![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন স্বপ্নবাজ মানুষ আমি!!!
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে অপেক্ষা করছি! বাস এখনো অবশ্য আসে নি। প্রায় এক ঘন্টা ধরে কাউন্টারে বসে আছি। আমার পাশে একজন বৃদ্ধ লোক বসে আছেন।চেহারা দেখে মনে হলো উনিও আমার মতো বিরক্ত। আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে,,,, তাই মানুষের ভীড় ও বাড়ছে। একটা সময় সুপারভাইজার মাইকে ঘোষনা দিলো "খুলনার বাস চলে এসেছে! আপনারা যে যার লাগেজ নিয়ে বাসে উঠে পড়ুন, দশ মিনিট পর বাস ছাড়বে"। আমি অবশ্য কিছু আনি নি, অফিস থেকে সরাসরি চলে এসেছি। তারপর এখানে এসে কাউন্টারে টিকিট কাটলাম!
>
যাত্রীরা সবাই আস্তে আস্তে বাসে উঠে পড়লো,, সেই সাথে আমিও। বাসে উঠার পর টিকিটের সিট নাম্বার অনুসারে জানলার পাশের সিটটা পেয়ে গেলাম! তাই সেইখানেই বসে পড়লাম। কিছুক্ষন পর সেই বৃদ্ধ লোকটিকে দেখতে পেলাম! উনিও মনে হয় খুলনা যাবেন।লোকটি টিকেট এর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে,,, বাসের সিট নম্বর খুজতে লাগলো। তারপর আমার পাশে বসে পড়লো।ওনার সিট নাম্বার মনে হয় আমার পাশেই পড়েছে। আমি আর ওদিকে খেয়াল না করে বাইরের দিকে তাকালাম,,, চারিদিক মানুষ আর বাসের ভিড়! একমাত্র খুব ভোর সকাল ছাড়া এখানে সব সময় এরকম অবস্থাই থাকে, তবে সন্ধ্যার দিকে ভিড়টা অনেক বেশি বেড়ে যায়।
>
দশ মিনিটেরর জায়গায় আরো বিশ মিনিট পর বাস ছাড়লো।বাসটি আস্তে আস্তে সায়দাবাদ থেকে বের হয়ে খুলনার দিকে যেতে থাকলো! আর আমি আনমনে জানলা দিয়ে আকাশ দেখতে লাগলাম,,, সূর্যটাও আস্তে আস্তে ডুবছে। আকাশটা একেবারে লাল হয়ে গিয়েছে! হঠাৎ পাশে বসা থাকা বৃদ্ধ লোকটি জিজ্ঞেস করলো
.
--- খুলনা কোথায় যাবেন?
.
---ফুলতলা!
.
---আমিও ওখানে যাবো!
.
আমি একটু আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,,
.
---ফুলতলায় কে থাকে আপনার?
.
---আত্নীয়স্বজন সবাই! আমার জন্মই ওখানে। ঢাকা এসেছিলাম আমার ছেলে, ছেলের বৌ আর নাতনীর সাথে দেখা করতে,,,
.
---ও তাহলে তো চাচা,, ঢাকায় ভালোই সময় কাটলো আপনার।
.
চাচা একটু হাসিমুখে বললো,,,,
.
---হ্যা!!
.
এভাবে আরো কিছুক্ষন কথা হলো চাচার সাথে, তারপর উনি সিটটা পিছন দিকে টেনে চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিতে লাগলেন আর আমি আবার জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম, সূর্যটা একবারে ডুবে গিয়েছে! শুধু আকাশে সূর্যের লাল আভাটা দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ করে কেন জানি পিছনের কথা গুলো মনে হতে লাগলো, মায়ার সাথে যে এরকম কিছু একটা হয়ে যাবে কখনো চিন্তাও করিনি!!!!
.....
.....
প্রায় ১ সপ্তাহ হয়ে গেল নোমান গ্রুপ অব কোম্পানিতে জয়েন্ট করেছি, বলতে গেলে এটাই আমার প্রথম চাকরি! আমার ভার্সিটির এখনো অনেকেই চাকরী পায়নি, আমারো অবশ্য এতো তাড়াতাড়ি পাওয়ার কথা ছিলো না কিন্তু তানিম ভাইয়ের রেফারেন্স এ চাকরি টা পেয়ে গেলাম। আর স্টার্টিং হিসেবে বেতনও খারাপ না! তবে আমার পাশের ডেস্কটা সব সময় খালি থাকতে দেখতাম।হয়তো কয়েকদিন পর এখানেও নতুন কেউ জয়েন্ট করবে কিন্তু আমাকে অনেক হিমশিম খেতে হচ্ছে, অফিসিয়াল ব্যাপার গুলো সামলাতে! মিটিং, প্রেজেন্টেশন,, ফাইলিং,, ইত্যাদি ব্যাপারগুলো যতটা সহজ ভেবেছিলাম আসলে ততটা না!
>
আজকে অফিসে আসতে আসতে ২০ মিনিট লেট হয়ে গেল,,, অফিস হলের মেইন দরজা দিয়ে ঢুকতে যাবো তখনই এমডি স্যারের সামনে পড়ে গেলাম। আমার তো ওনাকে দেখে একেবারে ভুতদেখার মতো অবস্থা! উনি কিছুক্ষন বিরক্তিসহকারে আমার দিকে তাকালেন, তারপর জিজ্ঞেস করলেন....
