![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গৃহকর্মে সহযোগী বা বুয়াদের ধারনা অত্যন্ত প্রাচীন। কালের পরিক্রমায় বুয়ারা আজ অভিজাতদের হারেম থেকে মধ্যবর্তীদের বাসা আর ব্যাচেলরদের মেসেও নেমে এসেছে। সর্বস্তরে বুয়াদের আধিপত্য বজায় থাকলেও আমার সাথে বুয়াদের পরিচয় দীর্ঘকাল বাংলা সিনেমাতেই সীমাবদ্ধ ছিলো। সিনেমায় নায়িকার বুক ভাসানো গোপন কান্নার সঙ্গী হতো বুয়ারা। কাউকে কাউকে বৈপ্লবিক ভূমিকাতেও দেখা যেতো, বুর্জোয়াঁ চৌধুরী, পাটোয়ারীদের শ্রেণীশত্রু বিবেচনা করে অনেক বুয়াকেই পরবর্তীতে নিজেই বিশাল শিল্পপতি হয়ে উঠতে দেখা গেছে। এইসব কার্যকলাপ দেখে ছোটবেলা থেকেই বুয়ারা সংসারের কার্যকরী বিরোধীদল নাকি রাজপথ কাপানো বিরোধীদল তা নিয়ে ধন্দে থাকতাম।
বুয়াদের সাথে ব্যাপক আকারে পরিচয় হয় বাসা থেকে বেরোনর পর। আমি হলের বাসিন্দা হলেও সহপাঠী অনেকের বাসায় বুয়া ছিলো এবং তাদের সেই বুয়ার গল্প প্রতি সপ্তাহে একবার শোনা ছিলো বাধ্যতামূলক। প্রতিনিয়তই তাদের বুয়ারা ঝাল টক তরকারী রান্নার পাশাপাশি টক মিষ্টি ঘটনাও উপহার দিতো। বুয়াদের নিয়ে সবচেয়ে দুঃসময়টা মনে হয় পার করেছে বন্ধু রেজাউল। বুয়াদের গল্প বলতে এলেই মনে হতো তার মুখে সব শ্রাবনের মেঘ নেমে এসেছে, শুনতাম সে নাকি স্টুডেন্টকে ইতিহাস পড়ানোর সময় নাৎসী স্বৈরশাসক হিটলারের সাথে যুৎসই উদাহরন মিলানোর জন্য তার বুয়ার নাম উল্লেখ করতো। তার বুয়ার ছিলো মারাত্মক রকমের শুচিবাই, মেসের বিছানা সমকোনে না হয়ে বিষমকোনে কেন, কিচেনের একটা প্লেটে কেনো ঝোল লেগে আছে, ভোগবাদীদের মতো দুটো আইটেম খাওয়ার ইচ্ছা কেনো!! এসব নিয়েই প্রতিদিনই বুয়ার মুখের তৎসম শব্দ মিশ্রিত বাক্যাংশ শুনতো তারা। কেদে বালিশ না ভেজালেও হৃদয়ের গভীরে অশ্রু ঝরে যে তাদের খাবার হজম হতোনা তাই বা কে বলতে পারে।
তবে সকল বুয়ারাই যে হিটলারের জমজ বোন একথা আমি বলবোনা। অনেক বুয়ারাই আন্তরিকতার উচ্চ পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে আমাদের মনে চীর উচ্চ আসনে আধিষ্ট হয়। ঢাকা থাকাকালীন একবার তরকারীর বাটিতে মাংসের ন্যায় খাবারে মাছের হাড়ের মতো উপাদান থাকায় স্মৃতিচারণ করেও যখন খাবারের হেতু বুঝতে পারছিলাম না, তখন বুয়াই আমাকে কৃতার্থ করে জানিয়েছিলেন এটা খাসীর মাংসের মাথা উনি ব্যাক্তিগত স্টাইলে রান্না করেছেন। প্রাণ তেল কোম্পানির গোপন ব্রান্ড এম্বেসেডর ছিলেন উনি, যদিও সকল বুয়াকেই আমি তেল কোম্পানির সাথে গোপন চুক্তিতে লিপিবদ্ধ হতে দেখেছি, তবে উনি ছিলেন ব্যাতিক্রম, উনি ছিলেন প্রানের একান্ত ভক্ত। ঢাকার বুয়ারা যে দেশ চালায়, বুয়াদের সিন্ডিকেট না দেখলে তা আপনার বোধগম্যই হবেনা। বুয়াদের সাথে সুসম্পর্ক থাকলে আপনি সহজেই মেয়রের বাসার দুপুরের তরকারীতে ব্যবহৃত লবনের পরিমান জানতে পারবেন এবং ওই মূহর্তে কোন কাজে মেয়রের সমীপে যাওয়া উচিৎ কিংবা অনুচিত তাও নির্ণয় করতে পারবেন। শোনা যায় অনেক বুয়ারাই নাকি গ্রীন টি পরিবেশনকালীন মন্ত্রীদের দেশ চালানোর মতো গুরত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
মেসের বুয়াদের সাথে সদস্যদের সম্পর্ক হয় সচরাচর খালা মামা স্টাইলে, কালকে হলুদ বেশি দিছিলা, লবন কম দিও টাইপের। সুন্দরী বুয়াদের আবির্ভাব ঘটলে দৃশ্যপটের পরিবর্তন হয়, তখন অনেক সদস্যকেই নিজেদের রান্না বিষয়ক পিএইচডির থিসিস শেষ করার জন্য উঠেপড়ে লাগতে দেখা যায়। দেখা যায় বুয়ার সুচিন্তিত দিক নির্দেশনায় মেসের সদস্যরাই নিজ হাতে রান্না এগিয়ে নিচ্ছে।
আশাকরি বুঝতেই পারছেন, আমাদের সমাজে বুয়াদের প্রভাব কেমন। ঢাকা শহরের বুয়ারা স্ট্রাইক করলে বাংগালীর ওজন ২০% কমে যেতে বাধ্য। তাই বুয়াদের প্রতি আন্তরিক হোন, বুয়াদের এক্সপেরিমেন্ট রান্নাকে নিরুৎসাহিত করবেননা। রান্নায় গিনিপিগ হোন, মাংসের রেজালা কেনো মুলার চচ্চড়ির মতো লাগছে তা জিজ্ঞেস করে কারো সৃজনশীলতাকে বিনষ্ট করার মতো অবিবেচক হবেন না। হতে পারে আমাদের জেমি অলিভার, গর্ডন রামসেরা উঠে আসবে আপনার হেসেল থেকেই।
০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৩৩
সামায়েল লিনিথ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
২| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৫৯
কাছের-মানুষ বলেছেন: ঢাকা শহরে বুয়াদের দাপট ভাল। তবে এই সময়ে তারা মনে হয় খুব ভাল নেই, দরিদ্ররা এই পেশাটাতে আছে, কাজ না থাকলে এদের টিকা মুশকিল হয়ে যায়।
ভাল লিখেছেন।
০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:২৫
সামায়েল লিনিথ বলেছেন: হ্যা ভাই, এখন আশা করি সবাই ওনাদের মাসিক বেতনটা নিয়মিত রাখবেন
৩| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:১৩
ফেরদাউস আল আমিন বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন
৪| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৩২
নেওয়াজ আলি বলেছেন: আল্লাহ সবাইকে সহী সালামতে রাখো।
৫| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: বুয়া নাই এটা খুব বড় সমস্যা না। বুয়াকে আমরা অগ্রীম টাকা দিয়ে ছুটী দিয়েছি।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৩২
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আপনার জন্য শুভকামনা রইল।