নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মীরসরাই[email protected]

সাইমুম

শখ : অতি সাধারণ। বই পড়া আর বিদেশ ভ্রমণ।

সাইমুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

চোখ-বন্দনা

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:২৬

পঞ্চ ইন্দ্রিয়র মাঝে চোখ অপার বিস্ময়। রহস্যের চাদরে মোড়া এর প্রতিটি তৎপরতা, প্রতিটি মুহূর্ত। মনের ভাব ধারণ করতে বা বুঝে নিতে চোখের জুড়ি নেই। মানবদেহের মাঝে এটা এমন একটি স্পর্শকাতর অঙ্গ যা, অন্য সব অঙ্গের পর সচল হয়। কারণ মায়ের উদরে চোখ ছাড়া সব মানব অঙ্গই সক্রিয় থাকে। শিশু জন্মের পরই প্রথম চোখ মেলে স্বপ্নের পৃথিবীটাকে ধীরে ধীরে দেখে। সম্ভবত এ কারণেই ভাস্কর্যবিদরা তাদের শিল্পকর্মের চূড়ান্ত পর্বে এসে চোখের আদল ফুটিয়ে তোলেন। এটাই মানব শিশু বা শিল্পকর্মের আঁখি উন্মীলন।



ভাবের সম্মোহন, আবেগের তূর্ণগতি আর মাদকতা সৃষ্টির এক সৃষ্টিশীল আধার এ মানবীয় চোখ। কবিকুল কি এ কারণেই কাতর আঁখি মেলে আত্মসত্তার সন্ধান করে যান সারাটি জীবনভর?

বোধের অপার্থিব পারাপারে সব চোখের ভাষাকে একই কায়দায় অনুবাদ করা যায় না। কারণ কারো কারো চোখ শুধু বহিরঙ্গের মতো ঝলসিতই নয়, এর অন্তঃপ্রবাহেও বিচ্ছুরিত। জীবনের সাতরঙ আর সৌন্দর্যের অবলোকন চুটিয়ে উপভোগের জন্য চাই বিশেষ অন্তর্দৃষ্টি। চর্মচোখে একজন শিল্পী যা দেখেন, তা তিনি তার ভাবনার পাড়ে জামদানি শাড়ির মতো বুনন করে যান অবলীলায়, একের পর এক, নিজের মতো করে। এ কারণে চোখ এক অনিঃশেষ তাৎপর্যময় অথচ সূক্ষ্ম অনুভূতিপ্রবণ জটিল অঙ্গ। এটা রূপের নেকাব পরে অন্তহীন সৌন্দর্যের উৎসমূলেও নিরন্তর ছুটতে পারে। আবার চোখ যেমন হয়ে উঠতে পারে ধ্বংসের শব্দহীন ই-মেইল, তেমনি হয়ে উঠতে পারে জীবন শিকারি এক বিমূর্ত আকাক্সক্ষার স্বপ্নিল ইশারা। তাই চোখের ব্যাকরণ উপলব্ধি করতে না পেরে অনেকে বিভ্রান্ত জহুরিতে পরিণত হয়ে কপাল চাপড়ান অথবা পানির আরেক জ্ঞাতিভাই 'চোখের জলে' শূন্য বুকটা ভেজান।



চোখ শতাব্দীর খেলাঘর। আর এ খেলাঘরে প্রতিনিয়ত জেগে ওঠে নাম না জানা হাজারো শিহরণ, কতো দুর্ঘটনা, শাশ্বত প্রেমের নন্দিত আবাহন। এটা কখনো আনন্দে হয়ে ওঠে উদ্বেল, কখনো বা বিষণœ সন্ত্রাসে হয় জীবনাহত। এটা মানব মনে যেমন সূর্যের স্বাক্ষর একে দিতে পারে, তেমনি পারে হতাশার আজানুলম্বিত মানচিত্র একে দিতে। চোখের সামান্য কুঞ্চনে যেমন প্রথম আবেগের বন্ধ দরজা খুলে যেতে পারে, উন্মোচিত হতে পারে জীবনের এক অপরিচিত পৃষ্ঠা, তেমনি জানাতে পারে স্বপ্নভঙ্গের নির্মম বেদনা।



