নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন মুক্ত মনের লেখক। আমার যা ভালোলাগে আমি তাই লেখার চেষ্টা করি।

শেখ সাকিবুল ইসলাম

আসসালামু আলাইকুম, আমি সাকিব। আমি একজন ব্লগার ও ইউটিউবার। আশাকরি আমার লেখা আপনাদের ভাল লাগবে।

শেখ সাকিবুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

পা হারিয়ে কি পেলাম ? পর্ব-২

২৪ শে মে, ২০২০ ভোর ৫:৩২

লেখকঃ শেখ সাকিবুল ইসলাম (কাল্পনিক গল্প)
রাতুলের বাবা মা এখন রাতুলের বেশি যত্ন নেয় । যেহেতু ছেলেটা সবে মাত্র পা হারিয়েছে । রাতুলও আসতে আসতে অভস্ত হয়ে যাচ্ছে । এভাবেই তার সারাদিন কাটে । স্কুলে কোন সমস্যা হয় না । মাঝে মধ্যে টিচার ও বন্ধুরা সান্তনা দেয় যেটা রাতুলের ভালো লাগেনা । কিন্তু সে মেনে নিয়েছে সব কিছু । সামনে ফাইনাল পরিক্ষা তাই পড়াশুনার চাপ বেশি । রাতুলের সব বন্ধুরা আবার রাতুলদের বাসায় গ্রুপ স্টাডি করে। পরিক্ষার চাপ আর বাকি সবকিছু মিলিয়ে সবাই সেই দিন গুলোর কথা প্রায় ভুলে যাচ্ছে । দেখতে দেখতে রাতুলদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ । রাতুল এবারও প্রথম হয়েছে । স্কুলের ছুটিতে রাতুলরা যাবে ঢাকার বাহিরে বেরাতে । সায়েদাবাদ থেকে বাস ঠিক করা হয়েছে সবাই মিলে যাবে সিলেট । রাতের ভ্রমণ খুবি উৎসাহিত রাতুল । মোবাইল হেডফোন সব তৈরি । রাতের খবার খেয়ে সবাই মিলে রওনা দিলো সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ডের দিকে । বৃহস্পতিবার হওয়ায় রাস্তায় একটু জাম, সবাই বুঝি দেশের বাড়ি যাবে কারন শুক্র শনিবার ছুটি । সায়েদাবাদ পৌছিয়ে কিছুখন অপেক্ষা করতে হলো বাস আসতে দেরি হচ্ছিলো বলে । খবর নিয়ে জানা গেছে বাস আছে মিরপুর আসতে সময় লাগবে । শুরু হলো অপেক্ষা । রাতুল মোবাইলে গেমস খেলছে বাবা মা একজন বয়স্ক ভদ্রলোকের সাথে কথা বলছে । সময়টা একটু কষ্টেই কাটলো । কাউন্টার থেকে বলেছে বাস এসে গেছে লাগেজ গুলো হাতে নিতে । সবাই যে যার সিটে বসলো । রাতুলের সিট জানালার পাশে । রাতুল রাতের দৃশ্য উপভোগ করবে আর গান শুনবে । শুরু হলো যাত্রা । রাতুলের বাবা মা ঘুমিয়ে পরেছে । বাস খুব ধ্রুত চলছে । ড্রাইভার খুব দক্ষ মনে হচ্ছে । কেমন করে সামনের গাড়ি গুলো পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে দেখতে ভালোই লাগছে । মনেহচ্ছে ভিডিও গেম চলছে বাস্তব জীবনে । হঠাত ঘটলো এক দূরঘটনা । এমন এক দূরঘটনা যা বদলে দিয়েছিলো রাতুলের জীবন । সে কল্পনাও করেনি এমন একটি ঘটনা তার জীবনে ঘটবে । যে বাসের সাথে ওদের বাসটি প্রতিযোগিতা করছিলো সে বাসটি হঠাত পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে সামনে চলে যায় । যার কারনে রাতুলদের বাসটি খাদে পড়ে যায় । রাতুল ও তার বাবা