নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১১ টি। (৮টি কবিতার বই, ২টি উপন্যাস ও একটি ছোটগল্পের বই।)

সানাউল্লাহ সাগর

সৃজনশীল লেখালেখি, গবেষণা ও সম্পাদনা

সানাউল্লাহ সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক উপন্যাস ।। ‘গুহা’ প্রথম পর্ব ।। সানাউল্লাহ সাগর

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৪০



এক

বৃহস্পতিবার
১১ মার্চ ২০১০
দুপুর দুইটা সাতত্রিশ
ক্লাব রোড
পটুয়াখালি।

হ্যালো শুভ্র...
শুনছো?
ক’দিন থেকে তোমার ফোন বন্ধ। ফেইসবুকেও পাচ্ছি না। ছ্যাঁকা খেয়ে চুপ করে আছো কিনা বুঝতে পারছি না। যতোদূর জানি—অনেক দিন থেকেই তোমার একটা ছ্যাঁকা খাওয়ার প্রক্রিয়া চলতেছিলো। সেই ছ্যাঁকার আগুন কি দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো? যে আগুনে পুড়ে তুমি একদম চুপসে গেছো। অনেক বচ্ছর কোনো চিঠি লিখি না। এখন কেউ আর চিঠি লিখে না। যদি কেউ লিখেও থাকে—তো সেটা পড়ার মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। তাছাড়া চিঠি লিখতে হলে কাগজ-কলম নিয়ে নিরিবিলি বসতে হবে। দখিনের খোলা জানালায় উদাস হয়ে তাকিয়ে ভাব আনতে হবে। তারপর চিঠি লিখতে হবে। আমার মধ্যে অনেক দিন থেকেই এরকম ভাবের অভাব। ভাব আনার জন্য পরিশ্রম করতে হবে। সময় বিনিয়োগ করতে হবে। তা আমি পারবো না। সে রকম সময় আমার হাতে নাই মনু!
সকালে উঠে সতী-সাবিত্রি স্ত্রীদের মতো ঘরকন্যা করতে হয়না। কিন্তু তিনটা বাচ্চার খোঁজ খবর ঠিক মতো নিতে হয়। তার উপর ছোট বাচ্চাটার ক’দিন থেকেই শরীরটা খুব খারাপ। তুমি হয়তো মনে মনে হাসছো। মেয়েদের প্রতি হঠাৎ করে আমি এতো মনোযোগী হলাম কবে থেকে! আমার প্রতি তোমার এমন ধারণা থাকলে সেটা ভুল। আমি শুরু থেকে সংসারের প্রতি মনোযোগী। বাচ্চা হওয়ার পর তাদের প্রতি অনেক যত্নবান। নিজে না পারলেও কাজের মহিলাকে দিয়ে ওদের শতভাগ খেয়াল রাখার ব্যবস্থা করি।
সংসারে আমার তেমন কোনো কাজ নাই এ কথা অনেকাংশেই ঠিক। কিন্তু সব সময়ই আমার ব্যস্ত থাকতে হয়। সরকারি চাকুরী করি বলে তুমি প্রথমে যেমন ভাবতে আমি খুব ফাঁকিবাজ। সে ভুল তো তোমার ভেঙেছে। একথা ঠিক যে—সরকারি অনেক দপ্তরের লোকজনই অফিস-বাড়ি করেই দিন কাটায়। কাজের কাজ তেমন কিছুই করে না। কিন্তু আমার অফিস টাইমে লাঞ্চের পর একটু সময় ছাড়া সারাদিনই খুব ব্যস্ত থাকতে হয়। আর এই যে তোমাকে লিখছি। সেটাও লাঞ্চব্রেকের সুযোগ ব্যবহার করে। জানি না কতোটুকু সময় ফ্রি থাকবো। যাই হোক শোনো গুল্লু গুল্লু! কি লাগলো নাকি আবার? আমি গুল্লু বললেই তো তোমার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। যদিও তোমার চোখ মুখ পাল্টানো পর্যন্তই। আমাকে তো কখনো কঠিন করে কিছু বলতে পারো না। সে কি আমার রূপের জন্য? না তথা কথিত অভিজাত সমাজের প্রতিনিধি বলে? আমাকে তুমি খুব সম্মান দেখিয়ে চুপ থাকো—তা কিন্তু আমার কখনোই মনে হয় না। কারণ আমি জানি ভয় পাওয়ার মতো ছেলে তুমি না। সেটা পরিচয়ের দ্বিতীয় দিনই বুঝে গিয়েছিলাম। তা না হলে নিজের থেকে প্রায় দশ বছর বড় কোনো মহিলাকে কেউ হুট করে ‘তুমি’ বলে সম্মোধন করতে পারে! তাও আবার আমার মতো বাইরে হুট টেনে চলা মহিলাকে।

