নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যেমন ইচ্ছে লেখার আমার ব্লগের খাতা।

Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience

সন্দীপন বসু মুন্না

অন্য সবার মতোই জীবনে স্বপ্ন ছিল অনেক। তবে আপাতত বাসা টু অফিস টু ক্লাস টু ঘুম। এক সময়ের স্বপ্ন গল্পকার হওয়া আজ গল্পের মতোই লাগে। বাংলার সাহিত্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা ! ;) ;) তারপরও ভাবি...এই বেশ ভালো আছি... সামু বা অন্যান্য ব্লগ সাইটগুলোতে প্রায়ই ঘোরঘুরি হয়। অনেক কিছুর পরও এই বিলাসিতাটুকু বাদ দিতে পারিনি। তবে শৌখিন ব্লগ লেখালেখি আপাতত বন্ধ। তবুও কাজের খাতিরে লেখাগুলো দিয়ে আপলোড চলছে-চলবে (একই সাথে পাঠকের বিরক্তি উৎপাদনও সম্ভবত!)। ছবিসত্ত্ব: গুগল ও ইন্টারনেটের অন্যান্য ইমেজ সাইটস। যোগাযোগ - ফেইসবুক: https://www.facebook.com/sandipan.Munna ইমেইল: sbasu.munna এট্ gmail.com

সন্দীপন বসু মুন্না › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসা কিংবা প্রেমে পড়ার গল্প

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১:৪০

হল লাইফে পোলাপাইনের নানাবিধ সমস্যা লেগেই থাকে। এর মধ্যে এক নম্বরে আছে প্রেমহীনতা। আমার এক রুমমেট জুয়েল, দিনের মধ্যে কমপক্ষে চৌদ্দবার বলবে,

: দোস্ত আমারে একটা লাইন ধরাইয়া দাও না।

: আরে দুর ব্যাটা আমার নিজেরই কিছু হয় নাই আবার তোর লাইন !

বলে তাকে ভাগাতে চেষ্টা করি। কিন্তু জুয়েল নাছোড়বান্দা ; একটা প্রেম, নিদেনপক্ষে একটা মোবাইল নাম্বারের জন্য তার সে কী আকুতি, দেখে মায়া হয়। তবু এই জগতে চিরসত্যটা হলো ‘আগে আপনা কাম তারপরে বাপের নাম’।



এই আপনা কামের সন্ধানে আছি, এমন সময় হঠাৎ একদিন, কালো নয়না লালচুলো এক সুন্দরীকে হঠাৎ ভালো লেগে গেল। এরপর, খোঁজ খবর, জানা গেল সুন্দরীতমা ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট ইয়ারে এবং সবচেয়ে বড় কথা এলাকা সূত্রে পাতানো তিন বান্ধবীর সার্কেলের বাইরে তাকে কেউ কোনো দিন দেখেনি। যাক রাস্তা তাহলে একেবারে ক্লিয়ার।

এরপর মেয়েটার পেছনে নিয়মিত ঘুরঘুর শুরু করলাম। ক্লাস টাস ফেলে ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের পেছনের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। মাঝে মাঝে মেয়েটার সঙ্গে চোখাচোখিও হয়। পূর্ণায়তন চোখ তুলে সে যখন তাকায় আমি তখন শ্যাষ। ওই যে আছে না,

‘তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ !’ এ সেই সর্বনাশ চোখ।



মনে মনে কত কথা সাজাই আজ তাকে বলবই। কিন্তু বলতে পারছি না তাই হাতে কলম তুলে নিলাম। হস্তলিখিত হৃদয়ের পঙক্তিমালার মাধ্যমেই তাকে জানাব মনের কথা। অনেক ভেবেচিন্তে রাত ২টা পর্যন্ত জাগরণের পর যে পঙতিমালা বের হলো তা হচ্ছে-

“ প্রহর শেষে রাঙা আলোয় সে দিন চৈত্র মাস তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।”

লিখেই মনে হলো না এ জিনিস দেয়া যাবে না। এটা বেশি কচলানো লেবুর মতো তিতা হয়ে গেছে। তার চাইতেও বেশি মনে হচ্ছিল এই লেখা যেন আমার আগে কে লিখে ফেলেছে ! এই আমার আরেক জ্বালা ! কোন ভালো লেখা মনে আসলেই দেখা যায় আমার আগে কে যেন লিখে গেছে !

