নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্বিধাদ্বন্দ্ব

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৩


সম্পাদক রোহান সাহেবের সামনে উপস্থিত মৃণাল, সাথে সহকর্মী রিজভী। কম্পিউটারে কিছু একটা লিখছিলেন সম্পাদক; এবার তাদের দিকে ফিরলেন।

‘কিছু বলবেন?’ সম্পাদক সাহেব জানতে চাইলেন।

রিজভী নিজে থেকে কিছু বলতে চাইছিলেন। তিনিই মৃণালকে সম্পাদকের সামনে এনেছেন। মৃণাল চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছিল, পরে মত বদল করেছে। এ কথাটা অ্যাডমিনকে জানানো হলেও সম্পাদককে বলা হয়নি। সে কথা বলার জন্যই সম্পাদকের সাথে দেখা করতে আসা।

কিছু না বলে মৃণালের দিকে ফিরে রিজভী বললেন, ‘বলুন।’

একটা শুকনো কাশি দিয়ে মৃণাল বলল, ‘আসলে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত বদল করেছি। অ্যাডমিনকে ওদিনই বলা হলেও আপনাকে বলা হয়নি।’

চাকরি না ছাড়ার কারণও বলল মৃণাল। আসলে নতুন হাউজে বেতন ঠিকমতো দেয় কি না, তার ঠিক নেই। তাছাড়া সামনে নির্বাচন, দেশে গণ্ডগোল। পরিবার-পরিজন রেখে পুরানা পল্টনে নতুন চাকরিতে যাওয়া নিরাপদ মনে করছিল না মৃণাল। তাই সিদ্ধান্ত বদল।

চাকরি ছাড়ার ব্যাপারে কথা বলতে গেলে সম্পাদক তাকে নতুন অফিসে যেতে বারণ করেছিলেন। নতুন হাউজে বেতন নিয়ে সমস্যার আশঙ্কার কথা বলেন। অ্যাডমিনও একই কথা বলেন। বেতন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেন। পরে ওদিনই সিদ্ধান্ত বদলায় মৃণাল। অ্যাডমিনকে জানালেও সম্পাদককে জানায়নি। এখন বেশ জটিলতা তৈরি হয়েছে। নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। নতুন লোক নেওয়া হচ্ছে। মৃণালের এখন চাকরি যায় যায় অবস্থা। অন্য জায়গায় যাওয়ারও সুযোগ নেই।

‘আসলে আপনার সাথে আর অ্যাডমিনের সাথে কথা বলার পর সিদ্ধান্ত বদল করেছিলাম; এটা আপনার সাথে শেয়ার করা হয়নি, যদিও অ্যাডমিনের সাথে কথা বলেছিলাম।’
‘আপনি তো কাগজ জমা দিয়েছিলেন পদত্যাগের?’
‘না। আমি অ্যাডমিনকে বলেছিলাম চাকরি ছাড়লে পরে জানাব।’
‘আমার তো একটা নিজস্ব পরিকল্পনা থাকে। আপনি হুট করে রিজাইন দেবেন, আবার থাকতে চাইবেন। এমন করলে তো অফিস চলে না।’

একটু থেমে মৃণাল বলল, ‘আসলে এখানে যে বেতন, এই বেতনে তো চলা যায় না। সবাই তো ভালো কোথাও যেতে চায়।’
‘আপনিও যান। আমি না করেছি?’ বিরক্ত কণ্ঠে বললেন সম্পাদক।
‘আপনি তো জানেন আমি ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। একটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগি।’
‘আপনি প্রথমদিন থেকেই ভোগাচ্ছেন। এখানে আসবেন কী আসবেন না, সেটা নিয়ে টালবাহানা করেছেন।’
‘কী করব? ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। আমার হয়েছে সেই দশা।’
‘আপনার ব্যক্তিগত সমস্যা দিয়ে তো অফিস চলে না। আপনি না থাকলেও অফিসের কিছু যায় আসে না।’

আসলেই তো। এই অফিসে আসার আগে ওদের বেশ যন্ত্রণা দিয়েছে মৃণাল। আগের চাকরি ছেড়ে আসবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। শেষ পর্যন্ত ঠেকায় পড়ে এসেছে, কারণ আগের অফিসের বেতনে চলা আরও কঠিন ছিল। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিতেই হলো।