সরি। একটা ফোন এসেছিলো। সে জন্য অনেকক্ষণ লিখতে পারলাম না। আসলে ফোন এসে মনের মধ্যে আবার অন্য একটা চিন্তা ভর করেছিলো। যখন কোনো কাজ নিয়ে মগ্ন থাকি তখনই দেখা যায় এমন কেউ ফোন দিয়েছে যার সাথে আসলে কথা বলতে চাচ্ছি না। কিন্তু রেখে দিতেও পারি না। তারপর বাধ্য হয়ে যতক্ষণ না সে ফোন রাখে ততক্ষণ হুম-হ্যাঁ করে সময় পার করতে হয়। কারো কারো সাথে অনেক মন খারাপ থাকলেও মুখ হাসিহাসি করে কথা বলতে হয়। এই যে একটু আগে ফোন এলো—ভদ্রলোকের বোঝা উচিত ছিলো যে আমি এখন তার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না। কিন্তু মনে হচ্ছে না সে কিচ্ছু বুঝতে পেরেছে। বরং আমি বিরক্ত হই কিংবা না হই তিনি যে কথা বলতে পেরেছেন তাতেই তিনি খুশি। এই ভদ্রলোক সম্পর্কে তুমি জানো। তোমাকে অনেক দিন তার কথা গল্প করেছি। বেচারা! আমাকে খুউব পছন্দ করে। আমি তাকে একবারেই পছন্দ করি না সে কথাও বলছি না। সে কথা বললে তুমি বলবে—পছন্দ না করলে কথা বলি কেনো! মাঝে মাঝে যখন মন খারাপ থাকে তখন তার সাথে কথা বলি। আরো দু একজনের সাথে বলি। এটাই আমার জন্য কাল হয়েছে। সে ধরেই নিয়েছে আমি তাকে পাত্তা দেই মানে তার প্রতি আমার অনেক আগ্রহ আছে। এই ব্যবসায়ী পটুয়াখালীর নামী মানুষদের একজন। কিন্তু বুঝি না পঞ্চাশ পার করা একটা লোক আমার কাছে কি খোঁজে! ওই যে তুমি বলো ‘পুরুষ পঞ্চাশ পার করে তাদের ফুরানোপ্রায় পুরুষত্ব ফলানের জন্য পাগল হয়ে যায়। মেয়েদের ব্যাপারে তাদের চিন্তায় তখন একটা পরিবর্তন আসে।’ আমিও ভেবে দেখেছি তা না হলে তার মতো পঞ্চাশ ডিঙানো একজন পুরুষের আমাকে ফোন দিয়ে মজা পাওয়ার কথা না। আমি তো রসিয়ে কথা বলি না। এ নিয়েও তো তোমার কম কটাক্ষ সহ্য করিনি। তুমি বলো—আমার মধ্যে নাকি একটা পুরুষালি ভাব আছে। কি জানি! তাহলে আমার সেই পুরুষালি ভাবের মধ্যে এতো পুরুষ তাহলে হোঁচট খায় কেনো? এসব প্রশ্নের উত্তর তুমি রেডি করেই রেখে দাও। বলে দিবে ‘আরে খাবে না, তোমার যে একখান শরীর আছে। আর চাকুরীটাও একটা বড় ফ্যাক্ট। অনেক মানুষই মনে করে একটু অভিজাত কারো সাথে রিলেশন থাকা মানে নিজেও অভিজাত হয়ে যাওয়া। মানে তারাও তোমাকে ধরে অভিজাত হতে চায়। তার থেকেও বড় কথা তোমাকে লাগাইতে চায়।’ বলেই হাহাহা করে হাসতে পারো। আমিও হাসি। কারণ আমিও জানি আমার পিছনে যারা ঘুরঘুর করে তাদের অধিকাংশই আমাকে বিছানায় পাওয়ার জন্য।