.
---কয়টা বাজে?
.
---স্যার ৯ঃ২৫,,,
.
---অফিস কয়টায় শুরু হয়?
.
---স্যার ৯ টা ৫ এ!
.
---লেট করলেন কেন?
.
---স্যার জ্যাম এর কারনে,,,,,
.
কথাটা শেষ করতে যাবো ওমনি স্যার চেচিয়ে বললেন,,,
.
---আপনি জানেন না ঢাকা শহরে জ্যাম-জট লেগেই থাকে!!
.
---জানি স্যার!
.
---তাহলে এক/দুই ঘন্টা আগে বের হতে পারেন না?
.
---সরি স্যার,, এরপর থেকে আর এরকম হবে না!
.
এমডি স্যার কিছুক্ষন রাগান্বিত চোখে আমার দিকে তাকালেন, আমি ওনার চেহারার অবস্থা দেখে ভয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম,,,
.
---আমার অফিসে কোন অজুহাত চলবে না,, নেক্সট টাইম যদি এরকম হয়! অফিস রুলস অনুযায়ী আপনার বেতন থেকে লেট ফি কেটে নেওয়া হবে।যান এখন নিজের ডেস্কে গিয়ে কাজ করুন,,,
>
আমি আর কিছু না বলে সোজা গিয়ে নিজের ডেস্ক এ বসে পড়লাম, আর ওদিকে এমডি স্যার রাগে গজ গজ করতে করতে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলেন! সকাল সকাল মনে হয় আমি ওনার মেজাজটাই খারাপ করে দিলাম।কিছুক্ষন আনমনে কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েছিলাম তারপর কি যেন একটা আওয়াজ পেলাম! মনে হলো কে জানি কি-বোর্ডে টাইপ করছে, পাশে ফিরে দেখি একটা চশমা পড়া মেয়ে বসে আছে, সেই ডেস্কটাতে যেটা এই কয়দিন খালি ছিলো!!!
মেয়েটা মনে হয় আজকেই জয়েন্ট করেছে, তাই একটু আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,
.
---কেমন লাগছে নতুন অফিস?
.
মেয়েটা আমার দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকলো, তারপর বললো....
.
---কেমন লাগবে আবার!আগে যেরকম ছিলো,,তেমনই লাগবে
.
আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,
.
---আপনি অফিসে আজকে জয়েন্ট করেছেন না?
.
মেয়েটা চশমাটা ঠিক করে বললো,,,,
.
---জি না! আমি এই ফার্মে দুই বছর ধরে আছি,,আব্বুর অসুস্থতার কারনে দুই সপ্তাহ ছুটি নিতে হয়েছিলো,,তাই হয়তো আপনি আমাকে দেখেন নি!!
.
---ও আচ্ছা,,এখন কেমন আছে আপনার আব্বু?
.
---হ্যা ভালোই!
.
মেয়েটার নামটা জিজ্ঞেস করতে যাবো, কিন্তু ও আমাকে কোনা কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের কাজের দিকে মন দিলো। হয়তো বিরক্ত হতে পারে! তাই আমিও আর কিছু বললাম না, নিজের কাজের দিকে মন দিলাম। কিছুক্ষন পর পিয়ন এসে বললো "তানিম স্যার আপনাদের দুজনকে ডেকেছ "
>
>
মেয়েটা আর আমি তানিম ভাইয়ের ডেস্ক এ প্রায় ১০ মিনিট ধরে বসে আছি, তানিমা ভাই ল্যাপটপে কি যেন টাইপ করছিলেন, আরো কিছুক্ষণ টাইপ করার পর আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,,
তানিম ভাইঃ সরি তোমাদেরকে এভাবে বসিয়ে রাখার জন্য!!
.
আমিঃ না ঠিক আছে,,, আপনি কি যেন বলবেন?
.
তানিম ভাইঃ ও হ্যা পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি এ হচ্ছে মায়া, আর এ হচ্ছে সাকিন। আমাদের অফিসে নতুন জয়েন্ট করেছ
.
মায়াঃ হ্যা,, আমরা আগেই পরিচিত হয়ছি,,,
.
তানিম ভাইঃ ও তাহলে তো ভালো ই,,, আর শোন যেটার জন্য ডেকেছিলাম তোমাদের সেটা হলো কয়েক জন্য ক্লাইন্ট আসবে আমাদের অফিসে, তাদের সাথে আমাদের কোম্পানির একটা কন্ট্রাক্ট হবে,, সেটার জন্য ভালো একটা প্রেজেন্টেশন করতে হবে, যাতে ক্লাইন্টরা আমাদের প্রোডাক্ট এর উপর ইম্প্রেস হয়,, এবং তাদের কন্ট্রাক্টটা যেন আমরা পাই!!
.
মায়া: বুঝলাম,, এখন আমাদের কি করতে হবে?
.
তানিম ভাইঃ এমডি স্যার এখন এই প্রেজেন্টেশন এর দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন,, আর বলেছেন দুজন সহকারী নিয়ে কাজটা শেষ করতে! আমি তোমাদের কথা স্যারকে বলেছি,, স্যার রাজি হয়েছেন!
