![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জানাযায় ফাতিহা পড়ার ব্যাপারে আমাদের মতামত হলো- ‘জানাযায় ফাতিহা পড়ার অবকাশ অবশ্যই আছে। তবে তা ছানা হিসাবে। ফরয-ওয়াজিব কিছুই নয়’। আর আহলে হাদীছ বন্ধুগণ মনে করেন- ‘জানাযায় ফাতিহা পড়া ওয়াজিব, জানাযায় যে ফাতিহা পড়লো না, তার নামায শুদ্ধ হয়নি।’ তাদের দলীল হলো-
عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَوْفٍ، قَالَ: صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الكِتَابِ قَالَ: ্রلِيَعْلَمُوا أَنَّهَا سُنَّةٌগ্ধ صحيح البخاري (٢/ ٨٩)
ত্বলহা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আওফ রহ. বলেন- আমি ইবনে আব্বাস রা.’র পেছনে জানাযার নামায আদায় করেছি। নামাযে তিনি সূরা ফাতিহা পড়েছেন। (নামায শেষে) বলেছেন- (আমি ফাতিহা পড়েছি) যাতে লোকেরা জানতে পারে যে, এটা সুন্নাত। (সহীহ বুখারী-১৩৩৫)
তারা বলে- এ হাদীছ থেকে জানা গেলো যে, জানাযায় ফাতিহায় পড়া প্রমাণিত এবং রাসূল সা. জানাযায় ফাতিহা পড়েছেন। কেননা ইবনে আব্বাস রা. এটাকে সুন্নাত বলেছেন। আর সুন্নাত মানে তো, যা রাসূল সা. করেছেন! তাদের আরেকটি দলীল হলো উবাদাহ ইবনে সামিত রা.’র হাদীছ: রাসূল সা. বলেছেন-
্রلاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الكِتَابِগ্ধ
‘যে সূরা ফাতিহা পড়লো না, তার নামায নেই’। (সহীহ বুখারী-৭৫৬)
তারা বলেন- এ হাদীছ তো ব্যাপক! জানাযার নামাযও যেহেতু নামায, এই হাদীছ জানাযা নামাযকেও অন্তর্ভুক্ত করবে। সুতরাং জানাযা নামাযে সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। অন্যথা নামায হবে না। এ হলো তাদের দাবী ও দলীলের সারমর্ম।
এ শেষোক্ত হাদীছ দ্বারা তাদের দলীল পেশ করার ভিত্তি জানাযা ও অন্য নামাযের ‘একাত্মতা’র ওপর। কিন্তু জানাযা ও অন্য নামাযের একাত্মতা’টাই প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা অন্য নামায হলো শুধু ইবাদত। আর জানাযা নামায হলো দু‘আমূলক ইবাদত। জানাযা নামাযের হাকীকতই হলো দু‘আ। জানাযা নামাযকে ‘সালাত’ বলা হয়, এ নামায দু‘আর হওয়ার কারণেই। সালাত শব্দের অর্থও হলো দু‘আ। এ নামাযে মূল দু‘আর আগে হামদ-ছানা ও সালাত আলান্নবী সবকিছু হলো ওই দু‘আর..ই প্রারম্ভিকা। এ সালাতে রুকু নেই, সাজদাহ নেই, তাশাহুদ নেই; তা সত্ত্বেও এই নামায অন্য নামাযের সাথে একাত্ম হয় কী করে? এ কারণেই ইমাম মালেক রহ. বলেছেন-
إنَّمَا هُوَ الدُّعَاءُ. المدونة (١/٢٥١)
জানাযা নামায তো শুধু দু‘আ..ই। (আল-মুদাওওয়ানাহ, ১:২৫১)
ইমাম ইবনে হুমাম রহ.ও বলেছেন-
إنَّ حَقِيقَتَهَا هُوَ الدُّعَاءُ. فتح القدير (٢/١١٨)
জানাযা নামাযের হাকীকত..ই হলো দু‘আ। (ফাতহুল কদীর-২:১১৮)
আর ওপরের সব কথাকে সমন্বয় করে ইমাম কাসানী রহ. বলেছেন-
وَقَوْلُهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ ্রلَا صَلَاةَ إلَّا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِগ্ধ وَلَا صَلَاةَ إلَّا بِقِرَاءَةٍ لَا يَتَنَاوَلُ صَلَاةَ الْجِنَازَةِ؛ لِأَنَّهَا لَيْسَتْ بِصَلَاةٍ حَقِيقَةً إنَّمَا هِيَ دُعَاءٌ وَاسْتِغْفَارٌ لِلْمَيِّتِ، أَلَا تَرَى أَنَّهُ لَيْسَ فِيهَا الْأَرْكَانُ الَّتِي تَتَرَكَّبُ مِنْهَا الصَّلَاةُ مِنْ الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ إلَّا أَنَّهَا تُسَمَّى صَلَاةً لِمَا فِيهَا مِنْ الدُّعَاءِ، وَاشْتِرَاطُ الطَّهَارَةِ، وَاسْتِقْبَالُ الْقِبْلَةِ فِيهَا لَا يَدُلُّ عَلَى كَوْنِهَا صَلَاةً حَقِيقِيَّةً كَسَجْدَةِ التِّلَاوَةِ؛
আর রাসূল সা.’র হাদীছ: ‘ফাতিহা না পড়লে নামায নেই’ এবং ‘কিরাআত ছাড়া নামায নেই’ জানাযার নামাযকে অন্তুর্ভুক্ত করে না। কেননা এটা প্রকৃত অর্থে কোনো নামায নয়। এটা হলো মায়্যেতের জন্য দু‘আ ও ইস্তিগফার। কেননা যে সকল রুকনের দ্বারা নামাযের অবকাঠামো তৈরী হয়, যেমন রুকু-সাজদাহ; এসব তো জানাযায় পাওয়া যায় না। হ্যাঁ, এটাকে সালাত নামে অভিহিত করা হয়েছে। তবে তা করা হয়েছে, কারণ এ নামাযেও দু‘আ রয়েছে। আর তহারাত ও ইস্তিকবালে কিবলা দ্বারা এটা প্রকৃত অর্থেও নামায হওয়া বুঝা যায় না। এ সব তো সাজদায়ে তিলাওয়াতেও আছে! (বদায়েউস সানায়ে, ১:৩১৪)
দেখুন! রাসূল সা.’র হাদীছ...