এখানে আসার পর সম্পাদক-বার্তা সম্পাদক তাকে ভালোভাবে নেননি। তার দোদুল্যমানতা পছন্দ হয়নি কারও। তাও দেড় বছর কাটিয়ে দিয়েছে এখানে। কোনো ইনক্রিমেন্ট হয়নি। আগের অফিসের চেয়ে বেতন কিছুটা বেশি বটে, তবে খরচও বেড়েছে। ঢাকায় বাড়ি ভাড়া দিয়ে, থেকে-খেয়ে, বাড়িতে টাকা পাঠিয়ে কোলানো যাচ্ছে না।

X (আসল নাম না) নামে এক প্রতিষ্ঠানে সিভি দিয়েছিল। ভাইভা দেওয়ার পর ওরা আবার ডেকেছিল। সব মোটামুটি ঠিকঠাক ছিল। শেষ মুহূর্তে ওরা না করল। কেন না করল, জানা গেল না। বলেছিল, প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেবে, কিন্তু ঠিকই চলছে। অথচ ওই প্রতিষ্ঠানে হবে বলে Y (আসল নাম না)-তে সিভি পাঠিয়ে সাক্ষাৎ করে বলে এলো আরেকটা জায়গায় ডাকছে। এখানে হবে কি না, আবার হলে কবে নাগাদ হতে পারে সেটা জানতে চাইল। তারা জানাল, যেখানে ডাকছে, সেখানে জয়েন করেন। এখানে একটু সময় লাগবে।

সবশেষ এখানে যোগাযোগ করে জানা গেল, এখানে সিভি লিস্টেই রাখেনি যেহেতেু সে অন্য জায়গায় জয়েন করার কথা। প্রতিষ্ঠান হয়তো ভরসা পায়নি, ভেবেছে সে হয়তো আসবে না। এদিকে মৃণালের আশা ছিল এখানেই ঢোকা। কেমনে যে কী হয়ে গেল। এখানে বলা উচিত হয়নি, অন্য জায়গায় হয়েছে বলা। হয়ে গেলে রিজাইন দিয়ে এখানে এসে জয়েন করলে ল্যাটা চুকে যেত।

কোথাও জয়েন করলে হঠাৎ করে রিজাইন দেওয়া যায়? একমাস তো অন্তত সময় দেওয়া লাগে। এ নিয়মটা মৃণাল মানছে। মেনে কী লাভ? ক্ষতি তো তারই হচ্ছে। কোথাও চাকরি হয়েছে। আগেরটা বাদ দিয়ে এটাতেই জয়েন। হিসেব বরাবর। এত ভাবলে চলে!

একই রকম কথা বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রেও। বাড়িয়ে বলতে হয়। যে X চাকরি কনফার্ম হয়েছিল, তারা জানতে চেয়েছিল বর্তমানে বেতন কত? মৃণাল আসলটাই বলেছিল। যদি কয়েক হাজার বাড়িয়ে বলত, বেতন আরও বেশি হতো। যদিও সেই চাকরিটা আর হলো না। বাড়িয়ে-কমিয়ে বলায় লাভ নেই। মৃণালের আফসোস হলো Y-এর চাকরিটা নিজের নির্বুদ্ধিতায় না হওয়ায়। সেখানে লোক নেওয়া হয়ে গেছে।

‘এখন কিছু করা যায়?’ নিরুপায় হয়েই জানতে চাইল মৃণাল।
সম্পাদক বললেন, ‘এখানে থাকতে হলে মুচলেকা দিতে হবে কমপক্ষে ‍আরও একবছর থাকবেন। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন।’

কী বলবে ভেবে পেল না মৃণাল। শেষ পর্যন্ত মুচলেকা দিয়ে থাকতে হবে! মনটা বিষিয়ে উঠল। একটু ধাতস্থ হয়ে বলল, ‘বেতনটা কি বাড়বে শিগগিরই?’
‘সেটা বলতে পারব না। আপনাকে থাকতে হলে মুচলেকা দিয়েই থাকতে হবে। আপনি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.