নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ

সরোজ মেহেদী

The inspiration you seek is already within you. Be silent and listen. (Mawlana Rumi)

সরোজ মেহেদী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃষ্টিভেজা চা ও কাকভেজা বাবার গল্প

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:২৯

তখন বিকেল। সন্ধ্যা আসবে আসবে করছে। আকাশের একভাগে মেঘের উড়াউড়ি, আর ভাগে রৌদ্দূর রৌদ্দূর খেলা । হুমায়ূন আহমেদ খুব ক্ষীণ স্বরে ডাকলেন, হিমু শোন। আমি মাথা না তুলেই দু’কদম এগুলাম। তারপর বিরবির করে বললাম, আপনাকে না কতদিন বলেছি আমাকে হিমু ডাকবেন না। এই দেখেন আমার পায়ে জুতা। গায়ে ফরমাল প্যান্ট আর শার্ট। তিনি হাসলেন, মাথাটা নুইয়ে, শব্দহীন হাসি। জ্বি, হ্যাঁ। লেখক হুমায়ূন আহমেদের কথাই বলছি। সময় কাল ২০১০ এর এক বরষা বিকেল।

হাসিটা মুখে ধরে রেখেই এক পা বাড়িয়ে আমার আর একটু কাছে আসলেন হুমায়ূন। আমার মাথায় হাত রেখে আবারও সেই শব্দহীন মুচকি হাসি। খুব শীতল এক স্পর্শ পাই আমি। কেমন যেন ভারী ভারী লাগে। এই দুনিয়ায় মানুষের ভালোবাসা তেমন পাইনি। রগচটা, মুখছুটা, ঘাড়বেকা এমনসব কথা বলে মানুষ দূরে সরে গেছে। নানা ছুতোয় নিজের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করেছে। এতসবের মাঝেও কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা মায়ার বাঁধনে বেঁধে ফেলেন। তিনিও আমার জীবনে একজন।

খুব অল্পদিনের চেনা। তবু কত আপন হয়ে গেছেন। সেদিনও বিকেল। স্যার সৌহরাওয়ার্দী উদ্যান ধরে হাঁটছেন। একা, সাথে কেউ নেই। হঠাৎ বৃষ্টি নামলে আমি দৌড়ে গিয়ে তার মাথায় ছাতাটা ধরলাম। তিনি বললেন আরে এমন মানসিকতার ছেলেপেলে আছে নাকি এই যুগে। কী নাম তোমার। জ্বি স্যার মেহেদী। তারপর খপ করে আমার হাতটা ধরে ফেললেন। হাসি দিয়ে বললেন, কই মেহেদী? কোথাওতো দেখি না। হা হা। বৃষ্টিতে উঠে গেছে নাকি? স্যারের মশকরা ভালই লাগে আমার। নায়ক মেহেদী নাচার নাম করে নায়িকার দুধ ধরে ফেলেছে, সে কাহিনী বন্ধুদের মুখ থেকে বারবার করেই শুনতে হত স্কুলের হোস্টেলে। কেউ কেউ মাঝে মধ্যে নেচেও দেখাত।

সেই পরিচয়। তারপর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ স্যারের সাথে। তার মন খারাপ থাকলে আমাকে ফোন দেন। আবার আমার মন খারাপ কি না তা জানতেও ফোন দেন। আজকের বিকেলটাও তার ফোনেই দু’জনের কাছাকাছি আসা। ফোন দিয়ে বললেন চলো, আমরা ঘুরে বেড়াই।

