নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এতটাই সাধারণ ও ক্ষুদ্র সম্পর্কে বলার মতো কিছু নাই। যদি নিজের সম্পর্কে বলার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারি তবে অবশ্যই বলবো।

সালমান সিরাজী

সালমান সিরাজী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে

২৩ শে জুলাই, ২০২৩ সকাল ১০:১২

আমি এবং আমার দেশের মানুষগুলোর রাজনৈতিক অসচেতনতাই সেই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।
আমি জানি আমার বাবার মতো লক্ষ লক্ষ বাবা এবং আমার মায়ের মতো অজস্র মা অসহায়ের মতো তাদের জীবন হারায় শুধুমাত্র আমার-আপনার রাজনৈতিক অসচেতনতার কারণে।
কিভাবে একটু বলি।

আমার বাবা বয়সজনিত কারণে অসুস্থ হতেন। মাইনার স্ট্রোক করেছিলেন। আমরা তাকে ইবনে সিনা হসপিটালে ডাক্তার আব্দুল হাইয়ের নিকট নিয়ে যেতাম। আমার ফ্যামিলির লোকজন জামায়াত সমর্থক তাই অন্য হসপিটাল থেকে ইবনে সিনার প্রতি আগ্রহ বেশি কাজ করতো। বেশিরভাগ সময় আমার আব্বুকে সে ডাক্তার আব্দুল হাই হসপিটালে ভর্তি করার পরামর্শ দিতেন।
আমরা তার পরামর্শ শুনে ভর্তি করাতাম। হসপিটালে আব্বুকে নিয়ে থাকতাম এক সপ্তাহ। এক সপ্তাহ আমার আব্বু হসপিটালের বিছানায় বিশ্রাম নিতেন এবং হসপিটাল আব্বুকে কিছু মেডিসিন প্রয়োগ করতো। এক সপ্তাহ পর ডাক্তার রিলিজ দিয়ে দিতেন। আমাদের প্রায় ৭০ থেকে ১ লাখ টাকা বিল আসতো।
আব্বু অসুস্থ হলেই খুব আতংকে থাকতাম কারণ জানি যে আবার হসপিটালে থাকতে হবে এক সপ্তাহ আর হসপিটালগুলোর নার্স, ডাক্তার এবং ক্লিনারদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হবে। যে কোনো হসপিটালে গেলে হসপিটালে জব করা লোকজন এমন আচরণ করতো, মনে হয় যেনো ভিক্ষা করতে এসেছি।
এভাবেই যাচ্ছিলো বছরের পর বছর। একবার আবারও বাবা অসুস্থ হলেন। ভাবলাম ইবনে সিনায় নিলে তো সেই এক সপ্তাহ অহেতুক বিছানায় বিশ্রামে ফেলে রাখবে। তার চেয়ে ভালো একজন অন্য ডাক্তার দেখাই ভিন্ন হসপিটালে। কথা বললাম মেডিনোভা মেডিকেল সেন্টারের মিজানুর রহমান নামক ডাক্তারের সাথে। সেই ডাক্তার পরামর্শ দিলো, আপাতত ঢাকা সেন্ট্রাল হসপিটালে এডমিট করতে। সে এসে দেখে যাবে। সেখানে ভর্তি করানোর পর আমার আব্বু আরও বেশি অসুস্থ হয়ে গেলেন। তার অসুস্থতা দেখে আমরা ভাইবোনেরা খুব অস্থির হয়ে গেলাম। এরমধ্যে আমার আব্বু মাঝেমধ্যে শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারানো শুরু করলো। মেডিকেল অফিসার ও নার্সরা বলা শুরু করলো, আমার বাবাকে দ্রুত আইসিউতে নিতে হবে, নয়তো বাঁচানো যাবে না। তারা বিভিন্নভাবে কনভিন্স করা শুরু করলো এবং পাশাপাশি তাদের হসপিটালের আইসিউ যে সেরা সেটা নিয়েও বলা শুরু করলো। আমরা একটা দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় পড়লাম। সেই দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় আমরা আইসিউতে ভর্তি করলাম। ঢাকা সেন্ট্রাল হসপিটালের আইসিউতে ডাক্তার রাফাত লতিফের অধীনে দেড় মাস, স্পেশালাইজড হসপিটালে ডাক্তার শামসুল আরেফিনের অধীনে কিছুদিন এবং তারপর পিজি হসপিটালে দীর্ঘদিন আমার বাবা আইসিউতে কষ্ট করলেন। আমাদের লাখ লাখ টাকা খরচ হলেও আমার বাবা আর ফিরে আসলেন না।
আমার বাবার চিকিৎসা কতটুকু হয়েছে জানিনা তবে একটা বিষয় বুঝেছিলাম, আমার বাবা হসপিটালে থাকার কারণে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা তাদের একাউন্টে চলে যাচ্ছে। এখানে চিকিৎসার নামে টাকাটাই বিষয়। চিকিৎসা না।
হসপিটাল ব্যবস্থার কোনো নিয়মনীতি নাই। কোনো প্রকার স্বাভাবিক সেবা নাই। জবাবদিহিতার তো প্রশ্নই আসে না। যারা টাকা দিয়ে সেবা নিতে আসে তাদের সাথে মনিবসূলভ আচরণ করে।

