নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিবর্ন স্বপ্নাবলী নিয়ে অর্ধ জীবন্ত এক অস্তিত্ব আমি। খুব সতর্ক পায়ে হেটে চলি এই ভূমন্ডলে ও স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি শূন্য পানে নিজের অস্তিত্বের ব্যাখ্যা খুঁজতে।

সাকিব শাহরিয়ার

আমি সাকিব শাহরিয়ার। যেহেতু পৃথিবীর বুকে নিজের অস্তিত্ব অনুভব করি সেহেতু আমি একজন মানুষ। তবে বিবেকের কাঠ গড়ায় দাড়ালে কতটা হতে পেরেছি তা বলতে পারি না। তবুও আমি একজন মানুষ বা মানুষ হওয়ার প্রত্যাশায় তপস্যা রত এক সত্তা বলে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিতেই বেশি সম্মান বোধ করি।

সাকিব শাহরিয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুপার হিরোঃ খান সাহেবের খোলস মুক্তি

২০ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৩৪



নিন্দুকেরা যত ট্রল করুক না কেন ঢাকাই চলচ্চিত্রে শাকিব খান মানেই অনেক বড় একটা বাজার, হল ভর্তি দর্শক আর প্রোডিউসারের মুখে হাসি এবং এই বাজারটাকে পুঁজি করে খান সাহেব নিজের স্থুল ব্রান্ডিং কম করেন নাই। যেমন “গড ইজ ওয়ান; লাইফ ইজ ওয়ান; নাম্বার ওয়ান শাকিব খান” আবার “হিরো দ‍্যা সুপার স্টার” কিংবা “কিং খান” ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি। সুপার হিরো নামটা শুনে মনে হয়েছিল কিং খান এবার বুঝি সুপার ম‍্যান হয়ে মনের খায়েশ মেটাবেন অথবা গরীবের রাজা “রবীন হুড”। তবে ট্রেইলার দেখে খানিকটা ধাক্কা খেয়েছিলাম কিন্তু শাকিব খান তার স্টারডমে এতটা ছাড় দিয়ে শুধু চরিত্রের প্রয়োজনে একটা সাধারণ চরিত্র হয়ে উঠবেন এটি শুরুতে বিশ্বাস করতে পারিনি। সাধুবাদ, খান সাহেবের বোধোদয় হওয়ার জন্যে আর আর পরিচালক আশিকুর রহমানকে - খান সাহেবকে নিজের খোলস থেকে বের করে আনার জন‍্যে।

এবার কাহিনী প্রসঙ্গে আসা যাক। সুপার হিরো সিনেমার সবচেয়ে ভালো দিক ছিল গল্পের শক্ত গাঁথুনি। সাসপেন্স থ্রিলারধর্মী চলচ্চিত্রের সার্থকতা অনেকাংশে নির্ভর করে গতির পরিমিত ব‍্যাবহারের মাধ্যমে দর্শকদের চোখগুলো পর্দায় সদা জাগ্রত রাখা এবং এই মানদণ্ডে আশিকুর রহমান নিঃসন্দেহে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। গল্প বলার ধরনটাও ছিল তার নিজস্ব স্টাইলে যেমনটা বলেছেন “মুসাফির” এ। সব মিলিয়ে, কিছু ছোট খাট ত্রুটি ছাড়া সুপার হিরো একটি সার্থক বানিজ্যিক মিক্স।

কাহিনীর পাশাপাশি সুপার হিরোর আর একটি সফল জায়গা হচ্ছে চরিত্রায়ন। চরিত্রগুলো গিরগিটির মত রং বদলেছে় ক্ষণে ক্ষণে। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র গুলোর মধ‍্যে স্ট্রেইট চরিত্র ছিল শাকিব খানের ও টাইগার রবির চরিত্র। বাকী সবগুলো চরিত্রই ছিল দেখার মত। বাংলা চলচ্চিত্রের জন‍্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় চরিত্রটি ছিল বুবলির চরিত্র কারন এ‍্যাকশন ধর্মী চলচ্চিত্রগুলোতে নায়িকার চরিত্রটি অনেক বেশি টাইপ আর বোরিং হয়ে যাচ্ছিলো দিন কি দিন। গল্পকাররা ঠিক বুঝতে পারছিলেন না কোথায় ফিট করবেন নায়িকা চরিত্রটি। নবাব সিনেমায় শুভশ্রী, ঢাকা অ‍্যাটাকে মাহী, পাষাণে মীম একে একে সবাই পা দিয়েছেন এই সব হাস‍্যকর সাংবাদিক চরিত্রে। যেন এ‍্যাকশন সিনেমার নায়িকা মানেই সাংবাদিক হয়ে পুলিশ নায়কের সাথে প্রেম করতে হবে। নারী পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী সিন্ডি রোলিং এর চরিত্রটিও দেখার মত ছিল। তবে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন চরিত্র ছিল তারিক আনাম খানের চরিত্রটি।

