নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গুছানো-অগুছানো অনুভূতি

সাগর তামিম

হাওয়ায় ভাসা ভাবনাগুলো লেখা-বলা হয়ে উঠে না। যতটুকু ধরা দেয়া, তা কেবলি আবছা অন্ধকারের মতো...

সাগর তামিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গা শিউরে ওঠে: তবুও বিবেক ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে

২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৩২

১৯ আগস্ট, সেদিনও বিদ্যালয়ে পড়াশুনার জন্যে গিয়েছিল। সহপাঠিদের সাথে হৈ-হুল্লা করে মাতিয়ে রেখেছিল খেলার মাঠ-ক্লাস ক্যাম্পস। টিফিনের সময় নিচ তলা থেকে উপরে উঠতেই, ওৎ পেঁতে থাকা বখাটের কু-নজর পড়ে আজমেরীর উপর। দোতলায় আসতেই জোর করে একটি শ্রেণীকক্ষে নিয়ে সম্মানহানির চেষ্টা করে সম্রাট খান। জোর জবরদস্তি করে নিজেকে বাঁচিয়ে বেরিয়ে আসে আজমেরী। কিন্তু তাতেও যেন সম্মান কমতে থাকে। এক কান, দু’কান হতেই পুরো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে যায় ঘটনাটি।
কিছু সময় আগে যে সহপাঠিরা তাকে নিয়ে খোস গল্পে মেতে উঠেছিল, তারাও অল্প সময়ের বাবধ্যনে কেমন বদলে গেছে। মনে হয় আজমেরীই পৃথিবীর সবচে ঘৃণিত কাজটি করে এসেছে। এসব দেখে, হাফিঁয়ে উঠে মেয়েটি। ফলে বাধ্য হয়, ঘটনাটি ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সালমা বেগমকে জানাতে। শিক্ষিকাও আশ্বাস দেন সঠিক বিচারের। এরপর কেটে যায় তিনটি দিন। বিচার তো দূরের কথা শান্তনাটুকু দেয়নি প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরা। অবশেষে ২২ আগস্ট নিজের সম্মানহানির বিচার চেয়ে প্রধান শিক্ষক বরাবর আবেদন করে আজমেরী। ভাবলে শিউরে উঠে বিবেক, ‘‘নিজের সম্মানহানির বিচার।’’ তাও বিচার কি পেয়েছিল আজমেরী। পায়নি। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ম্যানেজিং কমিটির দোহাই দিয়ে ৩০ আগস্ট বিচারের দিনক্ষণ ঠিক করার আশ্বাসটুকু দিয়েছিল। আবেদন পাওয়ার পরেও তাৎক্ষণিক কোনই বিচার করেনি ওই বখাটের।
শৈশবের দূরান্তপানা তখনো কাটেনি। এখনো মাঝে মাঝে মা-বাবাকে জড়িয়ে রাতে ঘুমাতো মেয়েটি। কিন্তু সেই আজমেরীর জীবনে ঘটে এরকম…। এই ক’দিনেই পৃথিবীর যেন বিষাক্ত মনে হচ্ছিল মেয়েটির। তাই তো মরে যাওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। শুধু বাধ্যই হয়নি। ২৬ আগস্ট দিনের আলো নিভে আসলে, নিজের শোয়ার রুমে ফ্যানের সাথে ঝুলে প্রাণ বিসর্জণ দেয় আজমেরী।
সম্মানহানির যে বিচার চেয়েছিল মেয়েটি, সেই বিচারের আর কোনই প্রয়োজন হবে না। দরকার হবে না, কোন যুক্তির পিষ্টে যুক্তি। আর বিচার হলেও আবার নতুন কোন মিথ্যের সাজানো ঘটনার জন্ম দিতে চায়নি মেয়েটি। তারচে আত্মহননের পথই শ্রেয় ছিল মেয়েটি।
এই পুরো ঘটনাটি কোন সিনেমা বা নাটকের বননা নয়, কোন ছোটগল্প বা উপন্যাসের চরিত্রও নয়। এটি মাদারীপুরের পাঁচখোলা মুক্তিসেনা হাই স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণী পড়ুয়া আজমেরী আক্তারের জীবন বিসজন দেয়ার বাস্তব ঘটনা। ঘটনার মূল অপর চরিত্রের নাম সম্রাট সর্দার। তিনিও পড়তেন একই বিদ্যালয়ের একই শ্রেণীতে। তবে পাথক্য, সে খলচরিত্রের। আজমেরী বেঁচে থাকতে তো বিচার দেখে যেতে পারেনি, মরে গিয়ে কি বিচার দেখতে পারবে…?
নোট: নিজের সম্মানহানির বিচার চেয়ে প্রধান শিক্ষক বরাবর যে আবেদন করেছিল আজমেরী, তা হুবহু তুলে ধরা হলো…

বরাবর
প্রধান শিক্ষক
পাঁচখোলা মুক্তিসেনা হাই স্কুল এন্ড কলেজ
মাদারীপুর সদর, মাদারীপুর।

বিষয়: ইভটিজিং।

জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর একজন নিয়মিত ছাত্রী। আমার নাম আজমেরী আক্তার। রোল ১৪। ১৯-০৮-১৫ ইং তারিখে টিফিন সময় আমি দোতলায় দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় নবম শ্রেণীর ছাত্র সম্রাট নামে একটি ছেলে আমার হাত ধরে দোতলার অষ্টম শ্রেণীর ‘‘খ’’ শাখায় টেনে নিয়ে গেছে। আমি জোর-জবস্তি করে ওর কাছ থেকে ছুটে চলে আসি। আসার পরে আমি আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সামলা বেগমকে সমস্ত ঘটনা জানাই।

অতএব,
জনাবের নিকট আকুল আবেদন, আমি যেন সু-সম্মানে বিদ্যালয় আসা-যাওয়া করতে পারি এবং তার জন্যে সু-ব্যবস্থা নেওয়া মর্জি হোক।

বিনীত নিবেদক
নাম-আজমেরী আক্তার
রোল-১৪
শ্রেণী-নবম
তারিখ-২২-০৮-২০১৫ইং

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.