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ্রلَا صَلَاةَ إِلَّا بِقِرَاءَةٍগ্ধ
কিরাআত ছাড়া নামায নেই। (সহীহ মুসলিম-৩৯৬)
এর রাবী কিন্তু আবু হুরাইরা রা.। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত আরো একটি হাদীছ দেখুন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ্রأَمَرَهُ أَنْ يَخْرُجَ يُنَادِي فِي النَّاسِ أَنْ لَا صَلَاةَ إِلَّا بِقِرَاءَةِ فَاتِحَةِ الْكِتَابِ، فَمَا زَادَগ্ধ . ্রهَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ لَا غُبَارَ عَلَيْهِ، المستدرك على الصحيحين للحاكم (١/ ٣٦٥)
রাসূল সা. আবু হুরাইরা রা.কে লোকদের মধ্যে এ কথা ঘোষণা করার জন্য আদেশ দিলেন যে, ফাতিহা ও আরো অতিরিক্ত পড়া ব্যতীত কোনো নামায নেই। (মুসতাদরাক-৮৭২) এ হাদীছ বর্ণনা করার পরে ইমাম হাকেম রহ. বলেন- ‘এ হাদীছ সহীহ, কোনো সন্দেহ নেই’। হাফেয যাহবী রহ.ও তার সাথে সহমত পোষণ করেছেন।
এ হাদীছ দু’টো এখানে উল্লেখ করার কারণ হলো- উবাদাহ রা. যে হাদীছ বর্ণনা করেছেন, সেই একই হাদীছ আবু হুরাইরা রা.ও বর্ণনা করেছেন। আগে আমরা আলোচনা করেছি যে, উবাদাহ ও আবু হুরাইরা রা.’র হাদীছ সহ ‘ফাতিহা ছাড়া নামায নেই’ মর্মে যতোগুলো হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, সব হাদীছের উদ্দেশ্য হলো ইমাম ও মুনফারিদ। কেননা এই আবু হুরাইরা রা. থেকেই মুসলিম ও নাসাঈতে বর্ণিত হাদীছে ইমামের পেছনে মুকতাদীকে কিরাআত পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। আর এই আবু হুরাইরা রা. ‘ফাতিহা বা কিরাআত ব্যতীত নামায নেই’ এই হাদীছের রাবী হওয়া সত্ত্বেও জানাযার নামাযে তার মাযহাব হলো কিরাআত না পড়া। আবার এ কথা বলারও অবকাশ নেই যে, ওই হাদীছ হাদীছের রাবী আবু হুরাইরা রা.’র কাছে পৌঁছেনি, আহলে হাদীছ বন্ধুরা প্রায়ই যেমন বলে থাকেন। তাহলে বুঝা যায় যে, জানাযার নামায ‘ফাতিহা বা কিরাআত ছাড়া নামায নেই’ মর্মে বর্ণিত হাদীছসমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়। বা অন্য ভাষায় বললে- ওইসব হাদীছে যে নামাযের কথা বলা হয়েছে, সালাতুল জানাযা সেই নামায নয়।
আবু হুরাইরা রা. থেকে উপরোল্লিখিত মুসতাদরাকের হাদীছের আলোকে আহলে হাদীছ বন্ধুগণের সমীপে একটি প্রশ্নও রয়েছে। তারা তো হাদীছের ব্যাপকতার আশ্রয় নিয়ে দাবী করেন যে, ‘জানাযায় কিরাআত পড়তেই হবে, অন্যথা নামায হবে না’! প্রশ্ন হলো- তাহলে তারা জানাযার নামাযে ফাতিহার পরে সূরা মিলানোর কথা বলেন না কেনো? কেননা হাদীছে তো শুধু ‘ফাতিহা বা কিরাআত ব্যতীত নামায নেই’ বলে..ই কথা শেষ করা হয়নি, বরং আবু হুরাইরা রা.’র মুসতাদরাকের হাদীছে এবং পূর্বোল্লেখিত মুসলিম-নাসাঈর হাদীছে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা মিলানোর কথাও বলা হয়েছে। সুতরাং উবাদাহ রা.’র হাদীছ অনুযায়ী যদি জানাযায় ফাতিহা পড়তে হয়, তাহলে আবু হুরাইরা রা.’র হাদীছ অনুযায়ী সূরাও মিলাতে হবে। অন্যথা’ হাদীছের কিছু অংশকে মেনে বাকী অংশকে অকারণেই বর্জন করা হবে।
