নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদিতি

২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:০১

১২
আজকে সবাই একসাথে বাইরে বেরিয়েছে। রাতে বাইরেই খাবে। হোস্টেলে বলে এসেছে। অদিতির হোস্টেল জীবনের আজকে ষোল কিংবা সতেরতম দিন হবে। এই কদিনে একবারও ওরা তিন রুমমেট একসাথে বাইরে বের হয়নি। আজকেও হয়তো বের হওয়া হত না। নওরিনের জেদে বের হতে হল। নওরিনেরই একটা পরিচিত চাইনিজ রেস্টুরেন্টে তিনজন এসে বসল।
সেদিনের পরে নীরবের সাথে সম্পর্ক অনেকটাই বন্ধ করে দিয়েছে অদিতি। নীরবকে বারণ করে দিয়েছে ফোন করতে। সেদিন যদিও কিছু বলেনি, তবে হোটেলে যাওয়ার কথা বলার সাথে সাথে উঠে চলে আসে অদিতি। ঘৃণায় গা রি রি করে উঠেছিল। একবার মনে হয়েছিল, এজন্যই কি নীরব এখনও ওর সাথে সম্পর্ক রেখেছে? পরে মাথা ঠাণ্ডা হলে বুঝতে পারে, সেটা কারণ না। একটা মেয়েকে রাস্তায় ফেলে দিতে ওর বিবেকে লাগছে। যদি ওকে ডিভোর্সও করে, অদিতির বিশ্বাস ওকে ভরণ পোষণের জন্য একটা ব্যাবস্থা সে করবে।
যদিও এমন কোন প্ল্যান করে নীরব সেদিন আসেনি। কথাটাও হয়তো মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে, তারপরও নীরব বুঝতে পারে কথাটা বলে বেশ বাজে কাজ করে ফেলেছে। কথাটার একটা অন্য মিনিং দাঁড়ায়। ক্ষমা চাওয়ার চেষ্টা করেছিল, অদিতি সুযোগ দিচ্ছে না। জানিয়ে দিয়েছে, আবার যদি ফোন করে, ও এই সিম বন্ধ করে দেবে। তারপর যদিও আর ফোন করেনি, তারপরও অদিতি নতুন একটা সিম কিনে রেখেছে।
অদিতি আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই হোস্টেলটা ছেড়ে দেবে। আজ হোক কাল হোক, ওর ছবিগুলো প্রকাশ হলে, আর তা আন্টির হাতে পড়লে, নওরিন সমস্যায় পড়বে। কথাটা অবশ্য এখনও কাউকে বলেনি। ঠিক করেছে মাস শেষের ঠিক আগে জানাবে। এখান থেকে কোথায় যাবে, সে সিদ্ধান্ত এখনও নিতে পারেনি। একবার ভেবেছে বাবার ওখানে যায়। আবার ভেবেছে কি দরকার উনাদের সমস্যায় ফেলে।
বাবা সেদিন ফোন করেছিলেন। জানতে চাইছিলেন কি সমস্যা হয়েছে। হোস্টেলে উঠেছিস কেন। ‘পরে বলব’ টাইপ উত্তর দিয়ে পাশ কাটিয়েছে সেদিন। ব্যাপারটা বেশিদিন পারা যাবে না। আপাততঃ দাম্পত্য কলহ ভেবে বাবা ইন্টারফেয়ার করছে না। উনি হয়তো চাইছেন নিজেরা মিটিয়ে ফেলুক। কিন্তু বেশিদিন হলে হয়তো বাবা পুরো ব্যাপার জানতে চাইবেন। তার আগেই কিছু একটা করে ফেলতে হবে।
এই সম্পর্ক যে আর টিকবে না, সেটা বুঝে গেছে অদিতি। কে ভাঙলে নীরবের সুবিধা হয়, সেটা বুঝতে চাইছে অদিতি। এই একটা হেল্প নীরবকে করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘বউ ছেড়ে দিয়েছে’ ব্যাপারটা একটু বিচ্ছিরি শোনায়। মনে হয় নীরবেরই দোষ। তা চাইছে না অদিতি। কিছুদিন অপেক্ষা করবে। হয়তো নীরবকে জানাবেও। এরপরেও যদি নীরব কোন সিদ্ধান্ত না নেয়, তখন অদিতি যা করার করবে।
সিদ্ধান্ত আরও একটা নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে হয়তো নওরিনের একটা প্রভাব আছে। ঠিক করেছে নীরবের কাছে থেকে কোন সাহায্য আর নেবে না। তাই বেশ জোরেশোরে টিউশানি খোঁজা শুরু করেছে। শিরিন দুএকটা টিউশানির খোঁজ দিয়েছে, যোগাযোগও করেছে, তবে ফাইনাল কিছু এখনও কেউ বলেনি। ওদিকে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে বেশ কয়েক জায়গায় ফোনও করেছে। দেখা গেল বেশিরভাগই এজেন্সি টাইপ। ওরা জোগাড় করে দেব, শর্ত হচ্ছে তিন মাসের বেতন ওদের দিতে হবে।
নওরিন মাঝে মাঝেই মডেলিংয়ের বেশ কিছু অফার আনছে। একদিন জোর করে একটা শাড়ি পড়িয়ে বেশ কিছু ছবি তুলল ওর মোবাইলে। বলল
— এগুলো দেখাবো ফটোগ্রাফারকে। ঐ ব্যাটা খুব ভাল ফেস চেনে। দেখেই বলে দিবে কি কি করলে আরও সুন্দর লাগবে ছবিতে।
যদিও মডেলিংয়ে নামবার কোন শখ অদিতির নাই, তারপরও নওরিনকে না বলতে পারে না। কেমন একটা মায়া পড়ে গেছে মেয়েটার ওপর।
শিরিন একদিন বলল,
— এলাকায় যেসব কিন্ডার গার্ডেন আছে, সবগুলোতে গিয়ে সিভি দিয়ে আস। ফাঁকা হলে ডাক দিবে। যদিও সম্ভাবনা কম, বেশিরভাগেই সুপারিশ লাগে, তারপরও লাক ট্রাই করতে দোষ কি?
