নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ

সরোজ মেহেদী

The inspiration you seek is already within you. Be silent and listen. (Mawlana Rumi)

সরোজ মেহেদী › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুরস্কের রাজপথে গণতন্ত্রের জয়গান

১৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:১৭

পুনঃবিদ্রোহের আশংকা থেকে নিজের সমর্থকদের শনিবার রাতেও মাঠ না ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। প্রেসিডেন্টের আহ্বানে গণতন্ত্রের জন্য নতুন করে রাস্তায় নামেন মানুষ। আনন্দের সঙ্গে চোখে-মুখে ছিল ভয়, শংকা আর ক্লান্তি। ঘুরেফিরে এ প্রশ্নও বারবার সামনে উঠে আসে- নতুন করে সহিংসতার ঘটনা ঘটবে কিনা? তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভয় পরিণত হল শুধুই উৎসবে। ইস্তাম্বুলের যেসব জায়গায় মানুষ জড়ো হয়েছিলেন সেগুলো পরিণত হল একেকটা কনসার্ট হলে। নেচে-গেয়ে নারী-শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ভয়কে জয় করে উৎসবে মেতে উঠলেন। বিভিন্ন স্থানে বাজল এরদোগানের বন্দনা করে গান, পাঠ হল কবিতা। যা দেশটির কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল লাইভ প্রচার করে। ইস্তাম্বুলের বাইরে রাজধানী আংকারা, তৃতীয় প্রধান শহর ইজমির, কায়সেরি, ট্রাবজোন, চানাক্কালেসহ দেশজুড়েই মানুষ রাস্তায় উৎসব করেছেন।

আংকারার মেয়র মেলি গোকচেক জনতার উদ্দেশে এ সময় বলেন, তুরস্ক আর আগের মতো নেই। অস্ত্রের ক্ষমতা আমাদের জাতিকে আর মাথা নত করাতে পারবে না। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের ওপর ওই অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার দায় চাপানোর সিদ্ধান্তে অটল তুরস্ক সরকার। আংকারায় পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে এরদোগান সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেয়ার সময় গুলেনকে তিনি অভিযুক্ত করেন এবং তাকে তুরস্কের কাছে প্রত্যর্পণ করতে আমেরিকান কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

এরদোগান বলেন, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কৌশলগত বন্ধু রাষ্ট্র, সুতরাং তারা নিশ্চয়ই পেনসিলভানিয়া থেকে তাকে তুরস্কের কাছে হস্তান্তর করবে। যদিও গুলেন কোনো ধরনের সামরিক অভ্যুত্থানের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, গুলেনকে তুরস্কের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হলে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ দেখাতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তুরস্কের এ সংকটময় মুহূর্তে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে এমন যে কোনো ধরনের কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকতে এবং আইনের শাসন মেনে চলতে দেশটির সব দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবার রাতের অভ্যুত্থান চেষ্টার ওই ঘটনায় বিদ্রোহী সেনা সদস্যদের মধ্যে ১০৪ জনসহ মারা যান অন্তত ২৬৫ জন। আহত হয়েছেন অন্তত দেড় হাজার। অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ৬ হাজার জনকে। আত্মসমর্পণ করেছেন অনেক সেনাসদস্য। বিভিন্ন সেক্টরে পরিবর্তনের অংশ হিসেবে আড়াই হাজারের বেশি বিচারককেও সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে।

অভ্যুত্থানের রাতে প্রতিটি মসজিদ থেকে একটু পরপর আজান দেয়া হচ্ছিল। পড়া হচ্ছিল দোয়া-দরুদ। শনিবার রাতেও দেখা গেল কনসার্টের মাঝখানে হঠাৎ দোয়া-দরুদ পড়া হচ্ছে। মাঝে-মধ্যে নানা জায়গা থেকে ভেসে আসছে আজান। গান-আজান একই সঙ্গে চলছে। মসজিদ থেকে কখনও কখনও ভেসে এল মোনাজাতের শব্দ।

সরকারি দলসহ তুরস্কের সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী চারটি দল শনিবার বিকালে সংসদে এক যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে সেনাবাহিনীর এ ক্যু চেষ্টার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। যা সংসদের স্পিকার ইসমাইল কাহরামান পড়ে শোনান। দলগুলোর প্রধানরা যখন এ ইস্যুতে একই অবস্থান নিয়েছেন, তখন সমর্থকরাও একত্রে উৎসবে মিলিত হয়েছেন। বিশেষ করে তুর্কি জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করে রাজনীতি করা অন্যতম বিরোধী দল ন্যাশনাল মুভমেন্ট পার্টির (এমইচপি) নেতাকর্মীদের দেখা যায় এরদোগান সমথর্কদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে রাস্তায় নামতে।

