![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতিদিনের মতই সাথী তার বাবার জন্য ভাত নিয়ে জমিতে যাচ্ছে......
সে ক্লাশ ফাইভ পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। বোর্ড পরীক্ষায় ফেল করে তিন বছর যাবৎ পড়াশুনা বন্ধ।
তার মা বলে,"তরে আর ফরাইয়া লাব নাই, তর মাতাত হুদ্দা গোবর।"
সাথী অন্য ভাই বোনদের তুলনায় একটু বোকাসোকা।তার মধ্যে সরলতা বেশি, যে যা বলে তাই বিশ্বাস করে নেয়।
সাথির বাবার এক বিঘা জমি আছে। নিজের জমি নিজেই চাষাবাদ করে, ভাল ভাবেই সংসার চলে।
সাথীরা দু'ভাই, দু'বোন আর বাবা-মাকে নিয়ে মোটামুটি সুখে শান্তিতে দিন কাটছিলো।
দুপুরে মা সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকে, দু'ভাইবোন স্কুলে থাকে। জমিতে বাবার দুপুরের ভাত নেওয়ার দায়িত্ব সাথীর। প্রতিদিন যায়, আজ কয়দিন ধরে পাশের জমিতে কাজ করা একটা ছেলে, কেমন একটা ভালো লাগা নিয়ে সাথীর দিকে তাকিয়ে থাকে.......
যেদিন থেকে সাথী টের পেয়েছে তার দিকে ছেলেটা
তাকিয়ে থাকে, সেদিন থেকে সেও একটু সাজুগুজু করে ভাব নেয়।
রোজ চোখে চোখে কথা হয়..........
একদিন বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে দু'জনের কথা হয়।ছেলেটার নাম 'দেওয়ান'।
ময়মনসিংহ থেকে কাজ করতে এসেছে, বাড়িঘর ভালো অবস্থা। বাবার সাথে রাগ করে এসেছে, সাথিকে তার খুব ভালো লাগে। সাথীর মত সুন্দর মেয়ে সে নাকি জীবনেও দেখেনি....!!!
এই রকম একটা মেয়েই নাকি, তার মা-বাবা বউ করে ঘরে তুলতে চায়। দেওয়ানের সবগুলো কথা শুনে সাথীতো খুশিতে বাগবাগ.........
সত্যি বলতে কি, সাথী তেমন আহামরি কোনো সুন্দরী না, কিন্তু নিজেকে সে খুব সুন্দরী ভাবে.......
তার বাবা তাকে একটা নাকফুল বানিয়ে দিয়েছিলো, নাকফুলটা তার খুব পছন্দ, খুব শখের নাকফুল।নাকফুলটা পরে সবাইকে বলতে লাগলো, "নাকফুলডা পিনদা আমারে শাবনুরের মত লাগতাছেনা!!!"
দেওয়ান আর সাথীর প্রেম দিনদিন ঘনীভূত হচ্ছে।
দেওয়ান সাথীকে বহু স্বপ্ন দেখাচ্ছে আর সাথী তার প্রেমে অন্ধ হচ্ছে।
কিভাবে যেন কথাগুলো সব সাথীর বাবার কানে গেলো!!
তার বাবা তাকে খুব মারলেন আর বললেন, "আমার ক্ষেতে কামলা রাহি, আর তুই অইন্য মাইনশের ক্ষেতের মইমনসিংগা কামলার লগে প্রেম করছ!!! কাইট্টা টুকরা-টুকরা কইরা লামু......."
পরদিন সকালে সাথী আর দেওয়ানকে খুজে পাওয়া গেলো না।
দেওয়ান সাথীকে ঢাকা নিয়ে গেলো, একটা কাজী অফিসে গিয়ে জলিল আর কামাল নামের দুই বন্ধুকে সাক্ষী করে বিয়ে করলো।
তারপর সাথীকে একটা বস্তির ঘরে নিয়ে গেলো, ঘরে কিছুই নাই শুধু একটা চকি।
সাথী অবাক, "কোথায় বাড়ী, কোথায় মা-বাবা..!!!
দেওয়ান বলে, "আম্মা আব্বা রাগ, না জানায়া বিয়া করছিযে। কয়দিন পরে রাগ কমলে তুরে বউ সাজাইয়া লইয়া যাইবো।"
সাথীর সম্বল কয়েক জোড়া কাপড় আর সখের নাকফুলটা।
কয়েকদিন ভালোই কাটলো, তিনবেলা ভালো-মন্দ খায়, দুজনে মিলে সিনেমা দেখে.....
মাস শেষ হলে দেওয়ান বললো, "আমার হাতখালি, ঘর-ভাড়া দেয়ন লাগব,,,তর নাকফুলডা দে, এডা বন্ধক দিয়া ঘর ভাড়াডা দেই। কদিন পরে ছুডাইয়া আনমুনে।"
শখের নাকফুলটা খুলতে গিয়ে যেন সাথীর বুকটা হঠাৎ হু হু করে উঠলো......!!!!
ইদানীং দেওয়ানের কার্যকলাপ সাথীর কাছে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। ঠিকমতন বাজার আনেনা, প্রায়ই উপাস থাকতে হয় সাথীর,,,শুধু বলে হাতখালি!!!
