![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধারণ ভাত মাছ খাওয়া বাঙালী। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে চাকরি করছি। ভালোবাসি বই পড়তে, গান শুনতে, ম্যুভি দেখতে এবং ঘুরে বেড়াতে।
গ্রাম ছেড়েছি কোন শৈশবে তা আজ আর স্পষ্ট মনে পড়ে না। চাকরির সুবাদে আব্বা আমাদেরকে গ্রাম থেকে নিয়ে আসেন। ছয় সাত বছর বয়স আমার। ছোট ভাইয়ের বছর দেড়েক। এরপরে বিভিন্ন ছুটি ছাটায়, ইদে গ্রামের বাড়িতে গেছি। তাও দুদিনের অতিথির মত। তবুও নাড়ীপোতা এই গ্রাম আমাকে খুব টানে। এখনও অলস সময়ে মাথার মধ্যে ভেসে বেড়ায় গ্রামের সেই চিত্র। এখন তো গ্রাম বদলে গেছে। পিচের রাস্তা হয়েছে, বিদ্যুৎ এসেছে। আমার শৈশবে গ্রামে কোন বিদ্যুৎ ছিলো না। মাটির রাস্তার এরকম বসন্ত দিনে ধুলোর স্তর জমে যেত। মাঠ ঘাট শুকিয়ে ফেঁটে চৌচির হয়ে যেত।
সারাদিন চৈত্রের খররোদ শেষে সন্ধ্যার দিকে ঠান্ডা হাওয়া বইতে শুরু করতো। আজ কেন জানিনা দাদাজানের সন্ধ্যার দিকে হাট থেকে ফিরে আসার কথা মনে পড়ছে। আমাদের দাদা খুবই সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। খুব বেশী প্যাঁচগোচের মধ্যে যেতেন না। গ্রামে তখন বাজার ছিলো না। মাইল দুই তিন দূরে গিলাবাড়ির বাজারে হাট বসতো প্রতি শুক্রবার বিকেলে। গ্রামের মানুষেরা বেতের তৈরী ধামা নিয়ে হাট করতে যেতো। ধামা ভরে পুরো সপ্তাহের বাজার করে সবাই বাড়ির পথ ধরতো। আসর থেকে মাগরিবের মাঝামাঝি সময়ে হাঁটুরেদের ফেরার সময় হতো। রাস্তা চলে এঁকেবেঁকে। সবাই বিলের মধ্য দিয়ে পায়ে চলা শর্টকার্ট পথে ফিরতো। আমরা বাড়ির ব্যাড়ে গিয়ে দাদার জন্য অপেক্ষা করতাম। বড়দের মত চোখের উপর হাত রেখে দেখার চেষ্টা করতাম দূরের ঐ এগিয়ে আসা ক্ষুদ্র মানুষের বিম্বটাই দাদা কিনা। আরো কাছে এগিয়ে এলে দাদাকে চিনতে পেরে আমরা ছুটে যেতাম বিলের পথে। দাদা আমাদের হাতে কাগজের ঠোঙায় করে আনা গজা কি বুন্দিয়া ধরে দিতেন। কাগজের ঠোঙায় মোড়া ঐ জিলাপি-গজায় যে আনন্দ দিতে পারতো তা আজকালকার এই ঝাঁ চকচকে রেস্টুরেন্টে গিয়েও পাইনা।
খুব দ্রুত যেন আনন্দের দিনগুলি ফুরিয়ে গেলো। একটু বেশীই দ্রুত। ছেলেবেলার মত আনন্দময় দিন আর জীবনে ফিরে আসবে না। এখন তো যাপিত জীবনের সুখ দুঃখ নিয়ে সদা ভাবনারা কিলবিল করে। আর তখন মাথার মধ্যে ছিলো অনাবিল সুখ, মনে নির্মল আনন্দ, চোখে সোনালী স্বপ্ন।
©somewhere in net ltd.