নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের সাথে চলি, সময়ের কথা বলি।

সমালোচনা অপছন্দ করি না। ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করি। গঠনমুলক সমালোচনাকে ভালবাসি।

সময়ের কন্ঠ

সত্য বলা পছন্দ করি। অন্যের কাছ থেকে শিখতে চাই। ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করি।

সময়ের কন্ঠ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামের নামে সালাফীদের অপকর্ম: সিরিয়ায় সেক্সযুদ্ধ

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪১

জেহাদের নামে জঙ্গিদের গণহত্যা, বিস্ফোরণ, লড়াই, দাঙ্গা ও মৃত্যুমিছিল পরিচিত ঘটনা। কিন্তু সেক্স জেহাদের সঙ্গে পরিচিত ছিল না দুনিয়া। মধ্যপ্রাচ্য, মুসলিম দুনিয়া থেকে গোটা বিশ্বই স্তম্ভিত মুসলিম যুবতীদের সেক্স জেহাদের নামে। প্রথমে গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে প্রথমে বিশ্বাসই করতে চায়নি তিউনিসিয়া ও সিরিয়ার সরকার। গত কয়েক মাস ধরে নজরদারি চালিয়ে গোটা ব্যাপারটি জানা যায়।



সংবাদসংস্থা এএফপিকে তিউনিসিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লোতফি বেন জেদৌ জানিয়েছেন, তিউনিসিয়ার বিবাহবিচ্ছিন্না ও অবিবাহিত যুবতীরা সিরিয়ায় যাচ্ছে সেক্স জেহাদ ছড়িয়ে দিতে। এরা এটা করছে স্বেচ্ছায় এবং ইসলামের নামে। এর জন্য এরা কোনও পারিশ্রমিক বা উপহার নিচ্ছে না। এদের কেউ সিরিয়ার রণক্ষেত্রে যেতেও বাধ্য করছে না। ওখানে তাদের খাওয়া থাকার দায়িত্ব নিচ্ছে সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনী। তিউনিসিয়ার পার্লামেন্ট ন্যাশনাল কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে মন্ত্রী জেদৌ যা তথ্য দিয়েছেন তাতেই চক্ষু চড়কগাছ। জানা যাচ্ছে, রক্ষণশীল মুসলিম দেশ তিউনিসিয়া থেকে হাজারখানেকেরও বেশি যুবতী যাদের বেশিরভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪৫ এর মধ্যে এবং যারা একটু শিক্ষিত ও রাজনীতি সচেতন তারাই স্বেচ্ছায় সেক্স জেহাদ ছড়ানোর জন্য সিরিয়ায় যাচ্ছে। এরা কিন্তু সবাই যৌনকর্মীও নয়। অনেকেই আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীও। কেউ বা নার্স, কেউ বস্তিবাসী, বেসরকারি কর্মী।



মন্ত্রী জানিয়েছেন, সিরিয়ায় এরা বিদ্রোহীবাহিনীর সেনাদের সঙ্গে লাগামছাড়া যৌন সম্পর্ক করছে। একেকজন তিউনিস যুবতী এক টানা তিন চার মাস সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে থেকে এসে ২০, ৩০ থেকে ১০০ জন বিদ্রোহী সেনার শরীরের খিদে মেটাচ্ছে। এটাকে তিউনিস যুবতীরা নাম দিয়েছে 'জেহাদ অল নিকাহ' (আরবী ভাষায় অর্থ, যৌনতার জন্য পবিত্র যুদ্ধ)। শুধু তাই নয়, যেসব যুবতীরা এর মধ্যেই সিরিয়া থেকে ফিরে এসেছে তাদের ৯০ শতাংশই অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে ফিরে এসেছে। দুঃখের বিষয়, সিরিয়ার বিদ্রোহী সেনাদের ঔরসজাত ওই সন্তানদের দায়িত্ব পরবর্তীকালে তিউনিসিয়ার সরকারকেই নিতে হবে। অথচ সরকার ওই যুবতীদের সিরিয়া যাওয়ার গোপন ইচ্ছে তথা সেক্স জেহাদ রুখতে পারছে না। কারণ বৈধ ভিসা, পাসপোর্ট ছাড়াই ছদ্মবেশে ভূমধ্যসাগর দিয়ে সিরিয়া উপকূলে পৌঁছে যাচ্ছেন ওই তিউনিসিয়ান যুবতীরা। তারপর সোজাসুজি চলে যাচ্ছে যুদ্ধের ময়দানে। যেখানে শিবির করে রয়েছে বিদ্রেহী কাউন্সিলের যোদ্ধারা। সাঁজোয়া গাড়ি, ট্যাঙ্ক, মর্টারের গুদামের মধ্যেই চলছে অবাধযৌন জীবন।



মন্ত্রীর মতে, শুধু মাত্র আদর্শগত কারণেই ওই যুবতীরা উত্তর আফ্রিকার সুদূর তিউনিসিয়া থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে পশ্চিম এশিয়ার সিরিয়ায় পাড়ি দিচ্ছে। শুধু শরীরে সুখ বা যৌন বিনোদনের জন্য নয়। জেহাদের আদর্শ মাথায় রেখেই তারা যাচ্ছে জেহাদিদের রসদের জোগান দিতে। শারীরিক সম্পর্ক হল সেই রসদ বা বিনোদন যা যুদ্ধক্লান্ত সিরিয়ার বিদ্রোহীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে চাঙ্গা করে রাখবে। তাহলেই তারা সাফল্য পাবে প্রেসিডেন্ট বাশার অল আসাদের সরকারি সেনাদের বিরুদ্ধে।



