![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাওয়ায় ভাসা ভাবনাগুলো লেখা-বলা হয়ে উঠে না। যতটুকু ধরা দেয়া, তা কেবলি আবছা অন্ধকারের মতো...
এক অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে ঘুম ভাংলো সকালে। ইমতিয়াজ কয়েকবার ফোন দেয়ার পরে রিসিভ করি। তখনও ঘুমের মাত্রা কাটেনি, চোখে-মুখে ব্যাপক ঘুম। ‘বন্ধু হওয়ার মতো আমি তো কেউকে পায়নি। রাতে অনেক ভেবে-চিন্তে দেখলাম আপনিই আমার সেরা বন্ধু। আমায় কি বন্ধু ভাবা যায় না, বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা কি আমার নেই ? ভাইয়া, হ্যালো ভাইয়া।’ ওর কথা শুনে নিমেষেই ঘুম কেটে গেল। ও থেমে থেমে কাঁপা গলায় কথা বলছিল। কি উত্তর দিবো ওকে। ভয়-শংঙ্কা, মান-অভিমান, ক্ষোভ-দুঃখ এসব কি বন্ধুত্বের মাঝে থাকে। তাহলে ওর কন্ঠে এতো ভয়, এতো সংশয়, এতো উৎকন্ঠতা কেন? কেন ওর কথা বলার সময় জড়িয়ে জড়িয়ে কাঁপা কাঁপা সুরে বলছে। আমার ভিতরে বেশ প্যাঁচ লেগে যাচ্ছে। কিছুটা ঘুমে থাকার ভান করে উত্তরটা দিতে হলো।
‘শোন, আমি তোমার বন্ধু। বড় ভাইয়ারাও বন্ধু হতে পারে। তুমি ছোট হয়েছো তাতে সমস্যা কিসের। বন্ধুর সাথে এভাবে ভয় আর শংঙ্কা নিয়ে কথা বলতে নেই। তুমি বিকেলে লেকপাড় চলে এসো। গুরুত্বপূর্ণ কাজ না থাকলে আজকের বিকেল শুধুই ইমতিয়াজের জন্যে। গল্প করবো।’ কিছুটা ভালোলাগার অনুভূতি হয় তো ইমতিয়াজের মধ্যে তাৎক্ষনিক সৃষ্টি হয়েছে। না কি এখনো বন্ধু আর বন্ধুত্ব নিয়ে ওর মনে নানা প্রশ্ন ? আর প্রশ্ন কেনই হবে না। অনেকেই তো বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা করেন। ভুড়ি ভুড়ি ব্যাখ্যা দেন। বন্ধু হতে হলে ‘এই হতে হবে,’ ‘সেই হতে হবে,’ বন্ধুকে মনের পবিত্র স্থানে রাখতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু বন্ধু মানি কি পবিত্র স্থান, বন্ধু মানি কি বয়স, লিঙ্গ ভেদাভেদ, উঁচু-নিচু, গরিদ্র আর কোটিপতি? তাহলে বন্ধু কি? ইমতিয়াজদের মনে এতো সংশয় তৈরি করে কারা। নিশ্চয় সমাজের এক শ্রেণীর বিশ্লেষক না হয় গতানুগতিক ‘বয় ফ্রেন্ড-গার্ল ফ্রেন্ডরা। এরাই প্রথমে বন্ধু হিসেবে পরিচিত হয়ে পরে ‘বয় ফ্রেন্ড’ আর ‘গার্ল ফ্রেন্ডে’র তকমা জুড়ে দেয়। প্রসঙ্গ ঘুড়িয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে যায়।
এবার নিজের প্রসঙ্গে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। যদিও নিজেকে নিয়ে খোলামেলা করে বলা যায় না। অনেকবার চেষ্টা করেও পারিনি। আর নিজের খাম-খেয়ালির কারণেই কারো সাথে বন্ধুত্বের সর্ম্পকে জড়াতে চাইনি। তবে হ্যাঁ, বন্ধুত্বে জড়ানো রসগোল্লা খাওয়ার মতো সহজ কাজ নয়। আসলেই কেউ আমাকে আমার মত করে বুঝতে পারেনি। কাউকে কষ্ট দিতে পারি না বা কারো কষ্ট দেখলে নিজেও কষ্ট পাই বলে মাঝে মাঝে মনে হয় আমি অনেক বেশি আবেগতাড়িত একজন মানুষ। কেউ একজন একবার বলেছিল আমি নাকি দুঃখবিলাসী। আমি দেখতে আহামরি কেউ না, কিন্তু সেটা নিয়ে আমার কোন হতাশা নেই। কাউকে কিছু দিয়ে বিনিময়ে কিছু প্রত্যাশা করি না বলে কখনো-কখনো ভাবি আমি একজন সুখি মানুষ। স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি, তাই মনে হয় স্বপ্নের কোন সীমারেখা থাকা ঠিক না। আমার মতে, একজন মানুষ হয় তার স্বপ্নের সমান বড়। আমি সাধু-সন্ন্যাসী না ঠিক, তবে ভন্ড বা প্রতারকও নই।