.
আমিঃ তো কবে থেকে কাজ শুরু করছি আমরা?
.
তানিম ভাইঃ এইতো ২/১ দিনের মধ্যেই! বাকি ইনফরমেশন তোমাদেরকে মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে,, তোমরা এখন আসতে পারো।
>
তানিম ভাইয়ের রুম থেকে বেরিয়ে আমরা যার যার ডেস্ক গিয়ে কাজ করতে লাগলাম,, একটু উত্তেজনা হচ্ছিলো মনের ভিতর,,এরকম অফিসিয়ালি কোন প্রোজেক্টের কাজ আগে কখনো করি নি। কিছুক্ষণ পর পাশ থেকে মায়া বললো,,
.
---শুনুন আপনার যদি কোনরকম হেল্প লাগে, আমাকে বলবনে,, কোন সংকোচ করবেন না
.
---না না সংকোচ কিসের!! কিছুর প্রয়োজন হলে অবশ্যই আপনাকে জানাবো
.
--- আর যদি কোন কাজ না বুঝেন,, আমার কাছে নিয়ে আসবেন। আমি বুঝিয়ে দিবো কিন্তু কোন ভুল করা যাবে না!! কাজে একটু ভুল হলেই এমডি স্যারের কাছে কথা শুনতে হবে
.
--- জি ধন্যবাদ,, আমি খেয়াল রাখবো ব্যাপার গুলো!
.
মায়া একটু হেসে বললো,,,,
.
---আশা করি আপনার সাথে কাজে করে ভালোই লাগবে
.
---হ্যা নিশ্চয়ই
.
আমি মায়ার দিকে কিছুক্ষন আড় চোখে তাকালাম,, মেয়েটা কেমন জানি! আজকাল কার মেয়েদের চালচলনের সাথে ওর তেমন একটা মিল নেই,, চোখে বড় বড় চশমা,, পড়নে হালকা বেগুনি রং এর শাড়ি,, কপালে টিপ,, খোলা চুল,, সব কিছুতে কেমন জানি আগেকার মানুষের ছাপ!!
>
২/১ দিনের মধ্যেই আমাদের প্রোজেক্ট এর কাজ শুরু হয়ে গেল। তাই অফিসে আগের চেয়ে ২/৩ ঘন্টা বেশি সময় দেওয়া লাগে। সকালে সময়মতো আসলেও অফিস থেকে বের হতে বের হতে রাত ৮/৯ টা বেজে যেতো,, ক্লাইন্টরা আর ১ সপ্তাহের মধ্যেই আমাদের অফিসে ভিজিট করতে আসবে,, তাই দিন যত যাচ্ছে কাজের প্রেসারটাও তত বেড়ে যাচ্ছে। আর এমডি স্যার ও আমাদের কিছু নির্দেশনা দিলেন,, কিভাবে কি করতে হবে, না করতে হবে, ইত্যাদি।
>
অবশেষে ক্লাইন্টরা আমাদের অফিসে এসে হাজির হলো,, তাই তাদের সাথে একটা মিটিং এর আয়োজন করা হলো। মিটিং এ আমি, তানিম ভাই আর মায়া ছিলাম।আর ছিলো সেই ফক্স কোম্পানি থেকে ভিজিট করতে আসা ৩ জন ক্লাইন্ট । তানিম ভাই আমাদের প্রোডাক্ট গুলো তাদের সামনে প্রেজেন্টশন করতে লাগলেন, ওনাদের চেহারা দেখে মনে হলো,,ওনারা আমাদেরকে কন্ট্রাক্ট দিতে আগ্রহী নাকি এমনিই হাসিমুখে বসে আছে সেটা নিয়েও অবশ্য একটু খটকা লাগলো। দুই ঘন্টা পর আমাদের মিটিং শেষ হলো। ক্লাইন্টরা বললো, তারা দুই সপ্তাহ পর জানাবে তাদের সিধান্ত।
>
এই প্রোজেক্টটা শেষ হওয়ার পর মনে হলো হাফ ছেড়ে বাচলাম! এই কয়েদিন অনেক প্রেসার গেছে আমার উপর। তবে এখন অফিসের চাপ অনেকটাই কমে গেছে, ভাবছি কিছুদিনের জন্য গ্রামের বাড়ি থেকে ঘুরে আসবো, অনেকদিন হলো আত্নীয়স্বজনদের সাথে দেখা-স্বাক্ষাত হয় না.... এরকম আরো কিছু ভাবছিলাম হঠাৎ করে মায়া পাশ থেকে বললো,,,
.
---কি ভাবছেন এতো? লাঞ্চ করবেন না!
.
--- হ্যা করবো তো! আপনি?
.
---হুম করবো,, চলুন
.
আমি আর মায়া অফিসে ক্যান্টিন বসে আছি, কিছু অর্ডার দিতে যাবো,, মায়া ইশারা করে অর্ডার করতে মানা করলো, তারপর ভ্যান্টিব্যাগ থেকে দুটো টিফিন বক্স বের করলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম,,,
.
---এগুলা কি?
.
---একটা তে ভুনা খিচুড়ি আর এক টাতে গরুর মাংস।
.
---হা হা,,,
.
---হাসলেন কেন?
.