রাত পৌণে একটা। চোখে ঘুম নেই—
সুখি মানুষদের নাকি ভালো ঘুম হয়। তোমার ধারণা কি! আমি খুব সুখি মানুষ? আমার মনে হয় তুমি আমাকে অনেকটাই বুঝতে পারো। কিন্তু তুমি আমাকে সুখি ভাবো এটা বলে আমাকে সান্তনা দিতে চাও। কারণ তুমি যখন আমাকে সান্তনা দিতে চেষ্টা করো তখন আমি ফোনের অপর প্রান্তে থেকেও তোমার মুখটা দেখতে পাই। ওহ তখন আর লিখতে পারিনি। আর বলো না কর্মকর্তা হওয়ারও একটা সমস্যা আছে। সাথে একটু দেখতে শুনতে ভালো হলে তো আরো অনেক সমস্যা। এক ক্লাইন্ট এসে বসেছে তো বসেছেই ওঠার আর নাম নাই। একবার ভাবছিলাম জানতে চাই—ভাই আপনার কোনো কাজ নাই? কিন্তু পারলাম না। সে এই শহরের ক্ষমতাবান আর ধনীলোকদের একজন। বয়স ষাটের কাছাকাছি। কিন্তু মেয়ে দেখলেই যেন লোল পড়ে। আমার বসের সাথে তার খুব খাতির। অফিসে মাসে দু একবার আসে। আমার রুমে ঢুকলে তিন কাপ চা খাওয়া হয়ে যায় সে বসে থাকে। যারা আমার কাছে আসে তাদের মধ্যে পরিচিত কাউকে পেলে তার সাথেই গল্প করতে থাকে। আমি কাজে মনযোগ দিতে পারি না। মনে মনে গজগজ করতে থাকি। কিন্তু কিচ্ছু বলতে পারি না।
কি শুনছো তো?
না আবার ঘুমিয়ে পড়েছো?
জীবনে তো কম ঘুমাইলা না। এবার একটু হাত-পা ছেড়ে দাঁড়াও। এরকম করে তো আর জীবনটা চলবে না। জীবনটা এতো সহজ না মনু। আর তোমাকে আমি কি বোঝাবো বলো! বরং আমি মাঝে মাঝে অবাক হই। তোমার মতো পিচ্চি একটা ছেলে! বিভিন্ন বিষয়কে কত্তো সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করো। আমি হা করে তোমার কথা শুনতে থাকি। ফোনের অপর প্রান্তে থাকি বলে তুমি আমার হা করা মুখটা দেখতে পাও না। সামনে থাকলে বুঝতে পারতে। তুমি যখন কোনো জটিল বিষয় নিয়ে খুব সহজ করে কথা বলো তখন আমার মুখে কতো বিস্ময় খেলা করে। একটু দাঁড়াও তো। আমার বরের রুমে এত্তো রাতে বাতি জ¦লছে কেনো দেখে আসি। সে তো ঘুমরাজা। কাল শুক্রবার। অফিস নেই। সরি এখন তো রাত বারোটা পার হয়ে গেছে! আজই শুক্রবার। অন্য কেউ হলে এই সময়টা তাদের ন্যুট প্র্যাকটিসে কাটতো। দেখো আমার ভাগ্য কত্তো ভালো! ...এগুলো তো নতুন করে তোমাকে বলার কিছু নেই। বিয়ের এই নয় বছরে সব হিসেব করে বলে দিতে পারি আমি। এই ধরো উনত্রিশ থেকে একত্রিশ! না না ঊনত্রিশ বার ফিক্সড! আমার হিসেবে কোনো ভুল নেই। আমার মনে হয় এই হিসেবটা আমার জামাইও করে।

