নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সোজা সাপটা

সাধারন মানুষের অসাধারন কথা বলতে চেষ্টা করি

যক্ষা_রোগী

বেশী দিন বাচুম না---মরার আগে কিছু কথা কইয়া যাইতে চাই।

যক্ষা_রোগী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভিলেন

১৯ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৪৪

বঙ্গ দেশে ভিলেনরা কালো হয়, আমি ছিলাম কালো... আমার চোখ বড় হওয়াতে অনেকে আমার সাথে ডিপজলের মিল খুজে পান অনেকে...



ওর সাথে আমার পরিচয় হয়ত আমার ভিলেন হওয়ার সুবাদেই। একটা বছর পার হয়ে গেলেও ওর সাথে আমার কথা হয় নি কখনো, বাংলা সিনেমায় কমন ডায়লগ বামুন হয়ে চাঁদ ধরার চেস্টা করো না। আমিও কখনো চেস্টা করি নি! ও ছিল ক্লাসের সবচে সুন্দরী, সবার মত আমিও সুন্দরকে দেখতাম, মনে মনে গোপন প্রেম পোষণ করতাম কিন্তু এর বেশী না...



সেকেন্ড ইয়ারে উঠার পর প্ল্যান হল নবিন বরণে নাটক হবে, বাংলা সিনেমার ফাইজলামি ভার্সন! ক্লাসের সবচে সুন্দরী বলে নায়িকার যায়গাটা ওর জন্যে অবধারিত। আমার ডিপজল মার্কা চেহারার জন্যে সবাই আমাকে ধরে ভিলেন বানিয়ে দিল! ক্লাসের বান্দর টাইপ ছেলে গুলা তো খুব হা হুতাশ করা শুরু করলো, আমার সৌভাগ্যে তারা খুব জ্বলার ভাব দেখাচ্ছিল! বলছিল "দোস্ত তোর এ তো মজা, ভিলেন হইয়া নায়িকার লগে ফস্টি নস্টি করবি, সুন্দরির হাত ধরবি! মাঝে মাঝে জড়ায়ে ধরবি... উম্মম্মম্মাহ! শালার তোর একটা লাইফ এ" আমি তাদের কথায় খুব লজ্জা পেতাম, লজ্জায় হয়ত লাল ও হয়ে যেতাম কালো বলে বুঝা যেত না...



কিন্তু রিহারসেলে হল জ্বালা, আমি আমার জড়তা কাটাতেই পারি না... লজ্জায় তো মুখে কথা আসে না, ডায়লগ আসে না। ডায়লগের যায়গায় বিড়বিড় করে মিনমিন করি কি বলি কেউ বুঝে না... নায়িকার হাত ধরব সেটা তো অসম্ভব! সবাই তো বিরক্ত, আমি নিজের উপর আরও বিরক্ত। ও আমাকে জিজ্ঞেস করল "আচ্ছা তুমি কি আমাকে ভয় পাও? আমি কি বাঘ না ভাল্লুক?" আমি বহু কস্টে বললাম "না"। ও আমাকে সহজ করার জন্যে আমার হাত ধরল, বলল দেখ "আমিও তোমার মতই মানুষ!" নাহ... তারপর ও হয় না... রিহারসেল শেষে ও আমার সাথে সাথে হাঁটতে লাগলো, গল্প করার চেস্টা করলো! কিন্তু আমি কেমন যেন খাম্বা হয়ে গালাম, আর খাম্বার সাথে তো বেশিক্ষন কথা চালানো যায় না...



এরপরের দিন মোটামুটি ভালই করলাম, ও দেখি আমার সাথে গল্প করার চেস্টা করছে... আমাকে চা খাওয়ালো, চা খেতে খেতে কত গল্প! আমি মুগ্ধ হয়ে তার গল্প শুনি... আমিও এবার ধীরে ধীরে তার সাথে এক দু লাইন কথা বলছি... ও তো গল্প বলেই যাচ্ছে... এভাবে আস্তে আস্তে আমার সাথে ওর বন্ধুত্ব। আমি টুকটাক লিখতাম আমার লেখা পড়ে তো ওর কি মুগ্ধতা... আমি ওর এরকম মুগ্ধতা দেখে লজ্জাই পেতাম, আস্তে আস্তে দেখা গেল ওর আর আমার বন্ধুত্ব খুব গাড় হতে লাগলো। ওর সাথেই আমি বিভিন্ন ক্লাব, সাহিত্য সংঘ, আবৃত্তি, নাটক থিয়েটার সব কিছুতেই যুক্ত হতে লাগলাম। সব খানেই আমি ও এক সাথেই... ও ক্লাসে আসলে আমার জন্যে যায়গা রাখত, আমি আগে আসলে ওর জন্যে যায়গা রাখতাম!