--- আপনার কাজ কারবার দেখে,, এতো কষ্ট করে বাসা থেকে না রান্না করে আনলেও পারতেন! আমাদের অফিসের ক্যান্টিনের খাবারের মান তো অনেক ভালো।
.
--- হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না,, বাসার খাবার আর বাইরের খাবারের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত!
.
---আচ্ছা ঠিক আছে শুরু করুন,, খুব ক্ষিদে পেয়েছে আমার!!
.
মায়া আমার কথা শুনে হেসে ফেলল,, মেয়েটার হাসিটা কেমন জানি বাচ্চাদের মতো! মায়াকে আমি যেরকম পিকুলিয়ার ভেবেছিলাম,, আসলে সেরকম না। ওর মনটা অনেক ভালো এবং সে যথেষ্ট হেল্পফুল। যেসব কাজগুলো বুঝতাম না ওর কাছে নিয়ে গেলে ও সহজেই বুঝিয়ে দিতো,, অফিসের অনেকেই ভাবে থাকলেও,, ওর মধ্যে সেরকম কিছু ছিলো না। খুব সাধাসিধে ভাবে চলাফেরা করতো মায়া।মেয়েটার কারনে আমার অফিসের কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিলো। আগে যেমন পেইন লাগতো,,,এখন সেরকম কিছু লাগে না
>
রাতের খাবার খেয়ে টিভি দেখছিলাম,, এমন সময় মায়ার ফোন , রিসিভ করলাম....
.
---হ্যালো, কেমন আছেন?(মায়া)
.
--- ভালো, আপনি?(আমি)
.
--- হ্যা আমিও ভালোই আছি। কি করছেন এখন?
.
---টিভি দেখছি,,, কিছু বলবেন?
.
---হ্যা,, কালকে পহেলা বৈশাখ! কোথাও বের হবেন না?
.
---আসলে কালকে এই গরমের মধ্যে কোথাও বের হওয়ার ইচ্ছা নেই,,তার উপর অনেক ক্ষন ধরে হাটতে হবে যদি রমনা বটমূলের দিকে যাই!
.
---একা গেলে খারাপ লাগারি কথা!!! সবাই এক সাথে গেলে বা কাউকে সাথে নিয়ে গেলে এই খারাপটা লাগতো না!
.
--- হয়তোবা!
.
---যাই হউক কালকে আমরা ফার্মগেট থেকে শাহাবাগের দিকে যাবো, তারপর রমনা বটমূলে!! আমি অপেক্ষা করবো ফার্মগেটে আপনার জন্য।
.
এই বলে ফোনটা কেটে দিলো,, আমি আর কিছু বলতে পারলাম না!! মনে হচ্ছিলো কল ব্যাক করে ওকে জানিয়ে দেই যে আমি কাল আসতে পারবো না, কিন্তু কি মনে করে যেন আর কল করা হলো না। আসলে ইদানীং মায়া এরকম অদ্ভুত আচরণ করে যাচ্ছে! আগে অফিসে খুব স্বাভাবিক ভাবে আসলেও, এখন সাজোগোজ করে আসে। আমি অফিসের যেখানে যাবো,,, সেখানে সে কোন না কোন অজুহাতে আমার আশে-পাশে থাকার চেষ্টা করবে। আর এখন প্রতিদিন আমার জন্য বাসা থেকে দুপুরের খাবার রান্না করে আনে!!এই ব্যাপারগুলো মাঝে মাঝে আমার কাছে খুব বিরক্তিকর লাগে কিন্তু কলিগ হওয়ার কারনে কিছু বলতেও পারি না ওকে। তবে আমি কিছুটা হলেও আচ করতে পারছিলাম,, মায়া আসলে কি বোঝাতে চাচ্ছে আমাকে!!
>
প্রায় আধা ঘন্টা ধরে ফার্মগেটে এ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি মায়ার জন্য! মেয়েটা এখনো আসে নি। সকাল বেলা আমাকে ফোন করে বললো দশটার দিকে এখানে থাকতে,, এখন সাড়ে দশটা বাজে! হঠাৎ পিছনে থেকে কে জানি ডাক দিলো,,,,
.
---এই যে মিস্টার!!!
.
পিছনে ফিরে দেখলাম মায়া দাঁড়িয়ে আছে,, মেয়েটাকে দেখতে আজকে একদম অন্যরকম লাগছে। ওর এই রুপ আমি আগে কখনো দেখি নি! চোখে কাজল দেওয়া,, ঠোটে গাড় লিপিস্টিক,,চুল খোপা করা আর পড়নে লাল-সাদা শাড়ি!! একেবারে পুরো বাঙালী মেয়েদের মতো ড্রেস-আপ,,
.
---কি দেখছেন এভাবে এমন করে??(মায়া)
.
---না কিছু না!! (আমি)
.
---হুম, এভাবে আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবেন? চলুন হাটতে থাকি!
.
---হ্যা, চলুন।
.
মায়া আর আমি ভিড়ের মধ্যে হাটতে থাকলাম,,শাহাবাগের দিকে যতই যাচ্ছি...ততই ভিড়টা আস্তে আস্তে বাড়ছে!! একটা সময় মায়া খপ করে আমার হাতটা ধরে ফেলে বললো,,,,
.
---কি খারাপ লাগছে?
.
---না না,, আমি ঠিক আছি!