আহা বেচারা! মেজো মেয়েটা ঘুমের মধ্যে কাঁদছিলো। তাই সে বাতি জ্বালিয়ে সান্তনা দিচ্ছিলো তাকে। আমি যে জেগে আছি তা বুঝতে পারেনি। ভেবেছে ঘুমাচ্ছি। তাই আমাকে না ডেকে নিজেই বাচ্চাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলো। আমি বাঁকা চোখে অলির চোখের দিকে কয়েকবার তাকালাম। দেখি তার চোখে কোনো আহবান আছে কিনা। কিন্তু তার চোখ একেবারেই নিস্পৃহ। কি করবো বলো তো? জোর করে একদিন অলিকে ধর্ষণ করলে কেমন হয়? তখন তো আবার তোমাদের পুরুষত্বে লাগবে। তুমিও শুনে বলবে ‘তুমি ? শেষ পর্যন্ত জামাইকে ধর্ষণ! এতো আগুন তো ...’
আগুন থাকবে না কেনো? আমাকে দেখলে কি মনে হয়? আমি ফুরিয়ে গেছি! বিয়ের পরপর প্রায় রাতেই কান্না পেতো। এখন আর কাঁদি না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে...। যাক বাদ দাও। এই যে টেবিল লাইট জ্বালিয়ে লুকিয়ে তোমাকে লিখছি। এটাও যদি দেখতো তখন দেখতে পেতে শালার পুরুষত্ব! ছয়মাসে একবার চোদার মুরোদ নাই। বউ অন্য কারো কাছে লিখছে বা কথা বলছে তাতে তার পুরুষত্ব বেড়ে যাবে। যত্তোসব পুরুষত্ব। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। এখন তো তুমি বলবে আমি নারীবাদী। আরে নারীবাদী হওয়ার কি আছে! আমি কি জ¦ড় পদার্থ? আমার কোনো চাহিদা নেই! আমার কি কোনো চুলকানি নেই? তোমার বদলে যাওয়া মুখটা আমি দেখতে পাচ্ছি। অন্যদের সাথে তোমার এটাই পার্থক্য। এই জন্যই তোমাকে পছন্দ করি। তোমার কাছে সহজ হতে পারি। আরে হাসছো কেনো! হাসলে তোমাকে বোকা বোকা লাগে। বয়সটাও কমে যায়। তোমার প্রেমিকা কখনো বলেনি? আর বলবেই বা কেনো! প্রেমিকারা তো সবসময় প্রশংসা করে ফুলিয়ে রাখে। তাকে যাতে পছন্দ করে সে জন্য। তুমিও নিশ্চয়ই তোমার সাবেক প্রেমিকাকে প্রশংসা করে আকাশে উঠিয়ে দিতা?
শোনো—আমার মুখে এইসব ‘চোদাচোদি’র শব্দ তো নতুন শুনছো না। সেই জন্যই তোমার মুখ বাঁকা না হয়ে এখনো সোজা হয়ে আছে। প্রথম যে দিন শাহবাগে তোমার সাথে ‘চ’ বর্গীয় কথা বলেছিলাম সে দিন তোমার মুখ বাঁকা হয়েছিলো কিনা খেয়াল করিনি। হয়তো হয়েছিলো। না হলেও মনে মনে তো অবশ্যই অবাক হয়েছিলে। নাকি সেদিনও হওনি! যাই বলো একমাত্র তোমার সাথেই ইজিভাবে কথা বলতে পারি। তুমি সহজভাবে নিতে পারো। আর তোমার চোখেও কোনো লালা দেখি না। কিন্তু আমিও জানি তোমার সাথে যদি বেড শেয়ার করতাম তখন তোমার চোখ আর এখনকার মতো থাকতো না। তুমিও তখন আমার দিকে বেশ্যাদের দিকে যেমন করে মানুষ তাকায় তেমন করে তাকাতে।
আরে বাল চোদার সময় তো কোনো অভিধান-ব্যাকরণ মেনে চোদে না কেউ। তো বলার সময় মুখে এতো ঠুঁই কেনো ? কিন্তু ঠুঁই তো তুমিও দাও। আমিও দেই। কারণে-অকারণে গালি দিতে মনে চাইলেও দিতে পারি না। ওহ তোমাকে বলতে ভুলে গেছি—গত সোমবার আমার নামে একটা কুরিয়ার এসেছে। প্রেরকের নাম ‘মধু’। সাথে একটা ফোন নম্বর দেওয়া আছে। সেটা দেখলাম বন্ধ। এসব নিয়ে আমি ভাবি না। যে পাঠায় পাঠাক। কিন্তু কি পাঠিয়েছে সেটা শুনলে তোমার হাসি পাবে। নয়টা প্যান্টি। বিভিন্ন রঙের। অদ্ভূত ব্যাপার কি জানো? গত রোববার আমার নবম বিবাহ বার্ষিকী ছিলো। তুমি হয়তো হাসছো আর ভাবছো—এটা নিশ্চয়ই আমার কোনো পাগল প্রেমিকের কাজ। কিন্তু বিলিভ মি—আমার এমন কোনো পাগল প্রেমিক নেই। ভাবো একবার শালায় কি বেয়াক্কেল। এই কুরিয়ারের কথা যদি আমার জামাই একবার জানতে পারে তো আমাকে খুন করে ফেলবে না বলো? খুন না করলেও নতুন করে আবার একটা অশান্তি তো শুরু হবে। আমি যে ভোদার মুখে প্লাষ্টার করে রেখেছি সেটা তো তখন ওকে কিছুতেই বুঝানো যাবে না। সে ভাববে আমি সারা দেশে চুদিয়ে বেড়াই। আরে গাধা’স সেই কপাল কি আমার আছে! আমার সেক্সি মেয়ের কপালে থাকলে কি তোর মতো বাজা জামাই জোটে?
