নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাকিব হাসনাইন

নাম সাকিব। পড়ি কলেজে। প্রযুক্তিকে ভালবাসি। আমার ব্লগঃ http://tunersakib.blogspot.com/

সাকিব হাসনাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবিনের গতিধারা

১৭ ই মে, ২০১৫ রাত ১:৪০



নিস্তব্ধ গভীর রাত।

শহরের ব্যস্ততম হাইওয়ে রোড।

অবশ্য এই মূহুর্তে রাস্তার নির্জনতা লক্ষণীয়। রাতের কারণে নয় বরং অন্য একটি কারণে রাস্তাঘাট ফাঁকা। সাধারণত দিন বা রাত কোন কিছুই এই এলাকার ব্যস্তমুখর পরিবেশের মধ্যে কোনরকম প্রভাব ফেলতে পারে না।

কিন্তু আজকের কথা ভিন্ন। আজ সারাদেশে হরতাল। গত তিন দিন ধরে হরতাল চলছে। কবে হরতাল শেষ হবে কেউ বলতে পারে না। এই হরতালের কারণে দূর্নীতিগ্রস্থ সরকার বা তাদেরই অনূরূপ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত বিরোধীদলীয় লোকজনের জীবনযাত্রায় কোনরকম পরিবর্তন না ঘটলেও সারাদেশের মানুষের জীবনযাত্রা থমকে গেছে। অনেকেই কাজের অভাবে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে। যেমনটি হয়েছিল প্রায় তেতাল্লিশ বছর আগের সেই ভয়াল সময়ে। তখন সাধারণ মানুষ জিম্মি ছিল পাকিস্তানী শোষক গোষ্ঠীর হাতে। আর আজও সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে রয়েছে। তবে বাইরের কারও কাছে নয়। দেশেরই ক্ষমতাশালী কতিপয় রাজনীতিকদের কাছে। এদের মধ্যে কেউ বিরোধীদলীয় আবার কেউ সরকার দলীয়।

রাতের অন্ধকার চিরে পূর্বাকাশে উদিত হল সূর্য। সূচনা হল আরেকটি নতুন দিনের। আদিকালে মানুষেরা সূর্যকে দেবতা জ্ঞানে পুজা করত। কারণ, গুহার অন্ধকারে মানুষ যখন বন্য পশুদের ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠত। তখন সূর্য এসে তাদের মনে নতুন আশার আলো সঞ্চার করত। নতুন উদ্যমে তারা লড়াই করে বিজয়ী হত। যার মাধ্যমেই টিকে আছে আমাদের সভ্যতা। অবশ্য মানুষ নিজেই কিভাবে নিজেদের তৈরী করা সভ্যতা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে পারে তার প্রমাণ আমরা বহুবার পেয়েছি। থাক, সেসব কথা। আমরা বরং এখন একটু বর্তমানের দিকে নজর দেই।

আজ বাবলুর জন্য মহা আনন্দের দিন। আম্মু বলেছে, আজ স্কুলে যেতে হবে না। এমনিতে হাজারও বায়না ধরলেও আম্মু জোর করে স্কুলে পাঠাতো। কিন্তু আজ আম্মু নিজেই বলেছে, ওর স্কুলে যাওয়ার দরকার নেই। এর পেছনের কারণও জানে ও। আজ হরতাল। হরতাল কেন দেওয়া হয়? সেটা বাবলূ ঠিক জানে না। ক্লাশ এইট পড়ুয়া একজন ছেলের কাছে তা বোধগম্য হওয়ার কথাও না। দরকার আছে এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর? বাবলুও মাথা ঘামায় না। তবে ও এইটুকু জানে যে দল ক্ষমতায় থাকে না তারাই হরতাল দেয়। আর হরতাল দিলেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল হরতালে স্কুলে যেতে হয় না। স্কুলে না যাওয়ার যে আনন্দ তার সাথে কি কোনো কিছুর তুলনা চলে?

বাবলু একবার শুনেছিল সরকার নাকি নিয়ম করে দেবে যে কাউকে আর মারা হবে না। বাবলু আর ওর বন্ধুরা এই খবর শুনে যা খুশি হয়েছিল তা আর বলার মত নয়। নিয়ম চালু হয়েছে কিন তা ওর জানা নেই। মনে হয় হয় নি। হলে কি এখনও স্কুলে পড়া না পারলে বা দুষ্টামি করলে এরকম ভাবে মারতো?