চোখ যে প্রগাঢ় বিশ্বাস ও আশাবাদিতার উৎস। তবে মুহূর্তের অবিশ্বাসে এটা হয়ে যেতে পারে স্বপ্নভাঙার নির্ঝর, অবরুদ্ধ ইচ্ছার দেয়ালে ছড়িয়ে দিতে পারে কাটা আর কাটা।



চোখের মাঝেই মানুষ খুজে নিতে পারে পৃথিবীর তাবৎ কবিতা - স্বপ্ন ও বাস্তবতার দ্বন্দ্ব, ইচ্ছা ও অনিচ্ছার দ্বৈরথ, শান্তি আর অশান্তির টানাপড়েন। চোখের জোরেই মন পায় বিচিত্র গতি। প্রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে কতো কবি যে তার বিশ্বাসে সোপর্দ শব্দের ইমারত গড়েছেন, তার হিসাব কে রাখে? তবে চোখের ভাষার পাঠোদ্ধারে সবাই সমান পারঙ্গম নন। অবশ্য এক্ষেত্রে বুদ্ধির আলো নয়, মোহের অন্ধকারেই জীবন চলার নকীব হয়ে যেতে পারে। তারপরও দুটো চোখের নিরাবরণ অথবা ব্যঞ্জনাধর্মী শব্দহীন কথোপকথনের মধ্য দিয়েই অনেক সময় নিমিষেই রচিত হয়ে যায় জীবন বিশ্বাসী চেতনার উপভোগ্য কবিতা। এক্ষেত্রে কবিকুল হয়তো সবসময় এক ধাপ এগিয়ে থাকেন। তারা নাকি তাদের চোখের ভাষার মুগ্ধতায় চারপাশের জীবনসত্য সহজে মুখস্থ করে নিতে পারেন ঈর্ষণীয় দক্ষতায়।



চোখ একটি উৎকৃষ্ট সজ্ঞান। এটা মানব মনে জাগায় সাড়া, চেতনায় জোগায় সমৃদ্ধি। এটা একটা নিশ্চিত হিরন্ময় নক্ষত্র। মনের প্রেরণায় চোখের দৃষ্টি দিয়েই চিন্তাবিদরা সমকালীন আবর্জনাগুলো চিহ্নিত করে সমাজকে ঋদ্ধ করেন। আবার সে চোখই মানে না মনের শাসন। এটা ভূগোল নিক্ষিপ্ত অপরিচিতজনকেও আপন বানাতে শক্তি জোগায় এক দুর্নিবার তৃষ্ণায়। চোখের মনোজ্ঞ মৌলিকতা এখানেই। কখনো তা সুস্পষ্ট, কখনো বা রহস্যাবৃত। চোখের পরাজয় ঘটে শুধু এক জায়দায়, আর তা হচ্ছে সৌন্দর্য। কারণ সুন্দরকে শতবার দেখার পরও চোখ তৃপ্ত হয় না।



আসলে চোখ শুধু কোনো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অঙ্গই নয়। এটা কখনো সাহিত্য, কখনো বা একটি উচ্ছল প্রাণবন্ত প্রেমের কবিতা। যা কিটসের যে কোনো সরস কবিতাকেও ম্লান করে দিতে পারে। শল্যবিদের ডিসেকশান টেবিলে চোখের সব সারবত্তা বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করা যায় না। কারণ মানুষের লবণাক্ত চোখের মাঝে ঘনীভূত থাকতে পারে এক বিরাট অদৃশ্য জিজ্ঞাসা। এ জিজ্ঞাসার জবাব চাইতে গিয়ে কবির কল্পনাও নিঃশেষ হয়ে যায়। চোখের ভাষার যে মাপকাঠি নেই!



মানুষের দৈহিক সৌন্দর্যের মাঝে চোখ নিজেই একটি অনন্য আদর্শ। এটা জাগতিক সৌন্দর্যের অনুপম উপকরণ। সুন্দর চোখ দেখে আমাদেরও চোখ জুড়িয়ে যায়। চোখ যে ভালোবাসার প্রতীক। এটার সৌন্দর্য যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দাঁড়ায় - 'চোখ সুন্দর'।

মন্তব্য ২৫ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:৩৮

রেজাউল হক কৌশিক বলেছেন: শিশু জন্মের পরই প্রথম চোখ মেলে স্বপ্নের পৃথিবীটাকে ধীরে ধীরে দেখে।.......তারমানে শুরুতে চোখ আবার আমি এটাও শুনেছি মৃত্যুর পরও চোখ সক্রিয় থাকে। শেষেও চোখ।

যা হোক শুভেচ্ছা রইল।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:৪৩

সাইমুম বলেছেন: মরার পরও চোখ সক্রিয় না থেকে উপায় আছে?
কবিই তো বলে দিয়েছেন:

'মরার পরও আমার চোখ তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবে'।

২| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:৪৭

আকাশ মামুন বলেছেন: সুখ পাঠ্য.............

