নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
The inspiration you seek is already within you. Be silent and listen. (Mawlana Rumi)
আমি যখন স্নাতক করি, আমাকে কেউ কখনো ঘুণাক্ষরেও বলেনি, একজন গবেষক হওয়ার সাধারণ ধারাটা কি। কেন বলেনি আমি জানি না। আমি হলফ করে বলতে পারি, দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখনো এই বিষয়গুলো বলা হয় না। তাদেরকে বুঝতে দেয়া হয় না। কেউ যদি নাই জানে, একজন গবেষক হওয়ার সাধারণ পদ্ধতিটা কী, তাহলে সে সারাজীবন স্বপ্ন দেখলেও কিছু করতে পারবে না। সুতরাং তাকে আগে জানতে হবে। আমার বিশ্বাস, লক্ষ তরুণ-তরুণীর মাঝে অনেকেই বিজ্ঞানী হওয়ার একটা স্বপ্ন পুষে। সেই ছেলে-মেয়েগুলোর কথা ভেবেই এই অণুলেখা।
বড়ো গবেষক বা বিজ্ঞানী হওয়ার একটা ধারা আছে। অলিখিত নিয়ম আছে। সেটা হলো, একজন শিক্ষার্থী যত দ্রুত সম্ভব পিএইচডি শেষ করবে। যত দ্রুত শেষ করা যায় ততো ভালো। পঁচিশ-ছাব্বিশে শেষ করতে পারলে বেস্ট। আটাশের উপরে না যাওয়া হলো সর্বোত্তম! পিএইচডি শেষে অন্তত একবার/দুইবার পোস্টডক করতে হবে। তারপর স্বতন্ত্র গবেষণা শুরু করার জন্য ফান্ড/গ্র্যান্ট ম্যানেজ করে নিজের আইডিয়া অনুযায়ী কাজ করে যেতে হবে। গবেষণার দুনিয়ায় এটা হলো ধারা।
বয়সের ফ্রেমে কী গবেষণা আটকানো যায়? —না, তা যায় না। যে কোন বয়সেই গবেষক হওয়া যায়। তবে যতো তরুণ বয়সে শুরু করা যায় ততোই বড়ো হওয়ার সম্ভাবনাটা থাকে বেশি। তারুণ্যের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেকগুলো কারণে, যেগুলো এই সংক্ষিপ্ত লেখায় তুলে ধরা যাচ্ছে না। কেউ যখন নিজে গবেষণায় যুক্ত হবে তখনই সে বিষয়গুলো আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারবে।
সাধারণ ধারার বাহিরে যে দুই-একজন বড়ো বড়ো গবেষক/বিজ্ঞানী বের হয় না, তা নয়। তবে তারা ব্যাতিক্রম। যেমন, মারি কুরি পিএইচডি করার সময়ই জগৎখ্যাত উদ্ভাবন করেছেন। তার পিএইচডি’র কাজ দিয়ে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আইনস্টাইন ঘরে বসে বসে গণিতের সূত্র মিলিয়ে তার বিখ্যাত তত্ত্ব উদ্ভাবন করেছেন। সেজন্য তাকে কারো অধীন কাজ করতে হয়নি। এগুলো হলো ব্যাতিক্রম চরিত্র।
কয়েকজন গবেষকের অধীন কাজ শেখার লক্ষ্য রাখতে হবে। চলমান দুনিয়ার বেশিরভাগ খ্যাতনামা গবেষকদের প্রোফাইল ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখবে, তারা এক প্রফেসরের অধীন ব্যাচেলর পর্যায়ের গবেষণা করে। পিএইচডি করে অন্য এক অধ্যাপকের অধীন এবং পোস্টডক করে আরেকজনের ল্যাবে। এতে করে একজন শিক্ষার্থীর কাজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ব্যাপ্তি বাড়ে। বড়ো বড়ো গবেষকদের অধীন কাজ করতে পারলে বড়ো হওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে। এটা হলো আরেকটি বাস্তবতা। তুমি যদি একশোজন নোবেল বিজয়ীর জীবনী পড়ো, তাহলে দেখবে তারা কাজ করেছেন খ্যাতনামা সব বিজ্ঞানীদের অধীন। দুনিয়ার অলিখিত নিয়ম হলো, যতো বড়ো গাছের শিকড় তুমি, তত বেশি তোমার বিস্তৃতি, ততো বেশি প্রতাপ! তাছাড়া, কেউ যখন বড়ো বড়ো গবেষকদের ল্যাবে কাজ করতে যায়, সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় কালের সেরা মেধাবীদের। তাদের সাথে থাকলে তোমার ভাবনার জগতটাই পাল্টে যাবে। মেধা হবে শাণিত!
গবেষণার একটা ট্রেন্ড থাকে। এখানেও হাল ফ্যাশন বলে কথা আছে। সেটা বুঝার জন্য, গবেষেকদের সাথে যোগাযোগ, তাদের সম্পর্কে জানা, তাদের কাজ দেখা বা বুঝার চেষ্টা করা, তাদের কথা শুনা ইত্যাদি খুবই গুরুত্বপূর্ন দিক। তুমি দিনরাত খেঁটেখুঁটে পণ্ডশ্রম করে গেলে হবে না। তুমি যা ভাবছো, সেটা কী অন্যরা যথারীতি করে ফেলেছে কিনা, বা সেটার গুরুত্ব আছে কিনা সেটা জানতে হবে। তালপাতা দিয়ে জামা বানানো ব্যাতিক্রম বিষয়, তবে কথা হলো সেটা কেউ ব্যবহার করবে কিনা সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। কাজটা করার আগে ভাবতে হয়, is it really worthy to continue?
সামান্য এই কথাগুলো হলো বাস্তব দুনিয়ার হিসেব-নিকেষ। এর বাইরে, আবেগী দুনিয়ায় বহু কথাই বলা যাবে। সেগুলো শুনতে বেশ ভালো লাগে তবে বাস্তবে কাজ দেয় খুবই কম। বাস্তব দুনিয়ার সত্যটা হলো, যতো শ্রম, ততো মধু। যতো বড়ো লক্ষ্য, ততো বড়ো চেষ্টা!
লেখক, রউফুল আলম। পোস্টডক রিসার্চার, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া। লেখকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে হুবুহু লেখাটা তুলে দিলাম।
২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ ভোর ৪:২৫
সরোজ মেহেদী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৩০
রিফাত হোসেন বলেছেন: খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। +++
অনেকেরই উদ্দেশ্য থাকে না, পড়ার কথা পড়ে!
সাথে মূল লেখকেও ধন্যবাদ, জনাব রউফুল আলম। পোস্টডক রিসার্চার, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া।