খুব কাছ থেকে দেখেছি হসপিটালগুলোর অমানবিক দুর্নীতি ও ভণ্ডামি। বেশিরভাগ সময় রাতে আমি হসপিটালে থাকতাম। রাতগুলোতে তাকিয়ে থাকতাম শূন্য দৃষ্টিতে। জীবনে এতো অসহায়ত্ব কখনো কাজ করেনি।
আপনি হয়তো বলবেন, এটা হসপিটালগুলোর সমস্যা, সরকারের কি দোষ? এটার সাথে রাজনীতি কেন টানছি?
যদি আমার দেশে শিক্ষিত ও জ্ঞানসম্পন্ন লোক নেতৃত্বে থাকতো তবে তারা সুন্দর পরিকল্পনা করতো, জবাবদিহির ব্যবস্থা করতো এবং অব্যবস্থাপনা প্রতিরোধ করতো। এসব করতে তো খুব সমস্যা নাই। মাথায় ঘিলু থাকলেই এটা সম্ভব। আমার দেশে বোকারা গিয়ে ক্ষমতায় বসে। তারা ভালো করে পড়াশোনা করে না। জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত থাকে না। জনগণের অসচেতনতা ও সৎলোকদের নিস্পৃহ থাকার সুযোগ নিয়ে তারা ক্ষমতা অর্জন করে। তাই দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যায় না। নীতি প্রতিষ্ঠিত হয় না। সর্বত্র অরাজকতা তৈরি হয়।

এখন আমি পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশ আমেরিকায় থাকি। মাঝেমধ্যে ছোট্ট ভাতিজাদের নিয়মিত চেকআপের জন্য হসপিটালে যেতে হয়। এখানে হসপিটাল ব্যবস্থা কাছ থেকে দেখা হয়েছে।
হসপিটাল অথরিটি খুব আতংকে থাকে যে কোনো রোগী যেনো কমপ্লেইন করার সুযোগ না পায়।
একবার ভাইয়ের বুকে ব্যথা করছিলো তাই ভাইয়ের সাথে হসপিটালে ছিলাম দীর্ঘক্ষণ। আমার ভাইকে যে ডাক্তার দেখেছিলেন, তিনি একজন ধার্মিক ইহুদি। খুব সাধারণ বেশভূষা। আমার ভাই একজন মুসলিম, সেটা নিয়ে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নাই। রিপোর্টগুলো দেখে আন্তরিকতা নিয়ে আমার ভাইকে ওষুধ লিখে দিলেন। আমার ভাই হসপিটাল থেকে বের হলেন। তার পকেট থেকে একটা টাকাও খরচ হয়নি। (অবশ্যই এই দেশে মেডিকেল ইন্সুইরেন্স আছে)