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:৪৯

সাইমুম বলেছেন: শুকরিয়া।

৩| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:০২

আরফার বলেছেন: বাহ্‌, চমৎকার।
চোখ যেন আসলেই কোনো অপার্থিব সৃষ্টি, মস্তিষ্কের বিভ্রান্তির মূলে কিন্তু ঐ একদৃষ্টিতে প্রিয়ার চোখের দিকে চাহনি...

++

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:৪৮

সাইমুম বলেছেন: শুকরিয়া।

৪| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:২২

হাসান মাহবুব বলেছেন: চোখ সুন্দর

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:৪৯

সাইমুম বলেছেন: ইয়েস 'চোখ সুন্দর'।

৫| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:৩০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আমার সারা দেহ খেয়োগো মাটি
ও ও চোখ দুটো মাটি খেয়ো না...
আমি মরে গেলেও তারে দেখার সাধ
মিটবেনা গো মিটবে না.....

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:৫০

সাইমুম বলেছেন: এটাই চোখের সেরা বন্দনা।

৬| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:০৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আপনি জেনে আনন্দিত হবেন! আমি বিনা প্রমোশনে জেনারেল হইয়াছি....;)

(পরার পর মন্তব্যটা মুছে দিতে পারেন।)

পাইলাম ইহাকে পাইলাম......

dear blogger,

we are sorry to inform that we had to remove one of your comments from a particular post (ব্লগার ফকির ইলয়াসের একটি পোস্ট, ব্লগে পিছলামির চর্চা এবং রাজাকার-ভাদা দ্বন্দ্বচর্চা) . please note: this action is taken to maintain a good environment of the blog according to rule:

3b. if the post or picture that contains personal attack, harassment, defamation, vulgarity, profanity, obscenity, name calling or pornography.

৩খ. যদি পোস্ট কিংবা ছবিতে ব্যক্তি আক্রমণ, হয়রানিমূলক, কুৎসা রটনামূলক, অশ্লীলতা, কুরুচিপূর্ণ, আপত্তিকর, গালিগালাজ এবং পর্ণগ্রাফি সম্বলিত বক্তব্য কিংবা বিষয় থাকে।



thank you in advance you for your understanding.

regards,
somewherein blog team.

তারমানে কি?

ভারত বিরোধীতায় মন্তব্য করলেও জেনারেল!!!! সামু কি একদিকে ঝুকে যাচ্ছে নাকি!!!!

ফকির ইলীয়াসের ব্লগে এইমাত্র সার্চ করে এলাম। উল্লেখিত পোষ্টিই গায়েব!!!
যার অজুহাতে আমাকে ঝিনারেল করা হইল।
এটি কি ফইর কোন দালালের অতি আহ্লাদ??? নাকি সামুর খামখেয়ালীপণা?????

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:১০

সাইমুম বলেছেন: মূল পোস্ট এখনো পড়িনি। তবে আমি ব্যক্তিগত আত্রমণের পক্ষে নই।

৭| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:১৩

সাইমুম বলেছেন: সৌন্দর্যের মৌল চেতনা আবার কীটপতঙ্গের মাঝেও সক্রিয়। সুন্দর ও আকর্ষণীয় ফুল প্রজাপতিকে তাড়াতাড়ি আকৃষ্ট করে। তাই যে ফুলের প্রাকৃতিক রূপ যতো আকর্ষণীয় সে ফুলের বংশগতি রক্ষা ততো সহজ হয়। এটা প্রকৃতির যৌন নির্বাচন। অবশ্য চোখ নিয়ে নারীবাদীদের চেতনা ভিন্ন। তাদের ধারণা, পুরুষ নারীর চোখকে কেন্দ্র করে যৌন উদ্দীপক দৈহিক বৈভব তালাশ করে যায় প্রতিদিন-প্রতি রাত।