.
---আমি জানতাম আপনি আসবেন আজকে।
.
---কিভাবে জানতেন?
.
---জানি না!! তবে আমার মন খুব জোর দিয়ে বলছিলো যে আপনি আসবেন!
.
---তাই??
.
---হ্যা,, আর জানেন কালকে রাতে আপনাকে নিয়ে একটা স্বপ্ন দেখেছি!
.
আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,,
.
---কি স্বপ্ন?
.
মায়া আমাকে চোখ টিপ মেরে বললো,,,
.
---বলবো না!!
>
প্রায় এক ঘন্টা হাটার পর আমরা শাহবাগ হয়ে রমনা বটমুলে পৌছে গেলাম।দুজন এতোক্ষন হেটে অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছি,তাই বসার জন্য এদিক-ওদিক জায়গা খুজচ্ছিলাম, অবশেষে বসার একটা স্থান পেলাম... ওখানে আমি আর মায়া বসে পড়লাম! গরমে পুরা অস্থির অবস্থা আমার! খুব পানি পিপাসা পাচ্ছিলো ,,, মায়া মনে হয় আমার অবস্থা বুঝতে পেরেছিলো,, তাই ভ্যান্টি ব্যাগ থেকে একটা পানির বোতল বের করে দিলো আমাকে!!
.
---নিন পানি খান!
.
আমি বোতলটা হাতে নিয়ে ঢগ ঢগ করে পানি খেয়ে বোতলের সব গুলো পানি শেষ করে ফেললাম।এতো পিপাসা লেগেছিলো যা বলার বাইরে! হঠাৎ করে খেয়াল হলো মায়া এখনো পানি খায়নি...আমি মায়ার দিকে একটু অসহায় দৃস্টিতে তাকালাম,,
.
---সরি!! সব গুলো পানি শেষ করার জন্য।
.
মায়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,,,
.
--- না না,, ঠিক আছে। আপনার পানি পিপাসা লেগেছে,,তাই খেয়েছেন! এতে সরি বলার কি আছে,,
.
---তারপরেও...আচ্ছা চলুন সামনে থেকে আর একটা পানির বোতল নিয়ে নেই।
.
--- না এখন না,, আসলে ইচ্ছে করছে না উঠতে আর একটু জিরিয়ে নেই এখানে!!
.
--- আচ্ছা ঠিক আছে!
>
চারদিকে তাকালাম,, পরিবেশ টা ভালোই লাগতেছে..খারাপ না। লেকের ওপারে কিছু কাপলদের বসে থাকতে দেখলাম। কেউ ফ্যামিলি আবার কেউ বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরতে এসেছে! কেউ কেউ আবার সেলফি তুলছে। বলতে গেলে অনেকটা উৎসব মুখর পরিবেশ। হঠাৎ করে মায়া বলে উঠলো,,,
.
---কি হলো কিছু বলছেন না যে?
.
---না কি বলবো আর!!
.
---আপনার কি বোর লাগছে এখানে?
.
--- না বোর লাগবে কেন! বরঞ্চ ভালোই লাগছে। শেষ আব্বুর সাথে একবার এসেছিলাম,, তারপর আর এখানে আসা হয় নি!
.
---ও... কেন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আসেন নি কখনো!!
.
---আসলে আমার বন্ধুরা আমার মতোই নিরামিষ,, ওরাও ফেস্টিভের সময় খুব একটা বের হয় না,, তাই আমারো তাদের সাথে ঘুরা হয়ে ওঠে না,,,,
.
---এক কাজ করেন,, বিয়ে করে ফেলেন!!! তারপর বৌ কে নিয়ে সারাদিন ঘুরাঘুরি করবেন।
.
এই বলে মায়া বাচ্চা দের মতো হাসতে লাগলো,,,মেয়াটার হাসির মধ্যে কি জানি একটা ছিলো.. তা দেখে আমার বুকের ভিতরটা কেমন জানি করতে লাগলো ! আমার চুপ থাকা অবস্থা দেখে,, মায়া ও হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেল। তারপর চশমাটা খুলে চোখটা কিছুক্ষন মুছে,, খালি চোখে আমার দিকে তাকালো। ওর চাহনি দেখে মনে হলো,, ও কি জানি বলতে চাচ্ছে আমাকে,, এবং সেটা মনে হয় আমি জানি!
>
মনে হলো কে জানি ডাকছে আমাকে,, আমি আর মায়া পিছনে ফিরে দেখি তানিম ভাই একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে,,, ওনার সাথে শোভা আপাকেও দেখতে পেলাম! আমরা দুজন উঠে গিয়ে ওনাদের কাছে গেলাম,,,,
.
তানিম ভাইঃ কি ব্যাপার তোমরা দুজন এখানে?
.
মায়াঃ হ্যা,, একটু ঘুরতে আসলাম আর কি!! যেমন আপনি আর ভাবী এসেছেন।
.
ওর কথা শুনে আমরা সবাই হেসে ফেললাম,,,,
.
তানিম ভাইঃ হুম,, অফিসের আর কেউ আসেনি?
.
মায়াঃ কই না তো! আমরা আর তো কাউকে দেখলাম না
.
তানিমা ভাইঃ হুম।
.
আমিঃ কেমন আছেন শোভা আপা?
.