কয়েক জায়গায় সিভি জমাও দিয়েছে। এখনও ডাক আসেনি। যেহেতু একমাস আগে নোটিস দিতে হবে, তাই সামনের মাসটা থাকতেই হচ্ছে। তাছাড়াও দুইমাসের অগ্রিম ভাড়া জমা দিয়েই উঠতে হয়েছে। অর্থাৎ হাতে মাস খানেকের একটু বেশি সময় আছে। তারপরও সে চাইছে দ্রুতই সব কাজ সারতে।
— আপু তুমি অর্ডার কর।
নওরিন আবদার করল। অদিতির খুব খারাপ লাগছে। কথাটা বলেই ফেলল
— খুব খারাপ লাগছে। আমি সবচেয়ে বড়, কোথায় আমি খাওয়াব…
কথাটা শেষ করতে দেয় না নওরিন।
— ডোন্ট অরি, তোমাকেও চান্স দেয়া হবে। একটা চাকরী শুধু হোক।
অদিতি আর তর্ক করে না। ওয়েটার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, ওকে অর্ডার দেয়। নওরিন এদিক ওদিক তাকায়। যে সিরিয়ালটা এখন করছে, তার বেশ কিছু শ্যুটিং এখানে হচ্ছে। ইউনিটের অনেকেই এখানে আসে। তাঁদের কাউকেই দেখছে না। অন্ধকারে অবশ্য ভাল বোঝাও যাচ্ছে না। ইয়াং করে একটা ছেলেকে দেখা গেল তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
— কোন ফোন আসল?
অদিতির দিকে তাকিয়ে শিরিন জিজ্ঞেস করল। অদিতি মাথা নেড়ে না সূচক উত্তর দিল। শিরিন কিছুটা বিব্রত বোধ করতে লাগল। ব্যখ্যা দেয়ার মত করে বলল
— আসলে মাসের মাঝামাঝি তো…
অদিতি স্মিত হাসি দিয়ে বলে
— তুই এতো গিল্টি ফিল করছিস কেন? তুই তো তোর সাধ্যমত করেছিস।
— সবাই আসলে স্টুডেন্ট চায়। সাবজেক্টটাও দেখে। মনে হল তোমার সাবজেক্ট হিস্ট্রি শুনেই বেশিরভাগ রাজী হচ্ছে না।
ব্যাপারটায় অদিতিও সম্মতি দিল।
— হিস্ট্রি মানেই ধরে নেয় বাজে ছাত্র।
নওরিন এমন সময় জিজ্ঞেস করে
— বাট অনেস্টলি, তুমি ছাত্রী কেমন ছিলে?
— খুব ভাল না। অ্যাভারেজ টাইপ আর কি। তবে আই এঞ্জয়েড হিস্ট্রি। বেশ মজা নিয়েই পড়েছিলাম।
— অন্য কিছুতে সুযোগ পেয়েছিলে?
— ইকনমিক্সে।
শিরিন বিরক্ত হয়ে বলে
— তুমি কি যে কর না। ইকনমিক্স ছেড়ে কেউ হিস্ট্রি নেয়। ওটার প্রস্পেক্ট জানো?
অদিতি স্মিত হাসে
— ভুল তো অনেকই করেছি। এবার খেসারত দেয়ার পালা।
পরিস্থিতি ভারী হয়ে উঠছে দেখে নওরিন টপিক পাল্টায়। বলে
— লোকটা আমাদের দিকে স্টেয়ার করছে।
শিরিন নওরিনের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায়। এরপরে জিজ্ঞেস করে
— কোন লোকটা?
— লাইট ব্লু কালারের শার্ট পড়া লোকটা।
শিরিন এবার লোকটাকে চিনতে পারে। অল্প আলো থাকায় ভালভাবে চেহারা দেখতে পায় না। কাকে দেখছে সেটাও বুঝতে পারে না। আন্দাজে বলে
— তোর কোন ফ্যান হবে বোধহয়। প্রিয় নায়িকাকে মন ভরে দেখছে।
নওরিন তখনও ভ্রু কুঁচকে রেখেছে। বলল
— সেটা হলে তো সমস্যা ছিল না। তবে মনে হচ্ছে এই ব্যাটা কোন ফ্যান না। আর আমাকেও স্টেয়ার করছে না। তোমার পরিচিত না তো?
শিরিন চোখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল, আবার চোখ ফিরিয়ে তাকাল। বলল
— নাহ। আমার পরিচিতি না।
— শিহাব ভাইয়ের বন্ধু বান্ধবদের কেউ?
শিরিন মাথা দুদিকে নেড়ে অসম্মতি জানায়। বলে
— যেকজনের সাথে পরিচয় হয়েছে, তাদের ভেতর কেউ না।
— আমাকে স্টেয়ার করছে।
অদিতির গলার আওয়াজে হঠাৎ দুজনই চমকে ওঠে। ওদের দুজনের মাথায় একেবারেই আসেনি ব্যাপারটা। দুজনেই বেশ দুষ্টুমি দুষ্টুমি চেহারা নিয়ে অদিতির দিকে তাকায়। অদিতি মিটিমিটি হাসছে। সেই হাসি দেখে নওরিন আর শিরিন দুজনেই অবাক হয়। কে জিজ্ঞেস করবে তা জিজ্ঞেস করে একে অপরের দিকে তাকায় ওরা। এরপরে সিদ্ধান্ত হয়, নওরিনই জিজ্ঞেস করবে।
— চেনো ভদ্রলোককে?
— এদিকেই আসছে।
অদিতির কথা শুনে দুজনই চোখ ঘুরায়। দেখে ঠিকই বলেছে অদিতি। ভদ্রলোক নিজের চেয়ার থেকে উঠে তাদের টেবিলের দিকেই হেঁটে হেঁটে আসছে। নওরিন ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেদিকে তাকিয়েই চাপা গলায় জানতে চায়
— লোকটা কে?
উত্তর দেয়ার আর উপায় নেই। ভদ্রলোক একেবারে টেবিলের সামনে চলে এসেছে। এসে অদিতির মুখোমুখি দাঁড়াল। আকর্ণবিস্তৃত হাসি বলতে যা বোঝায় তেমনই একটা হাসি দিল। ঝকঝকে দাঁতগুলো বের করে বলল
— চেনা যাচ্ছে?
অদিতির মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি জানাল। বলল
— যাচ্ছে।
চলবে

