নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ময়মনসিংহের ত্রিশালে নজরুল

২৩ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:৪৪

পূর্বকথা
১৯০৯ সালে এফএ পাশ করেন ত্রিশালের ছেলে কাজী রফিজউল্লাহ। ১৯১০ সালে চাকরির জন্য ময়মনসিংহ সদরে যান। সাব-ইন্সপেক্টর পদের জন্য আবেদন করেন এবং চাকরি পেয়ে যান। তাঁর পোস্টিং হয় পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের আসানসোলে। কাজী রফিজউল্লাহ তাঁর ছোট ভাই কাজী আবুল হোসেনকে একসময় সেখানে নিজের কাছে নিয়ে যান এবং আসানসোল হাইস্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। নজরুল তাঁর সহপাঠী ছিলেন। বার্ষিক পরীক্ষায় নজরুল প্রথম হয়ে ৭ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। আবুল হোসেন উঠতে পারেননি, আগের শ্রেণিতেই থাকেন। কিন্তু তাঁদের সম্পর্ক অটুট থাকে। নজরুল মাঝে মাঝে এসে আবুল হোসেনকে পড়াতেন।

জানা যায়, শিক্ষকগণ মেধাবী ছাত্র নজরুলকে খুব পছন্দ করতেন। কারণ, তাঁকে যা বোঝানো হতো, খুব সহজেই বুঝে ফেলতেন। শিক্ষকগণ মাঝে মাঝে তাঁকে ক্লাস নিতে বলতেন। এমনও হয়েছে নজরুল ক্লাস নিচ্ছেন আর শিক্ষক বসে আছেন।

যাহোক, অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে একসময় নজরুলের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। তাঁকে স্কুল ছাড়তে হয়। তিনি সেখানকার এক রুটির দোকানে মাসিক পাঁচ টাকা মাহিনায় চাকরি নেন।

ত্রিশালে নজরুল
কেউ কেউ বলেন, কাজী রফিজউল্লাহ্ দারোগা নজরুলকে বাসার সিঁড়ির নিচে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পান। তারপর দয়াপরবশ হয়ে তাঁকে ময়মনসিংহে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯১৪ সালে রফিজউল্লাহ দারোগা নজরুলকে বর্ধমানের আসানসোল থেকে ত্রিশালের কাজির সিমলায় নিয়ে আসেন। দরিরামপুর হাইস্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন।

নজরুল প্রথমে কাজির সিমলা থেকে পাঁচ মাইল হেঁটে সহপাঠীদের সাথে স্কুলে আসতেন। বর্ষা-বাদলের দিনে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হতো। কারণ রাস্তাঘাট এখনকার মতো পাকা ছিল না। হাঁটু সমান কাদা মাড়িয়ে আসতে হতো। এহেন সমস্যার কারণে একসময় তাঁকে বটতলা নামাপাড়ায় বিচুতিয়া বেপারীর বাড়িতে লজিং থাকতে হয়।

এখানে নজরুল একবছর পড়াশোনা করেন। একাডেমিক রেজাল্টও খুব ভালো ছিল তাঁর। শিক্ষকগণও তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হতেন। একবার কোনো কারণে, যদ্দুর জানা যায়, পরীক্ষার খাতায় নাম্বারিং নিয়ে কোনো এক শিক্ষকের সাথে তাঁর মনোমালিন্য হয়। তিনি স্কুল ছেড়ে বেপারী বাড়ি চলে আসেন এবং সারারাত খুব কান্নাকাটি করেন। সবাই কারণ জানতে চাইলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন। পরদিন কাউকে না বলে রাণীগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন। প্রচণ্ড অভিমানী নজরুল আর কখনও ত্রিশালে আসেননি।