৮| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:১৪

সাইমুম বলেছেন: শাস্ত্রকার ও সাহিত্যিকরা নারীর চোখ নিয়ে এতো মজাদার উপমা সৃষ্টি করেছেন, যা কল্পনাকেও হার মানায়। এগুলোর মাঝে শ্লীল-অশ্লীল দুটোই আছে। কেউ বলেছেন, পটোল চেরা আঁখি কখনো 'আকাশ', কখনোবা 'নারকেল দিঘি'। কেউবা বলেন, 'ও চোখের চাহনিতে ধারালো সব তীর সাজানো রয়েছে থরে-বিথরে।' তাই কবি বলতে পারেন, 'আঁখি বাণে হিয়া জর জর'। সত্যিই নারীর চোখে বাকা অপাঙ্গ চাহনিতে কটাক্ষ হানতে পারঙ্গম। বাকা চোখে ছুড়ে দেয় 'কষ্ট-আনন্দ-প্রেম'। আবার সেই নারীই চোখের জলে মুক্তোর মালা গাথে, কেউবা পানির আরেক জ্ঞাতিভাই চোখের জলে সারাটি জীবন ভাসেন। রবিঠাকুর বলেছেন, 'অশ্রুজল কাঁদলে তা বেলফুল হয়ে যায়।' নারী চোখের নিঃসীম গভীরতা কবি নাকি তার কল্পনার রশিতেও নাগাল পান না। সাত সাগরের গভীরতা নাকি ও দুটো চোখে। আর পাপড়িগুলো যেন পদ্ম সরোবরের তীরে ঝাউ-মহুয়া কিংবা পুকুর পাড়ে তরু শ্রেণী। ভ্রু দুটো নাকি বাঁকা ছুরি-- কামের কামান। আবার ইংলিশ নাট্যকার শেক্সপিয়ার নারীর চোখকে প্রমিথিউসের আগুনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এ আগুন কাউকে বরফশীতল ঠাণ্ডা বানায়, কাউকে আবার জ্বালিয়ে অঙ্গার করে দেয়। তারপরও এটা সত্য যে, নারী তার দুরবিন চোখ মেলে পুরুষের মনের অনেক খবরই মুখস্থ করে নিতে পারে। পুরুষের বেলায় সচরাচর তা ঘটে না। বরং নারীর রহস্যময়ী চোখের সহজ-সরল অনুবাদ জানতে পুরুষ প্রাণপাত করে।
নারী চোখের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেউ কেউ আরো এক ধাপ ওপরে উঠেছেন। তাদের মতে, যৌবনে নারীর চোখ নাকি নিজেই শিল্প হয়ে ওঠে। তাই এটা কখনো চাদের আলোর মতো স্নিগ্ধ, কখনো রুপোলি রোদের মতো ঝকমকে, কখনো বা প্রশান্ত বিলের জলের মতো নিস্তরঙ্গ, আবার কখনো বা ঝরনার মতো ঝরঝর করে কথা বলে।

৯| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:১৪

সাইমুম বলেছেন: প্রতীকবাদে মানব চোখ শুধু বুদ্ধিমত্তা ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীকই নয়, কখনো কখনো তা ভীতিরই প্রতীক। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন লৌকিক উপাখ্যানগুলোতে সূর্যকে 'ইভিল আই' বা 'কুদৃষ্টি' হিসেবে দেখানো হয়েছে। জাদু ও প্রতীকবাদে বলা হয়েছে, চোখ দিয়ে মানুষ শুধু নিজেকেই দেখে না, বরং মানুষ যা দেখে তাকেও প্রভাবিত করে নিজেকে বিভিন্ন আকার-আকৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতেও সহায়তা করে অথবা চোখের মাধ্যমে নিজের ইচ্ছানুসারে অপরকে সম্মোহিত বা প্রভাবিত করা সম্ভব।

