নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Shondhi Muhid

সন্ধি মুহিদ

ভেতরে বৈরাগ্য, বাইরে সংসারী মুখোশ!

সন্ধি মুহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মন মেতেছে :শেষ পর্ব

০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৪৯

(আগের অংশের পর)

ঘটনা তেমন কিছু না। তন্ময়ের হাতে সন্ধ্যা কামড় বসিয়েছে। কারণ কী? শৈলী এবং মুহিদের দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে জানা গেলো তন্ময় নাকি শৈলীকে বলেছে, "তোর আম্মু এত্ত গুলো পঁচা! তাই তোকে ছেড়ে চলে গেছে!"

ঘটনা তেমন কিছু না হলেও সন্ধ্যাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম। এত শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে তন্ময়কে কামড়ে দিলো? ঘরে তালা লাগিয়ে নিচে নেমে এসে চারজনে দুটো রিকশা নিলাম। একটাতে আমি আর সন্ধ্যা আরেকটাতে শৈলী আর তন্ময়। রিকশায় আসার সময় একটা কথাই ভাবছিলাম, মেয়েকে বোনের বাসায় রেখে আসবো। ওখানেই থাকবে সে কিছুদিন। আমার খারাপ লাগবেই। একদম একা হয়ে পড়বো এবার। আবার ব্যাচেলর লাইফে পুরোপুরি ফিরে যেতে পারবো, এটা ভেবেও মজা পাচ্ছিলাম।



৯.

এর পরের গল্প খুব দ্রুত এগিয়ে গেছে। সন্ধ্যা এখন তানিয়া বুবুর বাসায়ই থাকে। শৈলী বেশ ভালোভাবেই ওকে দেখে শুনে রাখছে। শৈলী গান শিখতে আসার সময় প্রতিদিন ওকে সাথে করে নিয়ে আসে। আবার যাবার সময় নিয়ে যায়। শৈলীর সাথে আমার ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেছে। ফোনে বেশ কথা হয়। মাঝখানে যে কয়েকদিন সিগারেট টেনেছিলাম বুকের শূন্যতা ভুলতে, এখন আর সিগারেট খেতেও হয় না। সারাদিন অফিসে ব্যস্ত থাকি। বিকেলে শৈলী আর সন্ধ্যাকে গান শেখাই। তারপর ফেসবুকে ঢুকে বসে থাকি। তিথী আর আবীরের ফেসবুকে আর কোনো আপডেট চোখে পড়ে নি। মরেই গেলো নাকি? শৈলী আমার খুব টেক কেয়ার করে। এই যেমন ফোন করে জানতে চায় খেয়েছি কিনা। সকালে ঘুম থেকে তুলে দেয়। আমার ঘুম খুব গাঢ়। এলার্মে কাজ হয় না। কিন্তু শৈলী এক বার ফোন দিলেই উঠে পড়ি। তবু মাঝে মাঝে রাত বিরেতে একা একা ভূতের মত শূন্য ফ্ল্যাটে যখন ঘুরে বেড়াই, তিথীর লাগানো বারান্দার গাছ গুলো থেকে ফুলের গন্ধকে তিথীর পারফিউমের গন্ধ ভেবে ভ্রম হয়। তবু দীর্ঘশ্বাস ফেলি। তিথী ক্যামন আছে? আমি এই যে শৈলীর সাথে কথা বলে তিথীকে ভুলে থাকার অভিনয় করছি, আমি কি সত্যিই ওকে ভুলতে পেরেছি? ভুলতে পারবো?

***

এভাবে অনেক দিন কেটে গেছে। প্রায় তিন মাস। শৈলীর সাথে আমার অঘোষিত একটা প্রেমের সম্পর্ক তৈরী হয়ে যাচ্ছিলো প্রায়। তিথীকে এখন আর অতটা মনে পড়ে না। কিন্তু আমি শৈলীকে এড়িয়ে চলছি। আমার জন্যে তার জীবনে প্রভাব পড়ুক, এটা আমি চাই না।

***

আরো কিছুদিন পর। শৈলীর ভার্সিটি এডমিশন কোচিং শেষ। ভর্তিপরীক্ষার পর সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। আমার বোনের বাসা ছেড়ে সে উঠেছে হস্টেলে। আমি তাকে এভয়েড করতে শুরু করার পর লক্ষ্য করলাম সে নিজেই আর গান শিখতে এলো না। সন্ধ্যাকে আমার বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। এক দিন শৈলীর সাথে পথে দেখা হয়েছিলো। তাঁর পাশে আরেক জন যুবক। আরেক জন কীসের? এক জন যুবকই! সেদিন বাসায় এসে মনটা খুব খারাপ হলো। চুপচাপ বসেছিলাম, তখনই একটা অপরিচিত নম্বর থেকে SMS পেলাম, "I'm coming back." তিথী নাকি? কল দিলাম। রিনরিনে কণ্ঠ। হ্যাঁ তিথীই।