১৯২৬ সালের ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহের টাউন হলে জেলা কৃষক ও শ্রমিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য নজরুলকে দাওয়াত দেওয়া হয়।অসুস্থতার অজুহাতে তিনি আসেননি। তবে ময়মনসিংহের অবদান সম্পর্কে নজরুল লিখেছেনঃ
“ময়মনসিংহ আমার কাছে নতুন নহে। এই ময়মনসিংহ জেলার কাছে আমি অশেষ ঋণী। আমার বাল্যকালে অনেকগুলি দিন ইহারই বুকে কাটিয়া গিয়াছে। আজও আমার মনে সেইসব প্রিয় স্মৃতি উজ্জ্বল ভাস্বর হইয়া জ্বলিতেছে। বড় আশা করিয়াছিলাম আমার সেই শৈশবচেনা ভূমির পবিত্র মাটি মাথায় লইয়া ধন্য হইব, উদারহৃদয় ময়মনসিংহ জেলাবাসীর প্রাণের পরশমণির স্পর্শে আমার লৌহপ্রাণকে কাঞ্চনময় করিয়া তুলিব, কিন্তু তাহা হইল না, দুর্ভাগ্য আমার।”

ত্রিশাল এখন
নজরুল নেই, কিন্তু এখনও আছে সেই বটগাছ; যার নিচে বসে নজরুল আপন মনে বাঁশি বাজাতেন। কাটিয়ে দিতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এখনও আছে সুতিয়া নদী, যার কূল ঘেঁষে নজরুল হাঁটতেন; যদিও নদীতে নাব্যতা নেই।

কাজির সিমলায় নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বটতলা নামাপাড়ায় বিচুতিয়া বেপারী বাড়িতে নজরুল যাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে। দরিরামপুর হাইস্কুলের নাম পাল্টে এখন নজরুল একাডেমী রাখা হয়েছে। নজরুলের নামে ত্রিশালে গড়ে উঠেছে অনেক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। শুকনি বিলের ওপর ২০০৬ সালে একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়ও স্থাপন করা হয়েছে। যার নাম রাখা হয়েছে ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়’। দূর-দূরান্ত থেকে হাজারও শিক্ষার্থী এসে নজরুল সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করছে। নজরুলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছর নজরুল জয়ন্তী হয়, নজরুলের ওপর আলোচনা হয়। গান-বাজনার পাশাপাশি নজরুলের সাহিত্য নিয়ে নাটকও হয়। অভিনয় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই জয়ন্তী এখন ত্রিশালবাসীর বাৎসরিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।

নজরুলের উল্লেখযোগ্য একটি কবিতা

ঈশ্বর
কাজী নজরুল ইসলাম
কে তুমি খুঁজিছ জগদীশ ভাই আকাশ পাতাল জুড়ে’
কে তুমি ফিরিছ বনে-জঙ্গলে, কে তুমি পাহাড়-চূড়ে?
হায় ঋষি দরবেশ,
বুকের মানিকে বুকে ধ’রে তুমি খোঁজ তারে দেশ-দেশ।
সৃষ্টি রয়েছে তোমা পানে চেয়ে তুমি আছ চোখ বুঁজে,
স্রষ্টারে খোঁজো-আপনারে তুমি আপনি ফিরিছ খুঁজে।
ইচ্ছা-অন্ধ! আঁখি খোলো, দেখ দর্পণে নিজ-কায়া,
দেখিবে, তোমারি সব অবয়বে প’ড়েছে তাঁহার ছায়া।
শিহরি’ উঠোনা, শাস্ত্রবিদের ক’রোনা ক’ বীর, ভয়-
তাহারা খোদার খোদ ‘প্রাইভেট সেক্রেটারি’ ত নয়!
সকলের মাঝে প্রকাশ তাঁহার, সকলের মাঝে তিনি!
আমারে দেখিয়া আমার অদেখা জন্মদাতারে চিনি!
রত্ন লইয়া বেচা-কেনা করে বণিক সিন্ধু-কূলে-
রত্নাকরের খবর তা ব’লে পুছো না ওদের ভুলে’।
উহারা রত্ন-বেনে,
রত্ন চিনিয়া মনে করে ওরা রত্নাকরেও চেনে!
ডুবে নাই তা’রা অতল গভীর রত্ন-সিন্ধুতলে,
শাস্ত্র না ঘেঁটে ডুব দাও, সখা, সত্য-সিন্ধু-জলে। 

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মে, ২০১৫ রাত ১০:১২

নাসরীন খান বলেছেন: ভাল লাগল লেখাটি।

২৩ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:১০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধন্যবাদ ।

২| ২৩ শে মে, ২০১৫ রাত ১০:২৯

ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: ঝরঝরে সাবলিল লেখা। ভালো লেগেছে।

২৩ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:১১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.