একদিন সাথী দেওয়ানের এক বন্ধুর কাছে জানতে পারে, "দেওয়ানের বাড়িতে তার নাকি আরেকটা সংসার আছে, সাথে চার বছরের একটা বাচ্চাও আছে...!!
বোকাসোকা সাথী এখন বুঝলো, সংসার চালাতে দেওয়ান কেন হিমশিম খায়। কারণ তার দুইটা সংসার.........তাই সে সামলাতে পারে না।
সাথী ভাবছে, "প্রেমে অন্ধ হয়ে কি করলো সে!!!
তার আদরের পরিবারটাকে ফেলে দেওয়ান নামের মরিচিকার পিছনে এ কোথায় চলে আসলো!!!" এখন কথাগুলো ভেবে সাথীর চোখের জলে বালিশ ভিজছে.......
সাথী দেওয়ানকে নাকফুলটার কথা বললেই, "আজ দিবো, কাল দিবো করে।"
আজ আবার নাকফুলটার কথা বলাতে, দেওয়ান সাথীর গায়ে হাতও তুললো!!!
বোকা সাথীর জীবনটাই যেনো আটকে আছে তার বাবার দেওয়া নাকফুলটায়......
স্টেশানে গিয়ে সাথী মাকে ফোন করে, "আম্মা আমি বাইত আইতাছি।"
মা বলে,"তুই আমগো মুহে চুন-কালি দিয়া গেসস, অহন তুই আমগোর লাইগা মইরা গেছতগা, তুই গেরামে আইলে আমার আর তর বাপে মরা মুক দেখবি হুইন্না রাখ।"
সাথীর গায়ে হাত তুলে দেওয়ানের অনুশোচনা হয়। ঘরে গিয়ে দেওয়ান সাথীকে না পেয়ে বুঝতে পারে সে বাড়িতে চলে যাচ্ছে, সে ছুটে যায় স্টেশানে.........
স্টেশানে ঢুকতেই তার চোখে পড়ে রেল-লাইনের উপর অনেক মানুষের ভীড়। দেওয়ান ভীড় ঠেলে ভিতরে উঁকি দেয়,,,, ট্রেনের নিচে পড়া ছিন্ন-ভিন্ন সাথীর নিথর দেহ.....!!!!!
"দেওয়ানের পকেটে সাথীর শখের নাকফুল। যেটা পড়লে সাথীকে শাবনূরের মত লাগতো..........!!!"
২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৪৩
Sahinuzzaman বলেছেন: হাই বাঙালির প্রেম!!
৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:১৯
সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: সমাজের বাস্তব ছবি।
৪| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৪৯
ওমেরা বলেছেন: মর্মান্তিক গল্প।
৫| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৫৩
হংস বলাকা বলেছেন: ভালো লাগলো
০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১১
সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে
৬| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১:০৬
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: এমন ঘটনা অহরহ ঘটিতেছে। এমন গল্প বেশিবেশি করে লিখুন।
০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১১
সালমা রুহী বলেছেন: ইনশা আল্লাহ চেষ্টা করবো ।
৭| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১:১৮
নূর-ই-হাফসা বলেছেন: কিছুক্ষণ আগেই এমন ধরনের একটা ঘটনা টিভি তে দেখাচ্ছিল ।
মেয়ে গুলো সত্যিই অনেক বোকা । অবশ্য ঐবয়সটাই ওমন , বড়দের কথা বিশ্বাস হয়না , মিষ্টি কথা বলা ছেলে গুলো কে হয়তো খুব আপন ভেবে ফেলে ।
গল্পে তাও তো নাকফুল আনার দৃশ্য বর্নিত হলো । বাস্তবে তা হয়না ।
গল্প সার্থক আপনার , মূল বাস্তবতা দারুন ভাবে ফুটে উঠেছে ।
০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১০
সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ আপানাকে
৮| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল বাস্তব।
বাস্তব বড় কঠিন।
৯| ০৬ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৭:৩৬
মলাসইলমুইনা বলেছেন: একটু পরে পড়া হলো মনে হয় আপনার এই সুন্দর গল্পতা |মনে হলোতো জীবন থেকে নেয়া গল্প | ভালো লাগলো খুব |
০৬ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:১৫
সালমা রুহী বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ ।
১০| ০৬ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:০৫
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: শেষটা সিনেমাটিক,বাস্তবের সাথীরা সংগাম করেই বেচে থাকে।
০৬ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:১৭
সালমা রুহী বলেছেন: সহজ সরল এবং বোকা সোকা সাথিরা সংগ্রাম করে বেচে থাকতে পারে না । তাদের শেষ পরিনতি এমনি মর্মান্তিক হয় ।ধন্যবাদ ।
১১| ০৬ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৩৩
শাহানাজ সুলতানা অধরা বলেছেন: সুন্দর একটি গল্প পড়লাম
০৬ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:১৮
সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৩৬
সৈয়দ ইসলাম বলেছেন:
আবেগ আবেগ আবেগ বাঙালি সহজ সরল। যারা একটু গড়ল তারা এই কাজগুলোই করে তবে আবেগে!