নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সরদার ভাই।

সরদার ভাই

সাধারণ ভাত মাছ খাওয়া বাঙালী। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে চাকরি করছি। ভালোবাসি বই পড়তে, গান শুনতে, ম্যুভি দেখতে এবং ঘুরে বেড়াতে।

সরদার ভাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনা আনা রসে - ০১

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৩৩

মধুপুরে যাওয়ার ইচ্ছেটা অনেকদিনের। সেই ক্লাস থ্রি কি ফোর থেকে পড়ে আসছি মধুপুর ভাওয়ালের গড়। এবরাকা ডেবরা এটসেটরা। মধুপুর বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে শুনে অনেকেই ঠোঁট খানা বাকিয়ে জিজ্ঞেস করে মধুপুরে দেখার কি আছে? উত্তর হয় জংগল। বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল এই তথ্য উহ্যই রয়ে যায় দুই ঠোঁটের ফাঁকে। তারা তাদের ঠোটখানা আরো কিছুটা বাঁকিয়ে বলে জংগলের কি দেখার আছে! এরা সবাই শিক্ষিত লোক। এদেরকে বোঝানোর কিছু নেই। একেকজনের দেখার চোখ একেক রকম। আমার জঙল দেখার ইচ্ছে হয়েছে আমি জংগল দেখতে বেরোলাম। বন্ধু আরেফিনের দাওয়াতে ব্যাকপ্যাক কাঁধে আমরা দুই বন্ধু কল্যাণপুরে বিনিময় বাসে চড়ে বসলাম রবিবারের বিকেলে। কাঁটায় কাঁটায় ঘড়ির ডিজিট চারটায় প্রকাশিত হতেই বাস ছাড়লো। বংগদেশে টাইমের কাজ টাইমের চাওয়া এবং পাওয়া কবেই ভুলে গেছি। একটু আগে গুলিস্তান থেকে কল্যাণপুর আসতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলাম বাংলাদেশ যত সুপার ডিজিটালই হোক না কেন ঢাকা শহরের এই জ্যাম বিশ্ব ঐতিহ্যের পাতায় স্থান করে নিয়ে অব্যয় অক্ষয় রূপে টিকে রইবে চিরকাল।

বাস ছুটছে তো ছুটছেই। বুনো ঘোড়ার বেগে ঠিক নয়। রাস্তা যতটুকু ফ্রি সেই বেগেই। এতদিন ধারণা ছিলো গাজীপুর পেরোলেই টাঙাইল। কিন্তু টাঙাইল জেলা যে এত দীর্ঘ তা জানা ছিলো না। আকাশের ক্যানভাসে মেঘেরা নানা রকম চিত্র আঁকছে। ফেসবুকের লুবনা চার্য্যের কথা মনে পড়ে গেলো পুংলী বাজারে এসে। পুংলী বাজারের নীল আকাশ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে যাত্রাবিরতি দিলো বিনিময়। আমি ফ্রেশ হয়ে দাড়ালাম। ফাঁকা রাস্তা ধরে সা সা করে বাস ট্রাক ছুটে চলেছে। ওপাশে একলা দাঁড়ানো কিছু বিদ্যুতের খুঁটি। তারপর জল ভরা মাঠ। মাঠের ওপাশে কালো গ্রামের মাথার উপর নীলচে আকাশে সাদা সাদা মেঘ। কেন জানি মনে হলো লুবনা চার্য্য চমৎকার এই বিকেলে তেলরং কি জলরঙে সিরিয়াস কিছু একটা এঁকে ফেলতে পারবেন।

