নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সালমা রুহী

সালমা রুহী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার প্রিয় শিক্ষক

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৭


আজ 'বিশ্ব শিক্ষক দিবস' শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি আমার শ্রদ্ধেয় সকল শিক্ষক ও প্রিয় শংকর স্যারকে, আমার শিক্ষাগুরুকে।
এই স্যারের জন্য আমি আমার জীবনে শিক্ষার মুখ দেখেছি....!
ছোটবেলায় এত ডানপিটে ছিলাম পড়াশুনার কাছেও যেতাম না। সারাদিন খেলা, বেশির ভাগ ছেলেদের খেলা। ঘুড়ি উড়ানো, মার্বেল, ডাংগুলি, পুকুরে সাঁতার, গাছে চড়া কিছুই বাদ নেই।
মায়ের কাছে কত মার খেতাম পড়ালেখা না করে খেলাধুলার জন্য। বই নিয়ে বসালেই ঘুমিয়ে যেতাম। এমন ঘুম রাতে ঘুমালে পরদিন সকালে উঠতাম আর সকালে ঘুমালে রাতে উঠতাম.....!
আসলে এটা পড়ালেখা না করার একধরনের বজ্জাতি আর কি...।
বাবা স্কুলে ভর্তি করলেন, স্কুলেও যাই না। স্কুলের সময় পর্যন্ত প্রচন্ড পেট ব্যাথা থাকতো, বাথরুমে বসে থাকতাম।
স্কুলের সময় শেষ, চলে যেতাম পাশের খেলার মাঠে।
মা বাবা দেখলেন, এভাবে চলতে থাকলে মেয়ে তো মূর্খ থেকে যাবে।
শংকর স্যারকে রাখা হলো আমাকে দু'বেলা পড়ানোর জন্য।
সকালে একবার স্যার আসতেন, আবার বিকালে একবার আসতেন।
বাবা স্যারকে বলেছিলেন, মনে হয় আমার এই মেয়ে লেখাপড়া করবে না, যদি ওকে ধৈর্য ধরে পড়াতে পারেন তাহলে কৃতজ্ঞ থাকবো.....।
আমার মত কিছু বিচ্ছু বান্ধবীদের সাথে পরামর্শ করলাম, স্যারের হাত থেকে কিভাবে বাঁচা যায়....!
কেউ কোন সদুত্তর দিতে পারলো না, কি আর করা নিজেই ভাবছি কিভাবে স্যারকে বেশি বেশি বিরক্ত করা যায়, যেন তিনি আমাকে পড়ানো ছেড়ে দেন...।.

স্যার আসলে শুরু হয় পেট ব্যাথা, কিন্তু স্যার বিরক্ত হোন না।
মাকে ডেকে বলেন," ওকে একটু ঘুমাতে দিন পেট ব্যাথা কমুক আমি অপেক্ষা করবো।"
মা বলতেন, "আপনি জানেন না, ও মিথ্যা বলছে..।"
তবুও স্যার বসে থাকতেন আমার পেট ব্যথা কমার অপেক্ষায়, আর আমি মটকা মেরে শুয়ে থাকতাম। ইচ্ছা করে বিরক্ত করতাম, স্যারের বসে থাকা দেখে বাধ্য হয়ে বই নিয়ে বসতাম।
যেন স্যার বাবার বলা কথাটা মনে রেখে আমার কাছে ধৈর্য পরীক্ষা দিচ্ছেন .....!

