নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গুছানো-অগুছানো অনুভূতি

সাগর তামিম

হাওয়ায় ভাসা ভাবনাগুলো লেখা-বলা হয়ে উঠে না। যতটুকু ধরা দেয়া, তা কেবলি আবছা অন্ধকারের মতো...

সাগর তামিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতির ঘোরে জুলসানের হাসি

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪০

ছোটগল্প:

পুরো দু’মাস পর প্রিয়াশু ঢাকা থেকে ভৈরবে, বোনের বাসায়। রাতে খেয়ে দক্ষিণপাশের রুমে ঘুমাতে যায়। দিনের ক্লান্তির ফলে নিমেষেই ঘুম চলে আসে। ওই রাতের ঝড়ে কাকের বাসা ভেঙ্গে গেছে, সে টের পায়নি। ঘুম ভাঙ্গলে কয়েকবার চেষ্টা করে মেরামতের। কিন্তু সুযোগ নেই, ব্যর্থ হয় প্রিয়াশু। বাধ্য হয়ে দোতলার ব্যালকুনিতে লোহার গ্রীলের উপর মুখ লাগিয়ে দাড়িয়ে থাকে। দেখতে থাকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েক টুকরো গাছের কান্ড আর এলোমেলো পালক। কালো কুচকুচে সে পালক। তখনও অন্য গাছে কয়েকটি কাক ‘কা-কা’ করে যাচ্ছে। প্রিয়াশু গভীরভাবে লক্ষ্য করে কাকের চিৎকার। চিৎকারের সাথে আস্তে আস্তে বেড়ে যায় আর্তনাদ। প্রিয়াশু দেখে, শুধুই দেখে।

হঠাৎ প্রিয়াশুর মনে ভেসে উঠে জুলসানের কথা। বুঁকের ভিতর হকচকিয়ে উঠে। মোবাইলের স্কিনে খুঁজে জুলসানের নাম্বার। ফোন দেয়।
-আমি দুটি সন্তানকে দেখছি।
-কিসের সন্তান?
-কালো, চুকচুকে কালো, দেখতে মায়া লাগে। ওদের মা-বাবাও কালো।
-কি বলছ? ক্লিয়ার করে বলো। আমার এখনো ঘুম কাটেনি। চোখে-মুখে প্রচন্ড নেশার মতো ঘুম।
-থাক, তোমার ঘুম। ঘুমের ঘোরেই আমার সাথে কথা বলো। ঘোরে থাকলে কথা বলতে আমার ভালোলাগে। ভিশন ভালোলাগে। জানো, ওরা ওদের মায়ের মুখ থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে খাবার নিচ্ছে। টলটল করে মায়ের দিকে তাকাচ্ছে। উফঃ, অসাধারণ। আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। আমি কি চোখ বন্ধ করে কাকছানাদের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনবো?
-ধূর, তুমি বোকা। ছোট বাচ্চারা কিভাবে মায়ের দিকে টলটল করে তাকাবে। কি করে ওদের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনবে। এটুকুও জানো না। রেখে দেই।
-না, না, রেখ না। রাখবে, রাখো। আমি তার’চে কাকশিশুদের সাথে কথা বলি। খোলা বাতাসেও ওদের শব্দ আমি ঠিকই শুনতে পাবো।

এমন সময় প্রিয়াশুর বড় আপুর ডাক পড়ে। ‘কার সাথে কথা বলছিস।’ প্রিয়াশু ঘুড়ে তাকায় পিছনে। পুরো চোখ মেলে দেখে সামনে, ডানেও কেউ নেই। বামে শুধু বড় আপু। তা’হলে কার সাথে কথা বললো মোবাইলে। মোবাইলে ডায়েল কল চেক করে। না, গতরাতের পর কোন নাম্বারে ফোন দেয়নি। এতো সময় কার সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে। প্রিয়াশু অনুমানের চেষ্টা করে। কিন্তু খুঁজে পায় না জুলসানের নাম্বার। তন্দ্রা লেগে যায়। গভীর তন্দ্রায় কেঁপে উঠে।
নাস্তা খেতে চলে আসে প্রিয়াশু। চেষ্টা করে স্বাভাবিক হতে। বড় আপুর সাথে কথা বলে।

-বড় আপু তোর কি মনে আছে, কাকের কথা? গতবার তোর বাসায় আসার পর ওদের সাথে কি সখ্যতাই না গড়ে উঠেছিল আমার। সেই দিনের সকালে ওদের হৈ-হুল্লু আর কিচির-মিচির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। বুকের উপর থেকে চাঁদরটি সরিয়ে চোখ কাত করে দেখার চেষ্টা করি, কিসের এতো শব্দ? দেখি, তোদের বড় রেইট্রি গাছের ডালে কিছুটা ব্যালকুনির সাথে মিছিয়ে বসতি গড়েছে কাক দম্পত্তি আর তাদের নবজাতক দুটি সন্তান।
-হ্যা, মনে থাকবে না কেন। বেশ মনে আছে। তোকে দেখলেই ওরা উল্লাসে মেতে উঠত। তুই খাবার দিতে গেল, বড় কাকা দুটো তোর উপর তেড়ে আসত।
-আপু তোর কি জুলসানের কথা…
-কি থামলি কেন? ওর কথা কি ভুলে যাওয়া যায়? যায় না। গতবার তো আমার সাথেও কথা বললো। তোর সাথে কি যোগাযোগ নেই? হারিয়ে গেছে, হা হা হা। ছেলেরা এমনিই হয়রে। কথার মায়াজালে জড়িয়ে সুযোগ বুঝে কেটে পড়ে। নে খেয়ে নে।

আপুর কথা শুনে প্রিয়াশুর দম বন্ধ হয়ে আসে। ইচ্ছে করে, আপুর মুখের উপর ‘এক নিঃশ্বাসে’ কিছু বলে দিতে। জুলসানকে তো ভালো করে আপু চিনেও না, মাত্র একদিন মোবাইলে কথা বলেছিল। তাতেই এই মন্তব্য। নিজেকে সামলে প্রিয়াশু বলে উঠে।

-আপু, জুলসান চলে যায়নি। আমাকে আকড়েই থাকতে চেয়েছিল। আমার বাস্তবতার সাগরে ওকে জড়িয়ে রাখতে চাইনি। আমি ঠেলে দিয়েছি। প্রচন্ড কষ্ট দিয়ে দিয়ে ওর আত্মাকে পুড়িয়েছি। তুমি তো জানো, আমি আর নতুন করে কাউকে জড়াতে চাই না। আমার বিবেক, আমাকে থামিয়েছে। …ও ভালো।

প্রিয়াশু আর কথা বলতে পারে না। উঠে দাঁড়ায়। সামনের ব্যালকুনিতে যায়। মুখের উপর ঝিলিক দেয় এক ঝলক রোদ। চোখে ধরা দেয় শরীরের সাথে হালকা পালকে আবৃ্ত থাকা ফুটফুটে কাকের দুটি সন্তান। বেশ মায়া লাগে প্রিয়াশুর। চোখ খুলে দেখতে থাকে ওদের খুনসুটি। অথচ তখনও টের পাইনি, নতুন কাক পরিবার।

গল্পকার: সাংবাদিক ও লেখক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.