সকালের নাস্তা করেই বাবলু খেলার জন্য বেরিয়ে যায়। আগের কথা অনুযায়ী স্কুলের সামনে গিয়ে দেখে সুজন, মামুন, শামীম, তনু সবাই আছে। ওদের আজ খেলতে যাওয়ার কথা। সব সময়তো স্কুল এর কারণে খেলার সুযোগ হয় না। তাছাড়া, এখন পড়ার চাপও তুলনামূলক ভাবে কম। প্রতিদিনই এখন ওরা সকালে ক্রিকেট খেলে।

বিলু কোথায়? শামীম বাবলুকে জিজ্ঞেস করে।

ও তো বল আনতে গেছে। বাবলু উত্তর দেয়।

বিলুর বাসা আর বাবলুর বাসা পাশাপাশি। ওরা একজন আরেকজনের বেষ্ট ফ্রেন্ড। যেখানে যায় একসাথে যায়। তাই, আজ বাবলুকে একা দেখে অবাক হয়ে বাবলুকে বিলুর কথা জিজ্ঞেস জরে শামীম।

কিছুক্ষণের মাঝেই বিলুকে আসতে দেখা যায়। ওর হাতে একটা টেপ পেচাঁনো টেনিস বল। গতকাল খেলতে গিয়ে বলটা ফেটে যাওয়ায় সবাই মিলে টাকা তুলে বিলুর কাছে দেয়। যাতে, পরেরদিন বল কিনে আনতে পারে।

সবাই এতক্ষণ বিলুর জন্য অপেক্ষা করছিল। তাই বিলু এসে পড়ায় আর দেরি না করে মাঠের দিকে এগোয় সবাই। মাঠটা স্কুল থেকে বেশী দূরে নয়। মিনিট পাঁচেকের মাঝেই ওরা পৌঁছে গেল। মাঠে গিয়ে সবার চোখে মুখে হতাশা দেখা যায়। কারণ, গতকালের বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ মাঠ কাদা হয়ে আছে। এই কাদার মাঝে আর যাই হোক ক্রিকেট খেলা সম্ভব নয়। একজন ফুটবল খেলার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সর্ব সম্মতিতে তা নাকচ করে দেয়া হয়। সবারই একই কথা। নতুন বল কেনার পর ফুটবল খেলাটা রীতিমত অন্যায়। কিন্তু এটাও ঠিক এই মাঠে ক্রিকেট খেলা অসম্ভব।

আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে! কথাটা শুনে সবাই ঘুরে সুজনের দিকে তাকায়। দুষ্টুমির জন্য যদি অলিম্পিকে কোন প্রতিযোগিতার নিয়ম থাকত সবাই নিশ্চিত সুজন অলিম্পিকে সোনা নাহয় রূপা এনে দেশকে গৌরব এনে দিতে পারত। শুধুমাত্র অলিম্পিকের কর্মকর্তাদের জন্যই যে সুজনের মত একটা দেশের রত্ন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সে ব্যাপারে ওদের কারও মনে কোন সন্দেহ নেই। তাই ওর মাথায় আসা আয়ডিয়াটাও যে চমৎকার হবে সে ব্যাপারেও কারও কোন সন্দেহ নেই।

বল! বল! সবাই মিলে উৎসাহ দেয়।

তখন সুজন তার আইডিয়াটা ব্যাখ্যা করে। যার সারমর্ম দাঁড়ায়, তারা মাঠে খেলতে পারছে না তো কি হয়েছে? আজ তো হরতাল। রাস্তা পুরোপুরি ফাঁকা। এত বড় রাস্তা থাকতে কেন তারা খেলার জায়গা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করবে?

তার এই আইডিয়াটা সবারই খুব পছন্দ হয়। অতএব, কথামত তারা বড় রাস্তায় এসে খেলতে শুরু করে।

খেলা তখন অর্ধেকের মত হয়েছে। একদল ব্যাট করে পাঁচ ওভারে বাইশ রান সংগ্রহ করে। অপর দল তেইশ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামে।
হঠাৎ, তারা মানুষের চেচাঁমেচি শুনতে পেল। দেখল, সবাই দৌঁড়াচ্ছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা ককটেল বাবলুর পায়ের কাছে এসে পড়ে।