কিন্তু কিছুই বলি না। সে সবসময় একটা গম্ভীর ভাব নিয়ে থাকে। আমি যেন তার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথা না বলতে চাই। আমি যে সেটা বুঝি তাও হয়তো সে বোঝে। তারপরও আমি তার সাথে যত কম কথা বলি ততই সে খুশি। মাথাটা আবার গরম হয়ে গেলো। তুমি একটা কাজ করো—এখন আর আমার এই চিঠি পড়ার দরকার নাই। কোনো কাজ থাকলে কাজ করো। না হয় তোমারও মাথা গরম হয়ে যেতে পারে! কাজ-টাজ সেরে আবার ভালো মুড নিয়ে পড়া শুরু করবা। আর কোনো কাজ না থাকলে বসে বসে কিছুক্ষণ থ্রি এক্স দেখো। এটা তো তোমার খুব ফেবারিট! তোমার এই একটা বিষয় নিয়ে আমি অবাক। তোমার মতো একটা ম্যাচিউরড ছেলে কেনো এতো থ্রি এক্স দেখবে! আরে করতে ইচ্ছে করে তো—কর ব্যাটা। এই বালছাল দেখে দেখে হাত মারার কোনো মানে আছে! তাও তোমার মতো একটা হ্যান্ডসাম ছেলে। যার এই যুগে এক ডজন প্রেমিকা থাকার কথা। কিন্তু একটাও নাই। হেসোও না বলদ। বললাম তো হাসলে তোমাকে বলদ বলদ লাগে। তখন তোমার নাকটা চেপে ধরতে ইচ্ছে করে। ভাবছো আমি তোমার সাথে প্রেমিকার মতো আচরণ করছি কেনো? হয়তো করছি। মাঝে মাঝে মনে হয় তোমার সাথে প্রেম করবো। কিন্তু সেই ইমোশন আর থাকে না। কাজে বিজি হয়ে পড়লে আবার ভুলে যাই।
তোমার সাথে আমার প্রেম হলে এক মাসের মাথায়ই সেক্স হয়ে যাবে। তুমি ছাড়বে না। তারপর তিন-চার মাসের মাথায়ই এই মধুরতর রিলেশনটা ভেঙে যাবে। কারণ তোমাদের পুরুষের স্বভাবই খালি খাইখাই করার। তখন তুমি নিয়মিত আমার শরীর চাইবে। প্রেমটেম কিচ্ছু থাকবে না। থাকবে খালি শরীর। ঠিক সেই সময় আমি তোমাকে ঘৃণা করা শুরু করবো।
চিঠি পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়লে এক কাপ চা খেতে পারো। নিজেতো বানাতে পারো না। বাসার নিচে কোনো চায়ের দোকান আছে? থাকলে এখনই চলে যাও। ওহ সরি। তোমাকে তো বলেছি রাত বারোটার পর চিঠি পড়তে বসবে। এখন তো নিচে দোকান খোলা থাকার কথা না। আর যদি খোলা থাকে তো চা খেয়ে আসো। আমার বকবক শুনতে শুনতে মাথা হ্যাঙ হয়ে গেছে হয়তো ! চা খেলে ঠিক হয়ে যাবে। এতো রাতে কে যেনো আবার ফোন দিচ্ছে। ও চিনতে পেরেছি। নাম বললে তুমিও চিনবে। সেই সাহিত্য সম্পাদক। আরে বাল যা বলার সোজাসোজি বলবি। এতো প্যাঁচাপ্যাঁচি কেনো! আর সে তো জানে আমি বিবাহিত। বাচ্চা আছে। কোন্ সাহসে এতো রাতে ফোন দেয় বলো তো। কি দেখে যে এইসব ইছড়েপাকা ছোকড়াদের সাহিত্য সম্পাদক বানায়। এরা হলো লুচ্চার টিচার। তোমার গায়ে লাগছে নাতো! তোমার এক বন্ধুওতো সাহিত্য সম্পাদক। এ সম্পাদকও তোমার পরিচিত। হয়তো এতোক্ষণে চিনেও ফেলেছো। আমি জানি সে কখনো আমাকে সোজা করে কিচ্ছু বলবার সাহস পাবে না। ফোনটা ব্যাক করবো? না থাক। তুমি আবার ক্ষ্যাপে যাবে।
আচ্ছা তুমি আবার আমাকে নিয়ে মনে মনে কলা খাও নাতো? তুমি আমার প্রেমে পড়তে যেও না। যদি পড়ো তো সরাসরি বলো। হাসছো! হাসো হাসো। না হাসিও না হাবা বালক...