সিরিয়ান শরণার্থীদের তুরস্কে আশ্রয় দেয়া নিয়ে এরদোগানের সমালোচনা করেছে দেশটির প্রতিটি দল। এরদোগান সমর্থকদের বড় একটি অংশও সিরিয়ানদের মেনে নিতে পারেননি। তাদের অভিযোগ, সিরিয়ানরা তুর্কিশ সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারেন না। আর তাদের কারণে সাধারণ তুর্কিদের জীবনমানে ছন্দপতন ঘটছে। সিরিয়ানরা অল্প বেতনে কাজ করতে রাজি হওয়ায় সমস্যা বাড়ছে চাকরির বাজারে। কিন্তু দেশের দুর্যোগময় সময়ে সেসব অভিযোগ মনে রাখেননি তুর্কিরা। গণতন্ত্রের বিজয় সিরিয়ান-তুর্কি মিলেমিশে উদযাপন করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় এ উৎসবে যোগ দিয়েছেন দেশটিতে থাকা বিদেশীরাও। তবে সিরিয়ানদের উদযাপন ছিল লক্ষ্য করার মতো। তারা চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে, ঢোল-তবলা বাজিয়ে, নেচে-গেয়ে উদযাপন করেন শনিবার রাতটি। তুরস্কের পাশাপাশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও প্রবাসী তুর্কিরা রাতটি উদযাপন করেন। এক সময় তুর্কি সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা ইউরোপের বলকান দেশগুলোতে মানুষ এরদোগানের সমর্থনে রাস্তায় নেমে আসেন বলে জানায় স্থানীয় টিভি চ্যানেল সিএনএন তুর্ক।

বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি ব্যর্থ এ অভ্যুত্থান চেষ্টাকে সমর্থন করেনি দেশের গণমাধ্যমগুলোও। তুরস্কের সবচেয়ে পুরনো এবং শক্তিশালী মিডিয়া গ্রুপ, যেটি এরদোগান সরকারের কট্টর বিরোধী বলে পরিচিত ‘দোয়ান মিডিয়া’ হাউসের প্রধান আইদান দোয়ান এক বিবৃতিতে ক্যু প্রচেষ্টার নিন্দা জানিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানান। দেশটির অন্যান্য মিডিয়াগুলোকেও একই ভূমিকা নিতে দেখা যায়।

শুক্রবার রাতের ওই অভ্যুত্থান চেষ্টার পর শনিবার সকালেই ইস্তাম্বুলের বিভিন্ন জায়গার চিত্র ছিল অনেকটা স্বাভাবিক। বিকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয় শপিংমল, চেইনশপ বা অন্যান্য দোকানগুলো খোলা দেখা যায়। যেগুলোতে মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মতো। এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট করে এমন একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করা এক বাংলাদেশী জানান, শনিবার সকালে তাকে অফিসে যাওয়ার জন্য ফোন দেয়া হয়।

অভ্যুত্থানে বিদ্রোহীদের হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের সমাহিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জানাজায় অংশ নিচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। জানাজা শেষে তাদের ভাষায় দেশের জন্য শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত কথাবার্তা বলতে দেখা যায়। তারা অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগানও দেন। এরদোগানসহ সরকারি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জানাজায় অংশ নিতে দেখা যায়।

অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অভ্যুত্থানকারীদের ব্যঙ্গ করে নানা স্ট্যাটাস ও ছবি আপলোড করতে দেখা যায় সরকার সমর্থকদের। যেখানে অভ্যুত্থানকারীদের শিশু, অবুঝ ইত্যাদি বলে ভর্ৎসনা করা হচ্ছে।

অভ্যুত্থান চেষ্টার পর রোববার দ্বিতীয় দিন পার করেন তুর্কিরা। ঠিক বাইরের পরিবেশ দেখে বোঝার উপায় নেই একদিন আগে কী ঘটতে যাচ্ছিল দেশটিতে। যে যার মতো সবাই ব্যস্ত, কফিশপগুলোতে মানুষের ভিড় আগের মতো। তবে এরদোগান সমর্থনকদের একটি অংশ এখনও মাঠে। শংকা না থাকলেও প্রেসিডেন্টের প্রতি নিজেদের সমর্থন প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে তারা মাঠে থাকতে চান বলে জানান এক বিক্ষোভকারী। প্রধানমন্ত্রী বিনালির পর প্রেসিডেন্ট এরদোগানও বিরোধী দলগুলোকে ধন্যবাদ দেন ক্যু এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য। এ সময় গণতেন্ত্রর প্রতি আস্থা রাখায় বিরোধীদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তুরস্কের প্রধান নিয়ন্ত্রক।

আজকের যুগান্তরে প্রকাশিত, তুরস্কের রাজপথে গণতন্ত্রের জয়গান

http://ejugantor.com/2016/07/18/index.php

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৫৫

তানভীরএফওয়ান বলেছেন: when we will find this type of leader and citizen?

১৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১:০৭

সরোজ মেহেদী বলেছেন: আমি কিন্তু আশাবাদী!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.