্থায় আনা খুবই কঠিন কাজ। এটা একটা কনফ্লিক্টিং অবস্থা তৈরি করতে পারে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই করে।
আমরা আমাদের নিজেদের তৈরি এক পরস্পরবিরোধী অবস্থানে আটকে যাই। আমরা নিজস্ব Paradox এ বন্দী হয়ে যাই।
তাহলে কি আমাদের মুক্তি নেই। কারো উপর ভার ছেড়ে দেয়ার তীব্র তাড়নার কোন সমাধান কি নেই? কবির কল্পনায়- 'আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে,.........আমার মুক্তি সর্বজনের মনের মাঝে।' এটা কি শুধুই কথার কথা।
মানুষকে হয়ত Symbiosis আরো ভালোভাবে শিখতে হবে। ভার দিয়ে দেয়া মানে নির্ভরশীলতা বা dependency নয় বরং মিথোজীবিতা! আমার যেমন তাকে দরকার ভার দেয়ার আবার আমারো উচিত তার ভার নেয়া।
আর ভার দেয়া নেয়ার ইচ্ছা না থাকলে নীটশের Ubermensch বা self-overcoming human হওয়ার চেষ্টা করা, যে বলতে পারে- 'আমিই আমার ভার নিব!' যদিও সেটা আমাদের প্রকৃতিপ্রদত্ত প্যাটার্ন নয়।
©somewhere in net ltd.