নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])
ময়মনসিংহ শহরে থাকার সময় জামালপুরের এক ছেলে আমার রুমমেট ছিল। তার নাম ছিল আবু সুফিয়ান। সে এক উকিলের ছেলেকে প্রাইভেট পড়াত। এই ছেলে কীভাবে একজন উকিলের ছেলেকে পড়ায়, আমার বুঝে আসত না। কারণ, সে নিজেই বাংলা ‘রিডিং’ পড়তে পারত না। ইংলিশ বা গণিত কেমন পারত; সে কথা তো বলাই বাহুল্য।
একদিন জিগ্যেস করলাম, ‘কেমনে কী?’ সে হাসে। কিছুই বলে না।
একদিন দেখা গেল বাসার কাছে এক দোকানে বসে দোকানদারি করছে। রাতে জিগ্যেস করলাম, দোকান নিয়েছে কি না। সে জানাল, দোকানদারের ৭ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে পড়ায় সে। দোকানদার বলেছেন, সুযোগ পেলে মাঝেমধ্যে দোকানে যেন বসে।
চমৎকৃত হলাম এটা ভেবে যে, অন্য এলাকার একটা মানুষ কীভাবে এখানে এসে এত সহজে একটা পরিবারের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করল। পরে নিজের জন্য আফসোসও হলো, আহা আমি একটা টিউশনির খোঁজে ত্রিশাল থেকে ময়মনসিংহে চলে এলাম, অথচ একটা টিউশনিও খুঁজে পেলাম না। অচেনা শহরে একটা উপার্জনের রাস্তা হলো না।
কী না করলাম একটা টিউশনির জন্য। সিভি বানিয়ে কোচিংয়ে কোচিংয়ে ঘুরলাম। একে ওকে কত অনুরোধ করলাম একটা টিউশনি জোগাড় করে দিতে। অথচ কিছুতেই কিছু হলো না।
এক সহপাঠী একটা কোচিংয়ে নিয়ে গিয়েছিল। একদিন সেখানে ক্লাশও করালাম। দ্বিতীয়দিন গিয়ে শুনি, যে শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে আমি ক্লাশ করাতে গিয়েছি, উনি নাকি আবার আসবেন। কপাল পুড়ল আমার।
এক কাজিন একটা টিউশনির প্রস্তাব এনেছিল। একটা ঝামেলায় পড়ে দু’দিন পেছানোয় টিউশনিটা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। অবশ্য শুরু করলেও পড়াতে পারতাম কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ ছিল আমার। টিউশনির অভিজ্ঞতা আগে তেমন ছিল না।
ময়মনসিংহে যখন থাকা হলো না, চলে এলাম ভালুকায়। এখানে স্কুল-কোচিংয়ের পাশাপাশি টিউশনি ধরলাম একটা। প্রথমদিন গিয়ে পুরো দেড় ঘণ্টা ঠিকমতো পড়ালাম। আমার ধারণা, নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। দ্বিতীয়দিন গিয়ে দেখি কেউ বাসায় নেই। ফোন দিলে অভিভাবক জানালেন, তার ছেলে স্কুলের এক শিক্ষকের কাছে পড়বে। খুব অবাক লাগল এটা ভেবে যে, এত যত্ন করে পড়ালাম; এই তার প্রতিদান!
তখন পুরোপুরি বুঝতে পারি, শুধু ভালো পড়ালেই টিউশনি থাকে; ব্যাপারটা এমন সহজ না। শিক্ষার্থীদের মনমর্জিও বুঝে চলতে হয়। এখনকার ছেলেমেয়েরা আগেরদিনের মতো নয় যে, শিক্ষকের মেজাজ সহ্য করবে। শত ভালো পড়ালেও তাদের মন জুগিয়ে না চললে তারা পড়বে না। তারা স্কুল-কলেজের শিক্ষককে বদল করারও ক্ষমতা রাখে।
এরপর থেকে নিজের মধ্যে বিরাট এক পরিবর্তন চলে আসে। সব রোগের যেমন এক ওষুধ না, তেমনই সব ছাত্রকে পড়ানোর কৌশলও এক না। পড়ানোর শুরুতে ওদের মনস্তত্ত্ব বুঝতে শিখি। যারা বেশি মনোযোগী তাদের বেশি পড়ালে তেমন সমস্যা না, তবে যারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল, অমনোযোগী, বা কম বুঝে, তাদের পর্যায় বুঝে পড়াতে শুরু করি। শুধু যে পড়াই, তা না। গল্প-গুজবও করি। এমনও হয়েছে, স্কুলে পড়ানোর সময় ক্লাসে ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে নাচ-গান-কবিতার আসর বসিয়েছি।
দেখা গেছে, একসময় আমি সবচেয়ে জনপ্রিয় শিক্ষকে পরিণত হয়েছি। ছেলেমেয়েরা সব শিক্ষকের কাছে, এমনকি বাড়িতে গিয়েও অভিভাবকগণের কাছে আমার গল্প করে। যারা নিন্দে করত, তারা দেখত আমার বিষয়ে ছেলেমেয়েরা ভালোও করত। সুতরাং, তারা অভিযোগ করতে পারত না যে আমার বিষয়ে পড়ালেখা কম হয়।
আরও একটা বিষয় অভিভাবকগণের মনমর্জি। অফিস আদালতে কাজ করলে যেমন বসের মনমর্জি বুঝতে হয় (যদিও অনেক বস আর সবকিছু এড়িয়ে শুধু কাজটাকেই প্রাধান্য দেন। তাদের হিসেব ভিন্ন।)। অভিভাবকগণকে যদি অবহিত করা যায় যে ভালো পড়ানো হচ্ছে, তাহলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ কিছু ক্ষেত্রে সামলানো যায়। অনেক শিক্ষক অভিযোগ করেন, অভিভাবকগণ সামনে থাকলে পড়াতে সমস্যা। অথচ আমি খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম অভিভাবকদের সামনে পড়াতে। একসময় একজন যখন উকিলের ছেলেকে পড়াত, নিজেকে অক্ষম মনে হতো। অথচ একদিন আমি নিজেও বহু পুলিশ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারের সন্তানকে পড়িয়েছি।
