![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
We know what we are but not what we may be
( আমার জীবনে লেখা প্রথম গল্প এটি। অনেক ভুলভ্রান্তি আছে। পাঠক- পাঠিকারা নিজ গুনে ক্ষমা করবেন। ঘুম ঘুম চোখে লেখা একটা ভালবাসার গল্প )
আকাশ অধরাকে পাগলের মত ভালবাসত। প্রায় ৬ মাস অপেক্ষার পর অধরার অবশেষে আকাশের সাথে সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠলো। আকাশ সারাদিন অধরার কথা ভাবতো। প্রতিরাতে স্বপ্নে অধরাকে দেখত। যেদিন যেদিন আকাশ অধরার সাথে দেখা করতে যেত সারাদিন কিছু খেত না। অনেক বেশি খুশি থাকতো দেখা হবে বলে। একসাথে কোথাও বসে থাকলে আকাশ পুরাটা সময় অধরার দিকে তাকিয়ে থাকতো। আর ভাবতো পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে তার পাশে এই মেয়েটা কি আসলেই বসে আছে?নাকি এটা তার কোন কল্পনা? আকাশ অনেক কষ্টে টাকা যোগাড় করে অধরার সাথে সারাদিন মোবাইলে কথা বলত। কারণ অধরার সাথে কথা না বলে আকাশ থাকতে পারত না একটা মুহূর্তও। এভাবে দেখা যেত আকাশের সারাদিন প্রায় ২০০ টাকাই ফোনের পেছনে যেত। আকাশ তখন মাত্র ভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছে। তারপরেও সে যত কষ্টই হোক না কেন যতক্ষণ সম্ভব হত অধরার সাথে কথা বলত। সুযোগ পেলেই দেখা করতে যেত। বৃষ্টির মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাড়িয়ে থাকতো অধরার বাসার সামনে। শুধু মাত্র টাকে একটা সেকেন্ড দেখার জন্য। সে খুশি ছিল। অনেক বেশি খুশি ছিল। অধরাকে নিয়ে সারাদিন ভাবতো। কিভাবে তাকে সারাজীবন খুশি রাখবে। একটা সুন্দর ও শান্তির জীবন তাকে দিবে। আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করত সে যেন অধরাকে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করে অনেক সুন্দর একটা সংসার সাজাতে পারে। অধরাও আকাশ কে অনেক ভালবাসত। সে তখন মাত্র এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছে। বয়স কম ছিল তার। তারপরেও অনেক কষ্ট করে তার সাথে ফোনে কথা বলত। বাসায় অনেক বকা খেত।আকাশের সাথে শত কষ্ট সত্তেও কথা বলত। খুব ভালই চলছিল তাদের সম্পর্ক। দুইজনই অনেক খুশি ছিল।
কিন্ত জীবন টা এত সোজা নয়। সময়,পারিপার্শ্বিকতা সবসময় আমাদের অনুকূলে থাকে না। পথে ভাঙন থাকবেই। বাধাও থাকবে। সেই বাধা পার করতে হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে সেই বাধা গুলো অনেক বেশি পরিবর্তন নিয়ে আসে জীবনে। আকাশের জীবনেও ঠিক এমনটাই হয়েছিলো। পরিবর্তন আশা শুরু হচ্ছিলো।
অধরা আমেরিকা চলে যাচ্ছিল। তাদের পুরো পরিবার ওখানেই শিফট হয়ে যাবে। দেশে আর আশা হবে না অধরার। এটা শুনে আকাশের মাথায় যেন বাজ পরল। তার অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো শরীরের একটা অংশ তার থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু সে নিজেকে ভাঙ্গতে দিল না। প্রতিজ্ঞা করল যেভাবেই হোক পড়াশোনা শেষ করে সেও আমেরিকা চলে যাবে। এদিকে অধরাও অনেক কান্নাকাটি করছিলো। কিন্তু আকাশ তাকে বোঝাল অনেক। বলল যে ফোন আছে ইন্টারনেট আছে। কথা তো হবেই। সম্পর্ক তো আর শেষ হয়ে যাচ্ছে না। অনেক কাঁদল অধরা। কিন্তু আকাশের কথায় একটু সাহস পেল। আকাশ কে বলল তাড়াতাড়ি যেন সেও চলে আসে। আকাশ বলল যে সেও যাবে সেখানে। যত বাধাই আসুক না কেন। নিজের কষ্টের কথা আকাশ গোপন রাখত সবসময়। সে নিজে কতটা কষ্টে আছে অধরাকে একটুও বুঝতে দিল না। কারণ এতে অধরা অনেক বেশি ভেঙ্গে পড়বে। তাকে ঠিক করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। শেষমেশ অধরা চলে গেল। এয়ারপোর্ট এ দাড়িয়ে দাড়িয়ে আকাশ অধরার চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখল। একা দাড়িয়ে। সেইদিন মনে হচ্ছিলো তার পুরো পৃথিবীটা যেন তার চোখের সামনে ভেঙ্গেচুড়ে গুড়ো হয়ে যাচ্ছে। পাগলের মত কাঁদল সেদিন। কিন্তু তার অটুট মনোবল ছিল নিজের মাঝে। সে নিজে নিজেকে বুঝাল যে কাদলে চলবে না। শক্ত হতে হবে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কিন্তু সে তো জানত না যে তার আশা গুলো চোরাবালি হয়ে দাঁড়াবে। বুঝতেও পারল না একটুও............
