![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এ্যাজোলা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন দেখতে পাবেন আজ সন্ধ্যা ৬ টায় বাংলাভিশনে। শ্যামল বাংলা অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেছেন-রেজা ইসলাম এবং প্রতিবেদনটি গ্রন'না ও সহকারী প্রযোজনায় আছেন আকাশ সাঈদ হাসান। প্রতিবেদনটির বিসত্মারি দেওয়া হল আপনাদের জন্য।
এ্যাজোলা কি ঃ
এ্যাজোলা একটি জলজ উদ্ভিদ যার বাংলা নাম শেওলা। এটা মসকিউটো ফার্ণ, ডাক উইড ফার্ণ, ওয়াটার ফার্ণ ইত্যাদি নামে পরিচিত। উদ্ভিদ জগতের অনত্মভূক্ত হলেও এর বিভাগ হলো- টেরিডোফাইটা, শ্রেণী- টেরিডোপসিডা, বর্গ- সালভিনিয়ালিস, আর গোত্র হলো- সালভিনিয়াসি এবং গণ হলো- এ্যাজোলা। এ্যাজোলার বেশ কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে তার মধ্যে গ্রীন এবং পিংক উলেস্নখ্যযোগ্য। আমাদের দেশে পুকুর, ডোবা এবং বিভিন্ন জলাশয়ে এ্যাজোলা দেখতে পাওয়া যায়। তবে সেই সব এ্যাজোলা বা শেওলা আর বৈজ্ঞানিক গবেষনার এই ্এ্যাজোলা এক রকম নয়। শেওলার একটি প্রজাতি হলো এ্যাজোলা। আমাদের দেশের শেওলা অনেক বড় আকৃতির হতে দেখা যায় কিন' এ্যাজোলা আকারে বেশি বড় হয়না এবং খুব দ্রম্নত বংশ বিসত্মার করতে পারে। এ্যাজোলা দেখতে গাঢ় সবুজ হলেও ব্যবহারের ড়্গেত্র অনুযায়ী রংয়ের পরিবর্তন দেখা যায়।
এ্যাজোলার উৎপাদন পদ্ধতি ঃ
একটি কৃত্রিম জলাধার তৈরি করে এ্যাজোলা উৎপাদন করা যায়। সেড়্গেত্রে ২ মিটার লম্বা, ১ মিটার চওড়া ও ২০ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত করে জলাধার তৈরি করতে হবে। এরপর গর্তটি পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে যাতে করে অন্য কোন অবাঞ্চিত ঘাস বা উদ্ভিদের শিকর বের হতে না পারে এবং মাটির তাপমাত্রা ঠিক থাকে আর পানি চুইয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। এর পর ১০ থেকে ১৫ কেজি মাটি সমানভাবে পিটের মধ্যে ছিটিয়ে দিতে হবে এবং ৫ কেজি পরিমান গোবর, কিছু পরিমান রাসায়নিক সার পিট বা জলাধারের মধ্যে দিতে হবে। তারপর এমন ভাবে পানি দিয়ে ভরাট করতে হবে যাতে পানি উপচে না পড়ে। এরপর ১ থেকে ২ কেজি রোগমুক্ত এ্যাজোলা মাদার সিড হিসাবে ছেড়ে দিতে হবে। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এ্যাজোলায় পিট বা জলাধার পরিপূর্ন হয়ে যাবে এবং প্রতিদিন ১ থেকে ১.৫ কেজি হারে এ্যাজোলা হারভেস্ট করা যাবে।
এ্যাজোলার ব্যবহার ঃ
ধান চাষে
এ্যাজোলা উচ্চমাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি উদ্ভিদ। আর তাই চাষাবাদে এ্যাজোলার ব্যবহার বেশ উপকারী। ধানড়্গেতে এ্যাজোলা ব্যবহার করে সফলতার হাত ছানি দেখতে পাচ্ছেন নড়াইল সদর উপজেলার কৃষকেরা। পৌরসভার উজিরপুর গ্রামের ২৫ জন কৃষক প্রথমবারের মত ৩৫০ একর ধানের জমিতে এ্যাজোলা ব্যবহার করে বোরো ধান চাষ করে বেশ ভাল ফলাফল পাচ্ছেন। ধানড়্গেতে এ্যাজোলা ব্যবহার করার ফলে ধানের গোছা বেশ মোটা হয়েছে এবং ধান ড়্গেতে কোন আগাছা হয়নি। বলা হয়ে থাকে বোরো ধান চাষ মানেই সেচ নির্ভর কিন' ধান ড়্গেতে এ্যাজোলা ব্যবহারের ফলে সেচও আনুপাতিক হারে অনেক কম দিতে হয়েছে নড়াইলের এই কৃষকদের। আর এটা সম্ভব হয়েছে নড়াইল অর্গানিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহেদ আলী শানত্মর প্রচেষ্টা আর আগ্রহের কারনে। তিনি ভারতের বর্ধমানে অবসি'ত বুদবুদ কৃষি রিসার্স সেন্টার থেকে সংগ্রহ করেন এই বিশেষ প্রজাতির এ্যাজোলা।
গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে
এ্যাজোলায় অতিমাত্রায় প্রোটিন থাকায় এটা গবাদি পশুর জন্য খুব উপকারী। এ্যাজোলায় আরো আছে এমাইনো এসিড, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, বিটা কেরোটিন, গ্রোথপ্রেমোটর। খনিজ উপদানও থাকে প্রচুর পরিমান যেমন-ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক ইত্যাদি। এ্যাজোলাতে ২৫-৩৫% প্রোটিন, ১০-১৫% খনিজ পদার্থ ও ৭-১০% এমাইনো এসিড থাকায় এবং খুব কম পরিমান চর্বি থাকার কারণে গবাদি পশু খুব সহজেই এ্যাজোলা পরিপাক করতে পারে। প্রতিদিন স্বাভাবিক খাবারের সাথে ২-৩ কেজি এ্যাজোলা খাওয়ানোর ফলে দুধ উৎপাদন ১৫-২০% বৃদ্ধি পায়। অন্যান্য খাদ্যের তুলনায় এ্যাজোলার পুষ্টিমান অনেক ভাল।
এ্যাজোলার গুনাগুন ও পুষ্টিমান তালিকা ঃ
খাদ্য উপাদানের নাম ক্রড প্রোটিন আঁশ পরিপাচ্য পুষ্টি
রাফেজ - ১৮% এর বেশি ৬০% এর কম
দানাদার - ১৮% এর বেশি ৬০% এর কম
লিগিউম ফডার (প্রোটিন সমৃদ্ধ ঘাস) ১৬-২০% ৩০% ৬০% এর কম
এ্যাজোলা ২৫% ১০% ৬০-৬৫ %
দুধ, মাংস, ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গবাদিপ্রাণিকে বিভিন্ন সিনথেটিক এনটিবায়োটিক, স্টেরয়েড এবং ভিটামিন খাওয়ানো হয়। খাদ্য হিসাবে বিভিন্ন এনিমেল প্রোডাক্ট ব্যবহারের কারনে এইসব রাসায়িনক পদার্থ মানুষের শরীরে জমা হয়ে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে। যদি আমরা বিকল্প খাদ্য হিসাবে পুষ্টি সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক খাদ্য গবাদি পশুকে সরবরাহ করতে পারি তাহলে মানুষ এবং প্রাণি স্বাসে'্যর জন্য তা হবে খুব গুরম্নত্বপূর্ন। এ্যাজোলা হতে পারে গবাদি পশুর এমন একটি বিকল্পখাদ্য।
এবার জেনে নেই একটি দুগ্ধবতী গাভির দুগ্ধদানকালীন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রদানকৃত খাদ্যে যে পরিমান প্রোটিন থাকা দরকার তা নিন্মরম্নপঃ
দুধ উৎপাদন প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা (ক্রড প্রোটিন)
দুধ উৎপাদনের প্রারম্ভিক সময়ে ১৬-১৮
দুধ উৎপাদনের মধ্যবর্তী সময়ে ১৪-১৬
দুধ উৎপাদনের শেষ সময়ে ১২-১৪
দুগ্ধবিহীন কাল ১০-১২
তবে আমাদের দেশে গবাদি পশুকে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য খুবই কম পরিমানে সরবরাহ করা হয়। রোমন'ক প্রাণি দুটি ভিন্ন উৎস থেকে এমানো এসিড পেয়ে থাকে। প্রথমত ঃ আমরা গবাদিপশুকে যে খাদ্য সরবরাহ করে থাকি সেই খাদ্য থেকে এবং দ্বিতীয় উৎস হলো অনুজীবের দেহ। যাকে বলে মাইক্রোবিয়াল প্রোটিন। একটি নিদিষ্ট মাত্রা পর্যনত্ম দুধ উৎপাদনের জন্য গাভীর খাদ্যে বাইপাস প্রোটিন থাকা দরকার। যেহেতু আমাদের দেশে গবাদি পশুকে সরবরাহকৃত খাদ্যে প্রোটিনের উৎস থাকে না বললেই চলে তাই এ্যাজোলা হতে পারে উৎকৃষ্টমানের প্রোটিন সমৃদ্ধ সবুজ গো-খাদ্য যা বাইপাস প্রোটিন এর অন্যতম উৎস।
এ্যাজোলা গরম্ন-ছাগলের পাশাপাশি মুরগির খাদ্য হিসেবেও বেশ ভালো। এ্যাজোলা খাওয়ানোর পর দেখা গেছে মুরগিকে সরবরাহকৃত সাধারণ খাদ্যের তুলনায় এ্যাজোলা খাওয়ানোর পর দৈহিক বৃদ্ধি দ্রম্নত হয়েছে এবং ওজন ১০-১২% বেশি হয়েছে। ডিমের কুসুম বড় হয়েছে এবং ডিমের খোসা চকচকে বা আর্কষনীয় হয়েছে। যা ভোক্তার পছন্দ ও চাহিদাকে বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া এ্যাজোলা খাওয়ানোর ফলে ব্রয়লারের দৈহিক ওজন এবং লেয়ারের ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে প্রচলিত ব্রয়লার খাদ্যের সাথে বিভিন্ন মাত্রায় (৫%, ১০%, ১৫%) এ্যাজোলা ব্যবহার কের দেখা গেছে ব্রয়লারের দৈহিক বৃদ্ধি প্রচলিত খাদ্যের মত হয়েছে।
সর্বপরি এ্যাজোলা যদি ফসলের ড়্গেত সহ গবাদি পশুর খামারে ব্যবহারের উপযুক্ত করে চাষ করা যায় এবং সর্বড়্গেত্রে এ্যাজোলা ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় তাহলে রাসায়নিক সার বা কীট নাশকের ব্যবহার কমিয়ে ভাল ফসল উৎপাদন ও গবাদি পশু পালন করে দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে আরো গতিশীল করা সম্ভব হবে বলে ধারনা কৃষিবিদদের।
©somewhere in net ltd.