নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সালমা রুহী

সালমা রুহী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেষ পার্সেল

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫৮

কুরিয়ার অফিস থেকে কল এসেছে। চেম্বার থেকে বের হয়ে সাদ যাচ্ছে কুরিয়ার অফিসে নয়নার পাঠানো পার্সেলটা আনতে। আরদিন কুরিয়ার অফিস থেকে কল আসলে সাদ তড়িঘড়ি করে চেম্বার ছেড়ে বেরিয়ে যায়,,তবে আজ তার সেই তাড়াটা লাগছেনা......
গায়ে নয়নার পছন্দের ব্লু ব্লেজার। এই ব্লেজারটা গায়ে দিলে নয়না বলতো,"তোমাকে আকাশের মতো নীল লাগছে"।সাদের কানে গুঁজে থাকা হেডফোনে বাজছে আজিজুল দেওয়ানের, "তুমি কার পোষা পাখি,তোমার কাজল বরণ আঁখি.....রক্ত জবার মত তোমার মুখ,আমারে কান্দাইয়া পাও কি সুখ...."।
কলেজ সময় থেকেই নয়নার সাথে পরিচয়। ভালই কাটছিল বন্ধুত্বপূর্ণ দিনগুলো। তখন ততটা ভাল লাগা না থাকলেও ধীরেধীরে দুজনের মাঝেই কেমন যেন ভাল লাগা শুরু হলো। নয়নার চোখজোড়া খুব সুন্দর, নামের সাথে মিল ছিল। সাদ প্রায়ই বলতো,"তোমার নামটা কে রেখেছে নয়না!!"।
সাদ প্রথম নয়নার চোখের প্রেমেই পড়েছিল,,,সম্পর্ক ধীরেধীরে এগুচ্ছে......তখন মনে হয়নি এই ভালোলাগা একসময় প্রেমে পরিণত হবে। তারপরের ঘটনা একজন আরেকজনকে ছাড়া যেন কিছুই বুঝে না, দুজনে মিলেই এক সুন্দর পৃথিবী, বাকী সব কিছু যেন কেমন ফিকে....
দুজনই ভর্তি হলো ডিপ্লোমা ইন ডেন্টিস্ট্রিতে।প্রতিদিনই দেখা হয়।দুজন কলেজের পর পার্কের বেঞ্চিতে বসে বাদাম খাওয়া, একে অপরের প্রশংসা করা, গিফট দেয়া। শালীনতার মধ্যে প্রেম চলছে। একদিন একজন না আসলে অপরজনের সেদিন ভীষণ মন খারাপ.....
সাদের বাবা-মার সাথে তার সম্পর্ক যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ। সাদের বাবা হয়তো তার চোখে-মুখে প্রেমের রং দেখেছিলেন। একদিন তাকে ডেকে বললেন, "কিরে ব্যাটা প্রেমে পড়েছিস নাকি!! প্রেম কর ভাল কথা তবে বংশকুল দেখে করিস"।
সাদের যেন বুক থেকে পাথর নেমে গেলো। সে যতদূর জানে নয়না ভাল মেয়ে এবং তার কুলবংশও যথেষ্ট ভাল। একদিন সাহস করে সাদ তার মা-বাবার সাথে নয়নার পরিচয় করিয়ে দিলো। মা-বাবার কাছেও নয়নাকে ভাল লাগলো।
ইন্টার্নিও শেষ। এবার চাকরীসূত্রে দুজন দেশের দুদিকে চলে গেলো। সাদ ঢাকায় আর নয়না গেলো চট্টগ্রাম। দুরে গেলেও তাদের ভালবাসায় কোনো কমতি ছিল না।সুযোগ পেলেই লম্বা কল, চ্যাট, মেসেঞ্জারে টুংটাং, প্রতি সপ্তাহে গিফট পার্সেল,,,,এককথায় বেশ আনন্দেই কাটছিল দিনগুলো।
সাদের বাবার সাথে নয়নার প্রায়ই ফোনে কথা হয়। সাদও নয়নার স্কুলপড়ুয়া ভাইয়ের সাথে মজা করে। গেলো বসন্তে সাদ নয়নাকে একটা কাঁচা হলুদ জামদানি পার্সেল করলো। তাছাড়া তার জন্য হিজাব, এয়ারিং, ব্রোচ, চুড়ি এসব তো আছেই। নয়নাও সাদের ফেভ্রেট ব্রেন্ডের পারফিউম, ওয়াচ, সামগ্লাস এসব পার্সেল করতো। কুরিয়ার অফিস থেকে পার্সেল টা নিয়ে কিছুক্ষণ বুকে জড়িয়ে রাখা যেন একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এতে রয়েছে নয়নার হাতের ভালবাসার ছোঁয়া........।
কিছুদিন যাবৎ নয়নার আচরণে বেশ পরিবর্তন.....
কল করলেই বলে ব্যস্ত নাহয় পরে কথা হবে। একদিন সাদ হাসতে হাসতে বললো,"কি ব্যাপার তোমার কি হয়েছে। হঠাৎ এত ব্যস্ত হয়ে গেলে যে....!!" নয়না ভাল মেয়ে কিন্ত তার ইগো সমস্যা প্রচন্ড বেশী। জবাবে সে সাদকে বললো,"আমার ব্যাপারে এত ইন্টারফেয়ার করার তুমি কে??"
এর পর থেকে দুজনেরই যোগাযোগ বন্ধ........
৩/৪ দিন পর হঠাৎ সাদের ফোনে নয়নার একটা মেসেজ আসলো, মেসেজটা ছিল"SORRY"। কিন্তু ততক্ষণে বেশ দেরী হয়ে গেছে...
কথাগুলো সাদের বাবার কানে পৌছাতেই তিনি খুব কষ্ট পেলেন। বললেন "ভালবাসা কি এতই খেলারে ব্যাটা!!!"
কথাটা সাদের মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো...... সে সরির রিপ্লায়ে নয়নাকে বললো," আমাদের এতদিনের ভালবাসা কি এতই তুচ্ছ ছিল নয়না যে আজ হঠাৎ এতটা ফিকে পড়ে গেলো!! আমিতো তোমার সাথে পুরোটা জীবন দেখেছিলাম নয়না, এর শেষটা যে এমন হবে তা আমি কখনোই আশা করি নি......"
"স্যার কোথায় নামবেন??"ট্যাক্সি ড্রাইভারের ডাকে সাদের সম্বিৎ ফিরে এলো। "এস,এ পরিবহন কুরিয়ার অফিস"কথাটা যেন মুখে জড়িয়ে গেলো সাদের।
পার্সেল টা হাতে নিয়ে আজ আর বুকে জড়াতে ইচ্ছে করছে না।কারণ আজ আর পার্সেলে নয়নার ভালবাসার ছোঁয়া নেই......
আজ অব্দি নয়নাকে পাঠানো সাদের সবগুলো গিফট ফেরত এসেছে। শুধু আসেনি নয়নাকে দেয়া তার এতদিনের অফুরন্ত ভালবাসা। নয়না কি কখনো পারবে তাদের এতদিনের ভালবাসা কে পার্সেলরূপে ফিরিয়ে দিতে!!!!
পার্সেলটা হাতে নিয়ে, বুকে চাপা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে সাদ বলে উঠলো,"শেষটা এমন নাহলেও পারতো!!!"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.