![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নাম ও নামকরণ একটি গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়। নামই নামকৃতের প্রথম পরিচয়। এ কারণেই নাম আগ্রাসনের শিকার হয়। স্পেন হাতছাড়া হওয়ার পরে বিজয়ীরা সেখানের রোড-স্থাপত্যের নামে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। কারণ নামগুলোতে ইসলাম অথবা মুসলমানের গন্ধ ছিলো। সম্পূর্ণ পরিবর্তনে যদি ঝামেলা মনে হয়েছে, তো বিকৃত করেছে। তবুও আপন অবস্থায় থাকতে দেয়নি।
কতোগুলো নামের সাথে মুসলমানদের ইতিহাসের সম্পর্ক রয়েছে। সেসব নাম নিয়ে তাদের ষড়যন্ত্র বহু পুরানো। আজ আমরা স্পেনের নাম জানি। আর বই পুস্ত্মকে পড়ি উন্দুলুসের কথা। কিন্তু খুব কম সংখ্যকই বলতে পারবে যে, আজকের স্পেন, আমাদের সেই উন্দুলুস।
পত্র-পত্রিকায় প্রতিদিন সিরিয়ার কথা আসে। বই-পুস্ত্মকে আসে শামের কথা। ফাতাওয়া শামী ও আলস্নামা শামীর নাম সবার মুখে মুখে। কিন্তু হয়তো সচেতন লোকেরাই বলতে পারবেন যে, আজকের সিরিয়া হলো ইতিহাসের শাম।
প্রথম দিন 'ইজিপ্ট' শুনে চমকে উঠেছিলাম, এটা আবার কোন দেশ! পরে জানতে পারলাম- মিশরকেই ইজিপ্ট নামে ডাকা হয়। আগামী প্রজন্ম হয়তো ইজিপ্ট শুনে চমকে উঠবে না। তবে তাদের খুব কম সংখ্যকই বলতে পারবে যে, ইতিহাসের মিশরই ইজিপ্ট নামে আগ্রাসনের শিকার হয়েছে।
'অটোমান সম্রাজ্য' কেনো বলতে হবে 'উসমানী খেলাফত'কে? পত্রিকায় পড়ে যদি কোনো বাচ্চা বলে- আব্বু! 'অটো মানবে'র সেই সম্রাজ্যটা কেমন ছিলো? কখন ছিলো? ধর্মকাতর বাবার হয়তো অশ্রম্নপাত হবে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলবে- 'হায়, উত্তর প্রজন্মের অধিকার নেই তাদের অবিকৃত পূর্বইতিহাস জানারও!!!'
আলস্নামা হারম্নন ইসলামাবাদী রহ.। আপনি তাকে চিনেন এবং জানেন- তিনি ছিলেন জামেয়া পটিয়ার অন্যতম সফল মুহতামিম। কিন্তু আগামী প্রজন্ম হয়তো মনে করবে- 'তিনি পাকিস্ত্মানের নাগরিক ছিলেন।' কারণ তাদের কয়জন আর জানবে যে, আজকের চিটাগং, কালকের চট্টগ্রাম আরো আগে ইসলামাবাদ ছিলো। আমাদেরই-বা কয়জন বলতে পারবে যে, সিলেটের পূর্বনাম 'জালালাবাদ'?
ভেতরে ভেতরে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বাধ্য হয়েই আজ আমাদেরও ওসব নামই বলতে হয়। কিন্তু সেতো বধ্যবাধকতার কথা! আমাদের লোকেরাও যখন অকারণেই এসব বিকৃত নাম মুখে আনেন, খারাপ লাগারই কথা। হ্যা, তখন খারাপ লাগার সীমা থাকে না। হায়, তাদের প্রচারের প্রভাব আমাদেরও পেয়ে বসেছে!!!