সকালে ঘুম থেকে স্যার নিজেই এসে ডেকে তুলতেন, গাল ফুলিয়ে বসতাম পড়তে। মা বা বাবা কেউ মারতে আসলে স্যার মারতে দিতে না বলতেন, "ও তো লক্ষী মেয়ে নিজেই পড়বে। "
আমি জানি আমি কতটুকু লক্ষী, "লক্ষী না পক্ষী...!"
মা স্যার কে নাস্তা দিলে স্যার আমাকেও নাস্তা দিতে বলতেন। কি আদর করে নিজের হাতে নাস্তা খাইয়ে দিতেন, যেন কোন বাবা তার মেয়ের মুখে অতি যত্নে খাবার তুলে দিচ্ছেন।
পড়তে বসে মুখ দিয়ে একটা অক্ষর বের করতাম না, কি ধৈর্য্য নিয়ে স্যার আমাকে গল্পের ছলে ছলে পড়াতেন গল্পও বলতেন।
স্যার আমাকে তার সন্তানের মত আদর করা শুরু করলেন। আস্তে আস্তে আমিও স্যারের আদরে, স্যারে প্রতি দূর্বল হতে থাকলাম। স্যারকে আর আগের মত বিরক্ত করি না।
যেই আমি' ব' কলম ছিলাম, স্যারের প্রচেষ্টায় ক্লাশে তিনের মধ্যে চলে আসলাম।
স্যার জোর করে ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষাও দেয়ালেন, রেজাল্ট বের হওয়ার পর স্যারকে সালাম করতে গেলে স্যার আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন," মারে জানি না তোকে মানুষ করে দিয়ে যেতে পারলাম কিনা, চেষ্টা করেছি মাত্র....!"

সেদিন স্যার মা বাবার কাছ থেকেও বিদায় নিলেন, আমার প্রিয় স্যার স্বপরিবারে ইন্ডিয়া চলে যাচ্ছেন।
যেই স্যার কে বিরক্ত করার ফন্দি আটতাম, আজ সেই স্যারের বিদায়ে আমিও কাঁদছি।
প্রায় দুইযুগ আগে স্যার চলে গেছেন আজও স্যারের কথা মনে পড়ে, আমার শিক্ষাজীবন শংকর স্যারের কাছে ঋণী।
এই ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না, "মা বাবার আদরের ঋণ আর শিক্ষকের শিক্ষার ঋণ শোধ করা যায় না.....!"

আজ আমি যেটুকু পড়ালেখা করেছি তার অবদান এই স্যারের।
হাতে কলম নিলে মনে পড়ে, "আমাকে কলম ধরার যোগ্য কে বানিয়েছে....?"
যার জন্য আমার এই যোগ্যতা সেই স্যারকে আমার শতকুটি প্রনাম। স্যারকে শুভেচ্ছা জানাতে কোন শিক্ষক দিবসের প্রয়োজন নেই, আছে শুধু আমার শ্রদ্ধা।
জানি না স্যার আপনি কোথায় আছেন,কেমন আছেন?
"আপনার এই দুষ্টের শিরোমনি ছাত্রীকে মাফ করে দিবেন, আপনাকে অনেক বিরক্ত করেছি আর আপনি ধৈর্য্য পরীক্ষা দিয়েছেন। "
"আপনার অবদান ছাড়া হয়তো আমার শিক্ষাজীবনের খাতা শূন্য থেকে যেতো.....!"

( 'শিক্ষক দিবসের' আমার এই লেখা, আমি আমার প্রিয় শংকর স্যারকে উৎসর্গ করলাম)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:২৫

ওমেরা বলেছেন: আপনার ও আপনার প্রিয় শিক্ষকের জন্য শুভেচ্ছা অনেক ।

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৯

সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ.....

২| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৫

সৈয়দ ইসলাম বলেছেন:
জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকসম্প্রদায়কে জানাই অন্তরের অন্তস্তল থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা।

এমন মহান দিনে এতো সুন্দর একটি পোস্টের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য আপনাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:০২

সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও, সকল শিক্ষকের জন্য বিনম্র শ্রদ্ধা.....

৩| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: সব শিক্ষকদের জানাই শ্রদ্ধা।

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৮

সালমা রুহী বলেছেন: আমারও বিনম্র শ্রদ্ধা.......

৪| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৪

সৈকত জোহা বলেছেন: একজন দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের কথা মনে পড়ছে , যিনি আমাকে ১২ নম্বর গ্রেস দিয়ে পরীক্ষায় পাশ করিয়েছিলেন।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৬

সালমা রুহী বলেছেন: শিক্ষক দিবসে ১২ নাম্বার গ্রেস দেয়া শিক্ষককেও আমার শ্রদ্ধা বিনম্র শ্রদ্ধা......!
ধন্যবাদ.....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.