তবে এসব কথা আহলে হাদীছ বন্ধুদের দাবীর প্রেক্ষিতে..ই বলা। অন্যথা’ আসল কথা হলো- আগের আলোচনা অনুযায়ী উবাদাহ রা.’র হাদীছ দ্বারা সব নামাযী যেমন উদ্দেশ্য নয়, এ আলোচনা অনুযায়ী ওই হাদীছের দ্বারা জানাযা সহ সব নামাযও উদ্দেশ্য নয়। জানাযা নামাযের হাকীকত হলো দু‘আ। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত হাদীছে জানাযার নামাযের ব্যাপারে রাসূল সা.’র নির্দেশ হলো-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صـ يَقُولُ: ্রإِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى الْمَيِّتِ، فَأَخْلِصُوا لَهُ الدُّعَاءَগ্ধ
যখন তোমরা জানাযা পড়বে, তো মায়্যেতের জন্য ইখলাস-একাগ্রতার সাথে দু‘আ করেবে। (সুনানে আবু দাউদ-৩১৯৯, সুনানে ইবনে মাজাহ-১৪৯৭)
ইখলাসের সাথে দু‘আ করার ব্যাখ্যায় আল্লামা মুনাভী রহ. বলেন-
قَالَ الْمُنَاوِيُّ أَيِ ادْعُوا لَهُ بِإِخْلَاصٍ لِأَنَّ الْقَصْدَ بِهَذِهِ الصَّلَاةِ إِنَّمَا هُوَ الشَّفَاعَةُ لِلْمَيِّتِ وَإِنَّمَا يُرْجَى قَبُولُهَا عِنْدَ تَوَفُّرِ الْإِخْلَاصِ وَالِابْتِهَالِ انْتَهَى. عون المعبود (٨/ ٣٤٤) مرعاة المفاتيح (٥/٤١١)
কেননা এ নামাযের উদ্দেশ্য হলো মায়্যেতের জন্য সুপারিশ করা।
আর সুপারিশ কবুল হওয়ার আশা তখন..ই করা যায়, যদি পরিপূর্ণ ইখলাস নিয়ে দু‘আ করা হয়। (আওনুল মা‘বূদ, ৮:৩৪৪; মির’আতুল মাফাতীহ, ৫:৪১১)
এ হাদীছের ব্যাখ্যায় আল্লামা শওকানী রহ. বলেন-
فِيهِ دَلِيلٌ عَلَى أَنَّهُ لَا يَتَعَيَّنُ دُعَاءٌ مَخْصُوصٌ مِنْ هَذِهِ الْأَدْعِيَةِ الْوَارِدَةِ، وَأَنَّهُ يَنْبَغِي لِلْمُصَلِّي عَلَى الْمَيِّتِ أَنْ يُخْلِصَ الدُّعَاءَ لَهُ، سَوَاءٌ كَانَ مُحْسِنًا أَوْ مُسِيئًا، فَإِنَّ مُلَابِسَ الْمَعَاصِي أَحْوَجُ النَّاسِ إلَى دُعَاءِ إخْوَانِهِ الْمُسْلِمِينَ وَأَفْقَرُهُمْ إلَى شَفَاعَتِهِمْ وَلِذَلِكَ قَدَّمُوهُ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ، وَجَاءُوا بِهِ إلَيْهِمْ، نيل الأوطار (٤/ ٧٨)
জানাযার নামাযে বর্ণিত দু‘আসমূহ থেকে কোনো দু‘আ..ই যে নির্দিষ্ট নয়, (বরং মুসল্লী যে নিজের থেকে মায়্যেতের জন্য যে কোনো সুন্দর-অর্থবহ দু‘আ করতে পারবে) এ হাদীছ হলো তার দলীল। আর মুসল্লীর উচিৎ হলো মায়্যেতের জন্য ইখলাসের সাথে দু‘আ করা। চাই মায়্যেত নেককার হোক বা গুনাহগার। কেননা গুনাহগার তো তার মুসলিম ভাইদের দু‘আ ও শাফা‘আতের আরো বেশী মুখাপেক্ষী। আর এ দু‘আর জন্যই তাকে (তার আপন জনেরা) তাদের সামনে পেশ করেছে এবং তাদের কাছে নিয়ে এসেছে। (নায়লুল আওতার, ৪:৪৮)
উপরোক্ত হাদীছ ও উদ্ধৃতিসমূহ থেকে তো এ কথাই দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত হয় যে, জানাযা নামায হলো দু‘আ। এ ছাড়া জানাযা ও অন্য নামাযের আরো কতিপয় ব্যাবধান আলোচনার শুরু লগ্নে..ই অতিবাহিত হয়েছে। এসব যখন জানাযা ও অন্য নামাযের মধ্যে বিস্তর ভিন্নতাকেই প্রমাণ করে, তখন উভয় নামাযের একাত্মতার দাবী করে জানাযার নামাযেও কিরাআত ফরয-ওয়াজিব হওয়ার দাবী করা যায় কিভাবে?