***

তিথী সোফায় বসে আছে। সন্ধ্যাকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘসময় কান্নাকাটি করলো। আমি ফোন করে বুবুকে আসতে বলেছিলাম। বুবুও এসেছে। শৈলীকে ফোন করলাম। ফোন ওয়েইটিং ছিলো। সে ফোন ধরেনি। আচ্ছা, আমি আমার জীবনে কাউকে ধরে রাখতে পারিনি ক্যানো?

তিথীর সাথে আমি একটা কথাও বলিনি। তাকে আমি আর ফেরার সুযোগ ও দেবো না। সে তার বাপের বাড়ি ফিরে যাক।

তিথী নাকি সত্যিই রোড এক্সিডেন্ট করেছিলো। আবীর মারা যায়। আর তিথী অনেক দিন কোমায় ছিলো। নিজে নিজেই দীর্ঘদিন পর রুগ্ন দেহে ফিরে এলো। আচ্ছা, আমি যে ওর পারফিউমের ঘ্রাণ পেতাম, তার মানে কি কোমায় থাকা অবস্থায় ওর আত্মা আমার ঘরে ঘুরে বেড়াত? ধুর! তাই বা হতে যাবে ক্যানো। ও তো আমাকে ভালোবাসেনি। ও ভালোবেসেছে আবীরকে।



***

আমাকে শৈলীও ভালোবাসেনি। মাস চারেক প্রেমিকার মত আচরণ করেছে শুধু হয়তো তিথীকে ভোলানোর জন্যেই। ও যখন বুঝতে পেরেছে আমি তিথীকে ভুলে গেছি, আবার আমি ওকেও এড়িয়ে যেতে চাচ্ছি, সেও তো যোগাযোগ বন্ধই করে দিলো। মেয়েরা অদ্ভূত হয় খুব।



আমাকে ওরা কেউ ভালোবাসেনি। শুধু যখন একা একা বারান্দায় চুপ করে বসে থাকি , এখন ও আমার ছোট্ট মেয়ে সন্ধ্যা এসে মিষ্টি কণ্ঠে বলে, "বাবা তোমার মন খারাপ?"



এখনও আমি রবি ঠাকুরের গান গাই।



"ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে,

তারে আজ থামায় কে রে।

সে যে আকাশ পানে হাত পেতেছে।

তারে আজ নামায় কে রে। "



আমি আমার কন্যা সন্ধ্যার মন সব সময় মাতিয়ে রাখি। তাকে যেন কোনোদিন ভাবতে না হয়, "আমাকে কেউ ভালোবাসে নি।'' আর আমি এটাও জানি, আমাকে আর কেউ ভালো না বাসলেও আমার মেয়ে আমাকে ভালোবাসে।





মন মেতেছে

সন্ধি মুহিদ



(গল্পের সব কিছুই কাল্পনিক! গল্প আপাতত শেষ। টায়ার্ড হয়ে শেষ টেনে দিলাম।)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৫৫

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: :(

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩২

সন্ধি মুহিদ বলেছেন: :(

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৯

ডরোথী সুমী বলেছেন: এতো দেরি করলেন কেন? ভীষণ অপেক্ষায় ছিলাম শেষটুকু জানার জন্য। এরকম আসলে বাস্তবে হয়না। কেউ ভুল বুঝে ফিরে এলে আমরা ফিরিয়ে দিতে পারিনা বিশেষ করে ভালবাসার মানুষকে। আর নতুন কেও শূন্যস্থান পূরণ করতে এলে তাকেই আঁকড়ে ধরতে চাই। কিন্তু এটা হওয়া উচিৎ নয়। সমাপ্তিতে আমি সন্তুষ্ট। ধন্যবাদ আপনাকে।নিজেকে আর নিজ সন্তানকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতে হবে। আর কাউকে নয়।

৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫২

ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: শেষটা পড়ে ভালো লাগলো... ... নিজের সন্তান অন্তত ভালোভাসবে এটা সবারই কাম্য হতে পারে... ... তবে ভুল বুঝে কি আসলেই ফিরে আসে নাকি বিকল্পের শুন্যতায় আকড়ে ধরতে চায়? আর তা কি হতে দেওয়া উচিত?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.