প্রচন্ড শব্দের পর দেখা যায় বাবলু মাটিতে পড়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে ওরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুই গাড়ি ভর্তি পুলিশ এসে পড়ে।

পুলিশ এবং হরতাল সমর্থকদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হতে থাকে। কোন কারণ ছাড়াই পুলিশ ওদের সবাইকে পেটাতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর পিকেটাররা রণে ভঙ্গ দিয়ে পালায়। তারপর, পুলিশেরাও ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

রাস্তায় পড়ে থাকে ওরা ক’জন। বাবলুর নিথর দেহ থেকে কোনো সাড়া নেই। শুধু ওর কান দিয়ে গাঢ় লাল রক্ত বেরোচ্ছে। পুলিশের পিটুনীতে সুজনের হাত ভেঙ্গে গেছে। পিকেটারদের ছোঁড়া ইট মামুনের মাথায় লেগেছিল। মাথা ফেটে সেই যে পড়ে গিয়েছিল আর একটুও নড়েনি। পুলিশের লাঠির বাড়ি বিলুর কিডনীতে এসে পড়ায় ও রাস্তাইয় পড়ে গোঙ্গাচ্ছে। তনুর ডান চোখেও পুলিশের বাড়ি লেগেছিল। সেখান থেকে এখন অজস্র রক্ত বেরোচ্ছে।

সবাই আহত বা নিহত হয়ে পড়ে আছে রাস্তার মাঝে। মধ্য দুপুরের তপ্ত রোদেও ওদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অনেকেই চলে গেছে সকল কষ্টের উর্ধ্বে।
নির্জন রাস্তা।
আশেপাশে কেউ নেই।
রক্তের পুকুরের মাঝে পড়ে রয়েছে কয়েকটি দেহ।

ঠিক যেমনটি পড়ে ছিল তেতাল্লিশ বছর আগে এমনই কোন রাস্তায়, মাঠে, বাজারে বা অন্য কোথাও।
পার্থক্য শুধু এইটুকই। তখন এসবের কারণ ছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তার দোসরেরা। আর এখন এসবের মূলে রয়েছে সরকার ও বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার লোভ।

সৌজন্যেঃ টিউনারসাকিব.ব্লগস্পট.কম
নিস্তব্ধ গভীর রাত।

শহরের ব্যস্ততম হাইওয়ে রোড।

অবশ্য এই মূহুর্তে রাস্তার নির্জনতা লক্ষণীয়। রাতের কারণে নয় বরং অন্য একটি কারণে রাস্তাঘাট ফাঁকা। সাধারণত দিন বা রাত কোন কিছুই এই এলাকার ব্যস্তমুখর পরিবেশের মধ্যে কোনরকম প্রভাব ফেলতে পারে না।

কিন্তু আজকের কথা ভিন্ন। আজ সারাদেশে হরতাল। গত তিন দিন ধরে হরতাল চলছে। কবে হরতাল শেষ হবে কেউ বলতে পারে না। এই হরতালের কারণে দূর্নীতিগ্রস্থ সরকার বা তাদেরই অনূরূপ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত বিরোধীদলীয় লোকজনের জীবনযাত্রায় কোনরকম পরিবর্তন না ঘটলেও সারাদেশের মানুষের জীবনযাত্রা থমকে গেছে। অনেকেই কাজের অভাবে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে। যেমনটি হয়েছিল প্রায় তেতাল্লিশ বছর আগের সেই ভয়াল সময়ে। তখন সাধারণ মানুষ জিম্মি ছিল পাকিস্তানী শোষক গোষ্ঠীর হাতে। আর আজও সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে রয়েছে। তবে বাইরের কারও কাছে নয়। দেশেরই ক্ষমতাশালী কতিপয় রাজনীতিকদের কাছে। এদের মধ্যে কেউ বিরোধীদলীয় আবার কেউ সরকার দলীয়।

রাতের অন্ধকার চিরে পূর্বাকাশে উদিত হল সূর্য। সূচনা হল আরেকটি নতুন দিনের। আদিকালে মানুষেরা সূর্যকে দেবতা জ্ঞানে পুজা করত। কারণ, গুহার অন্ধকারে মানুষ যখন বন্য পশুদের ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠত। তখন সূর্য এসে তাদের মনে নতুন আশার আলো সঞ্চার করত। নতুন উদ্যমে তারা লড়াই করে বিজয়ী হত। যার মাধ্যমেই টিকে আছে আমাদের সভ্যতা। অবশ্য মানুষ নিজেই কিভাবে নিজেদের তৈরী করা সভ্যতা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে পারে তার প্রমাণ আমরা বহুবার পেয়েছি। থাক, সেসব কথা। আমরা বরং এখন একটু বর্তমানের দিকে নজর দেই।