তাহলে কি লেখা যায়। কী? ভাবতে ভাবতে লিখে ফেললাম,

“ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট বারান্দা হাসি,

আমি তোমায় ভালবাসি।”

না এইটাও দেয়া যাবেনা, ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের বারান্দায় তো অনেকেই হাসে। আরেকটু কাব্য করা দরকার। এমন কাব্য লেখব যে মুখস্থ করে বুকের ভেতরে রেখে সেকেন্ডে সেকেন্ডে জপবে। অনেক ভেবেচিন্তে শেষে লিখেই ফেললাম,

“ হাত আমার যদি, পৌঁছাতো আকাশ অবধি !

বিছিয়ে দিতাম নক্ষত্রদের তোমার পায়ের তলায়।”

হ্যাঁ এটা দেয়ার রিস্ক নেয়া যায়, সাথে হৃদয়ের কথা বলতে ব্যাকুল এক তরুণ যুবকের ভালোবাসাসহ পাঁচটি লাল গোলাপ।

তারপর, কিভাবে হাঁটুর থরহরিকম্প থামিয়ে পাগলা বাবার কবচ গলায় ধারণপূর্বক সাহস সঞ্চার করে তার হাতে চিঠিটা দিলাম, সে আরেক গল্প।



উপহার ও চিঠি পেয়ে সে বোধহয় খুশিই হলো। তার সর্বনাশা দুটি চোখ মেলে যে মিষ্টি হাসিটুকু আমাকে উপহার দিল, তাতেই আমি আবার পুরা শ্যাষ। বিকেলে বিছানায় ফিরে স্বপ্নসুখে নিমগ্ন আমি, শুধু ভাবছিলাম সর্বনাশা চোখ দুটির কথা, সেই সর্বনাশা চোখে ভাসতে ভাসতে কেটে যাবে আমার দিনগুলো, পুরোটা জীবন.. !

ভাবনার এই পর্যায়ে যখন ভার্সিটির স্বনামে (কু) খ্যাত এক বড়ভাই কলার ধরে উঠিয়ে প্রায় ঝুলিয়ে রেখে হাতের মুঠো খুলে বের করল সেই চিরকুট তখন বুঝলাম সে চোখ শুধু আমার জন্য নয় অনেকের জন্যই সর্বনাশা ! ! বড় ভাই বললেন,

:“ পায়ের তলায় নক্ষত্র বিছাতে চেয়েছিস, নক্ষত্র লাগব না তোরে বিছালেই চলব”।

এই বলে আমাকে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে চললেন। এর পরের দৃশ্য বেশ করুণ...এই আমি তার দুই পা ধরে উচ্চেঃস্বরে বলছি, “আপনে আমার ধর্মের বড় বইন আর কোনো দিন আপনার সঙ্গে বেয়াদপি করমু না...আম্মাজান গো !”

আর সে খিলখিল করে হাসছে... সুন্দরী মেয়েরা নিষ্ঠুর হয় জানতাম। কিন্তু এতখানি হৃদয়হীনা !!