১০| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:১৫

সাইমুম বলেছেন: সর্বদর্শী হিসেবে অতীতে বারবার চোখকে সূর্যের সঙ্গে (মাঝে মাঝে চাদের সঙ্গেও) তুলনা করা হয়েছে। এ বিশ্বে সূর্যই আলোর উৎস। সূর্যের মতো মানব চক্ষুও আমাদের চারপাশের দৃশ্যমান বস্তুনিচয়কে দেখতে পায়। প্রতীকবাদ মতে, আলো নিজেই প্রজ্ঞা ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক। তাই সূর্য যদি চোখ বিবেচিত হতে পারে, তাহলে আমাদের চোখও একটি সূর্য বিবেচিত হতে বাধ্য এবং তখন তা মানসিক ও অন্তর্দৃষ্টির প্রতিভূ হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।

পৌরাণিক উপাখ্যান ও কিছু কিছু ধর্মীয় তত্ত্বেও সর্বদর্শীয় প্রতীক হিসেবে মাঝে মাঝে দেব-দেবীদের একাধিক চক্ষুবিশিষ্ট হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাদের সর্বদর্শী ও ব্যাপক শক্তির আধার মনে করা হতো। ব্যাবিলন দেবতা মারদুকের চার চোখ। অপরদিকে ইজিপশিয়ান দেবী বেজরের সারা শরীর জুড়েই চোখ আর চোখ। আর দেবী 'আইসিস' শব্দের অর্থ হচ্ছে 'বহু চোখ'।

একাধিক চোখ অনেক সময় রাতের আকাশের তারার সঙ্গেও বিবেচিত হয়েছে। এক্ষেত্রে হিন্দু দেবতা বরুণের নাম উল্লেখ করা যায়। তার রয়েছে হাজার চোখ। একইভাবে ভাগ্য গণনায় ব্যবহৃত ফ্রান্সের ট্যারট কার্ড-এ বর্ণিত শয়তানের শরীর জুড়ে রয়েছে অগণিত চোখ। ওল্ড টেস্টামেন্টের গোপন তাৎপর্য উদ্ঘাটন প্রয়াসী ইহুদি ধর্মগুরুরাও তাদের গৃহ্যতত্ত্ব পুস্তকে ট্যারট কার্ডের মতো একটি অক্ষর ব্যবহার করেন। 'আয়িন' নামের এ অক্ষরটি চোখের প্রতিনিধিত্ব করে।

বিশ্ব সংস্কৃতিতে চোখের ইতিবাচক প্রভাবের চেয়ে নেতিবাচক প্রভাব কম নয়। চোখের মাঝে মানুষ অশুভ চেতনাও খুজে নিয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক আমল থেকে আজকের যুগেও 'কুদৃষ্টি' বিশ্বের নানা অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। অপশক্তির কুদৃষ্টিতে ছেলেবুড়ো সবাই যে নানা ধরনের অসুখ-বিসুখসহ কষ্টে পতিত হয়; তার ধারণাটি কমবেশি বিশ্বের সব সমাজে আজো দেখা যায়। গবাদিপশুর মরে যাওয়া, ক্ষেতের ফসল বিবর্ণ হয়ে যাওয়া, গাভীর ওলানে দুধ কমে যাওয়া, ঘোড়া খোড়া হয়ে যাওয়া, দুর্ঘটনা, অপ্রত্যাতি প্রতিকূলতাকে আজো শত্রু বা অপশক্তির কুদৃষ্টির ফসল মনে করা হয়। ব্যাবিলন ও ইজিপশিয়ান সভ্যতার বিভিন্ন স্মারক স্তম্ভে চোখ খোদিত রয়েছে। তাদের ধারণা ছিল, দেবতাদের চোখ সমাধিতে খোদিত থাকলে মৃতের দেহ নিয়ে অপদেবতারা ছেলেখেলা করতে পারেন না।