একটুই নিজেকে নিয়ে বলা। এর মধ্যে আসলেই আমি নির্ভেজাল কারো বন্ধু হতে পারিনি। তবে আমাকে বন্ধু হওয়ার মতো অনেকেই সর্ম্পকে জড়িয়েছে। তাদের ভালোবাসায় কোনই খাত নেই। তাদের জীবনের এমন কোন বিষয় নেই যা শেয়ার করেনি। আমার বিপদে কাছের মানুষ দূরে গেলেও সেই সন্ধুরাই সবার আগে এগিয়ে এসেছে। ওরা আমার সর্ম্পদ। নিজের সর্ম্পদ। কোন অংশী নেই। ওদের ভালোবাসা আমাকে ছুঁয়ে যায়। অনেক সময় ভাবি, আমি কেন ওদের মতো করে নিজেকে খাপ-খেয়িয়ে নিতে পারছি না। কেন আমার ব্যর্থতা? কেন পরিপূর্ণ বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা নেই। তবে হ্যাঁ, আমি কখনোই যারা আমাকে বন্ধু ভাবে, তাদের অমূল্যায়ন করেনি। অনেক কিছুই দেয়ার চেষ্টা করেছি। হয় তো ওদের কাছে সেটি তুচ্ছ। শিশু থেকে এই পর্যন্ত আমার বন্ধুর সারি দীর্ঘ। তবে সবাই নির্ভেজাল বন্ধু হতে পারেনি।
কিছুটা বিচিত্র আর নাটকীয়তায় ভরা অনুভূতি আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সময়ের আস্ফালনে আজ যাদের বড় আপন বলে মনে হয়, সেই মানুষগুলো সময়ের দোহাই দিয়েই একসময় দূরে সরে যায়। কাছের বলে পরিচিত সব মানুষ একে একে কিভাবে যেন পর হয়ে যায়। জীবনে সামনে এগিয়ে যাবার পথে যারা সহযাত্রী হয়, পতনের সময় যাদের কাছে পাওয়া যায় না, নতুন করে শুরু করতে চাইলে কিভাবে যেন সেসব মানুষগুলোই চোখের সামনে চলে আসে সবার আগে। তাদের আবির্ভাব যেন মনে করিয়ে দেয় সংগ্রাম এখনো শেষ হয় নি। এ পর্যন্ত অনেক রকম মানুষ দেখেছি জীবনে। তথাকথিত অনেক বন্ধুও এসেছে জীবনে, এখনও আছে অনেক বন্ধু-বান্ধব। কিন্তু যাকে খুঁজে চলেছি প্রতিনিয়ত সে কি এসেছে সামনে আজও! বন্ধুর সংখ্যা কয়েকশো হতে হয় না, বন্ধুর মত বন্ধু একজন হলেই যথেষ্ট। হয়তো সারাজীবন ধরেই খুঁজে যাবো তাঁকে, কোনদিন খুঁজে পাওয়া হবে না। হয়তো আমার জীবনে তাঁর অস্তিত্বই নেই। একজন ভালো বন্ধু শুধুই হয়তো একটি কাল্পনিক চরিত্র!
গতানুগতিকভাবে স্কুল থেকে ভার্সিটিতে পড়–য়া সহপাঠিদেরই বন্ধু হিসেবে সচরাচর বিবেচনা করা হয়। তাও আবার ছেলে সাথে ছেলে, মেয়ের সাথে মেয়ে। ছেলে-মেয়ের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব খুব একটি দেখা যায় না। যদিও এর পিছনে এক ডজন যুক্তিও আছে। কেউ বলে, এক সাথে লেখাপড়া করতে করতে এক সময় গভীর বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। কেউ আবার পড়াশোনায় সহযোগিতা করাকেই বন্ধুত্বের অন্যতম যুক্তি হিসেবে দাড় করায়। সবার যুক্তির প্রতি শ্রদ্ধা রইল। তবে এর বাহিরেও তো বন্ধু বা বন্ধুত্ব হতে পারে।
আমার কাছে বন্ধু মানেই তো গভীর মমতা, গভীর মায়া, গভীর ভালোলাগা। এক কথায় অন্য রকম অনুভূতি। জীবনের এমন কোন বিষয় নেই, যা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করা যায়। অনেকেই আবার জীবনের প্রতিটি স্তরে বন্ধুকে যুক্ত করে ফেলেন। এর ফলে বিশ্লেষকরা আবার আড় চোখে খাড়া খাড়া মন্তব্য করে। মনে হয় বন্ধুকে জীবন সঙ্গী করা মহাপাপের কাজ। তবে হ্যাঁ, বন্ধুকে যদি জীবন সঙ্গনী না করে সেটাও খারাপ নয়। করলে সমস্যা কিসের? বিয়ের পরে বন্ধুত্ব থাকে না, ঝামেলা তৈরি হয়? এটি যে কোন বন্ধুত্বের মধ্যেও হতে পারে। বন্ধু বা বন্ধুত্বের মধ্যে ফাটল ধরার অন্যতম বাওল হচ্ছে, মানসিকতার পরিবর্তন। মানসিকভাবে একজন বন্ধু ঘরের স্বামী বা স্ত্রী হতেই পারে। আবার নাও হতে পারে।
ইমতিয়াজকে দিয়েই শেষ করতে চাই। ওর সাথে দেখা করে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারবো। কিন্তু কত জন ইমতিয়াজ বন্ধুত্ব তৈরির বাঁধা অতিক্রম করতে পারবে। বেশ সংশয় আমারও কাজ করে। কবে এই সংশয়ের শেষ বিন্দু হবে। হয় তো হবে, হয় তো হবে না। গভীরভাবে নিজেকে দাড়ও করতে পারি না। শুধু জানি, আজকের ব্যর্থ প্রেমের মধ্য দিয়ে আগামীর স্থায়ী পাকাপোক্ত ভালোবাসার ভিত্তি রচিত হয়। যা গেছে, তা চলে গেছে।
- সাগর তামিম, ০১৭৩৪৩৮১৪৭০
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩৪
সাগর তামিম বলেছেন: বেশ বড় লেখা না কি ???