এর বেশ কিছুদিন পর , ‘পৃথিবীতে ভালোবাসা বলে কিছু নেই’ টাইপ কাব্য চর্চা করে কাটিয়ে এই আমি আবার প্রেমে পড়লাম। পুরো ক্লিয়ার করে বললে বলতে হয় , প্রেম আমার ওপর পড়ল। আমাদের ডিপার্টমেন্টেরই এক মেয়ে। সকালে মেসেজ পাঠায় তো রাতে ফোন করে। এটা ওটা গিফট করে। সঙ্গে কেজি দুয়েক অফসেট পেপারের লাভলেটার, দেখা হলেই রাজ্যের ভালোবাসার কথা। মেয়েদের ভালোবাসা মুনি ঋষিরাও উপেক্ষা করতে পারেননি আর আমি তো কোথাকার তুচ্ছ নাদান মানব ! যথারীতি প্রেমে পড়ে গেলাম। কিন্তু মেয়ে বড়ই সেয়ানা, ছিপে মাছ গেঁথেছে দেখে সে তার প্রেমের জাহাজকে পুরা ব্যাক গিয়ারে দিয়ে দিল। এবার আমিই গিফট দেই, ফোন করি, ভালোবাসার ন্যাঁকা ন্যাঁকা কথা বলি মেয়ে নিস্পৃহ !



শেষে একদিন, কলাভবনের দোতলায় সরাসরি প্রশ্ন করলাম,

: তুমি আমাকে ভালোবাস কি না ?

: তুমিই তো আমাকে ভালোবাস না।

: না, তুমি ঠিক করে উত্তর দাও, তুমি আমাকে ভালোবাস কি না?

: আচ্ছা যাও ভালোবাসিনা।

: দ্যাখ..দ্যাখ..আমি কিন্তু...

: কি করবে আমাকে মারবে নাকি নাকি সিন ক্রিয়েট করবা?

: দেখ আমার মেজাজ গরম করবা না কিন্তু! আমি বললাম কি আর তুমি কি বললা?

: আমি কি বললাম মানে? এই তুমি আমার দিকে এইভাবে তাকাইতাছো ক্যান? এসিড ছুড়বা নাকি? তোমাদের ছেলেদের তো আবার বিশ্বাস নাই।

এই কথা বলা মাত্র দেখি আশেপাশের কিছু নারী পুরুষ আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। এদের মধ্যে একজন স্বনামধন্য নারী নেত্রীকে দেখে আমি এবার বেশ ঘাবড়ে যাই।

: ছি ছি কি বলছ এসব?

: কি বলছি মানে ? তুমিই তো বললা। আমি এবার চেঁচিয়ে লোক জড়ো করব তারপর জেলের ঘানি টানিয়ে ছাড়ব কত সাহস আমারে এসিড মারব বলে।

হায় হায় কি বিপদে পড়লাম। এবার উপায়? ভাবি আমি। শেষে মিন মিন করে বলি,

: না আমি তো বলেছিলাম তুমি আমাকে ভালো না বাসলে এ জীবন আর রাখব না।

: ইঃ জীবন রাখব না, কি করবা, দোতলা থেকে ঝাঁপ দিবা, তাও পারবা না কাপুরুষ কোথাকার।

: দেখ তুমি কিন্তু আমাকে অপমান ...

আমার কথা শেষ হবার আগেই তরিৎ জবাব

: ইসস্ আমার মানওয়ালা, রে !! যার মানই নাই তার আবার অপমান, তুমি আমারে এসিড ছুড়ে মারতে চেয়েছ। আমি লোক জড়ো করে বলব।

খাইছে রে, আবারও সেই কথা, এটেইম টু এসিড ছোড়ার অপরাধে গণপিটুনি প্লাস জেলের ভাত খাওয়ার চেয়ে দোতলা থেকে লাফ দেয়া ভালো।

তবু আবার বললাম,

: ‘দ্যাখ আমি কিন্তু লাফ দিলাম। ’

উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও সিমপ্যাথি পাওয়া। কিন্তু কোথায় কি? নাকের পাটা ফুলিয়ে মেয়ে জবাব দেয়,