শোভা আপাঃ হ্যা ভালো,, তোমরা কেমন আছো?
.
মায়া একটু হেসে বললো,,,
.
মায়াঃ হ্যা আমরাও ভালো আছি!
.
আমি,, মায়া আর শোভা আপার দিকে কিছুক্ষন অবাক চোখে তাকালাম,,,,,
.
আমিঃ আপনারা দুজন দুজনকে চিনেন নাকি!!
.
শোভা আপাঃ হ্যা চিনি তো,,, মায়া আমার বান্ধবীর ছোট বোন।
.
আমি: ও,,,
.
শোভা আপাঃ আর তানিম আমাদের জন্য আইস্ক্রিম নিয়ে আসো না,, এই গরমের মধ্যে ঠাণ্ডা কিছু খাওয়া দরকার!
.
তানিম ভাইঃ হুম,,, চলো সামনে আইসক্রিম দোকানটার দিকে যাই।
.
আমি আর তানিম ভাই আইস্ক্রিমের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে অফিসিয়াল কিছু ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করছিলাম। ওদিকে মায়া আর শোভা আপা আমাদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আইসস্ক্রিম খাচ্ছিলো। হঠাৎ খেয়াল করলাম মায়া আমার দিকে তাকিয়ে শোভা আপাকে কি যেন বলতে ছিলো,,, আর মিট মিট করে হাসছিলো! ব্যাপারটা কেমন জানি অদ্ভুত লাগলো আমার কাছে। তবে কেন জানি ওই সময় মায়াকে দেখে মনে হচ্ছিলো,,, মেয়েটাকে আমি অনেক বছর ধরে চিনি!! অথচ ওর সাথে আমার পরিচয় মাত্র ছয় মাসের।
>
>
বিকেল পর্যন্ত আমরা রমনা বটমুলেই ছিলাম! তারপর সবাই মিলে সিধান্ত নিলাম টি.এস.সি এর দিকে যাবো কিন্তু বটমুলের গেট ক্রস করতেই শোভা আপা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লো, মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাবে
এমন একটা অবস্থা। শোভা আপার অবস্থা দেখে তানিম ভাই আমাদেরকে বললেন,,,
.
তানিম ভাইঃ আমরা মনে হয় যেতে পারবো না।তোমরা যাও,,, টি.এস.সি থেকে ঘুরে আসো। আমি শোভাকে নিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছি!!
.
মায়াঃ না না ঠিক আছে। আপনি ভাবীকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যান,,,
.
আমিঃ আপনারা এখানে দাড়ান,, আমি একটা রিক্সা ঠিক করে দিচ্ছি।
.
আমি,, তানিম ভাই আর শোভা আপাকে রিক্সায় উঠিয়ে দিলাম!
.
তানিম ভাইঃ তোমরা সময় পেলে একদিন আমার বাসায় চলে এসো ।
.
আমিঃ হ্যা নিশ্চয়ই!! আর আপনি বাসায় পৌছালে অবশ্যই আমাকে একটা ফোন দিবেন।
.
তানিম ভাইঃ ওকে!
.
রিক্সাটা চলে না যাওয়া পর্যন্ত আমি আর মায়া গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষন পর মায়া বললো,,,
.
--- আমারো টি.এস.সি তে যেতে ইচ্ছা করছে না,,, বাসায় চলে যাবো
.
--- আচ্ছা দাড়ান,, আর একটা রিক্সা ডাকছি।
.
মায়া আমাকে ইশারা করে রিক্সা ডাকতে মানা করে বললো,,,,
.
---কিছুক্ষন শাহবাগের দিকে হাটি,, তারপর না হয় রিক্সাতে উঠি!
.
--- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
আমি আর মায়া শাহবাগের দিকে হাটতে থাকলাম,, হঠাৎ করে মায়া বলে উঠলো,,,,
.
---চলেন ফুচকা খাই!!
.
--- ঠিক আছে কিন্তু আপনার বাসায় যেতে আবার লেট হয়ে যাবে না তো!?
.
--- না কোন সমস্যা নেই। আর আপনি তো আছেন,, আমাকে পৌছে দিবেন বাসায়।
.
এই বলে মায়া হাসতে থাকলো,,,ওর হাসি দেখে আমিও হেসে ফেললাম,, তারপর বললাম...
.
--- আচ্ছা ঠিক আছে চলুন,,, আপনাকে সহি-সালামতেই বাসায় পৌছে দিবো।
>
বেটারা ফুচকাতে এতো ঝাল দেয় কেন বুঝি না,,মনে হচ্ছে জিব্বাটা পুরে যাচ্ছে!! ওরে বাপরে বাপ.. মানুষ এতো ঝাল খায় কিভাবে ! মনে হচ্ছে পুরা ফুচকা টাই মরিচের গুড়া দিয়ে বানিয়েছে....
.
---একি!! আপনার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কেন? ঝাল বুঝি একদমই খেতে পারেন না!
.
--- না পারি,,, তবে এতো বেশি না।
.
--- ও,, আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই,,, আপনাকে আর ফুচকা খেতে হবে না,, নিন পানি খান!!
.
