![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম পর্বঃ https://goo.gl/eolvCg
দ্বিতীয় পর্বঃ https://goo.gl/nR0flq
এরপর ড. আজাদ একটা ভুল তথ্য দিয়েছেন, [৮৬]
“পুরানো বাইবেল-এ আছে হিব্রুসৃষ্টিতত্ত্ব। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা পৃথিবীর তিনটি প্রধান ধর্ম বিশ্বাস করে এ সৃষ্টিতত্ত্বে; অর্থাৎ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ মানে এবং বিভ্রান্ত হয় এটি দিয়ে”।
নাহ, বাইবেলের বিশ্বসৃষ্টির বর্ণনা এবং কুরআনের বিশ্বসৃষ্টির বর্ণনা এক নয়। তিনি রেফারেন্স দেন নাই। আমি রেফারেন্স দিচ্ছি, বাইবেলে বুক অব জেনেসিসের এক নম্বর অধ্যায়ের ১ নম্বর পরিচ্ছেদের ১ থেকে ৩০ নম্বর ভার্স পর্যন্ত বিশ্বসৃষ্টির বর্ণনা আছে। আর কুরআনের আয়াতে আম্বিয়া- ২১, ৩৩ তারিক- ১১, ৩৬:৩৮, ৩১:৩৯, ২১:৩৩, ১৩:২, ৩৬:৪০, ৩৫:১৩, ৩১:২৯, ২১:৩৩, ৫৩:২৮, ৭১:১৬, ২৫:৬১ আয়াতে বিশ্বসৃষ্টির বর্ণনা আছে। দুইটা পড়ে মিলিয়ে দেখেন বর্ণনা এক কিনা।
এরপর ড. আজাদ কয়েক পেজ ধরে প্রাচীন সভ্যতাগুলো ধারণাগুলো বিশ্বাস করতো তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
যেমনঃ ইহুদি [৮৯]
“শিওল নামেও আছে একটি ইহুদি মৃত্যুলোক, যেটি একান্তভাবেই হিব্রু বা ইহুদি। হিব্রুরা জেহেন্না ধারনাটি ধার করেছিলো আক্কাদীয় জি-উমুনা থেকে”।
ইরান- [৮৭]
“ইরানি বা জুরথুস্ত্রি সৃষ্টিতত্ত্বে আহুর মাজদা বা ওরমুজদ স্রষ্টা ও শুভশক্তি। সে সৃষ্টি করেছে সব কিছু”।
ভারত- [৮৭]
“পুরাণে একটি প্রধান কল্পনা হচ্ছে স্বর্গ ও নরকঃ মৃত্যুর পর পুন্যবানদের জন্য পুরস্কার ও পাপীদের জন্যে শাস্তির এলাকা”।
ইরাক- [৮৮]
“এরিসিয় বা ব্যাবিলনি পুরাণে মৃতরা থাকে শুন্যতা ও ঘোরে পরিপূর্ণ এক এলাকা, যেখান থেকে কোনো প্রত্যাবর্তন নেই। কাদা আর ধুলো তার অধিবাসীদের খাদ্য, অন্ধকার উত্তারিধিকার”।
তিনি এদের বিভিন্ন বিশ্বাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন সব সভ্যতাতেই স্বর্গ-নরকের মোটামুটি একই ধারনা ছিলো। এই পয়েন্ট বলে ড. আজাদ নিজের মতের বিপরীত পক্ষকে সুবিধা করে দিয়েছেন। এখন প্রাচীনকালে ভারত, মিশর, গ্রিস, ইরাক, ইরানে পৃথিবীর চার প্রান্তে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো তাদের মৌলিক জায়গা অর্থাৎ বিশ্বাসের জায়গায় এই মিলটা কিভাবে হল? এর উত্তর হতে পারে দুইটা। এক- তারা বিশ্বাস আদান-প্রাদান করেছে। এই উত্তরটা একাডেমিকালি দুর্বল। কারন প্রাচীন ভারতীয়, ইরানি, ব্যবলিয়নি বা মিশরের সভ্যতা ধর্মের ব্যাপারে বেশ রক্ষণশীল ছিল। সে সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা এত ভাল ছিল না। উত্তর দুই- তাদের বিশ্বাসের উৎস ছিল একই। এই উত্তরটা একাডেমিকালি বেশ সবল। বর্তমান জ্ঞান শাখার একটি প্রধান শাখা ভাষাবিজ্ঞান [হুমায়ুন আজাদের বিষয়]। এই ভাষাবিজ্ঞানের একটি প্রধান ভাগ হল ঐতিহাসিক এবং তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান। ঐতিহাসিক এবং তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের জন্ম এবং টিকেই আছে এই ধারনার উপর ভিত্তি করে। উইলিয়াম জোন্স ১৭৮৪ সালে কোলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটিতে একটা বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, গ্রিক, ল্যাটিন এবং সংস্কৃত ভাষার শব্দগুলোর মধ্যে মিল পাওয়া যায়। কারন, সম্ভবত এই ভাষাগুলো একটি ভাষা থেকে উদ্ভূত। এরপরই ভাষাবিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেন এবং উইলিয়াম জোন্সের মত মেনে নেন। উদ্ভব হয় ঐতিহাসিক এবং তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের। ঠিক একই ভাবে ভারতীয়, ইরানি, ব্যবলিয়নি বা মিশরের সভ্যতার স্বর্গ-নরকের ধারনা মিলে গেছে, উৎস এক। ইসলামি থিওলজি এটাকে ব্যখ্যাকরে এভাবে, আল্লাহ প্রতিটা জাতির কাছেই নবী/রাসূল পাঠিয়েছেন। কালক্রমে সেই শিক্ষায় বিকৃতি ঘটে। আমরা জানি একটা ধারনা যতই বিকৃত হোক, কিছু হলেও সে ধরনার অংশ টিকে থাকে। অর্থাৎ ইসলামের অবস্থান তাদের বিশ্বাসের উৎস ছিল এটি একাডেমিকালি বেশি সবল।
এই সভ্যতাগুলোর ভুল নিয়ে ড. আজাদ বিস্তর আলোচনা করেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা সময় নষ্ট, কারন এই সভ্যতার কুসংস্কারগুলো এখন স্কুল পাশ করা বাচ্চারাও জানে।
#চলবে
[লেখার কোন স্বত্ব নেই। কারটেসি না দিয়েও নিজের টাইম লাইনে শেয়ার করতে পারেন।]
©somewhere in net ltd.