নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ

সরোজ মেহেদী

The inspiration you seek is already within you. Be silent and listen. (Mawlana Rumi)

সরোজ মেহেদী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোলাপ কথন

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:১৫

নিউ মিডিয়া নিয়ে একটা সেমিনার শেষে বেরিয়েছি মাত্র। স্নিগ্ধ একটা হাসিসহ এই ফুলখানি আমার হাতে তুলে দিল ডেপ্ট এর এক মেয়ে। সোজা বাংলায়, নিজ বিভাগের ছোট বোন। আমি কতটা আবেগী জানি না, তবে এই ফুল হাতে নিতে নিতে চোখজোড়া বুঝে আসছিল। পরিচয়ের দু’বছর পেরিয়ে গেছে। হঠাৎ কি এমন হলো যে ফুল! তাও লাল গোলাপ? আবার এই ভর দুপুরে। আমি আধা চোখ বোঝা অবস্থায় ভাবার চেষ্টা করছি। ও সামনেই দাঁড়িয়ে। কারদিকে তাকিয়ে কী যেন বলল বোধহয়।

ডেপ্টে যখন প্রথম আসি তখন কিছুই চিনিনা। মিডিয়া ল্যাব খুঁজতে গিয়ে ওর সাথে পরিচয়। আমি তার্কিশ জানি না আর তুর্কিরা ব্যতিক্রম ছাড়া জানে না ইংরেজি। ও জানত বলেই পরিচয় হয়, এগিয়ে আসে বেশ আন্তরিকতা নিয়ে। এরপর আমি ডেপ্টে চিনেছি, ২/১ জন শিক্ষকের সাথে ভালো পরিচয়ও হয়েছে। ওর সাথে আগের মতো যোগাযোগটা না থাকলেও আন্তরিকতাটা ছিল, অন্তত আমার পক্ষীয়। ওর-আমার সম্পর্কটা যেন বেজে উঠা সেই গান ‘যখন তোমার কেউ ছিল না তখন ছিলাম আমি, এখন তোমার সব হয়েছে পর হয়েছি আমি’। মাঝেমধ্যে হঠাৎ দেখা হলে মনে হতো ও যেন আমার উপরে রেগে আছে। ওর হাসিটার মধ্যে এক ধরনের অভিমান লুকানো। আমিও মান নিয়ে সব এড়িয়ে গেছি।

এই আড়াই বছরে কতকিছু ঘটে গেছে। আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা তার্কিশ আর ইংরেজি মিলিয়ে গেস্ট লেকচারার হিসেবে ওদেরই একটা ক্লাস নিয়েছি। আমি ওই বিভাগের ছাত্র হয়ে সেই বিভাগের ক্লাস নেওয়ার অফার পাওয়ার অনুভূতি আরেকদিন বলি। আজকের এই গোলাপ ইতিহাসের আপাত দাড়ি টানা দরকার। আমি ঠিক ভাবতে পারছিলাম না, ওকে কী বলা উচিৎ। কিছু বলতে গিয়ে আবেগী হয়ে গেলে সমস্যা। আশপাশে প্রচুর মানুষ। দেখা গেল আমি কাঁদলাম আর সবাই হাসল। তাহলে কী করা উচিৎ আমার? না, শেষ পর্যন্ত আমাকে কিছুই করতে হলো না, হলো না কিছু বলতেও। আরেকটা হাসি দিয়ে ও’ই বলল, পবিত্র শবে মেরাজের শুভেচ্ছা ভাইয়া। এবার বোজা চোখ খুলে গেল। গোলাপের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালাম। নবী মুহাম্মদ ১৫শ বছর আগে মেরাজে গিয়েছিলেন আর আজ আমি তার গোলাপীয় শুভেচ্ছা পেলাম!

ফুলটাকে ব্যাগের ভেতরে রেখে বাইরে এসে দেখি সবাই-সবাইকে ফুল দিচ্ছে। প্রায় সবার হাতেই শুভ মেরাজের ফুল। বাংলাদেশে মেরাজ নিয়ে মোল্লা-মৌলভীদের বহু ওয়াজ-নসিহত শুনেছি। জিলাপী খাওয়ার লোভে ঘুমে টলটল চোখ নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত মসজিদে বসে থেকেছি। যেই জিলাপী শেষ হতো, আমরা ছেলের দলের মেরাজ পালনও তেমনি শেষ হয়ে যেত। কিন্তু মেরাজ উপলক্ষে গোলাপীয় শুভেচ্ছা এই প্রথম। জীবনে প্রথমতো আরও কতকিছুই। সেসব বলে কী হবে?
ফেরার সময় ডক্টরেট করছে এক ভাইয়ের সাথে দেখা। আমি তাকে ফুলটা গিফট করে দিলাম। তিনি কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে তা দিয়ে দিলেন ক্যান্টিনের বয়কে। ক্যান্টিন বয় ফুল পেয়ে দারুণ খুশি। বিশাল হাসি দিয়ে ৩/৪ বার বলল চোখ তেশেক্কুর এদেরিম (আপনাকে অনেক ধন্যবাদ) । ওহহো, আমারওতো ফুলওয়ালীকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ ছিল!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:০৬

সাহসী সন্তান বলেছেন: শিরোণাম দেখে ভাবছিলাম সম্ভাবত "গোলাপ ফুল" সম্পর্কিত কোন ফিচারই পড়তে চলেছি! আর সত্যি বলতে পোস্টে ঢুকছিলামও সেটারই আশায়! তবে এসে যে একেবারে নিরাশ হইছি তা বলা যাবে না! বেশ চমৎকার গোছানো একটা লেখা!

তবে আমাগো দেশের মোল্লারা যদি একবার জানবার পারে বৈদেশে আপ্নারা শুভ মেরাজের নামে ফুল দিয়া 'নাউজুবিল্লাহ্' মূলক কাজ-কর্ম কইরা বেড়াইতেছেন, তাইলে যে কপালে কি জুঠবে কইবার পারি না!

সে যাহোক, তবে ফুলটা দেওয়ার জন্য আপনি ফুল ওয়ালীকে ধন্যবাদ জানাইতে ভুল করলেও লেখাটার জন্য অবশ্য আপনাকে একটা ধন্যবাদ জানাইতে ভুল করলাম না! ;)

শুভ কামনা জানবেন!

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৪৩

সরোজ মেহেদী বলেছেন: সত্যই বৈচিত্রপূর্ণ মন্তব্য। ভালোবাসা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.