বাস আবার ছুটছে। মধুপুর আর কতদূর। পথ যেন আর ফুরোয়ই না। অবশেষে তিন রাস্তার মোড়ে পেল্লায় সাইজের তিন খানা আনারস দাঁড়িয়ে আছে। বলে না দিলেও বুঝে ফেললাম চলে এসেছি আনারসের রাজ্যে, মধুপুরে। আমাদের পথচলা এখনো শেষ হলো না। বাস সর্বশেষ যেখানে গিয়ে থামবে ওখানেই আমাদের নামতে হবে। আরেফিন ওখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। শেষ পর্যন্ত নাঁটা গাছটি মুড়োলো, বিনিময়ের পথ ফুরালো। আমরা নেমে পড়লাম ধনবাড়ী। বন্ধু আরেফিনের সাথে বছর তিনেক বাদে দেখা হচ্ছে। সেই আগের সাইজে আছে তবে পেটের প্রস্থ বৃদ্ধি পেয়েছে। আয়েশী ভংগীতে সিগ্রেট ফুঁকছে। আমাদের দেখে ছুটে এলো।

চা খাওয়াতে ফ্রেন্ডস ক্যাফেতে নিয়ে গেলো। বেশ ছিম ছাম ক্যাফে। চায়ের মেন্যুকার্ড পড়তে বসে আমাদের থিসিস করতে বসতে হলো। লাল চা। আদা চা, মধু চা, কলা চা, লেবু চা কি নেই সেই তালিকায়। ১৯ পদের চায়ের তালিকা থেকে আমরা মাসালা চা খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। খুব বেশী প্রশংসা করতে পারবো না চায়ের। চা খাওয়ার পরে বন্ধুটি বললো চল একবারে বাজার থেকে খেয়ে যাই। বুয়া আসেনি আজ। ওকে। এক দোতলা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো। সেখানে আরেফিনের বসের সাথে দেখা হয়ে গেলো। আয়েশ করে বসে নান রুটির সাথে পোড়া মুরগী চিবুচ্ছিলেন। ভদ্রলোক বেশ আলাপী। অল্পতেই আমাদের সাথে গল্প জমিয়ে ফেললেন। লাচ্চি খেয়ে আর কাচ্চি খেতে ইচ্ছে করছিলো না। বন্ধুকে বললাম সাদা ভাত চাই। এসব রিচ ফুডে আজকাল আর আগ্রহ কাজ করে না। এখানে ভাত নেই। যেতে হলো অন্য হোটেলে। গেলাম। সেখানে মুরগী দিয়ে ভাত খেলাম। সাথে ডাল এবং কাকরোল ভাজি। হোটেলের ছেলেটি যতই আমাকে মুগের ডাল বলে আশ্বাস দিক না কেন ডালের চেহারা এতটা অভদ্র ছিলো যে ছুয়ে দেখলাম না আমি। যারা এই অঞ্চলে ঘুরতে যেতে আগ্রহী তাদের উদ্দেশ্যে বলে রাখা ভালো যে মিষ্টি বাদে এই অঞ্চলে অন্যান্য খাবারের প্রতি উচ্চ একপেকটেশন না রাখাই ভালো। কেন? তা গেলেই টের পাবেন!

খাওয়া দাওয়া সেরে আমরা ইঞ্জিন ভ্যানে চড়ে বসলাম। এবারের গন্তব্য বন্ধুর বাসা। অন্ধকার চিরে এগিয়ে চলেছে ইঞ্জিন ভ্যান। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তিন বন্ধু ক্যাচর ম্যাচর করছি। ওপাশে আঁধারে হয়তো লুকিয়ে আছে শাল গাছের সারি। অন্ধকার বলে দেখা যাচ্ছে না। না বেড়ানোর গল্প শেষ নয়। শুরু হলো মাত্র।

(চলবে...)

ফেসবুকে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, ছবি শেয়ারের জন্য আমাদের একটি গ্রুপ আছে। আপনি যদি এসবে আগ্রহী হয়ে থাকেন তবে আমাদের গ্রুপে যোগ দিতে পারেন অনায়াসে।

বাংলার ট্যুরিষ্টঃ বাংলার ট্যুরিষ্ট

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.