মা অচেতন হয়ে পড়ে। স্থানীয় লোক জন আহতদের হাস্পাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। রাতুল যখন চেতনা ফিরে পায় সে দেখে, সে একটি হাস্পাতালের ওয়ার্ডে শুয়ে আছে। আসে পাসে অনেক রুগি। রাতুল একজন নার্সকে প্রশ্ন করে তাকে এখানে কে ভর্তি করেছে? নার্স উত্তর দেয় স্থানীয় কিছু লোক তাদের সবাইকে নিয়ে আসে। তখন রাতুলের হঠাত মনে পড়ে বাবা মায়ের কথা। নার্স জানায় কিছু যাত্রি মারা গেছে আর বাকিরা এই ওয়ার্ডে আছে। যদিও রাতুলের চলাফেরার শক্তি নেই তারপরেও রাতুল উঠে দাঁড়ায়। পাশের সব বেডগুলোতে খোঁজার চেষ্টা করে তার বাবা মা কে কিন্তু কোথাও পায়না । রাতুলের বুকটা কেপে ওঠে। তাহলেকি তার বাবা মা বেচে নেই ? ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্সকে বলে দুর্ঘটনাতে মারা যাওয়া যাত্রিদের কোথায় রাখা হয়েছে ? নার্স রাতুলকে মর্গে নিয়ে যায় (যেখানে লাশ রাখা হয়) । প্রথমে যে লাশটি দেখানো হয় সেটি একজন মাঝ বয়সী লোকের। পরেরটি একজন মাঝ বয়সী মহিলার। এরপরের লাশটি দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলনা রাতুল এই লাশটি তার বাবার । হঠাত করে রাতুলের পুড়ো শরীর ঠান্ডা হয়ে আসলো, হাতপা কাঁপছে মনে হয় পড়ে যাবে।কোন ভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে যখন রাতুল পরের লাশটা দেখলো তখন সে চেতনা হারিয়ে পড়ে গেলো। কারণ সেই লাশটি ছিল তার মায়ের। চেতনা ফিরে পাবার বেশ কিছুদিন পড়ে রাতুলকে বাসায় যাবার অনুমতি দেওয়া হলো । রাতুল ও তার চাচারা মিলে রাতুলের বাবাকে গোসল ও কাফন পড়িয়ে দিলো । রাতুলের মায়ের গোসল ও কাফন তার খালারা করিয়ে দিয়েছে । এখন জানাজা পরানো হচ্ছে একটু পড়ে শেষ যাত্রার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। রাতুলের বাবা ও মায়ের লাশটি যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো তখন রাতুলের খুব কান্না পাচ্ছিলো । সে তার বাবা ও মায়ের লাশের পিছন পিছন যাচ্ছিলো । যখন তার বাবা ও মাকে মাটি দেওয়া হছিলো তখন রাতুল ভাবছিল যদি ডাক্তার ডেকে দেখান যেত তাহলে অবশ্যই ডাক্তার বলতো তার বাবা মা বেচে আছে কিন্তু এসব যে শুধু কল্পনা সেটা রাতুল জানে। মাটি দেওয়া শেষ হলে সবাই রাতুলের বাবা মায়ের জন্য দোয়া করে । সব কাজ শেষ করে সবাই যখন ফিরে যাচ্ছিলো তখন রাতুল ভাবছিলো নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন করে কি লাভ হল। সে তার পা হারিয়েছে এই আন্দোলনের জন্য। এই আন্দোলন করা হয়েছিল যেন সবাইকে সচেতন করা যায় । অথচ সেই সড়কই রাতুলের বাবা মায়ের প্রাণ নিলো । আর কতো প্রাণ গেলে সবাই সচেতন হবে ?
চলবে , , , ,

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.