নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এতটাই সাধারণ ও ক্ষুদ্র সম্পর্কে বলার মতো কিছু নাই। যদি নিজের সম্পর্কে বলার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারি তবে অবশ্যই বলবো।

সালমান সিরাজী

সালমান সিরাজী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিভাবে মোহাম্মদ এ আরাফাতের নির্বাচিত হওয়া ইতিবাচক?

২৩ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:৪৯

ঢাকা-১৭ আসনে মোহাম্মদ আরাফাতের নির্বাচিত হওয়াটা খুবই ইতিবাচক ঘটনা। আমার নিকট এই মূহুর্তে অবশ্যই ঐতিহাসিক বিষয় এটা। উনি কিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন সেই আলোচনায় না গেলাম।

ক্ষমতা অর্জন করার জন্য যুগে যুগে ক্ষমতাবানরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন। জনগণকে নীতি-আদর্শ দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন।
গ্রীকদের সময়ও ক্ষমতার ভাগ পেতে এলিট শ্রেণী সিনেট গঠন করেছিলো। রোমান সভ্যতায় নৃশংস কায়দায় ভূমি দখল করার পর সেই ভূমিতে তারা নীতিকথা প্রচার করতো।
তারও পূর্বে এশীয় অঞ্চলে আর্যরা যে মূহুর্তে অনার্যদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারছিলো না। তারা অনার্যদের নেতিবাচক রূপে উপস্থাপন করে তাদের দমিয়ে দিলো। গোটা ভারতবর্ষে তারা তাদের নিয়মকানুন প্রতিষ্ঠিত করে জনমের জন্য দখল করে নিলো।
মানুষের সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাসের সময় থেকেই বুদ্ধিমান লোকেরা রাষ্ট্রের ধারণা দিলো। অন্য দলের সাথে সমঝোতা ও যুদ্ধ করার জন্য নেতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরলো। সন্তানদের ক্ষমতা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য বংশমর্যাদার ধারণা নিয়ে আসলো। একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, কায়িক পরিশ্রম থেকে বেঁচে যাওয়ার জন্য মূলত বুদ্ধিমানেরা নেতৃত্বের পথ ধরলো।
বিবর্তনের পথ ধরে মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি হলো। পূর্বের অভিজ্ঞতার হাত ধরে নতুন নতুন ধারনার জন্ম হলো।
বুদ্ধিমানের মূল কথা হলো ক্ষমতা অর্জন। সেই ক্ষমতা অর্জনের উদ্দেশ্যই হলো, কায়িক শ্রম থেকে মুক্তি পাওয়া।
যুগে যুগে পৃথিবীতে অনেক সভ্যতার সৃষ্টি হয়েছে এবং সেটা বিলীনও হয়ে গিয়েছে।
সভ্যতার তৈরি ও তার বিশাল ব্যাপ্তির পিছনে জ্ঞানীর জ্ঞান চর্চার অবদান এবং সেই সভ্যতা হারিয়ে যাওয়ার কারণও জ্ঞান থেকে সরে যাওয়া।
মধ্যযুগ থেকে জ্ঞানচর্চা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা বেড়ে গেলো। যার কারণে যুদ্ধ ও অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়ে সবকিছুই বিশৃঙ্খল হয়ে উঠলো। যুদ্ধে গ্রাম-শহর সবই লুণ্ঠিত হতে থাকলো। মানুষ মারা যেতে লাগলো পূর্বের তুলনায় বেশি। জ্ঞানীরা সবসময়ই সুযোগ সন্ধানী। তারা তখন নেতৃত্বদান থেকে সরে আসলো। পিছন থেকে কলকাঠি নেড়ে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে লাগলো।
ইতিহাসে ইসলামি সভ্যতার উত্থান হলো। তার পূর্বে রোমান সংস্কৃতি দ্বারা ইউরোপের জমিনগুলো বিধৌত হয়ে গেলো।
