নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধোঁয়াশা

লেখার চেয়ে পড়ায় আগ্রহী। ধার্মিক, পরমতসহিষ্ণু।

রওশন জমির

লেখার চেয়ে পড়ায় আগ্রহী। পরমত-সহিষ্ণু, শালীন ও ধর্ম-পরায়ণ।

রওশন জমির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলার হতভাগা দামিনী!

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩২



২০১২ সালটা ভোলার নয়, অন্তত ভারতের মেডিক্যাল-ছাত্রী দামিনীর প্রসঙ্গে। যাকে নরপশুরা চলন্ত বাসে ধর্ষণ করেই ক্ষন্ত হয় নি, লজ্জাস্থানে রড ঢুকিয়ে দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। এর জের ধরে সপ্তাহ দশদিন পর দামিনীর মৃত্যু হয়। তখন ফোঁসে ওঠে দিল্লিসহ সারা ভারত। অনেক দিন পর একটি ইস্যুতে সারা ভারত এক কাতারে এসে দাঁড়িয়ে ছিল তখন।

ভারত বৃহৎ দেশ। ব্যক্তিবিশেষের সম্পদ যেমন জ্যামিতিক হারে পাহাড়ের মতো বেড়ে চলেছে, একই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে দুর্লঙ্ঘ্য বৈষম্যের গভীরতর তল। বিত্তকেন্দ্রিক এই দুস্তর ব্যবধানের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের গতিও সেখানে কম নয়। এক কথায় তাদের সমস্যার অন্ত নেই। কিন্তু দামিনীর ঘটনায় পুরো ভারত মানবিকতার অভিন্ন অবস্থানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে পড়ে। ভারত আবারও প্রমাণ করে, তাদের অন্তর্নিহিত শক্তি এখনো অটুট। তখন ভারতের সেই আন্দোলনের প্রতি সারা পৃথিবী সংহতি জানাতে কার্পণ্য করে নি।

বাংলাদেশ ভারতের ঘনিষ্ট এবং ভৌগোলিকভাবে পরিবেষ্টিত ছোট্ট একটি দেশ। জনসংখ্যাও ভারতের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু হলে কী হবে? এর অভ্যন্তরীণ ক্ষয়রোগ ভীষণ আকার ধারণ করেছে। আর তাই দামিনীর মতো রাস্তায় নয়, নিজ স্বামীর ঘরে সন্তান-সন্ততিসহ ঘুমিয়েও পাশবিকতা থেকে রেহাই পায় নি। তথাকথিত দস্যুদল কর্তৃক সন্তানদের সামনেই গ্যাংর‌্যাপের শিকার। ধর্ষণ শেষে তাদের হাতের ধারালো ছোরাটা সেই দামিনীর যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতে তার মৃত্যু ঘটে। না, এটি কোনো আলোড়ন তুলে নি; কোথাও না। জাতীয় পত্রিকায় সামান্য খবর হতে পেরেছিল শুধু। আমি বলছি, (৯ মার্চ ২০১৬) জেলাশহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অদূরে নিমর্মতার শিকার সেই হতভাগা প্রোষিতভর্তৃকা বধূটির কথা!

বৃহৎ ভারতের বৃহৎ বিবেক, বৃহৎ চোখ তো তুলনামূলক ক্ষুদ্র দেশের মানুষের থাকতে নেই! আর তাই পত্রিকা এলেও পাঠকের খুব গুরুত্ব লাভ করতে পারে নি। তা না হলে, এমন একটি নৃশংস ঘটনায় দেশে সামান্যও আলোড়ন তৈরি হয় নি কেন? অথচ এই তো কয়দিন আগে, একই জেলায় তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সবার পৌরুষ জেগে উঠেছিল। সারা দেশে তখন রব উঠেছিল গেল গেল বলে। আর তাই রাতের অন্ধকারে পুলিশি প্রহরায়/ সহায়তায় একটি কিশোরের নির্মম প্রাণহানি ঘটেছিল। এই কিশোর হত্যার প্রতিবাদে দরদি (?) ছাত্র-জনতা ক্ষেপে ওরঠ, শহরময় চলে চরম তা-বলীলা। শহরটি তখন ভূতুড়ে নগরে পরিণত হয়েছিল। আর এই শহরেরই লাগোয়া গ্রামে যখন একটি নিষ্পাপ নারী নিজ ঘরে নৃশংসতার শিকার হয়ে মৃত্যু বরণ করে, তখন কারো ঘুমও ভাঙে না!

তুচ্ছ ঘটনায় যারা ছাত্র হত্যা করতে দ্বিধা করে না, তারা এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনায় সামান্যতম প্রতিক্রিয়া দেখায় নি! এখানে কল্পিত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বলে তাদের রক্ত চাগাড় দেয় নি! এই কাপুরুষের দল পুলিশের সহায়তা নিয়ে তখন যেভাবে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলে পড়েছিল, আজকে প্রশাসনকে নিয়ে সেই দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে নি! পৌরুষের শেষ দৌড় কি তাহলে শুধু নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে? অপরপক্ষে, ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে যাদের ধর্মবোধ তপ্ত হয়ে উঠেছিল, তারাও আজ নীরব! তারা কি এনিয়ে একটি মৌন মিছিলও বের করে নি! মাদরাসায় ঢুকে ছাত্র হত্যা যেমন ধর্মবিরোধী-নীতিবিরোধী কাজ, বাসায় ঢুকে গ্যাংর‌্যাপ ও হত্যা কি তার চেয়ে কোনো মাত্রার কম অপরাধ? নাকি এ ব্যাপারে হাদিস-কুরআনে কোনো বিধিনিষেধ আছে?

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সেই ঘটনায় তখন দেশব্যাপী বক্তব্য-বিবৃতি ও লেখালেখির তোফান শুরু হয়ে গিয়েছিল। কেউ এ- পক্ষে তো, কেউ ও-পক্ষে! কেউ মাতম করলো দেশ একাত্তরের পর্যায়ে চলে গেল বলে। শিল্প-সংস্কৃতির পুরনো স্মৃতির অবলোপ দেখে কারো কারো সে কি দ্রোহী চিৎকার! অপরপক্ষে, ধর্ম গেল বলেও একটি গোষ্ঠী হা-পিত্যেস করেছে। আর একটি নারীর হৃদয়বিদারক মৃত্যুতে কারো ধর্মবোধ জাগে নি, শিল্পবোধও পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে!

সামূহিক এই অন্ধতা-অন্ধকার, এই নিষ্ক্রিয়তার কি কোনো শেষ আছে? মনে হয় নেই। তাই আরো বড় কোনো ঘটনাও হয়ত ঘটে যাবে, তখনো জেগে উঠবে না আবেগী তরঙ্গ! এভাবেই তলিয়ে যাবে মানবিক সম্ভাবনার দোয়ার! সেই নিকষ কালো অন্ধকারের আশঙ্কায়...

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৬

বিজন রয় বলেছেন: সাবাশ!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.