: দাও লাফ, তবে এখান থেকে নয় ছাদে যাও, মরার সিকিউরিটি পাবা। ‘কাপুরুষ কোথাকার’।

বলে কি এই মেয়ে ! ! আমার তখন আর মাথা ঠিক নাই, দিলাম লাফ... কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দোতলা থেকে লাফ দিয়েও মরতে পারলাম না। শধু ডানপায়ের গোড়ালিটা মচকে গেল। এরপর...ব্যাপক হৈ চৈ চিল্লাফাল্লা ... দৌড়াদৌড়ির পর আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো, ভর্তি হলাম এবং পরদিন ছাড়াও পেলাম।



পরদিন রিকশায় করে হলে আসার সময় বন্ধুরা নিয়ে গেল সেই লাফ দেয়ার স্থানে। গিয়ে দেখি লাফিয়ে পড়ার জায়গাটায় কারা যেন ইট দিয়ে মনুমেন্ট টাইপের কি একটা বানিয়েছে। ওই মনুমেন্টের সামনে কিছু ফুলও আছে, পাশে একটি ঝুলানো মোটা কাগজ তাতে লেখা

“হে পথিক, ক্ষণকাল দাঁড়াও শ্রদ্ধা ভরে এখানেই এক যুবক পা ভেঙ্গেছিল প্রেমের তরে।”



থেরাপি, ফান সাপ্লিমেন্ট।

দৈনিক নয়া দিগন্ত ২০০৬।

- এ প্রকাশিত লেখা

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১:৫২

ধ্রুবমেঘ বলেছেন: সন্দীপন বসু মুন্নার মনে কী চলে? শুনছি পোলাডা নাকি ঘোলা জলে থাকে? ;)

প্লাস

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:০৮

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: ঘোলা জলের প্রাণীও মাঝে মধ্যে খোলা জলে বের হয়।;)

ভ্যালেন্টাইনস এর শুভেচ্ছা।B-)

২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:০৮

সুইট বলেছেন: হা হা হা
Click This Link

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:১৫

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: ভাই লাফিং গ্যাস ছাড়ছে কই থেইকা?
আমারও কিরুম য্যান হাসি পাইতাছে।

দেখে এলুম। ধন্যবাদ

৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:০৯

একাকী বালক বলেছেন: হা হা হা।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:১৭

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন:
লাফিং গ্যাস এর ফ্যাক্টরিতে লিক হইছে মনে হয়।
হা হা হা হা

৪| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:১৩

এরশাদ বাদশা বলেছেন: এবারের ভালা পাই দিবসের এখনো পর্যন্ত সেরা লেখা। ব্যাপক লিখেছেন ভ্রাতা।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:২২

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: ধন্যবাদ বাদশা ভাই।
অনেক দিন পরে লিখলাম। তবে আপনাদের মন্তব্য ও অনুপ্রেরণা পেলে প্রথম লেখার মতই উৎসাহ পাই।
ভালা পাই দিবসের শুভেচ্ছা।

৫| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:৪২

রিজভী বলেছেন: মজা পাইলাম। :)

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:৪৮

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: ধন্যবাদ রিজভী

৬| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:৫০

নন্দনপুরী বলেছেন: ভারি মজা পাইলাম।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১:৫৩

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:২১

সাঁঝবাতি'র রুপকথা বলেছেন: কঠিন হইসে ...বড়শিতে মাছ গাথলে পড়ে খালি ঘুরায় ফেরায়, মাছ আর ডাঙ্গায় তুলে না ...

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:৩৫

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: ধন্যবাদ সাঁঝবাতি'র রুপকথা।

আপনাকে অনেকদিন পর আমার ব্লগখাতায় দেখে ভাল্লাগতেছে।

৮| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:৫১

রাজসোহান বলেছেন: আরে কঠিন+++++++++++

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:৫৮

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: আবারো ধন্যবাদ সোহান।

৯| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১:১২

কাঠের খাঁচা বলেছেন: হাসতেই আছি বস হাসতেই আছি =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১:১৯

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: ধন্যবাদ।

১০| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪৯

জেরী বলেছেন: প্লাস

আপনার গল্পগুলো পড়তে ভালোই লাগে:)

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৫:১২

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: থ্যাংকস জেরী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.