নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাই সেকেন্ড ম্যারেজ

০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৪২

মাই সেকেন্ড ম্যারেজ

যায়নুদ্দিন সানী


— ওয়াই ফাইয়ের পাসওয়ার্ডটা কি একটু দেয়া যাবে?

ছোটখাট একটা ধাক্কা খেলাম। এই মেয়ে তো বেশ স্মার্ট। আবদারটা খুব অযৌক্তিক না, বাট সো কুইক? একটা বাঙ্গালি মেয়ের কাছে ব্যাপারটা ঠিক আশা করা যায় না। খানিকটা আলাপ পরিচয়ের পরে হলে হয়তো ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক লাগত। এনিওয়ে আমরা বরং গল্পে ফিরে আসি।
নিবেদিতার প্রশ্নের উত্তরে মুখে কিছু না বলে নিজের মোবাইলটা এগিয়ে দিলাম। ওখানে একটা ম্যাসেজে পাসওয়ার্ডটা লেখা আছে। ও সেটা দেখে নিজের মোবাইলে পাসওয়ার্ড টাইপ করতে লেগে গেল। এরপরে আমার মোবাইলটা ফেরত দিতে দিতে জানাল
— আজকে সারাদিন ফেসবুক চেক করা হয়নি।
সাবলীল স্বীকারোক্তি। কে বলবে ও আজই এই বাড়িতে এসেছে। ওহ সরি, নিবেদিতার পরিচয়ই তো দেয়া হয়নি। নিবেদিতা হচ্ছে আমার নবপরিণীতা স্ত্রী।। এইমাত্র আমার বাসর ঘরে ঢুকলাম। আর ঢুকেই… একফোঁটা আড়ষ্টতা নেই, নববধূর লাজুকটা নেই। জাস্ট একটা মিষ্টি অনুরোধ। মিথ্যে বলব না, ব্যাপারটা কেন যেন ভালোই লাগল।
আমার পরিচয়? জানা খুব জরুরী না, তাও বলছি। আমি ইশতিয়াক। অ্যান্ড দ্যাটস ইট। একজন টিপিক্যাল বাঙ্গালি। হুজুগে, সেলফিশ অ্যান্ড কিছুটা রক্ষণশীল। সেটাকে দোষও বলতে পারেন আবার গুণও বলতে পারেন।
একটু মাঝারি কিসিমের ধনী পরিবারে জন্ম। পড়াশোনায় মোটামুটি ভাল, আর সেই সুবাদে বুয়েটে এন্ট্রি। মনের কোনে ছিল একটু হাই অ্যাম্বিশান। তাই, বুয়েট শেষ হতে না হতেই শুরু করি আমেরিকা যাওয়ার প্রস্তুতি। রেজাল্ট খারাপ ছিল না। বসে যাই জিআরই'র প্রেপারেশানে। এরপরে একটা ভাল স্কোর, সেই সুবাদে আমেরিকার একটা ইউনিভার্সিটিতে অ্যাডমিশান এবং এরপরে উড়াল।
এমএসয়ের শেষের দিকে এক ছুটিতে বিয়ের উদ্দেশ্যে দেশে ফিরে আসি। আর ঈশিতাকে বিয়ে করে ফিরে যাই। ঈশিতার সাথে আমার প্রেমের বয়স তিন বছর। বুয়েটের ফাইনাল ইয়ারে থাকতে অপূর্ব সুন্দরী ঈশিতা আমার প্রস্তাবে সাড়া দেয়। যাই হোক তেমন কোন সমস্যা ছাড়াই কিছুদিনের ভেতর সস্ত্রীক আমেরিকায় সংসার শুরু করি।
ইন অ্যা নাট শেল এই হচ্ছে আমার প্রেম কাম দাম্পত্য কাহিনী। আই মিন প্রথম বিয়ের। আমাদের টাইপদের অর্থাৎ আমেরিকা প্রবাসী ছাত্রদের জীবন সাধারনতঃ এমনটাই হয়। এছাড়াও আমাদের জীবনে আরও কিছু ঘটনা ঘটে। সাধারনতঃ দেশে থাকা জীবিত ফ্যামিলি মেম্বারদের আই মিন বাবা মা ভাই বোনকে দেখতে দুতিন বছর পর পর দেশে আসা হয়। ব্যাগ ভর্তি গিফট আনা এবং তা বিতরণ করে ‘ইউ আর গ্রেট’ টাইপ উচ্ছ্বাস বাক্য শোনা আর সবাইকে কাঁদিয়ে পুনরায় আমেরিকা ফিরে আসা। একটু রুঢ় শোনাচ্ছে, বাট কমবেশি এই হচ্ছে আমাদের, মানে আমেরিকা প্রবাসীদের ইউজুয়াল রুটিন।