তাছাড়া রাসূল সা. জীবনে এক বার দু’বার নয়, অসংখ্য বার জানাযার নামায আদায় করেছেন। কেউ জানবেন, কেউ জানবেন না এমনটা হয়তো কোনো অনিয়মিত সুন্নাত-মুস্তাহাব বিষয়ে হলেও হতে পারে, কিন্তু অত্যাবশ্যক বিষয়াদি অবশ্যই রাসূল সা. প্রতি নামাযে আদায় করবেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রা.’র রাসূল সা. থেকে তা শিখে-জেনে আমল করবেন, এটাই স্বাভাবিক। সে হিসাবে সকল সাহাবীর..ই নখদর্পনে থাকার কথা ছিলো যে, উবাদাহ রা. থেকে বর্ণিত ওই হাদীছের কারণে জানাযার নামাযেও সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক।
কেউ যদি অপারগ হয়ে দাবী করেন যে, উবাদাহ রা.’র হাদীছের কারণে নয়, বরং অন্য দলীলের কারণে জানাযায় ফাতিহা পড়া ফরয বা ওয়াজিব, তাহলেও ওই প্রশ্ন..ই ফিরে আসবে যে, সেই স্বতন্ত্র দলীল ও সেই দলীল থেকে উদগত মাসআলা সম্পর্কে সর্বস্তরের সাহাবায়ে কেরাম অবগত হলেন না কেনো? বারংবার কৃত কোনো আমলের কোনো সার্বজনীন বিধান সম্পর্কে তো কমপক্ষে মক্কা-মদীনার সাহাবায়ে কেরামের সার্বজনীন ইলম-অবগতি থাকার কথা! অথচ বড়ো বড়ো সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে জানা যায় যে, তারা জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়তেন না। যেমন তাঁদের এক জন হলেন ইবনে উমার রা.। তাঁর ফাযায়েল-মানাকেব এবং রাসূলের সুন্নাহর প্রতি তার আগ্রহ-ইত্তেবার কথা আর কী বলবো?! তা সত্ত্বেও ইমাম মালেক রহ. নাফে‘ রহ. থেকে বর্ণনা করেন-
مَالِكٌ، عَنْ نَافِعٍ؛ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ لاَ يَقْرَأُ فِي الصَّلاَةِ عَلَى الْجِنَازَةِ.
ইবনে উমার রা. জানাযায় কিরাআত পড়তেন না। (মুআত্তা-৭৭৭)
জানাযায় কিরাআত না পড়ার পক্ষে শুধু ইবনে উমার রা...ই নন। ইবনে অহাব রহ. সাহাবা-সলফ সব স্তরের আহলে ইলমের এক বড়ো দল সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন যে, তারা জানাযায় কিরাআত পড়তেন না। তারা হলেন-
قَالَ ابْنُ وَهْبٍ عَنْ رِجَالٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ وَعَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ وَفَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ وَأَبِي هُرَيْرَةَ وَجَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ وَوَاثِلَةَ بْنِ الْأَسْقَعِ وَالْقَاسِمِ بْنِ مُحَمَّدٍ وَسَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ وَابْنِ الْمُسَيِّبِ وَرَبِيعَةَ وَعَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ وَيَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ: أَنَّهُمْ لَمْ يَكُونُوا يَقْرَءُونَ فِي الصَّلَاةِ عَلَى الْمَيِّتِ. قَالَ ابْنُ وَهْبٍ وَقَالَ مَالِكٌ: لَيْسَ ذَلِكَ بِمَعْمُولٍ بِهِ بِبَلَدِنَا إنَّمَا هُوَ الدُّعَاءُ، أَدْرَكْتُ أَهْلَ بَلَدِنَا عَلَى ذَلِكَ. المدونة (١/٢٥١)
উমার ইবনুল খাত্তাব, আলী ইবনে আবু তালিব, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার, ফাযালাহ ইবনে উবাইদ, আবু হুরাইরা, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ, ওয়াসিলা ইবনে আসকা‘, কাসেম ইবনে মুহাম্মাদ, সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ, ইবুল মুসায়্যাব, রবীআ‘, আত্বা ইবনে আবু রাবাহ, ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ রাদিআল্লাহু আনহুম প্রমুখ। মালেক রহ. বলেছেন- জানাযায় কিরাআত পড়ার ওপর আমাদের শহরে (মদীনা) আমল করা হয় না। জানাযা নামায তো দু‘আ। এর (বিশ্বাস-আমলের) ওপর..ই আমরা আমাদের শহরবাসীকে পেয়েছি।
(আল-মুদাওওয়ানাহ, ১:২৫১)
ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রহ. বলেন-