কিন্তু বিদেশি ভূখণ্ডে বিদেশি সেনাদের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে কি লাভ? মন্ত্রী বা তিউনিসিয়া সরকারের কাছে সন্তোষজনক উত্তর না মিললেও জানা গিয়েছে, ইসলামের যোদ্ধাদের জন্য এইটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি তিউনিস যুবতীরা। এর সঙ্গে দেশপ্রেমের কোনও সম্পর্ক নেই। রয়েছে জেহাদ ও ইসলামের প্রতি দ্বিধাহীন আনুগত্য। কিন্তু ইসলাম কি এই ব্যাভিচার ও মেয়েদের বহুগামীতা অনুমোদন করে?



সরকারি ব্যাখ্যা না মিললেও তিউনিস যুবতীদের একটি সংগঠন জানিয়েছে, জিহাদ অল নিকাহ অনুসারে ইসলামে বিবাহ বহির্ভূত একাধিক যৌন সঙ্গী থাকাকে অনুমোদন করে। বিশ্বজুড়ে কট্টর মুসলিম সলাফিরাও এটাই সমর্থন করে। তিউনিস যুবতীরা ওই সালাফি মতবাদ মেনে চলে।



জেদৌ জানিয়েছেন, গত মার্চেই তিউনিসিয়ার সেনা ও পুলিশ ছয় হাজার তিউনিস যুবতীকে সিরিয়া যাওয়ার সময় পাকড়াও করে। এদের মধ্যে হাজারখানেক যুবতীকে জেলেও রাখা হয়। সবাইকে জেরা করে একটা বিষয় স্পষ্ট, কোনও নারী পাচার নয়। এরা সবাই স্বেচ্ছায় যাচ্ছিল। তিউনিসিয়া ও মিশরের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সরকারি নজরদারি সত্ত্বেও সিরিয়ার বিদ্রোহী সেনাদের প্রতি তিউনিস মেয়েদের সহানুভূতি ও আকর্ষণ কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, গত ১৫ বছরে অন্তত বিশ হাজার তিউনিস যুবক বিশ্বের নানা প্রান্তে আল কায়দা ও তালিবানের সঙ্গে যোগ দিয়েছে জেহাদে নিজেদের উৎসর্গ করবে বলে।



কিন্তু সলাফি কারা? সলাফি হল ওয়াহাবি দর্শন মেনে চলা সেই সব কট্টর সুন্নি ইসলামপন্থী লোকজন যারা শিয়া মুসলিম ও উদার মুসলিমদের মুসলমান বলেই মনে করে না। এরা গোটা পৃথিবীতে শরিয়তের শাসন কায়েম করতে চায়। এরা মনে করে কোরান-এর ব্যাখ্যা সঠিকভাবে তারাই দিতে পারে। আর কেউ নয়। এরা হাদিস ও শরিয়ত মেনে চলে। তরবারি ও অস্ত্রের জোরে গোটা মানব সভ্যতা ও দুনিয়াকেই এরা ইসলামের অনুগত করতে চায়। প্যান ইসলামিক সাম্রাজ্য বানানোই এদের একমাত্র লক্ষ্য। সলাফিরা বহুবিবাহ ও বহুগামীতাকে জেহাদের জন্য উচিত বলেই মনে করে। তিউনিস যুবতীরাও এই মতবাদেরই সমর্থক। প্রসঙ্গত, সিরিয়ার স্বৈরাচারী, দুর্নীতিগ্রস্ত ও বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট বাশার অল আসাদ ও তার পরিবারকে সিরিয়া থেকে উৎখাত করার জন্য লড়ছে সিরিয়ার বিদ্রোহী কাউন্সিল। গত আড়াই বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে সিরিয়ায় নিহত হয়েছেন দেড় লক্ষ মানুষ। জখম ও প্রতিবন্ধীর সংখ্যা কয়েক লক্ষ। পশ্চিম এশিয়ায় জ্বলন্ত নরক হয়ে ওঠা সিরিয়ায় এখন বহু স্বার্থের সংঘাত। বাশার আসাদ ও তাঁর সেনাকে সক্রিয় মদত দিচ্ছে রাশিয়া, চিন ও ইরান। অন্যদিকে, বিদ্রোহীদের মদত দিচ্ছে আমেরিকা, ফ্রান্স, আল কায়দাও। অতি সম্প্রতি রাশিয়া, চিনের কূটনৈতিক চাপে এবং ব্রিটেনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান তথা যুদ্ধ থেকে সরে আসেন ওবামা। ফলে হতোদ্যম হয়ে পড়ে বিদ্রোহীরা। যদিও বিদ্রোহীরা সাফ জানিয়েছে, কোনও আপসের ফর্মুলায় নয়। রাশিয়া যতই রুখে দেওয়ার চেষ্টা করুক আসাদকে উৎখাত তারা করবেই। তবে যুদ্ধ এড়িয়েও স্বস্তিতে নেই আসাদ। জঙ্গি হামলা, গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে সিরিয়ায় শান্তি এখন সুদূরপরাহত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.