তাহলে আজকে আবার বিয়ে কেন? পাঁচ বছর আগে যে ছেলে তিন বছরের প্রেমকে বিয়ে করে নিয়ে যায়, সে আবার বিয়ের পিড়িতে কেন? বলছি। এখানকার ব্যস্ত জীবনে আর আম্বিশান আমাদেরকে অনেক বেশি যন্ত্র বানিয়ে দেয়। সেটার সাথে অনেকেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে, অনেকে পারে না। আমরা সেই না পারার গ্রুপে। ছোটখাট ঝগড়া দিয়ে শুরু হয়ে শেষ হল ডিভোর্সে। সবার ক্ষেত্রে এমন হয় না। অনেক সর্বংসহা আছে, কষ্ট করে হলেও সংসার টিকিয়ে রেখেছে। ঈশিতা তেমন না। বিয়ের দুই বছর পরে একদিন জানাল, শী ওয়ান্টস ডিভোর্স।
আজ থেকে হিসেবে করলে, ঘটনাটা ঘটে বছর তিনেক আগে। এরপরে ওখানেই, মানে আমেরিকাতেই বন্ধু বান্ধবরা বেশ কিছু চেষ্টা নিয়েছিল। অমুকের বোন, তমুকের শালী। বুঝতেই পারছেন, লাভ হয়নি। ডিভোর্সি অ্যান্ড ব্যাড পাস্ট হিস্ট্রি। এছাড়াও ওখানকার গসিপপ্রেমী বাঙ্গালি সোসাইটি আমাকে রীতিমত ভিলেন বানিয়ে দিয়েছিল। তাই অনেক চেষ্টার পরও কিছু হয়নি। সো আই কেম ব্যাক টু স্কয়ার ওয়ান। পাত্রীর খোঁজে বাংলাদেশে আসি।
মাস খানেকের ছুটি নিয়ে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম, এতেই হবে। ঘর পোড়া গরু, তাই ইচ্ছে ছিল, এবার দেখে শুনে যাচাই করে, টিপিক্যাল বাঙ্গালি বউ জোগাড় করে নিয়ে যাব। ঠিক সাত চড়ে রা করে না টাইপ চাইছি না, তবে কাছাকাছি কিছু একটা চাইছি। আসবার খবর বেশ কিছু আগেই বাবা ম্যাকে জানানো হয়েছিল। উনারাও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। তবে এসে বুঝলাম, আমেরিকা প্রবাসী পাত্রের মার্কেট ভ্যালু আমি আর এঞ্জয় করি না। পূর্ববিবাহিত হওয়ায় আমি এখন আর আগের মত দামী পাত্র না। বউ মরলে কিছুটা দাম পাওয়া যায়, তবে ডিভোর্সির বাজার বেশ মন্দা।
একবার ডিভোর্স হয়েছে, অভ্যাস বসে আমি আবার বউ ছাড়তে পারি। তাই একদল পাত্রীপক্ষ ইন্টেরেস্টই দেখাল না। আমার ডিভোর্সের কাহিনীতে যেহেতু একটু স্ক্যান্ডালের টাচ আছে, তাই বিভিন্ন জাতের রিউমার ছড়াতে সময় লাগল না। ফলে আরও কিছু কন্যাদায়গ্রস্থ প্যারেন্টস কেটে পড়লেন। আমার অবস্থা তখন হারাধনের মত। রইল বাকি ভেরি ফিউ। আর সেই ভেরি ফিউয়ের মধ্যে যারা আছেন বা এই ডিভোর্সি পাত্রের জন্য যারা এরপরেও ইন্টেরেস্ট দেখালেন, প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা গেল পাত্রীর কিছু না কিছু খুঁত রয়েছে। কেউ কালো তো কেউ সর্ট। কারো চেহারা বিচ্ছিরী তো কারো ক্যারেক্টার নিয়ে সন্দেহ আছে। সুন্দরী এবং শিক্ষিতা যেসব পাওয়া যাচ্ছে তাঁরা হয় ডিভোর্সি আর নয়তো উইডো।
আমার ছুটি শেষ হতে চলেছে অথচ পাত্রী তখনও পাওয়া যায়নি। ফিরে যাওয়ার দিন যতই কাছিয়ে আসছিল, আমার উৎকণ্ঠা ততোই পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল। ঘটক হিসেবে যাকে ধরা হয়েছিল, তাঁকে পাল্টানো হচ্ছে না, কারণ তাঁর বেশ নামডাক আছে। যে স্ট্যাটিস্টিক্স তিনি প্রেজেন্ট করেছিলেন, তাতে দেখা গেল পাত্রের চাহিদা মত পাত্রী যোগাড় করে দেয়ার ক্ষেত্রে তার সাফল্য ঈর্ষনীয়। আরও একটা কারণ আছে। এই ঘটক ভদ্রলোকের একটা রেপুটেশান আছে, তিনি মিথ্যে তথ্য দেন না। পাত্রী সম্পর্কে নেগেটিভ কিছু থাকলে তিনি তা নির্দ্বিধায় জানিয়ে দেন। আর একারণেই উনাকে ছাড়া আর কারো ওপর মা ভরসা করতে রাজি না।
