নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদিতি

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৩:৫৪


১৫
ফয়সাল তাঁর দ্বিতীয় ছোবলটা মারল সকাল বেলা। হোস্টেলের খালা এসে জানাল আন্টি নওরিন আর অদিতিকে অফিসরুমে ডেকেছেন। দুজনকে একসাথে ডাকবার কথা শুনে সন্দেহটা নওরিনের মনে জেগেছিল। তবে সিওর ছিল না। আন্টির রুমে ঢুকেই সন্দেহটা মিলিয়ে গেল। আন্টির গম্ভীর মুখ দেখে আর বুঝতে বাকই থাকল না, ছবি এখানেও পাঠানো হয়েছে।
নওরিন আর অদিতি আন্টির সামনে রাখা চেয়ারে বসল। আন্টি একটা খাম এগিয়ে দিলেন ওদের দিকে। খ্যামটা না খুলেই নওরিন আন্টিকে জানাল।
— এটাতে কি আছে, জানি।
— তুমি তো বলেছিলে, উনাকে তুমি চেন।
— মিথ্যা বলেছিলাম।
এমন অকপট স্বীকারোক্তি সম্ভবতঃ আন্টি আশা করেননি। একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। আল্টিমেটাম দেয়ার চিন্তা করেই ওদেরকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এখন একটু পিছিয়ে গেলেন। বুঝলেন, অদিতির পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে নওরিন। আর এনিয়ে কথা বলতে গেলে এই মেয়ে তর্ক জুড়ে দিবে। তাই ওদের কোর্টেই বল ঠেলে দিলেন
— এধরনের বদনাম হলে হোস্টেল চালানো তো কঠিন হয়ে যাবে।
— বলুন কি করতে হবে?
আন্টি এবার অদিতির দিকে তাকালেন। ব্যাপারটা কোন ঝামেলা ছাড়া মিটিয়ে ফেলতে পারলে সুবিধা হয়। আর একাজে একজনই সাহায্য করতে পারে, সে হচ্ছে অদিতি। ও যদি নিজে থেকে চলে যেতে চায়, সবদিক দিয়েই উপকার হয়। তিনি অদিতির কাছেই জানতে চাইলেন
— তুমিই বল।
অদিতি যদিও ব্যাপারটার জন্য তৈরি ছিল না, তারপরও এই হোস্টেল ছাড়বার একটা পরিকল্পনা মনে মনে আঁকতে শুরু করে দিয়েছিল। তাই আন্টির কথায় বেশ স্বাভাবিকভাবেই বলল
— আপনাকে সমস্যায় ফেলার ইচ্ছা আমারও নেই। যত দ্রুত সম্ভব আমি চলে যাব। আপনি ভাববেন না।
— আমার মনে হয় সেটাই ভাল হবে। পাড়ার অনেক ছেলের কাছেই এই ছবি পৌঁছে গেছে। আর আমার ধারণা তোমার একা চলাফেরাও একটু রিস্কি এখন। সবাই তোমাকে একটু খারাপ দৃষ্টিতে দেখছে। ভাবছে…
— বুঝতে পারছি। আমি সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই একটা ব্যবস্থা করে ফেলতে পারব আশাকরি।
আন্টি আর কথা বাড়ালেন না। ওরাও উঠে নিজেদের রুমে ফিরে এল। অদিতির মাথায় তখন একটাই চিন্তা, দ্রুত বাবার কাছে যেতে হবে। উনাকে সব কিছু নিজে বুঝিয়ে আসতে হবে। নইলে দুশ্চিন্তা শুরু করে দেবেন। ও সব বুঝিয়ে আসলেও যে দুশ্চিন্তা কমবে, এমনটা না। তবে রটনা আর গুজব শুনে আসল তথ্য সম্পর্কে ধারণা করার কাজটা করতে হবে না। দ্রুত সে গেল শাওয়ার নিতে।
ফিরে এসে আবিষ্কার করল, ঘরের পরিস্থিতি বেশ পাল্টে গেছে। শিরিনের চেহারা পাংশু হয়ে আছে। নওরিনের চেহারায় রাগ। বুঝলে কিছু একটা হয়েছে। ইশারায় নওরিনের কাছে জানতে চাইল, কি ব্যাপার। নওরিন শিরিনের দিকে ইশারা করল। অদিতি এবার শিরিনের দিকে তাকাল। জানতে চাইল
— কি হয়েছে?
— কি আবার হবে, শিরিন আপু রুম চেঞ্জ করবে।
কথাটা বেশ তীক্ষ্ণ স্বরেই বলল নওরিন। অদিতি বেশ অবাক হল। শিরিন তো এতক্ষণ তাঁর পাশেই ছিল এমনকি গতকাল যখন সব জানতে পারে তখন নওরিনের সাথে সাথে শিরিনও তাকে সাহস যুগিয়েছিল। হঠাৎ কি হল? শিরিনের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল
— কেন?
— উনার প্রেমিক আল্টিমেটাম দিয়েছে। তোমার মত ক্যারেক্টার লেস মেয়ের সাথে আর এক মুহূর্তও একরুমে থাকা যাবে না। আর উনি সুরসুর করে রাজী হয়ে গেছেন।
এবারও শিরিনের হয়ে নওরিনই উত্তর দিল। অদিতি খুব অল্প সময়ের জন্য অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিল। পরিস্থিতি এতোটা জটিল আকার নেবে তা আশা করেনি অদিতি। ভেবেছিল ঝড়টা শুধু ওর নিজের ওপর দিয়ে যাবে। কিন্তু ব্যাপারটা এখন আরও বিকট আকার ধারণ করছে। যা করার দ্রুত করতে হবে। আপাততঃ শিরিনকে আশ্বস্ত করা দরকার। ওর কাছে গিয়ে ওর ঘাড়ে হাত রাখল
— তুই অন্য রুমে যাবি? না আমি যাব?
— উনি যাবেন। রিয়াদের রুমে যাবে। ওদের রুমের শিউলি এখানে আসছে।
