নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপনার ব্লগের একটি সুন্দর শিরোনাম এখানে লিখুন

সন্দীপ মজুমদার

সন্দীপ মজুমদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প : বন্ধুত্ব অতঃপর ভালোবাসা

১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:২১

কুয়াশাভেজা মিষ্টি একটা শীতের
সকাল বেলা । কুয়াশা কাটিয়ে সবে মাত্র সূর্যের
মিস্টি আলো চারিদিকে আভা ছড়াচ্ছে ।
'X' ইউনিভার্সিটির সামনের
একটা চায়ের টং-এ বসে খুব মনোযোগ
দিয়ে গরম
চায়ে ভিজিয়ে পাউরুটি খাচ্ছে অনি ।

হঠাত্ একটা রিকশা এসে থামল টং টার
পাশে । রিকশা থেকে নামছে তিথি । লাল রংয়ের একটা শালে তিথিকে আজ
অপূর্ব লাগছে ।

“কি ব্যাপার ক্লাসে যাবি না?”
তিথির কথায় অনির হুশ ফেরে ।

“না রে, মুড নেই।” চায়ে চুমুক
দিতে দিতে বলল অনি ।

“তোকে না বলছিলাম আমার
একটা স্কেচ আর্ট করে দিতে। করেছিস
ঐটা ?”

“না । টাইম কোথায় আমার?”

“নদীকে যে করে দিলি।”

“আরে ও আমাকে এর জন্য ২০০
টাকা দিছে।
তুই দে, তোকেও করে দিবো।”

“টাকা নিয়ে ছবি আঁকবি? তুই না আমার
বেস্ট ফ্রেন্ড”

“লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি পর্যন্ত
টাকা নিতেন। উনি বলেছেন,
হে বৎস ছবি এঁকে অবশ্যই
টাকা নিবে। নইলে তোমার
মেধার মূল্য দিবে না কেউ। ”

“লাগবে না তোর আর্ট । এখন
ক্লাসে চল।”

“তোকে না বললাম আজ
ক্লাসে যাব না। বাংলায়
তো বলছি।
নাকি বাংলা ভাষা বুঝিস না।
আর এখন এইখান থেকে যা তো ।
আমাকে একটু শান্তিতে চা খেতে দে ”

“ওকে বাই। আমি গেলাম। আর তোর
সাখে কোনো দিন কথা বলব না”

মনে মনে অনেক রেগে গেছে তিথি।
ভাবছে আর কোনোদিন অনির
সাথে কথা বলবে না । ছেলেটা কেমন
জানি ? একটুও ভালো না । ওকে একটুও
বোঝে না । কিন্তু বেশীক্ষণ এই রাগ ও
ধরে রাখতে পারবে না এই শয়তান
অনি কেই যে ও
সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে ।।

কিন্তু তিথি তা এখনও জানায়নি।
কারণ তার আত্মসম্মানবোধ প্রবল। আর
অনি? তার এতো টাইম নেই এইসব
ভাবার। এই হয়তো কোন ক্যান্সার
রোগীর জন্যে চাঁদা তুলে সাহায্য
করছে। আবার এই হয়তো টোকাইদের
স্কুলে ফ্রি পড়াচ্ছে। অনাথ আশ্রমের
বাচ্চাদের চকলেট
বা ফুচকা খাওয়াচ্ছে । পথের অসুস্থ
ফকিরকে নিজের টিউশনির
টাকাটা দিয়ে কম্বল কিনে দিয়েছে ,
অথচ এই প্রচন্ড শীতে তার নিজেরই
কোনো শীতের পোশাক নেই ।

আজ তিথির জন্মদিন। খত কয়েক দিন
ধরে ও একটু অসুস্থ । তবে ফোন করে ওর
ভার্সিটির সব
বন্ধুদের ইনভাইট করেছে । একটু
আগে ফোন করেছে সবাই তার
বাসায় আসবে। নিশ্চয় অনিও
আসবে। সেটা ভেবেই অসুস্থের
মধ্যেও উঠে ফ্রেশ
হয়ে রেডি হয়েছে তিথি।

কিন্তু সন্ধ্যায় দেখা গেল
আসেনি অনি। সে নাকি পথ
শিশুদের শীতের ভাপা পিঠা
খাওয়ানো কার্যক্রমে গিয়েছে।
চোখে পানি এসে যাচ্ছিলো তিথির।ও
ঠিক করছে আর
কখনো অনিকে নিয়ে ভাববে না ।
যার তাকে দেখতে আসার টাইম
নেই। বন্ধুরা একটু পর চলে গেল।

রাত এগারটায় হঠাৎ রুমে এসে হাজির
অনি। বন্ধু হিসেবে অনি
কে চিনে বাসার সবাই। তাই কেউ
তাকে কিছু বলে নি।

“কি ব্যাপার, তুই নাকি অসুস্থ? এই
ঢং ধরা শিখলি কার থেকে?”
রুমে ঢুকেই বলল অনি।

“তুই জানিস না মেয়েদের রুমে নক
করে ঢুকতে হয়?”

“আরেব্বাস! তুই মেয়ে? জানতাম
নাতো? তো পার্টি কেমন হল? কেক
টেক কিছু রেখেছিস?”

“এতো রাতে তোকে আসতে বলল
কে?” রাগ এখনও পড়ে নি তিথির।

“আরে আমি তো পথ শিশুদের পিঠা
দিতে গেলাম। ভাবলাম
তোকে রাতে এসে দেখে যাবো।”

এর মধ্যে কেক নিয়ে ঢুকলো তিথির মা।

“থ্যাংকু আন্টি"

খেয়ে ধেয়ে যাওয়ার সময় ব্যাগ
থেকে বের করে
তিথিকে একটা প্যাকেট দিল
অনি।
“নে তোর বার্থডে গিফট।
আমি যাওয়ার পর খুলবি।”

অনি যাওয়ার পর প্যাকেট
খুললো তিথি।
একটা ড্রয়িং খাতা।
খাতা খুলে অবাক তিথি।
প্রত্যেকটা পাতায় তিথির মুখের
চমৎকার সব স্কেচ।
চোখে পানি এসে গেল তিথির।
ইচ্ছে হল খুশিতে চিৎকার করতে।
শেষ পাতায় একটা বাঁদরের ছবি।

নিচে অনির একটা চিঠি।
“এই যে উপরে বাঁদরের
ছবিটা দেখছিস। এইটাই কিন্তু
তোর আসল ছবি।
বাকি ছবি গুলি তোর ফেসবুক
অ্যালবাম থেকে দেখে আঁকা।
আর একটা কথা। সবাই
বলে,আমি নাকি লাগামহীন
একটা ছেলে। এমন
একটা মেয়ে আমার দরকার,
যে আমার লাগামটা ধরবে। তুই
কি এই মহান দায়িত্বটা নিবি,
প্লিজ? আমার মনে হয় তুই এই কাজের
জন্যে পারফেক্ট।
যদি দায়িত্বটা নিতে চাস,
তাহলে কোনো এক
কুয়াশা মাখা সকালে চিত্কার
করে বলিস , "ভালোবাসি "
অথবা মোবাইলে টেক্সট করে দিস ।

চিঠিটা পড়ে মোবাইলটা হাতে নিল
তিথি। আবার
চোখে পানি এসে গেছে তার।
উফ, এতো পানিও
আসতে পারে আমার চোখে-
ভাবতে ভাবতে মোবাইলে লেখা শুরু
করলো তিথি।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.