আই মে বি রং। হয়তো আমি অযথাই সন্দেহ করছি, তবে উনার এই ব্যর্থতায় আমি কেন যেন একটা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছিলাম। উনি ইচ্ছে করেই সেসব পাত্রী দেখাতে লাগলেন, যেসবে ঝামেলা আছে। প্রথমটায় সন্দেহ করেছিলাম এমন সব পাত্রীকে গছাতে পারলে পাত্রীপক্ষে থেকে বোধহয় ভাল বখশিশ পাবেন, এই লোভে এমনটা করছেন। পরে বুঝলাম কাহিনী অন্য। শ্যামা গীতিনাট্যের সেই বিখ্যাত ডায়ালগ ‘চোর চাই যে করে হোক’ এর মত আমার অবস্থা, 'বউ চাই, যে করে হোক’। আমি তখন ঝামেলাযুক্ত অবিবাহিতাসহ ডিভোর্সি আর উইডোদের ক্ষেত্রেও গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে দিয়েছিলাম।
আমার ফেরত যাওয়ার দিন পনের বাকী। হাতে দিন পনের থাকলেও, আসলে আছে সাত দিন। স্বল্প সময়ের মধ্যে বউ নিয়ে যেতে চাইলে বিয়ের পরে বেশ কিছু অফিশিয়াল কাজ কর্ম সারতে হবে, সো ফেরার অন্তত সপ্তাহ খানেক আগে বিয়েটা সারতে হবে। আমরা যখন প্রায় রণে ভঙ্গ দিব ঠিক করেছি। আমি ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছি।
ছুটি শেষ হওয়ার যখন আর দশদিন মাত্র বাকি, ঠিক সেই সময় নিবেদিতার প্রস্তাবটা ঘটক সাহেব আনলেন। পছন্দ করার মত একটা মেয়ে। সুন্দরী, শিক্ষিতা, স্মার্ট, ফ্যামিলি ভাল, ইনফ্যাক্ট যেমনটা চাই, অনেকটা তেমনই। গায়ের রং একটু চাপা। অন্য সময়ে ব্যাপারটা ইস্যু হলেও এই মুহূর্তে ওটা খুব একটা ইম্পরট্যান্ট না। সমস্যা অন্য জায়গায়।
যেহেতু হাতে প্রমাণ নেই, তাই কাজটা তিনি ইচ্ছে করে করেছেন, এমন আনুষ্ঠানিক অভিযোগও করতে পারছি না। তবে আমার গাট ফিলিংস হচ্ছে নিবেদিতার সম্বন্ধটা তিনি ইচ্ছে করেই আগে আনেননি। অ্যান্ড সেটাই মাস্টার স্ট্রোক। উনি এমন সময় সম্বন্ধটা আনলেন, যেন সেই সমস্যা সত্ত্বেও এই সম্বন্ধে রাজি হতে আমরা বাধ্য হই। সমস্যাটা? বলছি।
অবশেষে বিয়েটা হল। আর সেই সঙ্গে সর্বংসহা এবং মানিয়ে চলা টাইপ টিপিক্যাল বাঙ্গালি বউ খোঁজারও অবসান হল। আর পাসওয়ার্ড চাওয়া দেখে তো বুঝতেই পারছেন, আধ হাত ঘোমটা দেয়া, স্বামীর কদমবুসি করা টাইপ বউ পাইনি। ঘর আলো করে যিনি এসেছেন, তাঁর বর্ণনা তো দিলামই। যেটা বলিনি সেটা হচ্ছে ওর রয়েছে খানিকটা ভয়ঙ্কর এক পাস্ট হিস্ট্রি। খান তিনেক প্রেম, ইনক্লুডিং সেগুলোর একটায় আবার বাড়ি থেকে পালানো।
এরপরে প্রেমিক বেচারার বাপকে পুলিশ থানায় ধরে নিয়ে যায়। আর সেই খবর শুনে প্রেমিক রণে ভঙ্গ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রেমিকা সমেত পরেরদিন বাড়ি ফিরে আসে। এই ঘটনায় প্রেমিকের তেমন কিছু না হলেও প্রেমিকার জীবন তছনছ হয় যায়। সম্বন্ধ করে একটা ভাল বিয়ে হওয়ার সকল সুযোগই প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। আর আজকে কুমারী হওয়া সত্ত্বেও, একজন ডিভোর্সি পাত্রকেই স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে।
অন্য পরিস্থিতি হলে, এমন পাত্রীর জন্য আমি নিজেও রাজি হতাম না, তবে এখন হলাম। কবুল বলে ফেললাম, হোপিং দ্যাট নাথিং হ্যাপেন্ড ইন দোজ ফিউ ডেজ।