وَقَالَ ابْن بطال: وَمِمَّنْ كَانَ لَا يقْرَأ فِي الصَّلَاة على الْجِنَازَة وينكر: عمر بن الْخطاب وَعلي بن أبي طَالب وَابْن عمر وَأَبُو هُرَيْرَة، وَمن التَّابِعين: عَطاء وطاووس وَسَعِيد بن الْمسيب وَابْن سِيرِين وَسَعِيد بن جُبَير وَالشعْبِيّ وَالْحكم، وَقَالَ ابْن الْمُنْذر: وَبِه قَالَ مُجَاهِد وَحَمَّاد وَالثَّوْري، وَقَالَ مَالك: قِرَاءَة الْفَاتِحَة لَيست مَعْمُولا بهَا فِي بلدنا فِي صَلَاة الْجِنَازَة، عمدة القاري (٨/ ١٣٩)
ইবনে বাত্তাল রহ. বলেছেন- যারা জানাযায় ফাতিহা পড়তেন না, বরং ইনকার করতেন, তাদের কয়েক জন হলেন- উমার বিন খাত্তাব, আলী বিন আবু তালিব, ইবনে উমার, আবু হুরাইরা রা.। আর তাবেঈগণের মাঝে তাদের কয়েকজন হলেন- আত্বা, ত্বউস, সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব, ইবনে সিরীন, সাঈদ ইবনে জুবায়ের, শা‘বী, হাকাম রহ. প্রমুখ। ইবনুল মুনযির রহ. বলেছেন- একই মত পোষণ করেছেন মুজাহিদ, হাম্মাদ ও সুফইয়ান ছাওরী রহ.। ইমাম মালেক রহ. বলেছেন- জানাযায় ফাতিহা পড়ার ওপর আমাদের শহরে (মদীনা) আমল করা হয় না। (উমদাতুল কারী, ৮:১৩৯)
জানাযায় কিরাআত বর্জনকারী ও কিরাআতের প্রতি ইনকারকারীদের উপরোল্লিখিত তালিকাটি আরেক বার দেখুন। তারপর বলুন- আহলে হাদীছ বন্ধুগণের দাবীই যদি সত্য হয়, তাহলে এ সকল জলীলুল কদর সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈন-সাফলে সালেহীন এমন একটি আবশ্যক বিধান কিভাবে বর্জন করতে পারেন? যে বিধান সার্বজনীন এবং যা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক, তার ইলম এ সকল সাহাবায়ে কেরামের নিকট কিভাবে না পৌঁছে পারে? অথবা পৌঁছার পরেও তারা কিভাবে বর্জন বা উপেক্ষা করতে পারেন? বরং তাঁরা তো জানাযায় কিরাআতকে ইনকার করতেন! কিভাবে সম্ভব? আরো দেখুন-
عن أَبَي هُرَيْرَةَ: وسئل كَيْفَ يصَلِّي عَلَى الْجَنَازَةِ؟ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: أَنَا، لَعَمْرُ اللهِ أُخْبِرُكَ، أَتَّبِعُهَا مِنْ أَهْلِهَا، فَإِذَا وُضِعَتْ كَبَّرْتُ، وَحَمِدْتُ اللَّهَ، وَصَلَّيْتُ عَلَى نَبِيِّهِ، ثُمَّ أَقُولُ: اللَّهُمَّ هذا عَبْدُكَ , وَابْنُ عَبْدِكَ , وَابْنُ أَمَتِكَ , كَانَ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُولُكَ، وَأَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ، اللَّهُمَّ إِنْ كَانَ مُحْسِنًا، فَزِدْ فِي إِحْسَانِهِ، وَإِنْ كَانَ مُسِيئًا، فَتَجَاوَزْ عَنْه، اللَّهُمَّ لاَ تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ، وَلاَ تَفْتِنَّا بَعْدَهُ. موطأ مالك (١/٤٠١)
জানাযা নামায কিভাবে আদায় করবে? আবু হুরাইরা রা.’র কাছে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- আল্লাহর কসম, আমি তোমাকে অবশ্যই তা জানাবো। আমি মৃতকে পরিবার (থেকে যখন নেয়া হবে, তখন) থেকেই তার সাথে যাই। যখন (নামাযের জন্য লাশ) রাখা হবে, তখন আমি তাকবীর বলি, আল্লাহর হামদ পাঠ করি এবং তাঁর নবীর ওপর দরূদ পড়ি।। এরপর আমি বলি- .................(দু‘আ).................।
(মুআত্তা মালেক-৭৭৫; মুআত্তা মুহাম্মাদ-৩১১, হি.নু.-১৬৮।)
দেখুন! আবু হুরাইরা রা.’র কাছে জানাযার পদ্ধতি সম্পর্কে..ই জানতে চাওয়া হয়েছিলো। তিনি কসম খেয়ে বলেছেন যে, জানাযার পদ্ধতি বলবেন। এরপর বললেনও, কিন্তু সেখানে সূরা ফাতিহার কথা নেই। কেনো নেই? রাসূল সা.’র সাহচর্যে যাঁদের জীবন কেটেছে, তাঁদের কাছে সার্বজনীন ও বাধ্যতামূলক কোনো বিধানের ইলম থাকবে না, কীভাবে ভাবা যায়? অথবা জানা থাকা সত্ত্বেও তিনি কোনো ওয়াজিব বিধানকে বাদ দিয়ে শিখিয়ে দিবেন, হতে পারে?