যাওয়ার প্রায় ১০ দিন পর অধরার সাথে তার কথা হল ফোনে। অনেক কান্না করছিলো অধরা। আকাশ তাকে বোঝাল যে আর একটু অপেক্ষা মাত্র। এরপরেই তো চলে আসব। প্রথম প্রথম তাদের অনেক কথা হত। ইন্টারনেটে কথা হত। ফোনেও কথা হত। কিন্তু আস্তে আস্তে সব কমে গেল। দেখা যেতে লাগলো ১০-১৫ দিন পর পর অধরা তার সাথে কথা বলত। তাও বেশিক্ষণ কথা বলত না। আকাশ শুধু তাকে জিজ্ঞেস করত সে ভালো আছে কিনা। ঠিক মত খাচ্ছে কিনা,ঘুমুচ্ছে কিনা পড়াশুনা করছে কিনা। কিন্তু আকাশ বুঝতে পারল যে অধরা তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ওখানকার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। এগুলো অনেক কষ্ট দিত আকাশ কে। মানতে পাড়ছিল না সে। হঠাট একদিন অধরা তাকে ফোন দিয়ে বলল যে সে আর এই সম্পর্ক চাচ্ছে না। তাদের আলাদা থাকাই ভালো। এইকথা শোনার পর আকাশ পাথরের মত হয়ে গেল। সে কিছুই বলতে পারল না। চুপ হয়ে গেল। অধরাও ফোন রেখে দিল। আর ফোন দিল না। আকাশ নীরবে এই কষ্ট নিজের ভেতর আটকে রাখল। দিনের পর দিন সে বসে থাকল একটা জায়গায়। অনেক ভাবল। অনেক ভাবল। কখনও হয়ত অধরার বাড়ির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকতো আবার কখনও সে পার্কে গিয়ে বসে থাকতো যেখানে তারা প্রথম দেখা করেছিল। অধরার বান্ধবীদের মুখে শুনল যে অধরা ওখানে আরেকটি ছেলের সাথে সম্পর্ক করেছে। অনেক ভালো আছে। এটা শুনে আকাশ একটু হাসল। শুধু একটা জিনিস ভাবল। যে সে আমেরিকা যাবে। কিছু দেয়া হয়তবা বাকি ছিল। অধরার একটা বান্ধবী ইরার সাথে আবার আকাশের কথা হত। শুধু মাত্র অধরার কথা জানতে সে ইরাকে ফোন দিত। ইরাও আকাশ কে ভালো জানত। জানত যে অধরাকে আকাশ কতটা ভালবাসত। অনেক রাগ হত ইরার অধরার উপর। সে কিভাবে পারল আকাশের সাথে এরকম করতে? তারপর আকাশের অনেক অনুরোধ সত্তে সে অধরার সব খবর আকাশ কে দিত। এভাবেই সময় চলে যেতে লাগলো। মাস পেরিয়ে গেল, বছরের পর বছর পার হল। সবাই পাল্টে গেল। কিন্তু আকাশ যেমন ছিল তেমন টি রইল।
১৫ বছর পর......
আকাশ আমেরিকায় চলে আসল। সেদিন সে অধরার বাসার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে রইল। অনেক উৎসব মুখর পরিবেশ ছিল সেদিন। কারণ অধরার বিয়ে হচ্ছিলো। আকাশ দূর থেকে দাড়িয়ে দেখছিল বিয়েটা। অধরাকে এত বছর পর দেখে চোখে পানি এসে পড়ল। পুরনো দিনের ছবি গুলো যেন তার চোখের সামনে এসে ভাসছিল। তার ভিতরে যেন বিস্ফোরণ হচ্ছিলো। কিন্তু স্বস্তি পেল অধরার মুখের হাসি দেখে। অনেক সুন্দর লাগছিল তাকে। অনেক বেশি। আকাশের খুব ইচ্ছে করছিলো অধরার হাত ধরতে। কিন্তু সে জানে এবং এটাই বাস্তব যে তার এই ইচ্ছে টা ইচ্ছেই রয়ে যাবে। পুরন হবে না কখনই। আকাশ একা ছিল। একাই রয়ে যাবে। পৃথিবীর ভিড়ের মাঝে সে হারিয়ে যাবে। আত্মাটা তার অতৃপ্তই রয়ে যাবে। সেদিন আকাশ অনেকক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। এক আকাশের অনেক বিশালতা। আর আরেক আকাশের মাঝে শুধুই শূন্যতা.........