চলবে

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:১০

ওমেরা বলেছেন: নতুন করে শুরু করলেন, তবে আপনার তো জানা আছে আপনার সমস্যাগুলো আশা করি সেূগুলো দুর করার চেষ্টা করবেন তাহলে সমস্যা হবে না ।

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৪৭

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: মনে রাখব

২| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৪৩

ঘাসফুলে প্রজাপতি বলেছেন: ওয়েটিং ফর নেক্সট..

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৪৭

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: দিলাম

৩| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:৪৩

সৈয়দ জায়েদ আহমদ বলেছেন: আহ!! বি বা হ !

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৪৮

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: জ্বি, বিবাহ

৪| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৭:২৫

খালিদ আহসান বলেছেন: লিখুন। পরের পর্বের অপেক্ষায়।

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৪৮

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: অপেক্ষার ইতি

৫| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৮:০০

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: পরের পর্বের এবং গল্পের শেষটা দেখার অপেক্ষায়....

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৪৯

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: পরবর্তী পর্ব এসেছে

৬| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:৩৩

প্রোলার্ড বলেছেন: একেও কি আপনি আমেরিকায় নিয়ে যাচ্ছেন বা গেছেন ? একাধিক প্রেম + পালানোর হিস্ট্রি যার আছে সে যে আমেরিকাতেও একই কাহিনী করবে সেটা আপনিও জানেন ।

তু তো গায়া ।

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৪৯

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ইয়েস, গায়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.