১১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:১৫

সাইমুম বলেছেন: খাবার গ্রহণকালে অপরিচিত ব্যক্তি আফসোস বা লোভের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে আমরা বিব্রত হই। এটা আমাদের সংস্কৃতিতে 'নজর পড়া বা লাগা' নামে পরিচিত। এ জাতীয় পরিস্থিতিতে বড়রা বিশেষত সন্তানের মা বেশ বিব্রত হন। নজর না লাগার জন্য অবশিষ্ট খাদ্যদ্রব্য ফেলে দেন অথবা সন্তানকে 'নজর' থেকে সরিয়ে নেন। বিশ্ব সংস্কৃতিতে কুদৃষ্টির প্রভাব শিক্ষার আলো জ্বেলেও পুরোপুরি তাড়ানো যায়নি। লোকাচারে বলা হয়ে থাকে, অপশক্তির কুপ্রভাব চোখের মাধ্যমে ভিন্ন বস্তুতে সঞ্চারিত হতে পারে। হিন্দু শাস্ত্রমতে, শিশুর জন্মের পরপরই একটি অদৃশ্য আত্মা জন্ম নেয়। এই অদৃশ্য আত্মার কুদৃষ্টি থেকে সন্তানের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে হলে পরবর্তী ৪০ দিন মায়ের একটি স্তন ঢেকে রাখতে হবে। এতে অদৃশ্য আত্মাটি খাবারের অভাবে মারা যাবে। এ সময় যদি শিশুকে উভয় স্তন চুষতে দেয়া হয়, তাহলে সন্তানটির কুদৃষ্টি পরবর্তীকালে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠবে। হিন্দু পুরাণে বলা হয়েছে, দেবতা শিব ও পার্বতীর পুত্র গণেশের জন্মদিনের উৎসবে শনি দেবতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এতে শনি দেবতা ক্ষুব্ধ হন এবং গণেশের দিকে একনজর দিয়েই মাথাটা বড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। আমন্ত্রিত বাকি দেবতারা তৎক্ষণাৎ একটি শিশু হাতির মাথা কেটে তা গণেশের মাথায় লাগিয়ে দেন। কুদৃষ্টির শক্তিশালী প্রমাণ এটাই। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে আজো কুদৃষ্টি থেকে শিশুকে বাচাতে মাথার একপাশে টিপের আকারে 'কাজল' লাগানো হয়। অস্বাভাবিক রঙের বা আকারের চোখকে আমাদের সমাজে আজো 'অশুভ' মনে করা হয়। শুধু তাই নয়, ময়ূরের একটি ম্যুরাল জাতিসংঘের সদর দফতরের দেয়ালে খোদিত হওয়ার পর নাইজেরিয়ার একজন অ্যামবাসাডর জাতিসংঘের সদর দফতরের ওই করিডোর দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। শুধু নাইজেরিয়ানরাই নয়, বিশ্বের অনেক জাতি ময়ূরের পালকে খচিত উজ্জ্বল ছোপকে অশুভ চোখের সঙ্গে তুলনা করেন। ইসলাম ধর্মেও কুদৃষ্টির বাস্তবতা স্বীকার করে নেয়া হয়েছে।

১২| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪৫

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: পাখির নীড়ের কথা বললেন না। চোখ নিয়ে আমার এক প্রস্থ।
Click This Link

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫২

সাইমুম বলেছেন: ঘুরে এলাম। কমেন্ট করলাম। প্রাপ‌্য বুঝিয়ে দিলাম।

১৩| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১০:০৮

আবদুর রাজ্জাক শিপন বলেছেন:
চোখ মনের কথা বলে..

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৪৫

সাইমুম বলেছেন: শিপন ভাই, অনেক দিন পর ব্লগে পেলাম। ভালো আছেন?

১৪| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৯

জুন বলেছেন: সাইমুম আমার চোখ খুব সুন্দর

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪৭

সাইমুম বলেছেন: মাশাআল্লাহ! সুবহানআল্লাহ! ওই চোখের নূর আল্লাহ আরো উজ্জ্বল ও দীর্ঘস্থায়ী করুক।

মাওলানা ( ;) সাইমুমের এ মোনাজাতের হাদিয়া হচ্ছে 'বই পড়ার অভ্যাস ধরে রাখতে হবে। '

মিসর সফর কেমন হচ্ছে?
Have a nice tour!

১৫| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৩:৪৬

রেজোওয়ানা বলেছেন: পাখির বাসার মতো আউলা ঝাউলা (উইদ আউট বাবুই) জিনিসের সাথে চোখের তুলনা কেন করা বলেন তো চক্ষুবিশারদ?

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৪:১৭

সাইমুম বলেছেন: বিষয়টি নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। শুধু এতটুকু বলবো, আমি আর আপনি এ উপমা দিলে খবর ছিল। কিন্তু জীবনানন্দ দাশের এ উপমা এখন 'আর্ষপ্রয়োগ' হয়ে গেছে। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.