এবার অদিতি কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে দুজনের উদ্দেশ্যেই বলল
— তাহলে তো প্রবলেম আপাততঃ সলভড। আমি একটু বাবার ওখান থেকে ঘুরে আসি। ওখানে কি অবস্থা সেটা এক নজর না দেখলে শান্তি পাচ্ছি না।
বলে দ্রুত প্রসাধন সেরে ফেলল। আয়নায় দেখল নওরিন এখন বিরক্ত চোখে শিরিনের দিকে তাকিয়ে আছে, শিরিন লজ্জায় কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাপারটা বেশ খারাপ লাগল অদিতির। আয়নার দিকে তাকিয়েই বলল
— শিরিন, আই অ্যাম সরি। আমার জন্য তুই এমন একটা ঝামেলায় পড়বি, আমি ভাবতে পারিনি। তুই প্লিজ নিজেকে অপরাধী ভাবিস না।
দেখল শিরিন তখনও মাথা নিচু করে আছে। তাই অদিতি বলে চলল
— সমস্যাটা আসলেই ইউনিক। কে, কিভাবে রিয়াক্ট করবে, সত্যিই আগে থেকে বোঝার উপায় নাই। আমি নিজে না পড়ে পরিচিত কেউ এই সমস্যায় পড়লে, আমিও হয়তো এভাবেই রিয়াক্ট করতাম। আসলে কমবেশি সবাই একটা ব্যাপারই আগে ভাবছে, সে নিজে যেন সমস্যায় না পড়ে। শিহাবকেও আমি দোষ দিই না।
এরপরে নিজের ব্যাগটা হাতে নিয়ে শিরিনের দিকে এগিয়ে গেল। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
— তুই মন খারাপ করে থাকলে, আমারও খারাপ লাগবে। প্লিজ।
শিরিন ধীরে ধীরে চোখ তুলল। ওর চোখে পানি। কাঁদছে। ওকে একটু আদর করতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু হাতে সময় নাই। সেই মালিবাগ যেতে হবে। আজ ছুটির দিন, তাই হয়তো সময় কম লাগবে। তারপরও আধঘণ্টা ধরে রেখেছে। দ্রুত বের হওয়া দরকার। ফিরে এসে হোস্টেল খুঁজতে বেরোতে হবে। আগেরবার নীরব সব করে দিয়েছিল, তাই ঝক্কিটা টের পায়নি। তবে এবার সমস্যা হবে। আপাততঃ বেরোনো দরকার। অদিতি দ্রুত দরজার দিকে এগিয়ে গেল। নওরিন রাগী রাগী চেহারা নিয়ে নিজের বিছানায় বসে ছিল, যাওয়ার আগে ওর মাথায়ও হাত বুলিয়ে গেল।
রুম থেকে বেরিয়ে অদিতি আবিষ্কার করল, পরিস্থিতি বেশ আমূল পাল্টে গেছে, সবাই কেমন একটা ভিন্ন দৃষ্টিতে ওকে দেখছে, চোখ ঠিকরে একটা কথাই বেরোচ্ছে, ‘এই মেয়ে তাহলে এরকম টাইপের?’ কোনদিকে লক্ষ্য করবার আর সময় নাই। দ্রুত নিচে নামল। দরজার দারোয়ানটা গেট খুলে দিল, আগে সালাম দিত, আজকে দিল না। অদিতি বুঝল, সম্মান দেখানো টাইপ মহিলা সে আর নাই।
এমন সময় মোবাইল বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখল, ফয়সাল করেছে। মনে হচ্ছে, লবণ ছেটানোর শখ হয়েছে। ফোনটা না ধরলে অন্য নম্বর থেকে আবার করবে। তার চেয়ে ঝামেলা শেষ করে ফেলাই ভাল। ফোনটা তাই ধরল।
— কি অবস্থা?
— এই তো। হোস্টেলে ছাড়বার নোটিশ দিয়ে দিয়েছে।
— সরি, এটা ছাড়া উপায় ছিল না। তোমার আসলে একটু দেমাগ হয়ে গিয়েছিল। বলছিলা না, হোস্টেলের ঠিকানা লাগবে কি না? তাই একটু দেখাইয়া দিলাম, আমার ক্ষমতা কতোটুকু।
— আর কিছু বলবা? আমি একটু বেরোব।
— আসলে তোমারে ঝামেলায় ফেলাটা একটু দরকার ছিল। তোমার একজাম্পলটা পরে কাজে দিবে।
— আমি আর কথা বলতে পারছি না। রাখি?
বলে ফোনটা রেখে দিল অদিতি। বাইরে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকাল। একটাও সিএনজি নেই। একটু কি অপেক্ষা করবে? নাকি মেইন রাস্তা পর্যন্ত হেঁটে যাবে? সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। মেইন রাস্তা বেশ খানিকটা পথ। কি করবে ভাবছে, এমন সময় পাশে একজন লোক এসে দাঁড়াল। চোখ তুলে তাকিয়ে অদিতি বেশ অবাক হয়ে গেল। আজকে সকাল থেকে যে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, সেগুলোকে ও যত সহজে হজম করতে পেরেছিল, এই নতুন ঘটনাটা ততো সহজে পারল না। যার পর নাই বিস্মিত হয়ে বলল
— আপনি?
— ইয়েস। আমি।
— কিন্তু আপনার তো দেখা করার কথা ছিল না।
— ছিল না। বাট কাল রাতে সবকিছু পাল্টে গেল।
অদিতি এবার সত্যিই অবাক হয়ে গেল। ফয়সাল এই লোকের কাছেও ছবি পাঠিয়েছে? নাকি অন্য কিছু বলতে চাইছে? জানতে চাইল
— মানে?
— মানে, আমার একটু পর্ণ সাইটে ঘোরাঘুরি করার বদভ্যাস আছে।
— ও।
— ছবিগুলো দেখে বুঝে গেলাম, দ্যা গাধা ইজ ইন ট্রাবল।
চলবে

