![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি হুদা একজন পাবলিক ভাই! আমারে নিয়া লিখার মত কিছু পাইলাম না।
১৯৩৮ সালের ঘটনা। শেরে বাংলা তখন বাংলার প্রধানমন্ত্রী এবং সোহরাওয়ার্দী শ্রমমন্ত্রী।
তাঁরা গোপালগঞ্জে আসবেন। বিরাট সভার আয়োজন করা হয়েছে। এগজিবিশন হবে ঠিক হয়েছে। বাংলার দুই নেতা একসাথে গোপালগঞ্জে আসবেন। মুসলমানদের মধ্যে বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। স্কুলের ছাত্র তখন আমরা। আগেই বলেছি আমার বয়স তখন একটু বেশী, তাই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী করার ভার পড়লো আমার উপর। আমি করলাম দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে। পরে দেখা গেলো হিন্দু ছাত্ররা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী থেকে সরে পড়তে লাগলো। ব্যপার কি বুঝতে পারছি না। এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম, সেও ছাত্র, বলল "কংগ্রেস থেকে নিষেধ করেছে আমাদের যোগদান করতে।" যাতে বিরুপ সম্বর্ধনা হয় তার চেষ্টা করা হবে।........................
..............................
আমাদের নেতারা বললেন, হক সাহেব মুসলিম লীগের সাথে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন বলে হিন্দুরা ক্ষেপে গিয়েছে। এতে আমার মনে বেশ একটা রেখাপাত করলো। হক সাহেব ও শহীদ সাহেবকে সম্বর্ধনা দেয়া হবে। তার জন্যে যা কিছু প্রয়োজন আমাদের করতে হবে। আমি মুসলমান ছেলেদের নিয়েই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করলাম, তবে কিছু সংখ্যক নমশুদ্র শ্রেনীর হিন্দুরা যোগদান করলো। কারণ মুকুন্দবিহারী মল্লিক তখন মন্ত্রী ছিলেন এবং তিনিও হক সাহেবের সাথে আসবেন। শহরে হিন্দুরা সংখ্যায় খুব বেশী, গ্রাম থেকে যথেষ্ট লোক এলো, বিশেষ করে নানারকম অস্ত্র নিয়ে, যদি কেউ বাঁধা দেয়! যা কিছু হয়, হবে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও হতে পারতো। ........................
.................................
এই সময় একটা ঘটনা ঘটে গেলো। হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে একটু আড়াআড়ি চলছিলো। গোপালগঞ্জ শহরের আশেপাশে হিন্দু গ্রাম ছিলো। দুএকজন মুসলমানের উপর অত্যাচারও হল। আব্দুল মালেক নামে আমার এক সহপাঠী ছিলো। সে খন্দকার শামসুদ্দীন সাহেবের আত্মীয় হত। একদিন সন্ধ্যায়, আমার মনে হয় মার্চ কি এপ্রিল মাস হবে, আমি ফুটবল খেলে বিড়িতে এসেছি ; আমাকে খন্দকার শামসুল হক ওরফে বসু মিয়া মোক্তার সাহেব (পরে মহকুমা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন ) ডেকে বললেন, “মালেককে হিন্দু মহাসভা সভাপতি সুরেন বেনার্জীর বাড়িতে ধরে নিয়ে মারপিট করছে। যদি পার একবার যাও। তোমার সাথে ওদের বন্ধুত্ব আছে, তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আস।“
আমি আর দেরী না করে কয়েকজন ছাত্র ডেকে নিয়ে ওদের ওখানে যাই এবং অনুরোধ করি ওকে ছেড়ে দিতে। রমাপদ দত্ত নামে একজন আমাকে দেখেই গাল দিয়ে বসলো। আমিও তার কথার প্রতিবাদ করলাম এবং আমার দলের ছেলেদের ডাক দিতে বললাম। এরমধ্যে রমাপদরা থানায় খবর দিয়েছে। তিনজন পুলিশ এসে হাজির। আমি বললাম, “ওকে ছেড়ে দিতে হবে , নইলে কেড়ে নিব।” আমার মামা শেখ সিরাজুল হক (একই বংশের) তখন হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করতেন। আমি খবর দিয়েছি শুনে দলবল নিয়ে ছুটে এলেন। এর মধ্যেই আমাদের সাথে মারপিট শুরু হয়ে গেছে। দুই পক্ষে ভীষন মারপিট হয়। আমরা দরজা ভেঙ্গে মালেককে নিয়ে চলে আসি।
শহরে খুব উত্তেজনা। আমাকে কেউ কিছু বলার সাহস পায়না। সেদিন রবিবার। আব্বা বাড়ি গিয়েছিলেন। পরদিন ভোরবেলায় আব্বা বাড়ি আসবেন। বাড়ি গোপালগঞ্জ থেকে চোউদ্দ মাইল দূরে। আব্বা শনিবার বাড়ি যেতেন আর সোমবার ফিরে আসতেন। নিজেরই নৌকা ছিল। হিন্দু নেতারা রাতে বসে হিন্দু অফিসারদের সাথে পরামর্শ করে একটা মামলা দায়ের করল। হিন্দু নেতারা থানায় বসে এজাহার ঠিক করে দিলেন। তাতে খন্দকার শামসুল হক মোক্তার সাহেব হুকুমের আসামী। আমি খুন করার চেষ্টা করেছি, লুটপাট- দাঙ্গা হাঙ্গামা লাগিয়ে দিয়েছি। ভোরবেলায় আমার মামা, মোক্তার সাহেব, খন্দকার শামসুদ্দীন আহমেদ এমএলএ সাহেবের মুহুরী জহুর শেখ আমার বাড়ির কাছের বিশেষ বন্ধু শেখ নুরুল হক ওরফে মানিক মিয়া, সৈয়দ আলী খন্দকার, আমার সহপাঠী আবদুল মালেক এবং অনেক ছাত্রের নামে এজাহার দেয়া হয়েছিল। কোন গন্যমান্য লোকের ছেলেদের বাকী রাখেনাই। সকাল ন’টায় খবর পেলাম আমার মামা ও আরো অনেককে গ্রেফতার করে ফেলেছে। আমাদের বাড়িতে কই করে আসবে- থানার দারোগা সাহেবদের একটু লজ্জা করছিলো! প্রায় দশটার সময় টাউন হল মাঠের ভিতর দাঁড়িয়ে দারোগা আলাপ করছে, তার উদ্দেশ্য আমি যেন সরে যাই। টাউন হলের মাঠের পাশেই আমার বাড়ি। আমার ফুফাত ভাই, মাদারীপুর বাড়ি। আব্বার কাছে থেকেই লেখাপড়া করতো। সে আমাকে বলে,
“মিয়াভাই, পাশের বাসায় একটু সরে যাও না!”