উসমানিয়দের দ্বারা বাইজেন্টাইনদের পতন আধুনিক সভ্যতার সূচনা করেছিলো। কনস্টান্টিনোপলের শক্তিশালী দেয়ালের ভিতরে যে অলস জ্ঞানীরা তাদের জ্ঞানচর্চা সীমাবদ্ধ রেখে দিয়েছিলো তারাই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়ে ইউরোপ গিয়ে জ্ঞানকেই পণ্য বানিয়ে তুললো। জ্ঞান হয়ে উঠলো উন্মুক্ত। তখন জ্ঞান আর অভিজাতদের নিরাপত্তাই শুধু দিচ্ছে না, সেটা সাধারণের জন্যও সবচাইতে লোভনীয় পুঁজি হয়ে উঠলো। যেটা নিত্যনতুন উদ্ভাবন ও বিভিন্ন আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিলো।
পূর্বে ব্যবসা খুব সরল উপায়ে চলতো। উপার্জন করো এবং উপার্জনের অংশ নিয়ন্ত্রকদের সাথে ভাগ করে নাও।
ইউরোপীয় রেনেসাঁসের বদৌলতে ব্যবসায়ীরা শুধু অংশ ভাগ করে সন্তুষ্ট থাকতে পারলো না। তারা বিনিময়ে নিরাপত্তা চাইলো এবং ক্ষমতার অংশদারিত্ব চাইতে লাগলো। একটা সময় ব্যবসায়ীরাই ক্ষমতার চাবিকাঠি হয়ে গেলো। কে অথবা কারা ক্ষমতায় থাকলো তাতে কিছুই আসে যায় না। নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ীদের হাতেই রইলো। ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা গোটা পৃথিবীটা দখল করে নিলো।
সবকিছুর পিছনে জ্ঞানই ভূমিকা রেখেছিলো। পেশিশক্তি কিংবা উন্নত অস্ত্রশস্ত্র না। বুদ্ধি দিয়ে তারা আধিপত্য বিস্তারকরেছিলো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে।
ইউরোপীয় বুদ্ধিমান ব্যবসায়ীরা ক্ষমতা অর্জনের কৌশল হিসেবেই রাজতন্ত্রের জায়গায় গণতন্ত্রকে প্রতিস্থাপন করেছিলো। নারীবাদ, মানবতাবাদ ধর্মনিরপেক্ষতাসহ অজস্র মতবাদ তারা প্রতিষ্ঠা করেছিলো। তারা সেসব ইউরোপে সীমাবদ্ধ রেখে দেয়নি। যত সব অঞ্চলে দখল অথবা ব্যবসার উদ্দেশ্যে গিয়েছে সেখানে রপ্তানি করেছিলো।
ইউরোপীয়রা বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবসা করতে গিয়ে খুব ভয়ংকর একটা অন্যায় করেছিলো সেসব অঞ্চলের জাতিগোষ্ঠীর সাথে। তারা অধিক মুনাফার লোভে ক্ষমতা তুলে দিলো বোকা ও অথর্ব শ্রেণীর হাতে এবং জ্ঞানীদের কোণঠাসা করে দিয়েছিলো। বোকারা উচ্ছিষ্ট পেয়েই সন্তুষ্ট থাকলো, অন্যদিকে ইউরোপীয়রা সব লুটেপুটে নিয়ে গেলো।
খুব বেশিদিন হয়নি ইউরোপীয়রা বিভিন্ন অঞ্চল ছেড়ে চলে গিয়েছে। তারা সকল সমৃদ্ধ অঞ্চলে স্বার্থপর, সুবিধাবাদী ও মাথামোটা লোকদের হাতে যে ক্ষমতা দিয়ে চলে গেলো তা থেকে বেশিরভাগ অঞ্চলই বের হতে পারেনি। এই সমস্যার কারণে সমৃদ্ধশালী ভারতীয় উপমহাদেশ এখনো ধুঁকে ধুঁকে ভুগছে।
আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের অবস্থা সবচাইতে ভয়াবহ। কোণঠাসায় থাকা জ্ঞানীরা এখানে টিকতে না পেরে দেশ ছেড়ে চলে যায় যেখানে তারা মর্যাদা পায় এবং যেখানে তারা জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারে।
দেশটা কুঁড়ে কুঁড়ে খায় বোকা, মাথামোটা ও স্বার্থপর লোকেরা।
দেশে বিদ্যমান অজস্র সমস্যা। এগুলো নিয়ে কেউ কথা বলে না। গত ৫০ বছর ধরে জাতি পড়ে আছে ধর্মীয় গোঁড়ামি, মিথ্যাচার, সাময়িক সুযোগসুবিধা নিয়ে। গণতন্ত্রের সুবিধা নিয়ে কিছু লোক ক্ষমতা অর্জন করে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে।
ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরাও সকল স্বার্থ হাসিল করেছিলো রাজনৈতিক শক্তি অর্জন করে। তবে তারা সবই করেছিলো সবার আগে নিজের ঘর সুন্দর করার জন্যে।
আমরা বাংলাদেশীরা নিজের ঘর ভেঙে ফেলি অন্যের জায়গায় ঘর তোলার জন্য। নিজেকে বঞ্চিত করি অন্যের দয়া পাওয়ার জন্য। নিজের শেকড় ভুলে যাই অন্য ভূমিতে শেকড় গাড়ার জন্য।