এবার অভিনয় প্রসঙ্গে আসা যাক। সুপার হিরো চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, শবনম বুবলি, তারিক আনাম খান, সাদেক বাচ্চু, টাইগার রবি, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন অভিনেত্রী সিন্ডি রোলিং প্রমুখ। তবে অভিনয় প্রসঙ্গে বলতে গেলে বলতে হবে মূল চরিত্রগুলো যতটা কাঁপিয়ে অভিনয় করছে পার্শ্বচরিত্রগুলো ততটাই দূর্বল ছিল। সবচেয়ে দুঃখজনক ছিল সাদেক বাচ্চুর মত পাকা একজন অভিনেতার এমন আলগা অভিনয়। পজেটিভ কমেডি চরিত্রে নিজেকে কোন ভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না তিনি। অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ অফিসার, অস্ট্রেলিয়ান এম্বাসীর বুবলির বস এরা সবাই দূর্বল অভিনয়ের দোষে দুষ্ট। টাইগার রবি বার বার অতি অভিনয় করেছেন। বুবলির অভিনয় একটু পেসিভ। আর একটু একটিভ অভিনয় করলে ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে। শাকিব খান অভিনয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ছিলেন তবে তার ফিগার চরিত্রের সাথে যাচ্ছিলো না। তার চরিত্রটায় একজন পেশিবহুল নায়কের বেশি প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে টাইগার রবির পেশিবহুল বাহুর সাথে খান সাহেবের মেদ যুক্ত শরীর যাচ্ছিলো না। তাছাড়া লাইফ জ‍্যাকেট ও হ‍্যালমেট পরিহিত শরীরে শাকিব খানকে পুরোপুরি ফিট মনে হয়নি। তবে সিন্ডি রোলিং ও তারিক আনাম খান তাদের চরিত্রে পুরোপুরি ফিট ছিলেন। তারিক আনাম খানের খল অভিনয় নতুন কিছু না। নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় টিভি নাটক তথাপির “লাট ভাই” চরিত্রে অভিনয়ের পর বেশ কিছু সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি কিন্তু খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। তবে সুপার হিরোতে উনি নিজের জাত চিনিয়েছেন।

নির্মাণ সম্বন্ধে বলতে গেলে বলতে হবে স্বল্প বাজেটে কিভাবে ভালো সিনেমা বানানো যায় তার একটি দৃষ্টান্ত এটি। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় এই সিনেমার বাজেট নাকি ৩ থেকে ৫ কোটি টাকা কিন্তু এই গল্পে দশ কোটির কমে ভালো কিছু করা কঠিন যার ছাপ সিনেমার পড়তে পড়তে লুকিয়ে ছিল। কালার কারেকশন খুবই বাজে হয়েছে, ক্রোমার কাজ আলগা আলগা মনে হয়েছে, সিকোয়েন্সের কালার কন্টিনিউইটি ছিল না ইত্যাদি।

এখন সিনেমার কিছু গঠনমূলক সমালোচনায় আসা যাক। প্রথম যে জিনিসটায় ধাক্কা খেলাম সেটা হচ্ছে বাবার ছেলের সামনে বিয়ার খাওয়ার কৌতুক সিকুয়েন্সটা। এটা আমার দেশের সংস্কৃতি না কারন আমার দেশের কোন বাবা বোধহয় ছেলের সামনে বিয়ার খেয়ে মাতাল হয় না।

সিনেমায় প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যারা ছিলেন তাদের অনেকেই বিশেষ করে শাকিব খান ক্লিন সেভ করেনি। তবে আমি যতদূর জানি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সবার ক্লিন সেভ করা বাধ্যতামূলক। এমনকি ঢাকা অ‍্যাটাক সিনেমায় আরেফিন শুভ, এ বি এম সুমন সহ সবাই ক্লিন সেভড ছিল। শাকিব খানের চুলের কাটও প্রতিরক্ষা বাহিনীর মত ছিল না।