পানি খাওয়ার পর মেয়েটা আমাকে টিসু দিল চোখ মুছার জন্য,,, টিসুটা ওর হাত থেকে নিতে যাবো তখন দেখলাম,, মায়া আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে! তবে মেয়েটার তাকানোর ধরনটা
কেন জানি এক জনের সাথে খুব মিলে যায়।
>
অফিসে বসে কাজ করছিলাম। এমন সময় মায়া ওর ভ্যান্টি ব্যাগটা আমার ডেস্কের সামনে রেখে বললো,,,
.
---আজকে অফিস ছুটির পর আমার সাথে ধানমন্ডি লেকে যেতে পারবেন?
.
আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,
.
---ধানমন্ডি লেকে কেন!!
.
--- যেতে পারবেন কিনা বলেন?
.
--- আচ্ছা অফিস ছুটি হউক আগে,, তারপর দেখা যাক!!
.
মায়া রেগে গিয়ে আমাকে বললো,,,,
.
---দেখা যাক কি আবার!! হ্যা বা না যেকোনো একটা বললেই তো হয়,, নাকি সেটাও বলতে পারবেন না।
.
আমি ওকে আশ্বস্থ স্বরে বললাম,,,
.
---আচ্ছা ঠিক আছে যাবো,,,
.
ও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,,,
.
---হুম।
.
তারপর নিজের ডেস্কে গিয়ে কাজ করতে লাগলো। কি মেয়েরে বাবা!! মানুষ এতো ঢং কিভাবে করে,, এক আল্লাহ মাবুদই মনে হয় ভালো জানেন।
>
আমি আর মায়া ধানমন্ডি লেকের একটা বসার স্থানে বসে আছি। আরো কিছু কাপল দের দেখলাম লেকের পারে বসে থাকতে।কেউ কেউ আবার জগিং করতে এসেছে। আকাশটা একদম কালো মেঘে ঢেকে গেছে। মনে হচ্ছে এখনি বৃস্টি নামবে। তারপরেও মায়া কেন জানি আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে। তবে মেয়েটাকে দেখে আজকে অনেক বেশি খুশি খুশি মনে হচ্ছে। হঠাৎ করে মায়া বলে উঠলো,,,,,,
.
--- আমি চাই সারাটিজীবন তোমার সাথে থাকতে,, যেমনটি তুমি আমাকে রাখবে তোমার পাশে। কাটিয়ে দিতে চাই সুখ-দুঃখের সময় গুলো তোমার সাথে,, শেষ নিঃশাস্ব পর্যন্ত। তোমার আর আমার ঠিকানা যেন একটাই হয় যেখানে থাকবো শুধু তুমি আর আমি!
.
---পারবো না!!
.
মায়া আমার দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বললো,,,,
.
---মানে?!
.
--- আমি পারবো না আর অন্য কাউকে বসাতে আমার হৃদয়ে,, যদি করি সেটা হবে প্রতারনা। কেননা আমার হৃদয়টা যে অন্য কাউকে দেওয়া। কিভাবে বসাবো অন্য কাউকে তার জায়গায়, তাকে যে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি।
.
দেখলাম মায়ার চোখটা ছল ছল করছে,,আমি আর ওখানে বেশিক্ষণ বসলাম না। কি দরকার আর একজনের কষ্ট বাড়িয়ে,, আমি যতক্ষন ওখানে থাকতাম.. ততক্ষন ও আরো বেশি কষ্ট পেতে থাকতো। তাই চলে আসলাম ওখান থেকে।
>
আফিসে ঢুকতে ঢুকতে আজকেও দশ মিনিট লেট হয়ে গেল। তবে ভাগ্য ভালো এমডি স্যারের সামনে পড়িনি, নাহলে আবার ঝাড়ি খেতে হতো। তাড়াতাড়ি গিয়ে ডেস্কে বসে পড়লাম। কিছু কাজ বাকি ছিলো,, সেগুলো করতে লাগলাম। কিছুক্ষন পর খেয়াল হলো,, মায়া এখনো অফিসে আসে নি। ওর ডেক্সটা খালি, আর আশে-পাশেও ওকে দেখতে পাচ্ছি না। মেয়েটা তো কখনো লেট করে আসে না নাকি ছুটি নিয়েছে আবার!! হঠাৎ পিয়ন এসে বললো,,,,
.
---তানিম স্যার আপনাকে ডেকেছেন।
.
কিছুক্ষন পর আমি তানিম ভাইয়ের রুমে গিয়ে দরজায় টোকা দিলাম,,
.
---তানিম ভাই আসবো,,,
.
আমাকে দেখে তানিম ভাই বললো,,,
.
--- হ্যা আসো আসো সাকিন,,, বসো
.
--- কেমন আছেন?
.
---হ্যা ভালো,, তোমার কি অবস্থা?
.
--- জি ভাই ভালো,,
.
--- আচ্ছা শোন মায়া তো চাকরি ছেড়ে দিয়েছে!
.
--- চাকরি ছেড়ে দিয়েছে!! কবে ছাড়লো চাকরী?
.
---এইতো দুদিন হলো,, তুমি জানো নাকি কিছু এ ব্যাপারে?
.
--- না আমি কিভাবে জানবো? আমি তো ৪ দিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ছিলাম। আর এই কয়দিন ওর সাথে আমার কোন যোগাযোগ হয় নি।
.
--- হুম,,,
.
---মায়া এখন কোথায়?
.