এই অন্ধকার সন্ধ্যায় আমরা প্রেসক্লাবের অপজিটে সচিবালয়ের রাস্তা ধরে হাঁটছি। ঝুম বৃষ্টি। আশাপাশের কিছু মানুষ বারান্দা থেকে উঁকি মেরে রং দেখছে। একজন বুড়ো আর একজন সদ্য যুবক। দু’জনের বাচ্চাদের মতো খামখেয়ালি করছে বৃষ্টির সাথে। তিনি ভাঙা গলায় গান ধরেছেন, আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালা, ভাঙা বেড়ার ফাঁকে, অবাক জোছনা ঢুইকা পড়ে, হাত বাড়াইয়া ডাকে। আমিও বেসুরো গলায় গলা মিলাচ্ছি।
হিমু।
জ্বি স্যার।
কেমন লাগছে বলতো।
খুব ভালো, স্যার।
চলো আমরা ওসমানি উদ্যানে যাই।
চলেন স্যার।
ওসমানি উদ্যানের খলিল আমাদের দেখে এগিয়ে এল। হাতে দু’কাপ চা। চায়ের উপর বৃষ্টির ফোটা পড়ছে। স্যার তাকিয়ে দেখছেন। ততক্ষণে সব ঠাণ্ডা। তিনি হঠাৎ খুব তাড়া দিয়ে বললেন হিমু নে নে চা নে। আমি চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি আমার কাঁধে হাত রেখে ঠাণ্ডা চা আয়েশ করে খাচ্ছেন। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে কান্না করার একটা সুবিধা হচ্ছে কেউ বুঝে না। চা শেষ করে আর থামলেন না হুমায়ূন। হনহন করে চলে গেলেন। কিছু কাকভেজা পাখির সাথে আমি বসে আছি রেন্ট্রি গাছের গোড়ায়। আচ্ছা লেখকেদের কি মানুষের অতীত জানার ক্ষমতা থাকে? ছোটবেলায় আম্মা ধমকাতে ধমকাতে বলতেন, তার পীর বাবা সব জানেন, মানুষের ভাগ্য বলে ও বদলে দিতে পারেন। কিন্তু পীরদের প্রতি কোনদিনও বিশ্বাস জাগেনি আমার। কেন জানি মনে হতো ওরা মিথ্যা বলে, মানুষ ঠকায়। ডাক্তার যেমন চেম্বার খুলে সেবার নামে ব্যবসা করে, ওরা করে দরগা খুলে, ধর্মের নামে।

বৃষ্টির গতিটা বেড়েছে। আকাশ যেন শঙ্খচূড় সাপের মতো হুহু করে ডাকছে। এখন খুব জোড়ে কান্না পাচ্ছে। ছোটবেলার বৃষ্টিদিনগুলো যেন স্মৃতির ঢালি খুলে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বৃষ্টি নামলে আব্বা আমাকে ডাকতেন হিমু বলে। কোন কোন বৃষ্টি বিকেলে বেরিয়ে পড়তেন ছেলেকে নিয়ে। তারপর কোন এক রাস্তায় মোড়ে দাঁড়িয়ে চা নিতেন দু’কাপ। চায়ের কাপে বৃষ্টির ফোটা পড়ছে আর তিনি দেখছেন। হঠাৎই বলতেন হিমু নে নে চা নে। তারপর আমার কাঁধে হাত রেখে আয়েশ করে চা খেতেন। খেতে খেতে বলতেন বুঝলি হিমু এটা হলো সরকার আবুল কাশেমের আবিষ্কার। বৃষ্টি চা। হাহা, হাহা।

আব্বা নেই ১০ বছর। সেই ছোট্ট আমি কত বড় হয়ে গেছি। এতদিন পর আবার নিজেকে শিশুর মতো লাগছে। আমি হুমায়ূনের হেঁটে যাওয়া পথের দিকে তাকাই। চোখ দু'টো বুঝে আসতে চায়। ঠিক সেখান দিয়েই যেন হুমায়ূনের নামটাও কোনদিন না শোনা আমার বাবা সরকার কাশেম হেঁটে যাচ্ছেন।


(জন্মদিনের জোছনা মাখা শুভেচ্ছা প্রিয় লেখক)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৪

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: লেখাতো চমৎকার, কিন্তু আমার যথেষ্ট খটকা লাগছে, আজ হুমায়ুন আহমেদেরও জন্মদিন অথচ আপনার গল্পে তারই উপস্থিতি আর শেষে বললেন ১০ম মৃত‌্যুবার্ষিকী :(

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ২:০৯

সরোজ মেহেদী বলেছেন: এন্ডিংটাকে আগের জায়গায় নিয়ে গেলাম! প্রতিমন্তব্য পেলে ভালো লাগবে। ধন্যবাদ।

২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২৯

কালীদাস বলেছেন: ভালই :)
মৃত্যুবার্ষিকীর ভুলটা ঠিক করেন।

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ২:১৩

সরোজ মেহেদী বলেছেন: শুরুতে এন্ডিং ছিল এখন যেটা আছে সেটা! :)

৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩১

সাদা মনের মানুষ বলেছেন:

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৭

সরোজ মেহেদী বলেছেন: ভালোবাসা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.