নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক

আমি নষ্ট করেছি সময়, এখন সময় নষ্ট করছে আমায়

ফিলিংস

মানুষ কে ঘৃনা করার অপরাধে অতীতে কাউকে কখনো মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়নি। কিন্তু মানুষ কে ভালবাসার অপরাধে অতীতে অনেককেই হত্যা করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও হয়তো হবে !!

ফিলিংস › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাত-পা নেই, তবু ক্রিকেটার!

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৭

[img|https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/images/thumbs/rraaju_1379145340_1-sharif-intro-11-09-2013_1_.jpg





জীবন চলার পথে আমরা শত রকমের বিস্ময়ের ঘোরে পড়ি l যাতে দেখা মিলে যায় এমন ঘটনার বা এমন মানুষের, যারা আমাদের বোধকে নাড়া দিয়ে যায় প্রবলভাবে l আমরা যার মাধ্যমে বুঝতে পারি, আসলে মানুষের ক্ষমতা কতোটুকু, কী গভীর মানুষের ইচ্ছাশক্তি l

আমাদের বোধকে নাড়া দেওয়ার মতো এক গল্পের জন্ম দিয়েছেন চট্টগ্রামের মোহাম্মদ শরিফ নামের এক বালক l ছেলেটির একটি হাত নেই, পা-ও নেই দু’টি, তবুও সে তুখোড় ক্রিকেটার l বলতে করতে পারে সাকিবের মতো, ব্যাটিং পারে তামিমের মতো আর ফিল্ডিংয়ে সে নাসিরের মতো l বিশ্বাস করা যায় l



চার বছর আগের এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় শরিফ তার দু’টো পা-ই হারায় l ডান হাতটাও তার হারিয়ে যায় সে সময়ে l সে তখন তাদের বাড়ির ছাদে ঘুড়ি উড়াচ্ছিলো l ঘুড়ি উড়াতে উড়াতে সারা ছাদে ঘুরছিলো সেও l এক পর্যায়ে সে জড়িয়ে পড়ে ৩৩ হাজার ভোল্টের ইলেকট্রিক তারের সাথে l



শরিফের গল্পটা থেমে যেতে পারতো সেখানেই l থামতে পারতো তার বেঁচে যাওয়ার পরও, যখন তাকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে তার উভয় পা ও একটি হাত কেটে ফেলতে হয়েছিলো l কিন্তু গল্প থামেনি l উল্টো সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগাতে নিজের গল্প এগিয়ে নিয়ে গেছেন শরিফ নিজেই l



ক্রিকেট পাগল শরিফ সব সময় চেষ্টা করতো তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানকে অনুসরণ করতে l এজন্য একদিন জাতীয় দলের একটি জার্সিও কিনেছিলো সে l কিন্তু শরিফের ক্রিকেটার হওয়ার গুড়িয়ে যায় ওই দুর্ঘটনায় l তবে ক্রিকেটার সে ঠিকই হয়েছে l সকল প্রতিবন্ধকতা সে জয় করেছে খেলার প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণে l



শরিফ বর্তমানে তার স্থানীয় ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন, সে দলের অলরাউন্ডার l শরিফের দলে খেলে তারই সমবয়সী বাচ্চারা l চট্টগ্রামের মাজহারবাড়ী, কমলগেটে থাকে শরিফ l সেখানেই প্রতি শুক্রবার ক্রিকেট খেলে তার দল l



শরিফ বলে, “আমি তামিমের মতো বড় বড় ছয় মেরে বল বাউন্ডারিতে পাঠাতে পারি l বোলিংয়ে সাকিবের মতো টার্ন করে উইকেট নিতে পারি l এমনকি আমি নাসির মতো ফিল্ডিং করে রানও আটকে দিতে পারি l” এসব কথা বলার সময় গর্বে শরিফের চোখ মুখ জ্বলজ্বল করে l কী অসম্ভব সাহসী উচ্চারণ l



শরিফ আরো বলে, “খেলার প্রত্যেক পজিশনেই ভালো খেলতে হয় আমার l কারণ আমিই অধিনায়ক l মুশফিকের মতো আমারও এদেরকে নেতৃত্ব দিতে হয় l”



চোখে না দেখলে বোঝা যাবেনা, শরিফ আসলেই তার দলের জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ l গত শুক্রবারও শরিফকে খেলতে দেখা গেছে l ম্যাচে সে দুই ওভার বোলিং করে একটি উইকেট নিয়েছে l আর ব্যাটিংয়ে তো তাকে একেবারে টি-টোয়েন্টির ধুমধাড়াক্কা ব্যাটসম্যানের মতোই লেগেছে l একাধিক বল সে বাউন্ডারিতে আছড়ে ফেলেছে l এক কথায় অবিশ্বাস্য l



শরিফের কথা জেনে আপনার যদি তার জন্য দুঃখ হয়, যদি ভেবে থাকেন তার জীবনটা কতো কষ্টের, তবে পারলে তার সাথে একটু কথা বলে আসুন l দেখবেন তার সাহসী ও স্পষ্ট কথাগুলোতে মনে হবে যন্ত্রণা বলে কিছু নেই তার l কোনো কিছুই তাকে পিছনে ফিরাতে পারেনা l তবে খুব বেশি সময় তার সাথে আপনি কথা বলতে পারবেন না l সে তো ফিল্ডিং সাজাতেই বেশি ব্যস্ত থাকে মাঠে l

দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে শরিফ দ্বিতীয় l ক্লাস থ্রীতে থাকা অবস্থায় পড়া লেখা বন্ধ হয়ে যায় শরিফের l সে এখন তার বাবার ক্ষুদ্র ব্যবসায় সাহায্য করে এবং এলাকায় ফলের দোকান চালায় l এতো ব্যস্ততার মধ্যেও শুক্রবার ঠিকই বল ব্যাট নিয়ে বেরিয়ে পড়ে শরিফ l তার এই মুখরিত বেঁচে থাকা থেকে কতো শিক্ষাই না আমরা নিতে পারি l

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.