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৭:৫৭

করুণাধারা বলেছেন: নীরব না ফয়সল?

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৮:২৬

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ঠিক করলাম

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৮:৫৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ত্রানকর্তা হবে না সুবিধাভোগী!!!!!????

চলুক

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৪

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: দেখা যাক

৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:৪৫

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: হুমমমম! অসাধারণ গতিতে পর্বগুলো এগিয়েছে।

নওরিন না থাকলে অদিতি এত স্ট্রং থাকতে পারতনা। অনেক মেয়ের মতো এখনো মরে যাবার কথা ভাবেনি। বরং নতুনভাবে জীবন শুরু করতে চাচ্ছে। নওরিন চরিত্রটিকে ভীষনই পছন্দ করছি!

নতুন এই পুরুষটিকে অদিতি ভীষনই পছন্দ করে ফেলেছে। ফয়সাল আর নীরব প্রেমিক ও স্বামী হিসেবে তাকে অনেক ধোঁকা দিয়েছে, কষ্ট দিয়েছে। এই পুরুষটি সেই কষ্ট মুছবে না নতুন করে আঘাত দেবে তা দেখার অপেক্ষায়....।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৪

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: দেখা যাক

৪| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:৫৬

শুভ_ঢাকা বলেছেন: লাস্ট দুই/তিন পর্বে হুট করে অনেক স্যারপ্রাইজিং ডেভেল্যাপমেন্ট হলো। লেট'স শি ওয়াট হ্যাপেন্ড নেক্সট।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৫

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: লেটস সি

৫| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:৪৬

সানহিমেল বলেছেন: পরের পর্বের অপেক্ষা।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৪

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:১৩

সোহানী বলেছেন: ওরে বাপরে... কোথাকার পানি কোথা নিয়ে নিলেন.............

যাহোক, আমি মনে করি এটা শতভাগ বাস্তবতা। যেভাবে আমাদের ছেলেমেয়েরা বেপোরোয়া হয়ে গেছে তাতে এ ধরনের পরিত্থিতিতে পরা স্বাভাবিক। ওরা স্টার জলসা আর হলিউড/বলিউড দেখে ভুলে যায় আমরা সময়ের প্রয়োজনে মূহুর্তে খাঁটিঁ বাংলাদেশী ও মুসলিম হয়ে যাই............।

চলুক!!

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৫

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.