মদীনা শরীফ। রাসূল সা., সাহাবায়ে কেরাম রা. ও ইলমের সাথে এ শহরের কেমন সর্ম্পক, তা কি কাউকে বলে বুঝাতে হবে? ওই মদীনা শরীফের জলীলুল কদর ইমাম হলেন বিখ্যাত তাবেঈ ইমাম মালেক রহ.। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে দেখেছেন এবং তিনি মদীনায় যাদেরকে পেয়েছেন, তাঁরা ছিলেন সাহাবা, সাহাবায়ে কেরামের সন্তান-সন্তুতি, অন্যান্য তাবেঈ ও তাবেয়ে তাবেঈগণ। এমন একটি শহর থেকে ওই তাবেঈ যুগে..ই ওয়াজিব বা ফরযের মতো কোনো বিধান ‘নাই’ হয়ে যেতে পারে?! অথচ ইমাম মালেক রহ. জানাযায় কিরাআত পড়ার ব্যাপারে কী বলেছেন? আরেক বার স্মরণ করুন ...
قَالَ ابْنُ وَهْبٍ وَقَالَ مَالِكٌ: لَيْسَ ذَلِكَ بِمَعْمُولٍ بِهِ بِبَلَدِنَا إنَّمَا هُوَ الدُّعَاءُ، أَدْرَكْتُ أَهْلَ بَلَدِنَا عَلَى ذَلِكَ. المدونة (١/٢٥١)
‘মালেক রহ. বলেছেন- জানাযায় কিরাআত পড়ার ওপর আমাদের শহরে (মদীনা) আমল করা হয় না। জানাযা নামায তো দু‘আ। এর (বিশ্বাস-আমলের) ওপর..ই আমরা আমাদের শহরবাসীকে পেয়েছি’। (আল-মুদাওওয়ানাহ, ১:২৫১)
সুতরাং এ কথা..ই সত্য যে, ‘নামায’ বলা হলেও অন্য নামায আর জানাযা নামায এক নয়। জানাযা নামাযের প্রকৃতি হলো দু‘আ। জানাযার আয়োজন হলো বিদেহী আত্মার উদ্দেশ্যে দু‘আর জন্য, যার যাত্রা সম্পূর্ণ অপরিচিত এক স্থানে। যেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছে অনেকগুলো কঠিন কঠিন মারহালা। যেখানে তার থেকে জীবনের অণুপরমাণুর হিসাব নেয়া হবে। সে যেনো সেই হিসাব-নিকাশ ও জবাবদিহিতায় উত্তীর্ণ হতে পারে, সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নাজাত লাভ করতে পারে; সে উদ্দেশ্যে তার জন্য দু‘আ-ইস্তিগফার কার জন্য..ই এই নামায। এ নামাযের সাথে অন্য নামাযের কাঠামোগত পার্থক্য যেমন রয়েছে, উদ্দেশ্যগত পার্থক্যও রয়েছে। সুতরাং অন্য নামাযের সব বিধান যে এখানে কার্যকর হবে না, এ কথা বলা..ই বাহুল্য।
এ পর্যন্তের আলোচনার সাথে একমত হওয়ার পরে হয়তো কেউ এই প্রশ্নটিই করবেন যে, ইবনে আব্বাস রা. যে বলেছেন- জানাযায় ফাতিহা পড়া সুন্নাত? হ্যাঁ, ইবনে আব্বাস রা. এ কথা বলেছেন। সাহাবী যখন কোনো কাজকে সুন্নাত বলেন, তখন সুন্নাত বলতে ফরয, ওয়াজিবের পরের সুন্নাত উদ্দেশ্য হয় না। উদ্দেশ্য হয়, এ কাজটি রাসূল সা. থেকে প্রমাণিত, ব্যস, এতোটুকু..ই। এরপরে তা অন্যান্য দলীল, হালত, করায়েন ইত্যাদির সমন্বয়ে ফরযও হতে পারে, ওয়াজিবও হতে পারে, আবার তা সুন্নাত মুস্তাহাবও হতে পারে। মুবাহও হতে পারে। সুতরাং আমাদের এখন চিন্তা করতে হবে যে, ইবনে আব্বাস রা. যে সুন্নাত বলেছেন, এখানে সুন্নাত দ্বারা কী উদ্দেশ্য? আল্লামা ত্বীবী রহ. বলেছেন-
(سُنَّةٌ) قَالَ الطِّيبِيُّ: أَيْ: لَيْسَ بِدْعَةً. مرقاة المفاتيح (٣/ ١١٩٧)
এখানে সুন্নাত থেকে উদ্দেশ্য হলো- ‘এটা বিদ‘আত নয়’। (মিরকাত, ৩:১১৯৭)