তুমি আমার অনেক কথাই বিশ্বাস করো না। অথচ বিশ্বাস করো তোমার সাথে আমি তেমন কোনো মিথ্যা বলি না। মানুষ কি মিথ্যা না বলে থাকতে পারে? পারে না। আমিও পারি না। তবে খুব বিপদে না পড়লে মিথ্যা বলি না আমি। এই যে ধরো তোমার কাছে কতো কথা বলি। সব কি সত্য বলা সম্ভব? হয়তো চেষ্টা করি। কিন্তু যে কথা লুকাতে পারি না। তোমার পীড়াপিড়িতে বলতেই হয়। সেই কথা শেষ পর্যন্ত মিথ্যা করেই বলি। শোনো গুল্লু গুল্লু—আমার মনে হয় কি জানো? তোমার আর প্রেমটেম কিচ্ছু হবে না। তার চেয়ে শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে ফেলো। এই যে হইচই করো। যাদের নিয়ে ঘুরো—মজা করো—আড্ডা মারো তাদের বিয়ে করতে যেও না। শেষে তাদের কাপড় চোপড়ও তোমাকে ধুইতে হবে। ভাবছো আমার মতো নারীবাদীর মুখে এমন দরদী কথা! এই কথাগুলো শুধুই তোমার জন্য। কারণ আমি চাই তোমার জীবনে এমন কেউ আসুক যে তোমাকে গুছিয়ে রাখবে। তোমার মতো এলোমেলো মানুষের সাথে আবার যদি একটা এলেমেলো মানুষ এসে জুড়ে যায় তাহলে দুজন দুজনকে আরো তছনছ করে ফেলবে।
তবে কি জানো? তোমার প্রেমিকাকে আমার খুব অদ্ভূত লাগে। মানুষ তো নারীবাদী হতেই পারে। আমিও কি কম নারীবাদী? বাট তোমার প্রেমিকার মতো না। একদম না। ইস্ আমি যদি তোমার প্রেমিকা হতাম! বিলিভ করো আমি তোমার সাথে ওরকম আচরণ করতাম না। সরি সে তো আর এখন তোমার প্রেমিকা নেই। যোগাযোগ আছে তো? না কি তাও নেই। আসলে কি জানো? তুমি যে একটা কথা বলো ওটাই সত্যি। ‘প্রেমিকা কখনো পুরাতন হয় না।’ ধরো আমার সেই উপ-সচিব যদি এসে আমাকে ডাকে আমি কিন্তু কোনা চিন্তা না করেই তার কাছে যাবো। এর ফলাফল কি হবে সেটা চিন্তা করবো না। মাঝে মাঝে তাকে স্বপ্নে দেখি। ভাবি সে যদি আমাকে এববারও ডাকতো। হুম মেধাবীদের একটু অহংকার থাকে। তাই বলে এতো অহংকার? তার অহংকারের একটা নমুনা দেই তোমাকে। আমি তখন বিসিএসের জন্য পড়ছি। সেও পড়ছে। দুজনে পাল্লা দিয়ে পড়ছি। আমি জানতাম সে সফল হবে। আমি সফল না হলেও তার সফলতায় যে আমি খুশি হবো ঠিক তেমন সুবোধ অবলা প্রেমিকা আমি নই। আমি চাচ্ছিলাম তার সফলতার সাথে সাথে আমি সফল হই। তার সফলতার ব্যাপারে সে খুব আত্মবিশ্বাসি ছিলো। সে বলতো ‘ভালো করে পড়ো। না হলে সামনের বিসিএসে আমার কথাও পড়ে যেতে হবে।’ আমার ঈর্ষার বদলে কষ্ট লাগতো। হুম সে সফল হয়েছে। এখন ফরেন মেনিষ্ট্রির বড় কর্মকর্তা। আর আমি বিসিএস ফেল কতব্য পরায়ণ সরকারি ব্যাংকার। সে যখন উপ-সচিব তখন আমি প্রিন্সিপিাল অফিসার। হ্যাঁ আমিও একখানা মাকাল ফল পেয়েছি। এমনি মাকাল ফলের খারাপ দিক বেশি থাকলেও আমার মাকাল ফলের অনেক গুণ। সে বেসরকারী ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা । যার কারণে এই মফস্বল শহরে নিজেদের বাড়ি-গাড়ি হয়েছে। মেয়ে দুটোকে ভালো স্কুলে পাড়াচ্ছি। বেশ আছি। তাই না?
এগুলো বলতে থাকলে তোমার রাতের ঘুম শেষ হয়ে যাবে। তবে এর থেকেও বোম ফাটানো গল্প আছে। যা শুনলে এই মধ্য রাতে তোমার কান গরম হয়ে যেতে পারে। সাথে অন্য কিছু গরম হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আজ শেষ দুপুরে। এখন তো আড়ইটার মতো বাজে। আজ না বলে গতকাল শেষ দুপুর বলাই ভালো। হঠাৎ করে কেমন যেন অনুভব করছিলাম। ওই দেখো তোমার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। চুপচাপ বসে থাকো। না হলে বলবো না। আর আমি এখন যে