![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘আত্মজীবনী’ বইটিতে মুফতি মুহাম্মদ আবদুস সালাম চাটগামী রহিমাহুল্লাহর হৃদয়ছোঁয়া বাক্যবাণ অন্তরে এক বিচিত্র অনুভূতির ঢেউ তুলে। বইটি পড়ার সময় ক্ষণে ক্ষণে মনে হয়েছে যেন, তিনি নিজে বইয়ের পাতায় চড়ে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন, সেই সোনালি সময়ের ভাঁজে ভাঁজে। আর অজস্র শব্দের সিঁড়ি বেয়ে আমি যেন পৌঁছে যাচ্ছি টুকরো টুকরো স্মৃতির অন্দরমহলে।
◈ মলাটের ভাঁজে :
বইয়ের প্রারম্ভে মাওলানা ইসমাইল রেহান হাফিজাহুল্লাহর মূল্যবান অভিমত⸺পড়ার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দেয়। লেখক স্মৃতির সিন্ধু থেকে বিন্দু বিন্দু করে তুলে ধরেছেন নিজের জন্ম, বংশপরিচয়, পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে শিক্ষা ও কর্মজীবনের গল্প। যেন তাঁর হৃদয়ের অব্যক্ত কথামালা বিমূর্ত হয়ে ঝরে পড়েছে কাগজের বুকে। জ্ঞান লাভের জন্য লেখকের অদম্য স্পৃহা, পিতৃতুল্য উস্তাদগণ ও স্নেহাস্পদ ছাত্রদের সাথে সুমধুর হৃদ্যতার নিখুঁত চিত্র ফুটে উঠেছে বইটির পরতে পরতে।
আলিমদের সান্নিধ্যস্পর্শে জীবন যে হয়ে উঠে পুষ্পের মতো কোমল, সদ্যফোটা পাপড়ির মতো সুন্দর, তা এই মূল্যবান বইটি পড়ে আমি ভীষণ উপলব্ধি করতে পেরেছি। আরও বুঝতে পেরেছি যে, বিভিন্ন মাসয়ালাকে কেন্দ্র করে আলেমসমাজে চলা মতানৈক্য মূলত মনোমালিন্য নয়; বরং সেগুলো চলার পথকে আরও সহজ করে দেয়। বইটিতে উল্লিখিত মুফতি ওয়ালি হাসান টুংকি রহিমাহুল্লাহর ফতোয়া প্রদানে দৃঢ়চেতা মনোভাব আর আল্লামা ইউসুফ বানুরি রহিমাহুল্লাহর নানা কাজে দৃপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণের শিক্ষাগুলো খুবই উপকারী।
২৮৮ পৃষ্ঠায় সাজানো এই স্বর্ণকণিকায় উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইলমি অঙ্গনের পরিস্থিতি। তৎকালীন পাকিস্তানের আলিমগণ যে মজলুম বাঙালিদের পক্ষেই ছিল, এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় মুফতি সাহেবের জবানিতে। আত্মজীবনীতে আরও আছে লেখকের দাম্পত্য জীবন, আত্মশুদ্ধি অর্জন, ইজাজত লাভ ও হেজাজ সফরের সুখস্মৃতিসহ অসংখ্য কাহিনি। যেন ধুলোপড়া স্মৃতির ঢল নেমেছে কালির বিন্দুতে!
◈ কেন পড়বেন এই স্মরণিকা :
মুফতি মুহাম্মদ আবদুস সালাম চাটগামী রহিমাহুল্লাহ তাঁর আত্মজীবনীকে কেবল ব্যক্তিগত বেষ্টনীতে আবদ্ধ রাখেননি। বরং যাপিত জীবনের স্মৃতিময় আখ্যানের সাথে তুলে ধরেছেন সমকালীন রাজনৈতিক, সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপট। বর্তমানে আলেম উলামাদের উপর গণতান্ত্রিক ধারার যে অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ চলছে, তাও তিনি সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরেছেন বইটিতে। এই পরিস্থিতিতে বাতলে দিয়েছেন আমাদের জন্য করণীয় পন্থা। ফলে আলোচ্য গ্রন্থটি হয়ে উঠেছে সকলের জন্যই অবশ্যপাঠ্য ও উপকারী।
মুফতি সাহেব নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেছেন বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থা। বিশেষকরে কওমি শিক্ষার ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত কার্যকরী কিছু উপদেশ দিয়েছেন, যা খুবই সময়োপযোগী। প্রচলিত পুঁজিবাদী ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও ইসলামি অর্থনীতির মধ্যে যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে সে বিষয়টিও উঠে এসেছে তাঁর আত্মকথনে। মোটকথা, লেখকের বস্তুনিষ্ঠ কথাগুলো সব শ্রেণীর পাঠককেই কোনো না কোনোভাবে উপকৃত করবেই ইনশাআল্লাহ।
মুহারেব মুহাম্মাদের আঁকা প্রচ্ছদে যেন একটি স্বর্ণোজ্জ্বল জীবনের জলছবি ফুটে উঠেছে। সামঞ্জস্য শিরোনাম আর ঝরা পালক যেন সে কথাই বলছে। পৃষ্ঠা বিন্যাস, বানান সজ্জা ও প্রোডাকশন কোয়ালিটিতে ইত্তিহাদ পাবলিকেশন দারুণ দক্ষতা দেখিয়েছে। সেইসাথে মুফতিয়ে আজমের মুখনিঃসৃত কথামালা⸺অনুলেখক যুবাঈর আহমাদের কলমের ছোঁয়ায় অত্যন্ত মোহনীয় রূপে ধরা দিয়েছে। আর এত নিখুঁত সম্পাদনার বই সচরাচর কমই দেখা যায়।
উম্মাহর পুনর্জাগরণ ও ইসলামের সুবর্ণ সুদিন ফিরিয়ে আনতে পূর্বসূরিদের জীবনচরিত জানা ও সে অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তুলা একান্ত অপরিহার্য। আর সেলক্ষ্যে ‘আত্মজীবনী’ বইটিতে খোঁজে পাওয়া যাবে কিছু বাস্তব শিক্ষা ও মূল্যবান নসিহত। জানতে হলে পাঠককে নিমগ্ন হতে হবে বইটির পাতায় পাতায়।
◈ একপলকে বইটি⸺
বইয়ের নাম : আত্মজীবনী
লেখকের নাম : মুফতি মুহাম্মদ আবদুস সালাম চাটগামী রহিমাহুল্লাহ
প্রকাশনা স্বত্ব : ইত্তিহাদ পাবলিকেশন
কভারের ধরণ : হার্ড কভার
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২৮৮
মুদ্রিত মূল্য : ৫০০ টাকা
©somewhere in net ltd.