আবু উমামা রহ.ও সুন্নাত বলেছেন। (সুনানে নাসাঈ ও ইবনে আবী শায়বা রহ.-১১৩৭৯) তার কথারও ওই একই ব্যাখ্যা। জানাযায় ফাতিহা পড়া বিদআহ নয়। জানাযায় ফাতিহা পড়ার অবকাশ রয়েছে। কেননা আবু হুরাইরা রা.’র হাদীছ থেকে জানা যায় যে, জানাযায় প্রথম তাকবীবেরর পরে করণীয় হলো আল্লাহর হামদ-ছানা করা। ইবনে মাসঊদ রা. বলেছেন- জানাযায় কওল-কিরাআত কিছুই নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। তাই কেউ চাইলে সূরা ফাতিহার মাধ্যমেও হামদ করতে পারে, কেউ চাইলে অন্য শব্দেও হামদ-ছানা করতে পারে। জানাযায় হামদ-ছানা কোনো মুখ্য বিষয় নয়, হামদ-ছানা ও দুরূদ হলো জানাযার মূল উদ্দেশ্য তথা মায়্যেতের জন্য কৃত দু‘আ কবুল হওয়ার প্রারম্ভিকা, সম্পূরক ও সহায়ক বিষয়। কেননা দুআর আদব হলো- হামদ ও দুরূদের পরে দু‘আ করা। তাহলে দু‘আ কবূল হওয়ার সম্ভাবনা অধিক প্রবল হয়। তাই কেউ নিজ ভাষায়ও আল্লাহর হামদ বা ছানা করতে পারে, বর্ণিত কোনো দু‘আও পড়তে পারে, আবার চাইলে হামদ-ছানার উদ্দেশ্যে ফাতিহাও পড়তে পারে। যেমন আল্লামা কাসানী রহ. বলেছেন-
وَلِأَنَّهَا شُرِعَتْ لِلدُّعَاءِ، وَمُقَدِّمَةُ الدُّعَاءِ الْحَمْدُ وَالثَّنَاءُ وَالصَّلَاةُ عَلَى النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - لَا الْقِرَاءَةُ،
এবং কেননা জানাযা নামায হলো (মায়্যেতের উদ্দেশ্যে) দু‘আ করার জন্য। আর দু‘আর প্রারম্ভিকা হলো হামদ-ছানা ও রাসূল সা.’র ওপর দুরূদ পড়া; কিরাআত পড়া নয়।
(বদায়েউস সানায়ে‘, ১:৩১৪)
এ কারণেই আমরা বলি- ফাতিহা পড়ার অবকাশ তো অবশ্যই রয়েছে। তবে তা হবে দু‘আর প্রারম্ভিকা হামদ-ছানা হিসাবে, কিরাআহ বা ফরয-ওয়াজিব হিসাবে নয়। আইনী রহ. বলেন-
وَعَن ابْن مَسْعُود: لم يُوَقت فِيهَا النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قولا وَلَا قِرَاءَة، وَلِأَن مَا لَا رُكُوع فِيهِ لَا قِرَاءَة فِيهِ كسجود التِّلَاوَة، وَاسْتدلَّ الطَّحَاوِيّ على ترك الْقِرَاءَة فِي الأولى بِتَرْكِهَا فِي بَاقِي التَّكْبِيرَات، وبترك التَّشَهُّد. وَقَالَ: لَعَلَّ، قِرَاءَة من قَرَأَ الْفَاتِحَة من الصَّحَابَة كَانَ على وَجه الدُّعَاء لَا على وَجه التِّلَاوَة. عمدة القاري (٨/١٤١)
ইবনে মাসঊদ রা. বলেছেন- ‘রাসূল সা. জানাযায় আমাদের জন্য কোনো কথা বা কিরাআতকে সুনির্দিষ্ট করে দেননি’। (জানাযায় কিরাআত না থাকার আরো একটি কারণ হলো-) ‘যে ইবাদতে রুকু নেই, তাতে কিরাআতও নেই। যেমন সাজদায়ে তিলাওয়াত।’ ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেছেন- ‘জানাযায় বাকী তাকবীরসমূহের পরে কোনো কিরাআত নেই। এ থেকে বুঝা যায় যে, প্রথম তাকবীরেও কোনো কিরাআত নেই’। তিনি আরো বলেছেন- সাহাবায়ে কেরামের যারা জানাযায় ফাতিহা পড়েছেন, তাদের পড়ার ব্যাখ্যা হয়তো এটাই যে, তারা দু‘আ হিসাবে পড়েছেন, তিলাওয়াত হিসাবে নয়। (উমদাতুল কারী, ৮:১৪১)
এখানে জানাযার নামাযে হামদ-ছানা ও দু‘আর বাক্যবলীর অবস্থান স্পষ্টরূপে বিবৃত হয়েছে। নি¤েœাক্ত কথা থেকে জানাযার হাকীকত আরো পরিস্কার হবে। ইমাম তিরমিযী রহ. যাঁরা জানাযায় ফাতিহা বা কিরাআতের প্রবক্তা ননা, তাদের মাযহাব নকল করতে গিয়ে বলেন-