কেউ হয়তো বলবেন- নাম পরিবর্তনশীল। সেই পরিবর্তনের ধারায়..ই এই পরিবর্তন। কথা সত্য। রাসূলের আগমনে 'ইয়াছরিব' মদীনাতুর রাসূলে পরিণত হয়েছিলো। আমরা যাকে আজ সংÿেপে 'মদীনা' বলি। কিন্তু সেই পরিবর্তন, আর এই পরিবর্তন!!! কিছু পরিবর্তন বেদনার। আমি সেই বেদনার কথাই বলছি।
যদি ব্রাক্ষ্ণণবাড়িয়ার নাম 'শহীদবাড়িয়া' সর্বমহলে পরিচিতি লাভ করে, আমি খুশী হবো। কিন্তু ইসলাম ও মুসলমানদের নাম ধীরে ধীরে মুছে ফেলার এই যে ধারা, তাতে আমি ব্যথিত, ভীষণ ব্যথিত। কারণ এসব পরিবর্তনের মাঝে আমি ক্রমঃপতনের গন্ধ পাই।
চট্টগ্রাম শহরের একটি জায়গার নাম 'শোলকবহর বা শেস্নাকবহর'। অধিকাংশের..ই ধারণা হবে.. এটি একটি স্থানের নাম, আরকি! খুব কম মানুষই এ-কথাটা খুঁজে পাবে যে, এর সাথেও ইতিহাস বা ঐতিহ্যের সম্পর্ক রয়েছে। চট্টগ্রামকে বলা হয় বাংলাদেশে ইসলামের প্রবেশদ্বার। বলা হয়ে থাকে মামুন ও মুহাইমিন নামে দু'জন সাহাবীও ওমর রা.-র খেলাফতকালে চীন যাওয়ার পথে চট্টগ্রামে অবতরণ করে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। সে কারণে চট্টগ্রামের সাথে ইসলামের সম্পর্ক অনেক গভীর, অনেক প্রাচীন। এখানের মানুষের কথায়, নামে এবং জায়গার নামেও সে ছাপ রয়েছে। নান্টু-বল্টু নামের আধিক্য এখানে আজও কম। মানুষের মুখের ভাষায় আজও অনেক আরবী শব্দ শোনা যায়।
ওই 'শোলকবহর'ও আরবী শব্দ। চট্টগ্রাম যখন ইসলামাবাদ ছিলো তখন শেস্নাকবহর ছিলো 'সুলুকে বহর', মানে সমুদ্রে যাওয়ার পথ। শোলকবহর থেকে সামনে এগুলেই পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, একথা এখানের সবাই জানে। কিন্তু এ-কথা খুব কম মানুষই জানে যে, এ শোলকবহরের পথ ধরে ওই সমুদ্রসৈকতে যাওয়া হতো বলেই আজকের শোলকবহরকে আগে 'সুলুকে বহর' বলা হতো।
দেখুন- সামান্য পরিবর্তনই নামটিকে কতোটা শেকড়ের থেকে গন্ধহীন করে দিয়েছে!!! আমাদের কাছে হয়তো নামের গুরম্নত্ব নেই। কিন্তু ওদের কাছে ঠিক...ই এর গুরম্নত্ব অপরিসীম। নতুবা আমাদের অবচেতন রেখে এই পরিবর্তনের খেলা, কী লাভ তাদের এই সামান্য খেলা খেলে?! এটা আসলে কোনো সামান্য বা উদ্দেশ্যহীন খেলা নয়। এ খেলা অতি অসামান্য এবং সুদূর প্রসারী। এর মাধ্যমে মূলতঃ আমাদেরকে শেকড় থেকে সম্পর্কহীন করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। হায় আমাদের অবচেতনতা! হায় আমাদের অসহায়ত্ব! হায় আমাদের প্রতিবাদহীন শেকড়হীনতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার অবচেতন অভিযাত্রা!
যদি বলেন- নাম পরিবর্তনশীল, আমি বলবো- তাহলে সামনেও পরিবর্তন হবে। সে..ই পরিবর্তনে যদি আমাদের ঢাকা হয়ে যায় 'দারম্নল খিলাফাহ', পদ্মাসেতু হয়ে যায় খানজাহান আলী সেতু, যমুনা সেতু হয়ে যায় শাহপরান সেতু আর আগের সেই ইসলাম-মুসলিমযুক্ত নামগুলো আবার আগের মতো হয়ে যায় কিংবা সাধিত হয় আরো সুন্দর পরিবর্তন; খুবই ভালো লাগবে।
বন্ধুদের লেখায় যখন দেখি 'আল-হিন্দ', আমার খুশীর অন্ত্ম থাকে না। মনে পড়ে- হ্যাঁ, হাদীছের ভাষায় তো ভারতীয় উপমহাদেশকে 'আল-হিন্দ' বলেই উলেস্নখ করা হয়েছে। মনে হতে থাকে- বিপরীত পরিবর্তনের খেলাও বুঝি শুরম্ন হয়ে গেলো!!! নতুন ইতিহাস লেখার প্রসববেদনা অত্যাসন্ন, অচিরেই জন্ম গ্রহণ করবে অতীব সুন্দর ফুট ফুটে একটি 'সোনালী দিন'। চলছে সেই ভালো লাগার সুন্দর দিনের 'ইনতিযার'। আমি সেই 'সোনালী দিনে'র অপেÿায়............
আলস্নাহ না করম্নন!!! যদি সেই ফুট ফুটে 'সোনালী দিনে'র জন্মের আগেই আমার মৃত্যু হয়, আমার পÿ থেকে তাকে অভিনন্দন জানাইয়ো! বলিও...... তোমার স্বপ্নে বিভোর হয়ে যে মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে, যে মানুষ ছিলো তোমার আগমনের অধীর অপেÿমাণ, যে মানুষ তোমাকে স্বরূপে দেখার জন্য আজীবন ছটফট করে গেছে; সে রকম একজন মানুষ আলস্নাহর বিধান মেনে তোমার জন্ম লাভের সামান্য আগে বিদায় নিয়েছে। তার পÿ থেকে তোমাকে 'ভালোবাসা ও অভিনন্দনের সালাম', হে সোনালী দিন!!!
©somewhere in net ltd.