জ্ঞানই একমাত্র শক্তি মনুষ্য প্রজাতির। পেশিশক্তিতে বেশিরভাগ প্রাণীই মানুষের তুলনায় উন্নত কিন্তু মানুষের বুদ্ধি আছে বলেই কোনো প্রাণী মানুষের সমকক্ষ নয়।
জ্ঞানের কল্যাণে আমেরিকানরা সমৃদ্ধ হলো, ইউরোপীয়রা পরিবর্তন হলো। আমরাই শুধু রয়ে গেলাম নর্দমায়।
জ্ঞানীদের হাতে নিয়ন্ত্রণ তুলে দিলেই আসবে সমৃদ্ধি, জ্ঞানীরাই পারবে সবচেয়ে সুন্দর উপায়ে নেতৃত্ব দিতে। অজস্র সমস্যা আমাদের দেশে। সকল সমস্যারই সমাধান করে উদাহরণ হয়ে আছে বহু দেশ। সমস্যা সমাধানে খুব বেশি বুদ্ধির দরকার নেই। মোটামুটি বুদ্ধি থাকলেই পরিবর্তন সম্ভব। পাহাড় পরিমাণ দুর্নীতি করে হলেও পরিবর্তন করা সম্ভব। দুঃখের বিষয়, আমরা যাদের নেতা বানাই তারা সেই পরিমাণ বুদ্ধির ধারেকাছেও নাই। স্বার্থপর ও সুবিধাবাদী লোকজনরাই ক্ষমতা লাভ করে। তারা নিজের ঘর থেকে সম্পদ নিয়ে রেখে আসে আমেরিকা-কানাডার অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার জন্যে।

মোহাম্মদ আরাফাত পড়ুয়া একজন মানুষ। জ্ঞানচর্চায় লিপ্ত। তিনি তার জ্ঞান কাজে লাগিয়ে অন্য শাখায় ভালো করতে পারতেন। আমাদের দেশের জ্ঞানীরা তো সুযোগের অপেক্ষায় থাকে, কখন দেশ ত্যাগ করা যায়।
আরাফাত দেশে থেকে গেলো। একটা দলের পক্ষে তার জ্ঞানকে কাজে লাগালো। সেই দলের নেতার প্রচুর প্রশংসা করলো, যেহেতু তিনি সবচেয়ে বেশি প্রশংসা শুনতে পছন্দ করেন। অনেক বছরের ত্যাগ-তিতিক্ষার পর আরাফাত সংসদের সদস্য হলেন।
আরাফাতের সংসদ সদস্য হওয়া অসাধারণ ব্যাপার এইজন্য যে, সে যেহেতু পড়ুয়া এবং জ্ঞানী মানুষ তাই সে চাইবে তার চারপাশে জ্ঞানী লোকজন থাকুক। তার কখনো ভালো লাগবে না, ঢাকার বিভিন্ন চিপা গলি থেকে বেড়ে উঠা বাবার সম্পদ রক্ষার জন্য রাজনীতি করা কোনো অশিক্ষিত বদমায়েশ ভীড় জমালে।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার, তার কলিগ হিসেবে সে চাইবে তার মতো কেউ সংসদে আসুক, যে জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত থাকবে।
আমার দৃষ্টিতে এটা প্রচণ্ড ইতিবাচক ব্যাপার। আমার দেশটা পরিবর্তন হোক। জ্ঞানীরা ক্ষমতাসীন হয়ে দেশের ভাগ্য বদলে দিক।
জ্ঞান যেভাবে করে সকল প্রাণীর মধ্যে মানুষকে শ্রেষ্ঠ করেছে সেই সূত্র ধরে জ্ঞানী মানুষের হাতে দেশের নেতৃত্ব গেলে দেশ শ্রেষ্ঠ হতে পারে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.