আমার বাবার মৃত্যুর জন্য রাজনৈতিক অসচেতনতাকে দায়ী করেছিলাম।
শুধু কি মেডিক্যাল সেক্টর? দেশের এমন কোনো সেক্টর কি বাকি আছে, যেখানে জনগণ মন্দলোকের হাতে জিম্মি না?
এমন একটা সেবাখাত কি আছে, যেখানে গিয়ে জনগণ হয়রানির শিকার হয় না?
আমাদের দেশে প্রায় বিশ কোটি মানুষ। তাদের মধ্যে কয়জন মানুষ জানে যে, চিকিৎসা, খাদ্য, শিক্ষাসহ আরও কিছু বিষয় তার জন্মগত অধিকার? এগুলো নিশ্চিত করার জন্যই রাষ্ট্রব্যবস্থার উৎপত্তি। একটা রাষ্ট্রের কেন প্রয়োজন? কেন আমাদের মধ্য থেকে কিছু মানুষকে আমরা নির্বাচিত করি আমাদের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য? আমাদের কেন প্রশাসন দরকার হয়? আমরা কেন আয়কর দিই? আমরা কেন বেশিরভাগ পণ্যের ভ্যাট দিই?
বেশিরভাগ মানুষই এসব জানে না।
বেশিরভাগ মানুষ খুব সাধারণভাবে নেয় এই রাজনৈতিক বিষয়াবলি।
তারা কখনো তা্দের অধিকার বিষয়ে প্রশ্ন করে না। তারা কখনো বলে না, আমার উন্নত চিকিৎসা কই? আমার সুষম খাদ্য কোথায়? আমার সন্তানের যুগোপযোগী শিক্ষা কোথায়? আমি কেন রাস্তায় জ্যামের মধ্যে সারাদিন বসে থাকি?
জনগণ রাজনীতিকে সাধারণভাবে নেয় বলেই আমাদের নেতৃত্ব দেয় অসৎ লোকেরা। জনগণের অসচেতনতার কারণেই দুর্নীতিবাজ ও মন্দ মানসিকতার লোকজন রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করে নিজের স্বার্থ হাসিল করে।
আজকে যদি জবাবদিহিতা থাকতো, আইনের শাসন থাকতো এবং জনগণ তার অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হতো তবে মন্দলোকের হাতে ক্ষমতা থাকতো না।
মন্দলোকদের থাকার কথা মাটির নিচে অথবা অন্ধকার কারাগারে কিন্তু মন্দলোক রয়েছে নেতৃত্বের আসনে এবং জনগণ সর্বক্ষণ মন্দলোকের প্রতাপে গুটিয়ে থাকে।
কানাডা, ইউএস অথবা ইউরোপের দেশগুলোর জনগণ রাজনৈতিক বিষয়ে সচেতন। তারা নেতৃত্ব বেছে নেয় যত্নসহকারে, যেনো তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ছেয়ে না যায়।

আওয়ামিলীগ সরকারের পতন হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে আপনার-আমার ভাগ্য পরিবর্তন হবে না।
দুইদলই মন্দলোকদের নিকট কুক্ষিগত। দুইদলই জনগণের কথা বলে ক্ষমতা লাভ করতে চায় কিন্তু ক্ষমতা লাভ করার পর জনগণকে ভুলে যায়।
আমাদেরই সচেতন হতে হবে। আমাদেরই কথা বলতে হবে। নীতি তৈরি করার জন্য শিক্ষিত ও সৎলোকদের সম্মান করতে হবে এবং শিক্ষিত লোকদের হাতে ক্ষমতা উপহার দিতে হবে।
পৃথিবীর কোনো নিয়মকানুন জ্ঞান ব্যতীত তৈরি হয়নি। প্রত্যেকটা নিয়মই মানুষের কল্যাণের জন্য। সমস্যা হলো সেই নিয়মের প্রয়োগ যে করছে সে যোগ্য কিনা।
ইসলামের একটা বিধান চোরের হাত কেটে দেওয়া কিন্তু সেই চোর যদি অভাবের তাড়নায় চুরি করে তাহলে সেই বিধান রহিত হয়ে যায়। এখন জ্ঞানী বিচারকই এটা সহজে নির্ণয় করতে পারবে। যে ফিকাহ শাস্ত্রে পন্ডিত না, সে না বুঝে সবজায়গায় এটা প্রয়োগ করবে।

দেশটা পরিবর্তন করার জন্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক সচেতনতা প্রয়োজন। কে আমার দেশের নেতৃত্বে থাকলে আমার অধিকারগুলো অক্ষুণ্ণ থাকবে এটা অনুভব করতে হবে। কোনো দল বা গোষ্ঠীর আনুগত্য না করে অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হলেই আমরা আমাদের দেশটাকে পরিবর্তন করতে পারবো।

আমাদের রাজনৈতিক অসচেতনতার কারণে আমার বাবাকে আমরা হারিয়েছি। আপনি রাজনৈতিকভাবে সচেতন হলে আপনার বাবাকে অকালে হারাতে হবে না। আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে না। আপনাকে সঠিক নেতৃত্ব বেছে নিতে হবে। শুধু আপনার সচেতন হতে হবে ভাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.