৬ মাস পর...
অধরার মন অনেক খারাপ। কারণ তার একটা বাড়ি অনেক পছন্দ হয়েছে। কিন্তু সে এই বাড়িতে থাকতে পারবে না কখনও সে জানে। কারণ এটি তাদের শহরের সবচেয়ে দামী বাড়িগুলোর মাঝে একটি। বাড়িটা অনেক সুন্দর। সামনে বিশাল বাগান। রাজপ্রাসাদের মত দেখতে বাড়িটা। অধরার ছোট থাকতেই অনেক ইচ্ছে ছিল যে সে এরকম একটা বাড়িতে রানির মত থাকবে। রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় সে বাড়িটির দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকতো। ঠিক যেন তার স্বপ্নের মত করে বাড়িটা সাজানো ছিল।
সেদিন সে বাড়িতে একা ছিল। সবাই বাইরে গিয়েছিল। তো সে জানালার পাশে বসে কফি খাচ্ছিল।আকাশ অনেক মেঘলা ছিল সেদিন। অধরার কেমন জানি অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো যে কিছু একটা তার থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। তার চোখে পানি চলে আসল। বাইরে থেকে দেখল পোস্টম্যান লেটার বক্সে একটা বড় চিঠি দিয়েছে। তো সে সেটা নিয়ে আসল। চিঠিতে দেখল একটা বাড়ির কাগজপত্র। যেটা অসম্ভব ছিল সেটাই ঘটলো। সেই রাজপ্রাসাদের মত বাড়িটার চাবি আর দলিল তার হাতে ছিল। সাথে একটা চিঠি ছিল। চিঠিটা আকাশের। সে সাথে সাথে খুলে পড়তে লাগলো............
প্রিয় অধরা,
ভালো আছ নিশ্চয়ই। জিজ্ঞেস করব না কারণ তোমার সব খবর ই আমি রাখি।আমার সাথে এরকম কেন বা কি জন্যে করেছ তা আমি জানতে চাব না। তুমি অনেক ভালো আছ এটা বড় কথা। আমিও অনেক খুশি তোমাকে ভালো দেখতে পেরে। তোমার এই সুন্দর জীবনের জন্য আমার এই ছোট্ট একটা উপহার। এই বাড়িটি আমি তোমার নামে কিনেছি। কারণ আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তোমাকে। যে তোমাকে সারাজীবন খুশি রাখব। জীবন থাকলেও আর জীবন না থাকলেও। তুমি যেভাবে চেয়েছিলে তুমি তোমার বাসা সাজাবে আমিও নিজ হাতে এই বাড়িটা সাজিয়েছি। এর প্রতিটা অংশ তোমার মনের মত করে বানিয়েছি। আমার সারাজীবনের জমানো টাকা দিয়ে আমি তোমার জন্য এই স্বপ্নপুরী টা সাজিয়েছি। যার পুরোটা জুড়ে শুধু তোমারি আধিপত্য থাকবে।
তুমি যখন এই চিঠিটা পাবে তখন হয়তবা আমি তোমার থেকে অনেক দূরে। আমি চলে গিয়েছি। কারণ এই পৃথিবীটা আমার জন্যে না বোধহয়। আমার ব্রেইন টিউমার হয়েছিলো। ঠিক যেদিন তুমি সব শেষ করে দিলে তার একমাস পরেই আমি জানতে পারি সেটা। নিজেকে অনেক কষ্টে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম তোমাকে এই উপহার টা দেয়ার জন্য। দিনরাত যুদ্ধ করেছি নিজের সাথে,এই বাস্তবতার সাথে। কিন্তু আমি তোমাকে ভালবাসব। যেমন টা আগে ভালবাসতাম এখনও ঠিক সেরকমই বাসি। তোমার জন্য আমার ভালবাসা কখনও কম হবে না। কখনই না। পৃথিবীর কোন কিঞ্ছুই এই ভালবাসা কম করতে পারবে না। স্বয়ং ঈশ্বরও নয়।
I love you so much, অধরা
ভালো থেকো।
অধরা সেদিন বুঝতে পারল সে কি হারিয়েছে। সে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু দেরী হয়ে গেছে। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। তার চোখে পানি। এরপর প্রবল বর্ষণ শুরু হল। আজ এই বিশাল আকাশ টাও কাঁদছে...............
২| ৩১ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৩৪
সাদি আজাদ বলেছেন: ভাই, এটা গল্প হলেও এরকম অনেক চরিত্রই যুগে যুগে তৈরি হয় এবং পৃথিবীর নিষ্ঠুরতার মাঝে হারিয়ে যায়। তাদের কদর টা বুঝার মত মন নিয়ে সবাই জন্মাতে পারে না।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:৩৭
বাংলাদেশী দালাল বলেছেন: গল্পটা সুন্দর হয়েছে। আরো ভাল লিখবেন সামনে। ও গল্পটা সাথে বাস্তবের কোন..... নাকি শুধুই গল্প?