--- ও তো গতকাল খুলনাতে চলে গেসে।
.
---খুলনা!!
.
--- হ্যা,,, ওখানে তো মায়ার পরিবারের সবাই আছে। আর ঢাকাতে ওর এক খালার বাসায় থেকে আমাদের অফিসে চাকরি করতো।
.
--- হুম বুঝলাম। আচ্ছা ঠিক আছে তানিম ভাই এখন তাহলে উঠি,, পরে কথা হবে।
.
--- আচ্ছা ঠিক আছে। আর ফাইলগুলা কি রেডি করেছো?
.
---হ্যা,, আমি কিছুক্ষনের মধ্যে পিয়নকে দিয়ে আপনার কাছে ফাইল গুলা পাঠিয়ে দিচ্ছি।
.
--- ওকে।
>
তানিম ভাইয়ের রুম থেকে বের হয়ে,, নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে পড়লাম। খুব খারাপ লাগছে আমার। কেমন জানি মনের ভিতর এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে,, যেটা একটা সময় শ্রাবন্তীর জন্য কাজ করতো,, এখন সেটা মায়ার জন্য করছে। কিন্তু কেন? ওর সাথে তো আমার তো কোন রিলেশন ছিলো না বা আমি ওকে পছন্দ করতাম এমনো তো না। তাহলে এরকম হওয়ার কারন কি!! শ্রাবন্তীর সাথে ব্রেক-আপ হওয়ার পর সিধান্ত নিয়েছিলাম আর কোন মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়াবো না,, সেজন্য ওইদিন আমি মায়াকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তবে আজকে কেন জানি মায়াকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে!! মায়ার ডেস্কটা যতই দেখছি,, ততই ওর কথা বেশি মনে পড়ছে। তবে এখন অবশ্য ডেস্কটা আর ওর নেই!! আমি আর কোন কিছু না ভেবেই শোভা আপাকে ফোন দিয়ে মায়ার খুলনার বাড়ির ঠিকানাটা যোগাড় করে ফেললাম। তারপর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের দিকে রওনা দিলাম!!!
.....
.....
বাস আমাকে আর চাচা কে ফুলতলাতে নামিয়ে দিয়ে খুলনা শহরের দিকে চলে গেল।আমি চাচাকে জিজ্ঞেস করলাম,,,
.
--- চাচা আপনি মোল্লা বাড়ি টা চিনেন?
.
--- হ্যা আমি ওদের বাড়ির রাস্তার মোড়ের পাশ দিয়েই যাবো। কেননা তারপরেই আমাদের বাড়ি।
.
--- হুম চলুন তাহলে!
.
--- হ্যা চলো।
>
এখন অবশ্য অনেক সকাল। আসলে রাস্তায় জ্যাম থাকার কারনে বাস ফুলতলাতে পৌছতে পৌছতে অনেক দেরি করে ফেললো। আমরা যেই এলাকাতে ঢুকলাম,, সেটা অনেকটাই গ্রাম বলা যায়। চারদিকে গাছ-গাছড়া আর ধানের সাড়ি। পাখির কিচির-মিচির আওয়াজ। মানুষ জন নেই বললেই চলে,,
এতো সকালে অবশ্য মানুষজন না থাকাটাই স্বাভাবিক। কিছুক্ষন হাটার পর আমরা একটা রাস্তার মোড়ের সামনে এসে পৌছালাম। তারপর চাচা বললো,,
.
---তুমি এই রাস্তা দিয়ে সোজা চলে যাও,, কিছুদুর যাওয়ার পর একটা পুকুরপাড় দেখবে,, ঠিক তার পরেই মোল্লা বাড়ি।
.
---জি!! অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
.
--- এখানে ধন্যবাদের কিছু নেই,, আর সময় পেলে আমাদের বাসার দিকে চলে আসবে।
.
---হ্যা অবশ্যই।
.
চাচাকে বিদায় দিয়ে আমি হাটা শুরু করলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা পুকুরপাড় দেখতে পেলাম। মনে হলো কে জানি ওখানে বসে আছে! তবে সে নারী না পুরুষ বুঝা যাচ্ছিলো না,, আরো কাছে যাওয়ার পর দেখলাম একটা মেয়ে বসে আছে । মেয়েটা আর কেউ না,, মেয়েটা হলো মায়া!! আমি জোড়ে "মায়া" বলে একটা ডাক দিলাম। ওমনি মায়া চমকে উঠে আমার দিকে তাকালো। তবে ওকে দেখে মনে হলো না,,ও আমাকে দেখে খুব একটা অবাক হয়েছে বরঞ্চ ওর চেহারা দেখে মনে হচ্ছিলো,, ও জানতো আমি ওর সাথে এখানে দেখা করতে আসবো। আরো কাছে যাওয়ার পর দেখলাম মেয়েটা কাঁদছে!! ওর কান্না ভরা চোখে কেমন জানি একটা অন্যরকম মায়া দেখতে পাচ্ছিলাম আমার জন্য।
.
সমাপ্ত
.
------------------------------
written by sakin shikder (xen)
২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:৪৪
সাকিন সিকদার (জেন) বলেছেন: জি ধন্যবাদ। অবগত করার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:১৫
ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
অনেক ভুল বানান দেখছি। ঠিক করে নিয়েন।