পোশাক পড়ে আছি সেটা শুনলে তো তোমার হার্ট এ্যাটাক হতে পারে। হাহাহাহা। যতো ডাকে তত বর্ষে না। সেটা তো তুমি জানো। আমার ব্যাপারে এই কথাটা শতভাগ প্রযোজ্য। এই দেখো রাত দুপুরে শরীরে ভোল্টেজ বাড়ছে। আর আমি চিঠি লেখার ভান করে তোমার সাথে কথা বলছি। আমি তো তোমার মতো অতো থ্রি এক্স দেখি না। রসময় গুপ্ত পড়ি না। তো আমার এমন হয় কেনো বলো তো? তোমার জবাব তো রেডি করাই থাকে। তুমি বলবে ‘তুমি যে এখনো বুড়িয়ে যাওনি এটাই তার প্রমাণ। এখনো সময় আছে কোনো এটা হিরো দেখে ...’
এই ব্যস্ত দুনিয়ায় মান সম্মানের ভয়ে কোথাও তাকাতে পারি না। শরীর কি এত্তোসব মানে? দেখো এই বাল মাথায় এসে কি বলতে ছিলাম এখন কি বলতে শুরু করেছি। সব এলেমেলো হয়ে গেছে। তুমি তো খুশিই হচ্ছো। তোমাকে এইসব সারাদিন বলতে থাকলেও তুমি খুশিই হবে। ইস্ তোমাকে যদি এখন ফোনে পাওয়া যেতো! তাহলে এই গল্পটা আরো ভালে জমতো। কিন্তু তোমার তো আবার নাকি সমস্যা হয়! হাহাহা। আমারও হয়। কিন্তু আমি তোমার কাছে স্বীকার করি না। তার একটাই কারণ স্বীকার করলে তুমি আরো পেয়ে বসবে।
এই রাত দুপুরে মাথাটা বাল নষ্ট করেই দিলা। সব দোষ তোমার। এই আমি কি প্রেমিকার মতো কথা বলছি? আসলে তোমার সাথেও তো আমার সেক্স হতে পারে। প্রেম না হলেও তো সেক্স হয়। জানি এটা শুনলে তুমি একবারেই রাজি হয়ে যাবে। আমি এখনই তোমার মুখে ভি সাইন দেখতে পাচ্ছি। তোমার মুখ বলছে ‘এই কথা শোনার জন্যই তো এই তিন বছর ধরে ওয়েট করছি।’ তা হচ্ছে না সোনা। আমি তোমার জালে পা রাখছি না। আমার মনে হয় কি জানো? তুমি আসলে কখনো কাউকে ভালোই বাসতে পারোনি। শুধু ভালোবাসার চেষ্টা করেছো। চেষ্টা করে কি কাউকে ভালোবাসা যায়! আমি যখন তোমাকে খোঁচাই যে সবাই দু-চার দিনে আমার প্রেমে পড়ে। তুমি পড়ো না কেনো? তখন তুমি আমার প্রেমে পড়ার চেষ্টা করো। কিন্তু পড়তে পারো না। কি ঠিক বলেছি না? আসলে আমিও এরকম তিন চার জনের প্রেমে পড়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারিনি। দু-একজনের কাছে গিয়েও ফিরে এসেছি। তারা শুধুই শরীর চায়। শরীর ছাড়া আরো কিছু স্বার্থও আছে তাদের। এইসব জানার কিংবা বোঝার পর নিজের প্রতি অনেক ঘৃণা তৈরি হয়েছে। নিজে নিজেকে বেশ্যা বলে গালি দিয়েছি। মন না টানলে শুধু শরীরের টানে কি কারো সাথে শোয়া যায়? যদি তাই করি তাহলে যারা ব্যবসা করে তাদের মতোই তো হয়ে গেলাম!
আমার সম্পর্কে তোমার হয়তো ধারণা—আমি অনেক কঠিন মানুষ। কান্না ঠান্না কখনো করি না। তুমি জানো না বাসার সবাই ঘুমালে আমি প্রতিরাতে বালিশ জড়িয়ে কাঁদি। সেই কান্নার বিভিন্ন রঙ। মাঝে মাঝে সেই কান্নায় তুমিও থাকো। তেমোর মতো একজন বন্ধু পেয়েও যার কাছে পুরোপুরি পৌঁছাতে পারছি না। ভয়ে। শুধু তোমাকে হারাবার ভয়ে। এসব শুনে তুমি কি করবে জানি না। তবে আমার মনে হয় আমাকে তুমি পড়তে পারো। আমি কি ভাবি সেটা তোমাকে না বললেও বুঝতে পারো।
কি সুন্দর একটা মুড ছিলো। ভাবছিলাম লেখা শেষ করে তোমাকে অথবা অন্য কাউকে নিয়ে ওয়াশরুমে যাবো। আমার কল্পনায় যারা থাকে তাদের কেউ হয়তো তুমি না। কিন্তু প্রতিটা কল্পনাই তুমি। এখন চোখের কোণ বেয়ে পানি পড়ছে। ভেতরে আগুন আর উপরে পানি। যাও। এবার ঘুমাও। আমার জীবন থেকে আরো একটা রাত হারাচ্ছে। নিঃশব্দে। উপবাসে। অবহেলায়...
শুভ রাত্রি সুন্দর মানুষ...