ক্ষুদ্র জ্ঞানে এতটুকু বুঝেছি, কাজের ব্যাপারে সৎ থাকলে আর কী করছি সেটার যথাযথ জবাবদিহিতা করতে পারলে তেমন সমস্যা হয় না। অফিস পলিটিক্স বা অভিভাবকগদের কূটনীতি; এসবের হিসেব অবশ্য আলাদা। অনেকসময় শত ভালো করলেও কারও কারও চক্ষুশূল হতে হয়।
ছবিঃ ইন্টারনেট
১৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:৪২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা আপনাকে।
২| ১৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:৫৩
ইসিয়াক বলেছেন: কবিতা আবৃত্তি প্রাকটিসে বসছি। আগামী ২৩ তারিখে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। পোস্ট পড়েছি।মন্তব্য বড় করে করবার ইচ্ছে ছিল। আসলে অনেক কথা জমা আছে এ ব্যপারে।এখন ছোট করে মন্তব্য করছি।পরে সময় পেলে আবার আসবো।
আপনার উপলব্ধি যথাযথ। তবে অভিভাবক সামনে থাকলে আমি পড়াতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আর পড়ানো শেষে পুরো পড়া অভিভাবককে বুঝিয়ে দিয়ে আসি। আমার দিক থেকে আমি ক্লিয়ার থাকি। অনেক বাচ্চাই টিচারকে ফাঁসাতে চায়।নানারকম মিথ্যা কথা বলে । সেজন্য আমি একটু বেশি সতর্ক থাকি। সাবধানের মার নেই কি বলেন?
১৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:০২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: পড়ানো শেষে পুরো পড়া অভিভাবককে বুঝিয়ে দিয়ে আসি। আমার দিক থেকে আমি ক্লিয়ার থাকি। আমি তাই করে এসেছি। এতে করে আমার প্রতি কখনো অভিযোগ হয়নি। বাচ্চারাও কোনো অভিযোগ করতে পারে নি। তারা জানত, বুঝত তাদের অভিযোগ ধোপে টিকবে না। যদিও আমার বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে একসময় পোষ মানিয়ে ফেলেছিলাম। সাত চড়ে রা বেরোত না।
৩| ১৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:২২
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এক সময় আমিও অনেক টিউশনি করতাম। তখন অভিবাক কেনো স্টুডেন্টের খালাকে মানিয়ে নিতে হতো। আহা সে সময়কার দিনগুলো মনে পড়লে এখনো হাসি পায়। একবার কয়েক মাস পড়ানোর পর এক ছাত্রি তার সব বিষয়ে ফেল মারে। লজ্জায় আমিই আমার পড়ানো ছেড়ে দিতে চাইলে অভিবাক আমাকে ছাড়তে রাজি নয়। এখানে পুরোটায় আপনার পোষ্টের বাস্তবতা। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
১৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১০:৩৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমি সরাসরি স্কুল শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও আমার প্রাইভেটের এক ছাত্র খারাপ করেছিল (দু'জনকে পড়াতাম একসাথে। একজন ভালো করেছিল)। আমি লজ্জা পেলেও স্টুডেন্টের মা পড়া চালিয়ে যেতে বলেছিলেন।
৪| ১৬ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১২:৪৭
ফাহমিদা বারী বলেছেন: অনুপ্রেরণার গল্প। টিউশনি করা খুব সহজ কাজ নয়। বুয়েটে পড়ার সময় আমি নিজেও কিছু টিউশনি করেছি। নানারকম অভিজ্ঞতা দিয়ে ঝুলি ভরেছে। সব গল্প খুব সুখের নয়।
১৬ ই জুলাই, ২০২৩ সকাল ৯:৪০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আসলেই সব অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। আমারও বেশকিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে।
৫| ১৬ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: বেশ অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন।
এই তো চাই।
১৬ ই জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৫:২১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আসলেই
৬| ১৬ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:৩২
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এখন শিক্ষকদেরও বিপনন কৌশল শিখতে হয়। তা না হলে টিকে থাকা মুশকিল।
১৬ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:৩৭
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ঠিকই। কৌশলী হলে আগপিছ ঠিক থাকে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:৩৮
প্রামানিক বলেছেন: বাস্তবতা তুলে ধরার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