কিন্তু ওর সাথে আমার এত বন্ধুত্ব হয়ত বেশিরভাগেরই পছন্দ না... সবাই তো বলত বাপরে মাগীর কি দেমাগ, রুপের অহংকারে মাটিতে পা পড়েনা... সেই মানুষের আমার মত ডিপজলের সাথে ঘনিষ্ঠতা আসলেই মেনে নেয়া যায় না! একদিন আমাকে একজন বলল "কিরে দোস্ত! খুব তো প্রেম চালাইতেছস" আমি বললাম "আরে ধুর, ও এঙ্গেজড" আসলেই ও এঙ্গেজড... ওর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, ছেলে আস্ট্রেলিয়া থাকে। ওর ফুফাত ভাই, ছেলে সামনের বছর এসে বিয়ে করবে... কিন্তু তবুও মানুষের কথা থামে না... এছাড়া ওর সাথে বন্ধুত্ব হবার পর দেখালাম আমার অনেক শুভাকাঙ্খি, তারা যেচে আসে আমাকে উপদেশ দেয়! রূপবতীরা খুব খারাপ ,তারা ছেলেদের ইউজ করে এই সমস্ত ব্যাপারে তারা খুব জ্ঞান দিত! আমি মিটিমিটি হাসতাম! আমিও বুঝতাম এদের যৌবন জ্বালা যেখানে হয়ার কথা সেখানে না হয়ে মাথায় উঠে গেছে... তাই রূপবতীর রূপ সহ্য হয় না...



কিন্তু একদিন আমার সহ্য হল না... একদিন একটা জিজ্ঞেস করল “কিরে গাড়ি কেমন চলে?” আমি বললাম “কিসের গাড়ী?” সে বলল “মামা তুমি তো প্রেম চালাইতেছ? তো গাড়ী কি চালাইছস?” আমি বললাম “কোন গাড়ী টাড়ি চলে না, কারন আমি প্রেম করি না... ও এঙ্গেজড” সে বলে “মামা আমাগোরে এইগুলা কইলে হইব না... এত লগে ঘুরো মাগীর তরমুজে বুঝি হাত দেও নাই এইটা কোন কথা?” আমি বললাম “মুখ সামলে কথা বল” সে বলে “না বললে কি করবি? ব্যাটা তোর এত লাগে ক্যা? প্রেম যখন নাই তো তোর কি? ব্যাটা মাগীর দালাল” আমার আর সহ্য হল না... আমি লাগাই দিলাম ঘুসি ওর গালে... এরপর দুই জনের ধ্বস্তাধস্তি! আমার কপাল কাটা গেল...



ও কপালে হাত দিয়ে বলছিল “আচ্ছা তোর কি এত দরকার ছিল হিরোইজম দেখানোর? আমাকে বলতি ব্যাটার অবস্থা টিইট করতাম” আমি চুপ করে রইলাম... বলল “শুধুই ঝগড়া করলি, ব্যাটা হলে থাকে, যদি পোলাপান নিয়ে এসে মার লাগায়? এমনিতেই তোর সাথে এত মেশামিশি খালি ভেজাল লাগতেছে... আমার ফ্যামেলি তে খুব কথা উঠেছে... ও তো আগে ভাগে চলে আসছে... বিয়ে মনে হয় আগে ভাগে হয়ে করে ফেলতে চায়” ওর কথা শুনেই হটাত এত খারাপ লাগলো বুঝাতে পারব না... মনে হল পৃথিবী হটাত শুন্য হয়ে গেল, সব কিছু যেন স্থবির, শব্দহীন। আমি কোন মতে বললাম “তাহলে আমার সাথে আর মিশিস না” বলে আমি হাটা শুরু করলাম... চোখ জ্বালা শুরু করলো! ও পেছন থেকে ডাকা শুরু করলো, ওর কথা যেন আমার কানে ও ঢুকছে না...



ও দৌড় দিয়ে এসে আমার হাত ধরল, “আরে বাবা এত অভিমান করলে হবে? কত অভিমানরে বাবা!” আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি... ও আমার হাত ধরে টান দিয়ে বসাল, আমার পাশে এসে বসল আমার হাত ধরল! অভিমানে আমার চোখ ফেটে পানি আসতে চাইছে... ওর দিকে তাকাতে পারছিলাম না... ও বলল “এদিকে তাকা” আমি তাকালাম না... মাথা নিচু করে বসে আছি! ও হটাত আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার গালে চুমু খেয়ে বসল তারপর বলল “আমার যেই অবস্থা তাতে তুই কনদিন ও বলতে পারবি না তুই আমাকে ভালবাসিস। আমি জানি... বাট আমি তোকে ভালবেসে ফেলেছি... জানিনা এর ভবিষ্যৎ কি! বাট আমি তোকে ভালবাসি, আর এজন্য আমি যেকোনো ছাড় দিতে রাজি আছি...”



বলেই সে উঠে গেল, আমি কোন কথা বলতে পারছিলাম না... বলিও নি! শুধু মনে মনে বললাম “আমিও তোকে ভালবাসি, অনেক ভালবাসি... আমি তোর জন্যে সব হতে পারি... নায়কের মত তোকে না পেলে আমি তোর জন্যে ভিলেন ও হতে পারি, দরকার হলে আমি সত্যিই ভিলেন হব সমাজের চোখে, শুধু তোর জন্যে”



কিন্তু যে আমি সামনাসামনি এ কথাগুলো বলতে পারি নি, সে আমি কি সত্যিই ওর জন্যে এমন হতে পারব??

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.