لَا يُقْرَأُ فِي الصَّلَاةِ عَلَى الجَنَازَةِ، إِنَّمَا هُوَ ثَنَاءٌ عَلَى اللَّهِ، وَالصَّلَاةُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَالدُّعَاءُ لِلْمَيِّتِ، وَهُوَ قَوْلُ الثَّوْرِيِّ، وَغَيْرِهِ مِنْ أَهْلِ الكُوفَةِ، وَطَلْحَةُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَوْفٍ هُوَ ابْنُ أَخِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ، رَوَى عَنْهُ الزُّهْرِيُّ سنن الترمذي (٣/٣٣٧)
জানাযায় কিরাআত পড়া হবে না। জানাযা নামায হলো- ছানা, দুরূদ ও মায়্যেতের জন্য দু‘আর সমষ্টি। এটা হলো ইমাম ছাওরী রহ.’র মত। তিনি ছাড়াও এ মত পোষণ করেছেন কূফার অধিবাসীগণ ও ত্বলহা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আওফ প্রমুখ। (সুনানে তিরমিযী, ৩: ৩৩৭)
পাঠকের অবশ্যই খেয়াল থাকার কথা যে, আহলে হাদীছ বন্ধুদের দলীল ইবনে আব্বাস রা.’র হাদীছের রাবী হলেন ত্বলহা ইবনে আব্দুল্লাহ রহ.। তিনি ইবনে আব্বাস রা.কে জানাযায় ফাতিহা পড়তে দেখেছেন এবং ইবনে আব্বাস রা.’র উক্তি ‘এটা সুন্নাত’ তিনি..ই বর্ণনা করেছেন। অথচ তা সত্ত্বেও ইমাম তিরমিযী রহ. বর্ণনা করেছেন যে, ওই ত্বলহা ইবনে আব্দুল্লাহ রহ...ই মনে করেন- ‘জানাযায় কিরাআত নেই’। এর থেকে কি এটাই বুঝা যায় না যে, ইবনে আব্বাস রা. ওই হাদীছে সুন্নাত বলতে এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে, জানাযায় ফাতিহা পড়া বিদআত নয়। জানাযায় হামদ-ছানা হিসাবে কিছুই যখন রাসূল সা. কর্তৃক নির্ধারিত নেই, এখানে হামদ-ছানা হিসাবে ফাতিহা পড়া যাবে, যেমন অন্য কিছু পড়া যায়। ইবনে আব্বাস রা. থেকে সাক্ষাতে ইলম গ্রহণকারী হাদীছের রাবী জানাযায় কিরাআত বা ফাতিহা পড়াকে ফরয-ওয়াজিব কিছুই মনে করেন না, অথচ আমরা ওই হাদীছের আশ্রয় নিয়েই অন্যদের নামায বাতিল করার মিশনে নেমে পড়েছি! লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ।
শেষকথা হলো- এতোক্ষণ জানাযায় ফাতিহা বা কিরাআত পড়া-না-পড়ার ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম ও সফলের যে আমল ও উক্তি পরিবেশিত হলো, তার সারমর্ম হলো জানাযায় প্রথম তাকবীরের পরে স্থান হলো আল্লাহর হামদ ও ছানার। এখন সেই হামদ ও ছানা কিভাবে আদায় করা হবে, এ ব্যাপারে তাদের আমল বিক্ষিপ্ত। কেউ ফাতিহা পড়েছেন, কেউ পড়েননি। এ থেকে বুঝা যায় যে, ওয়াজিব-ফরয হওয়া তো দূরের কথা, এ সময় সূরা ফাতিহা পড়া অন্য কোনো বিশেষণেও নির্দিষ্ট..ই নয়; যেমন নির্দিষ্ট নয় জানাযায় দু‘আ পড়ার বাক্য। জানাযায় ফাতিহা পড়া জায়েয আছে, যেমন জায়েয আছে ছানা বা অন্য কোনো হামদমূলক বাক্য পড়াও। আশা করি এতোক্ষণের আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত সত্য। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইজতিহাদী মাসআলার অবস্থান এবং ইজতিহাদী ক্ষেত্রে উক্তি ও আমলের যথার্থ পদ্ধতি সম্পর্কে বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।
©somewhere in net ltd.