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৫৪

শুভ_ঢাকা বলেছেন: মনে হচ্ছে নতুন আরো একটা চরিত্র আনলেন। স্টাইল অ্যাজ ইঊজুয়াল টেনশন দিয়ে শেষ করলেন। পরের পর্বের প্রতীক্ষায়......

২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৪

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:০৬

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এবার আমি কোথায়! আমি এর পরের পর্ব চাই...।

২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৪

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: আসবে

৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:০৯

আজীব ০০৭ বলেছেন: চলুক..........

২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৪

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: আশাকরছি চলবে

৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:১৬

সানহিমেল বলেছেন: নেক্সট পর্বের অপেক্ষায়

২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৪

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: আসবে

৫| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:০৯

রায়হান চৌঃ বলেছেন: ধর্যের শেষ পর্যায়ে আছি, টেনশন বেড়ে যাচ্ছে............ তবে অনেক দিন পর শরৎচন্দ্রের নায়িকা গুলোর মিল পাচ্ছি........... এক কথায় অসাধারণ.......

৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:২৪

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৮:৩৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ফায়সাল ! ?

দেখি কে??? :)

+++

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:১২

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৭| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:৩৮

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: নতুন চরিত্র! অদিতির জীবনের নতুন পুরুষটিকে জানার অপেক্ষায়.. :)

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:১২

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.