নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সালমা রুহী

সালমা রুহী › বিস্তারিত পোস্টঃ

খুঁজেছি তোমার গন্ধ মাগো

০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৪০


মা সবসময় পরিপাটি হয়ে থাকতে পছন্দ করতেন। প্রতিদিন খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়তেন, মাথায় নবরত্ন তেল মাখতেন, মুখে মাখতেন তিব্বত স্নো আর বাবা জর্দা দিয়ে পান খেতেন, সব কিছু মিলিয়ে মায়ের গা থেকে অদ্ভুত সুন্দর একটা গন্ধ পেতাম।মায়ের গায়ের এই গন্ধ, পৃথিবীর কোনো পারফিউমের সাথে তুলনা হয় না।আমি চোখ বুঝে থাকলেও মার গায়ের গন্ধে তার উপস্থিতি টের পেতাম।
১০.১১.১১ ওয়ার্ড বয় মাকে ষ্ট্রেচার ঠেলে অপারেশন থিয়েটারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি ও ভাইয়া ষ্ট্রেচারের সাথে দৌঁড়াচ্ছি।একটু পরেই মায়ের বড় ধরনের একটা অপারেশন হবে। ডাক্তার বলে দিয়েছেন, মনে সাহস রাখবেন, "আপনাদের মা হয়তো ও.টি টেবিল থেকে.....।"
মনকে ছেলে ভুলানোর মত ভুলাচ্ছি, মার কিচ্ছু হবে না, মার কিচ্ছু......।
অপারেশন শুরু হলো। ওটি রুমের পাশে বসে আল্লাহকে ডাকছি। এক ঘন্টা, দুই ঘন্টা, তিন ঘন্টা, চার ঘন্টা পর মায়ের অপারেশন শেষ হলো, অপারেশন সাকসেসফুল! আনন্দে কেঁদে ফেললাম। আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল,"মা আমাদের ছেড়ে যেতে পারেন না। কারণ, মা তো বাবার মত স্বার্থপর না। বাবা তো আমাদের ছোট ছোট রেখে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। সেই থেকে মা ই তো আমাদের সব।"
পোস্ট অপারেটিভ রুমে মাকে দেখে বুকটা মোঁচড় দিয়ে উঠলো, মার সারা শরীরে অসংখ্য নল লাগানো। আহারে মার কত কষ্ট হচ্ছে। যদি মায়ের কষ্ট কমাতে পারতাম। মা ধীরেধীরে সুস্থ হচ্ছেন। আমরাও মাকে নিয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষা করছি। বাড়িতে ছোট ভাই, বোন দুইটা মাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে। তাদের বিশ্বাস বড় ভাইয়া বড় আপু মাকে সুস্থ করে নিয়ে আসবে।
১৫.১১.১১ মা কেমন যেন ছটফট করছেন। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে। দৌড়ে গিয়ে ডাক্তার আনলাম। ডাক্তার বললেন, "রোগীর পালস বি.পি ডাউন, তাড়াতাড়ি আইসিইউতে এডমিট করেন।"
মা আই সি ইউতে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। ডাক্তার বলে দিয়েছেন, "আপনাদের মাকে পৃথিবীর যে প্রান্তেই চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান, তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা..।"
মাকে শেষ বিদায় দেয়ার জন্য আমাকে আর ভাইয়াকে নেওয়া হচ্ছে। আমি চোখ বুঝে আছি, আমি মার মৃত্যু যন্ত্রণার মুখ দেখতে পারবো না।
পৃথিবীতে এত বাতাস কিন্তু আমার মা একফোঁটা বাতাসের জন্য হাহাকার করছে। আমি এই মুখ কিভাবে দেখি!!!! পৃথিবীটা ভূমিকম্পের মত কেঁপে উঠলো। জীবন মৃত্যুর লড়াইয়ে আমার মা হেরে গেলেন....... আমার মা.......।
"এমনই এক নভেম্বর মাসে মা আমাকে জন্ম দিয়ে কোলে করে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন।"
" আজ এমনই এক নভেম্বর মাসে আমি মায়ের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরছি।
মাগো, আমাকে জন্ম দেয়ার ঋণ শোধ করতে পারলাম না। মাগো আমার জন্মের মাসটাকে তুমি স্মরণীয় করে দিলে..........।"
ছোট ভাই-বোন দুইটাকে কি জবাব দিবো,তারা তো অপেক্ষায় আছে ভাইয়া আপু মাকে সুস্থ করে নিয়ে আসবে।
আমাদেরকে তোরা ক্ষমা করে দিস। তোদের কাছে মাকে নিয়ে আসছি তবে..........।
মনটা যখন খুব খারাপ লাগে, চলে যাই মা-বাবার কবরে। আমাদের একা ফেলে কি নিশ্চিন্তে মা-বাবা কবরে শুয়ে আছে।
চোখ বুঝে বসে থাকি এই বুঝি মায়ের গন্ধ এসে নাকে লাগবে। এই বুঝি মায়ের উপস্থিতি টের পাবো, এই বুঝি মা এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলবে,"পাগলি মেয়ে কাঁদছিস কেন?"
"আমার এই লেখা সেই সব মা হারা সন্তানদের উৎসর্গ করলাম যারা আজও তাদের মায়ের গন্ধ খুঁজে ফিরে। মাগো কোথায় গেলে তোমার গন্ধ খুঁজে পাবো???

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: মাকে নিয়ে ভালো লিখেছেন।

০৩ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৩৭

সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.