এমনকি শাকিব খান এর ম‍্যাকাপে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কন্টিনিউইটি ছিল না। বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর এক রাতে তার চুল দাড়ি বড় হয়ে উঠে। আবার অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে আসার পর একদিনে তার চুল দাড়ি ছোট হয়ে যায়।

শাকিব খান অস্ট্রেলিয়ায় কি জন্য গেলো আর করলো কি! গেল ট্রেনিং করতে কিন্তু ট্রেনিং এর নাম গন্ধ নাই ফিরল বুবলির সাথে প্রেমের ফসল একটা ল‍্যাপটপ নিয়ে, হাস‍্যকর। বাংলাদেশের মিসাইল বিজ্ঞানী অস্ট্রেলিয়া গিয়েছেন আর তার নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষানবিশ এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাকে অনুরোধ করছেন বাংলাদেশের এম্বাসীর এক কর্মচারী। এরকম কাহিনী হলে হাসানোর জন‍্য কমেডি সিকুয়েন্স থাকা লাগে না।

একটা সিকুয়েন্সে দেখা যায় শাকিব খান বুবলিকে নিয়ে গাড়ি বদলে পালিয়ে যায়। ছাদ হীন খোলামেলা স্পোর্টস কার দিয়ে কেউ পালিয়ে যাবে এই আইডিয়াটা প্রচন্ড রকম হাস‍্যকর।

বুবলি যে হাতকড়া নিয়ে শাকিব খানের গাড়ি থেকে পালায় সিন্ডি। রোলিং তা এক হাতের আলতো ছোঁয়ায় খুলে ফেলে। বাংলাদেশ পুলিশের হাতকড়া কি এতটাই দূর্বল!


ছোটখাটো ভুল গুলোর দিকে নজর দিলে আর বাজেট একটু বাড়াতে পারলে সামনে হয়ত এই গুণী পরিচালক থেকে আরো ভালো কাজ পাবো এই প্রত‍্যাশায় আছি।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৩৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
সুন্দর পর্যালোচনা।

২০ শে জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫২

সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য।।

২| ২১ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১১:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।

২১ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:১২

সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৩| ২১ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৩৬

যাযাবর চখা বলেছেন: বাংলার হিরো, কয়দিন আর ফিট থাকবো? আর বুবলির তো অহনই পেট বড় হইয়া গেছে গা =p~

২১ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:১৩

সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: ঠিক বলেছেন ভাই, কিন্তু এইভাবে আর কতদিন।

৪| ২১ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৪৭

ঝড়ের পাখি বলেছেন: সুন্দর সিনেমা রিভিঊ।

২১ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:১৩

সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য।

৫| ২১ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৫

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: শুধু পড়লাম। গান, সিনেমায় আগ্রহ নাই। তাই কি বলব কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।

২১ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:১৫

সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: কিছু বলতে হবে না ভাই সময় নিয়ে পড়েছেন সেজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

৬| ২২ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৩৫

সৈয়দ ইসলাম বলেছেন: আপনার পর্যালোচনার ভঙ্গি অনেকটাই হাসির সাথে চিমটি =p~ তবে ভাল লাগলো আপনার শব্দপ্রকাশ।

২২ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:১৮

সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।।

৭| ২৫ শে জুন, ২০১৮ রাত ১২:০৮

পেন্সিলের আঁচড় বলেছেন: দেখি নাই এখনো , দেখি নেই তার পর বলবো

২৫ শে জুন, ২০১৮ রাত ১২:১১

সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: আপনার বলার অপেক্ষায় রইলাম।।

৮| ২৫ শে জুন, ২০১৮ রাত ২:০৯

রাকু হাসান বলেছেন: মোভি নিয়ে জানার আগ্রহ ছিল । দেখিনি এখনো.।খুব ভাল রিভিউ দিয়েছেন । আশাকরি মোভি রিভিউ নিয়মিত পাব ।

২৫ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১০:৩৫

সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: পাবেন নিয়মিত। অনুসরনে রাখুন। ধন্যবাদ কষ্ট করে এতবড় একটা লেখা পড়ার জন্য।

৯| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৪৬

অলৌকিক আলো বলেছেন: ভালো লাগল... :D

২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৯

সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.