আজ বাবলুর জন্য মহা আনন্দের দিন। আম্মু বলেছে, আজ স্কুলে যেতে হবে না। এমনিতে হাজারও বায়না ধরলেও আম্মু জোর করে স্কুলে পাঠাতো। কিন্তু আজ আম্মু নিজেই বলেছে, ওর স্কুলে যাওয়ার দরকার নেই। এর পেছনের কারণও জানে ও। আজ হরতাল। হরতাল কেন দেওয়া হয়? সেটা বাবলূ ঠিক জানে না। ক্লাশ এইট পড়ুয়া একজন ছেলের কাছে তা বোধগম্য হওয়ার কথাও না। দরকার আছে এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর? বাবলুও মাথা ঘামায় না। তবে ও এইটুকু জানে যে দল ক্ষমতায় থাকে না তারাই হরতাল দেয়। আর হরতাল দিলেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল হরতালে স্কুলে যেতে হয় না। স্কুলে না যাওয়ার যে আনন্দ তার সাথে কি কোনো কিছুর তুলনা চলে?

বাবলু একবার শুনেছিল সরকার নাকি নিয়ম করে দেবে যে কাউকে আর মারা হবে না। বাবলু আর ওর বন্ধুরা এই খবর শুনে যা খুশি হয়েছিল তা আর বলার মত নয়। নিয়ম চালু হয়েছে কিন তা ওর জানা নেই। মনে হয় হয় নি। হলে কি এখনও স্কুলে পড়া না পারলে বা দুষ্টামি করলে এরকম ভাবে মারতো?

সকালের নাস্তা করেই বাবলু খেলার জন্য বেরিয়ে যায়। আগের কথা অনুযায়ী স্কুলের সামনে গিয়ে দেখে সুজন, মামুন, শামীম, তনু সবাই আছে। ওদের আজ খেলতে যাওয়ার কথা। সব সময়তো স্কুল এর কারণে খেলার সুযোগ হয় না। তাছাড়া, এখন পড়ার চাপও তুলনামূলক ভাবে কম। প্রতিদিনই এখন ওরা সকালে ক্রিকেট খেলে।

বিলু কোথায়? শামীম বাবলুকে জিজ্ঞেস করে।

ও তো বল আনতে গেছে। বাবলু উত্তর দেয়।

বিলুর বাসা আর বাবলুর বাসা পাশাপাশি। ওরা একজন আরেকজনের বেষ্ট ফ্রেন্ড। যেখানে যায় একসাথে যায়। তাই, আজ বাবলুকে একা দেখে অবাক হয়ে বাবলুকে বিলুর কথা জিজ্ঞেস জরে শামীম।

কিছুক্ষণের মাঝেই বিলুকে আসতে দেখা যায়। ওর হাতে একটা টেপ পেচাঁনো টেনিস বল। গতকাল খেলতে গিয়ে বলটা ফেটে যাওয়ায় সবাই মিলে টাকা তুলে বিলুর কাছে দেয়। যাতে, পরেরদিন বল কিনে আনতে পারে।

সবাই এতক্ষণ বিলুর জন্য অপেক্ষা করছিল। তাই বিলু এসে পড়ায় আর দেরি না করে মাঠের দিকে এগোয় সবাই। মাঠটা স্কুল থেকে বেশী দূরে নয়। মিনিট পাঁচেকের মাঝেই ওরা পৌঁছে গেল। মাঠে গিয়ে সবার চোখে মুখে হতাশা দেখা যায়। কারণ, গতকালের বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ মাঠ কাদা হয়ে আছে। এই কাদার মাঝে আর যাই হোক ক্রিকেট খেলা সম্ভব নয়। একজন ফুটবল খেলার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সর্ব সম্মতিতে তা নাকচ করে দেয়া হয়। সবারই একই কথা। নতুন বল কেনার পর ফুটবল খেলাটা রীতিমত অন্যায়। কিন্তু এটাও ঠিক এই মাঠে ক্রিকেট খেলা অসম্ভব।

আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে! কথাটা শুনে সবাই ঘুরে সুজনের দিকে তাকায়। দুষ্টুমির জন্য যদি অলিম্পিকে কোন প্রতিযোগিতার নিয়ম থাকত সবাই নিশ্চিত সুজন অলিম্পিকে সোনা নাহয় রূপা এনে দেশকে গৌরব এনে দিতে পারত। শুধুমাত্র অলিম্পিকের কর্মকর্তাদের জন্যই যে সুজনের মত একটা দেশের রত্ন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সে ব্যাপারে ওদের কারও মনে কোন সন্দেহ নেই। তাই ওর মাথায় আসা আয়ডিয়াটাও যে চমৎকার হবে সে ব্যাপারেও কারও কোন সন্দেহ নেই।

বল! বল! সবাই মিলে উৎসাহ দেয়।

তখন সুজন তার আইডিয়াটা ব্যাখ্যা করে। যার সারমর্ম দাঁড়ায়, তারা মাঠে খেলতে পারছে না তো কি হয়েছে? আজ তো হরতাল। রাস্তা পুরোপুরি ফাঁকা। এত বড় রাস্তা থাকতে কেন তারা খেলার জায়গা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করবে?

তার এই আইডিয়াটা সবারই খুব পছন্দ হয়। অতএব, কথামত তারা বড় রাস্তায় এসে খেলতে শুরু করে।

খেলা তখন অর্ধেকের মত হয়েছে। একদল ব্যাট করে পাঁচ ওভারে বাইশ রান সংগ্রহ করে। অপর দল তেইশ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামে।
হঠাৎ, তারা মানুষের চেচাঁমেচি শুনতে পেল। দেখল, সবাই দৌঁড়াচ্ছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা ককটেল বাবলুর পায়ের কাছে এসে পড়ে।

প্রচন্ড শব্দের পর দেখা যায় বাবলু মাটিতে পড়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে ওরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুই গাড়ি ভর্তি পুলিশ এসে পড়ে।

পুলিশ এবং হরতাল সমর্থকদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হতে থাকে। কোন কারণ ছাড়াই পুলিশ ওদের সবাইকে পেটাতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর পিকেটাররা রণে ভঙ্গ দিয়ে পালায়। তারপর, পুলিশেরাও ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

রাস্তায় পড়ে থাকে ওরা ক’জন। বাবলুর নিথর দেহ থেকে কোনো সাড়া নেই। শুধু ওর কান দিয়ে গাঢ় লাল রক্ত বেরোচ্ছে। পুলিশের পিটুনীতে সুজনের হাত ভেঙ্গে গেছে। পিকেটারদের ছোঁড়া ইট মামুনের মাথায় লেগেছিল। মাথা ফেটে সেই যে পড়ে গিয়েছিল আর একটুও নড়েনি। পুলিশের লাঠির বাড়ি বিলুর কিডনীতে এসে পড়ায় ও রাস্তাইয় পড়ে গোঙ্গাচ্ছে। তনুর ডান চোখেও পুলিশের বাড়ি লেগেছিল। সেখান থেকে এখন অজস্র রক্ত বেরোচ্ছে।

সবাই আহত বা নিহত হয়ে পড়ে আছে রাস্তার মাঝে। মধ্য দুপুরের তপ্ত রোদেও ওদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অনেকেই চলে গেছে সকল কষ্টের উর্ধ্বে।
নির্জন রাস্তা।
আশেপাশে কেউ নেই।
রক্তের পুকুরের মাঝে পড়ে রয়েছে কয়েকটি দেহ।

ঠিক যেমনটি পড়ে ছিল তেতাল্লিশ বছর আগে এমনই কোন রাস্তায়, মাঠে, বাজারে বা অন্য কোথাও।
পার্থক্য শুধু এইটুকই। তখন এসবের কারণ ছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তার দোসরেরা। আর এখন এসবের মূলে রয়েছে সরকার ও বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার লোভ।

সৌজন্যেঃ টিউনারসাকিব.ব্লগস্পট.কম

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:৩৭

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: এই লেখাটি যদি আপনার হয়ে থাকে এবং তা যদি অন্য কোন মাধ্যম বা সাইটে প্রকাশিত হয়ে থাকে তাহলে সেটা উল্লেখ্য করে দিতে পারেন পোস্টে, তবে কোন ভাবেই সেই সাইটের লিংক নয়।

ধন্যবাদ। শুভ ব্লগিং

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.