বললাম, “যাবনা, আমি পালাব না। লোকে বলবে আমি ভয় পেয়েছি।”
এই সময় আব্বা বাড়ি ত্থেকে ফিরে এসেছেন। দারোগা সাহেবও তার পিছে পিছে বাড়িতে ঢুকে পড়েছেন। আব্বার কাছে বসে আস্তে আস্তে সব কথা বললেন। আমার গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখালেন। আব্বা বললেন “নিয়ে যান।” দারোগা বাবু বললেন, “খেয়েদেয়ে আসুক, আমি একজন সিপাহী রেখে যাচ্ছি, এগারটার মধ্যে যেন থানায় পৌঁছে যায়। কারণ দেরী হলে যামিন পেতে অসুবিধা হবে।”
আব্বা জিজ্ঞেস করলেন, “মারামারি করেছ?”
আমি চুপ করে থাকলাম। মানে “করেছি।”
আমি খাওয়া দাওয়া শেষ করে থানায় চলে এলাম। দেখি আমার মামা, মানিক, সৈয়দ আরও সাত-আটজন হবে, তাদেরকে পূর্বেই গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে এসেছে। আমি পৌঁছার সাথে সাথে কোর্টে পাঠিয়ে দিল। হাতকড়া দেয়নাই, তবে সামনে পেছনে পুলিশ। কোর্ট দারোগা হিন্দু ছিলেন, কোর্টে পৌঁছার সাথে সাথে আমাদের কোর্ট হাজতের ছোট কামরায় বন্ধ করে রাখলেন। কোর্ট দারোগার রুমের পাশেই কোর্ট হাজত। আমাকে দেখে বলেন,
“মুজিবর খুব ভয়ানক ছেলে। ছোরা মেরে বসেছিল রামাপদকে। কিছুতেই জামিন দেয়া যেতে পারেনা।”
বললাম, “বাজে কথা বলবেন না! ভালো হবে না।”
যারা দারোগা সাহেবের সামনে বসে ছিলো তাদের বললেন, “দেখো ছেলের সাহস!”
পরে শুনলাম আমার নামে এজাহার দিয়েছে এই কথা বলে যে, আমি ছোরা দিয়ে রমাপদকে হত্যার জন্যে আঘাত করেছি। সে হাসপাতালে ভয়ানক খারাপ অবস্থায় আছে। প্রকৃতপক্ষে রমাপদের সাথে আমার মারামারি হয় একটা লাঠি দিয়ে, ওয়ামাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করলে আমিও লাঠি দিয়ে প্রত্যাঘাত করি। যার জন্যে ওর মাথা ফেটে যায়। মুসলমান উকিল মুক্তার সাহেবরা কোর্টে আমার জামিনের আবেদন পেশ করল। একমাত্র মোক্তার সাহেবকে টাউন জামিন দেয়া হল। আমাদের জেল হাজতে পাঠানোর হুকুম হল। .................................
..........................................
হক সাহেব ও সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কাছে টেলিগ্রাম করা হল। লোকও চলে গেলো কলকাতায়। গোপালগঞ্জে ভীষণ উত্তেজনা চলছিলো। হিন্দু উকিলদের সাথে আব্বার বন্ধুত্ব ছিলো। সকলেই আমার আব্বাকে সম্মান করতেন। দুই পক্ষের মধ্যে অনেক আলোচনা হয়ে ঠিক হল তারা মামলা চালাবেনা। আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে পনেরশ টাকা। সকলে মিলে সেই টাকা দেয়া হল। আমার আব্বাকেই বেশী দিতে হয়েছিল। এই আমার জীবনের প্রথম জেল।
----------------------♣000♣000♣-----------------
যারা বলেন শেখ মুজিব ভীতু ছিলেন, যুদ্ধের আগে পাকিস্তান পালিয়েছেন আঁতাত করে, তাদের জন্যে এই অনুচ্ছেদ, আশা করি বুঝতেই পারছেন যে তিনি ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে ছিলেন।
©somewhere in net ltd.