ঋতু
রাত ৩:৫৬

[ চলবে...]
[ বইটি সংগ্রহ করতে চাইলেঃ https://www.rokomari.com/book/176452/guha ]

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৪

হাবিব বলেছেন: আপনার বইটি মেলায় দেখেছিলাম। এখানে ধারাবাহিক দিচ্ছেন, ভালো হলো

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:০৮

সানাউল্লাহ সাগর বলেছেন: ভালোবাসা জানবেন।

২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৪২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: রস :P কস মিলিয়ে ভালই লাগছে ।চলছে,চলুক ।

অপেক্ষা, পরবর্তী অংশের জন্য ।

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:১৭

সানাউল্লাহ সাগর বলেছেন: ভালোবাসা জানবেন।

৩| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: চলতে থাকুক।

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:০৯

সানাউল্লাহ সাগর বলেছেন: ভালোবাসা জানবেন।

৪| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৫৪

সানাউল্লাহ সাগর বলেছেন: দ্বিতীয় পর্বের লিংক ঃ Click This Link

৫| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৬

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: চলতে থাকুক, শুভেচ্ছান্তে
.......................................................

৬| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৭

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ১ম পর্বটা দেখছি চিঠিতেই শেষ হলো।

ভাললাগলো পড়তে।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:০৩

সানাউল্লাহ সাগর বলেছেন: ভালোবাসা জানবেন। পুরো উপন্যাসটিই চিঠি। ‘গুহা’ পত্রোপন্যাস।

৭| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৯

সানাউল্লাহ সাগর বলেছেন: তৃতীয় পর্বের লিংকঃ Click This Link

৮| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৫

সানাউল্লাহ সাগর বলেছেন: চতুর্থ পর্বের লিংক: Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.