নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
The inspiration you seek is already within you. Be silent and listen. (Mawlana Rumi)
১. মানুষের মুখ বড় ভয়ঙ্কর। সে বলতে চায়। যা জানে, তা। আর যা জানে না, তা আরও বেশি। ফেসবুক জ্ঞানে টইটুম্বুর করা এই সময়ে আমারও কতকিছু মন চায়। খুব বেশি চাইলে নিজেকে সুবোধের মতো স্বান্তনা দেই। সুবোধ তুই কী জানস ব্যাটা মূর্খ, চুপ থাক, চোখ বোজে থাক, নিরাপদ থাক।
তবু মানুষ বলে কথা, এই যেমন আজ বলছি। ভীতি ও প্রীতি দু’টোই বেশ আক্রান্ত করে আমাকে। আজও আক্রান্ত হওয়ার ভয় নিয়েই লিখছি। যখন লিখছি তখন পুরো দুনিয়া ট্রাম্পের জেরুজালেম ঘোষণা নিয়ে উত্তাল। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর আঘাতে কয়েকশ প্রতিবাদকারী আহত হয়েছে, নিহতও হয়েছে কয়েকজন। ধর্ম প্রশ্নে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান বলে এদেশেও এর বাতাস লেগেছে পুরো দমে। ফেসবুক সরগরম, অনেকে প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করেছে। এই যে এসব হচ্ছে, এর সবই ধর্মীয় নৈকট্যের কারণে। আহতদের করুণ ছবি আর ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসী মূর্তি ফুটিয়ে তুলতে আমরা ব্যস্ত। তবে এর বিপরীত চিত্রও আছে। যারা ধর্মে মুসলমান না এ দেশে, মোটা দাগে তারা এ ইস্যুতে চুপচাপ। এই চুপচাপ থাকাটাও কিন্তু ধর্মীয় বোধ থেকে। তবে এপার বাংলার সংখ্যালঘুরা চুপচাপ হলেও সীমান্তের ওপারে বাংলা ভাষাভাষী সংখ্যাগুরুরা বেশ সরব। তাদের অনেকেই ট্রাম্প পূজার ডাক দিয়েছেন নতুন করে। উল্লাস প্রকাশ করে বলছেন, শতাব্দীর সেরা কাজ করেছে ট্রাম্প। কেউ কেউ ঐতিহাসিকভাবে জেরুজালেম ইহুদিদেরই পবিত্র স্থান এ বিষয়টিও প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে চলছে দুই বাংলার মানুষের মধ্যে যুদ্ধ। আসলে মানুষ না, দুই বাংলার হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে। এক্ষেত্রে দুই পাড়ের সংখ্যাগরিষ্ঠরা সরব হলেও, সংখ্যালঘুরা চুপচাপ। মাইরের ভয় বলে কথা।
২. এই যে কথার যুদ্ধ চলছে তার রংটা রাখঢাক ছাড়াই ধর্মীয়। দুই বাংলার সীমান্ত এক হলে হয়তো কথা থেকে হাতাহাতি তারপর কাটাকাটি হতো। জেরুজালেমে যে রক্ত ঝরল তা নিয়ে উল্লাস প্রকাশের যে উন্মত্ততা তার উপাদান একজন মানুষ ধর্ম থেকে পেয়েছে। নিজ ভূমি থেকে একদল মানুষকে বিতারিত হতে দেখে আরেকদল মানুষের যে উল্লাস তার কারণ ধর্মীয় ভিন্নতা। এরা ধর্মের জন্য মানুষকে জবাই করতে পারে, মাকে ন্যাংটা করে নাচাতে পারে, বোনকে ধর্ষণ করতে পারে। ধর্মের নামে লুটপাট আর রাহাজানি একটা কমন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে আজকাল। বাংলাদেশের মানুষ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবু তাদের ৭১ এ দেখতে হয়েছিল আরেক দল মুসলমানের কাছ থেকেই ধর্ম নামীয় বর্বরতা। যে বর্বর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে একটি দেশের জন্ম হলো সে দেশেও বিভিন্ন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর উপরে একই বর্বরতা বারেবারে চাপিয়ে দেওয়া হলো। মাত্র ক’দিন আগে রংপুরে ধর্মীয় পবিত্রতা রক্ষার নামে কতগুলো বাড়িঘরে আগুণ দেওয়া হলো, লুটপাট চললো, গরীব একদল মানুষকে নি:স্ব করা হলো। স্বদলবলে যারা এভাবে হামলে পড়েছিল, আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলাচ্ছিল তারা এর সবই করেছিল ধর্মের নামে, ফলে তাদের মধ্যে কোন অন্যায়বোধ নেই। তারা সবই করেছে পবিত্র দায়িত্ব থেকে। এখানেই আমার ভয়টা। এই ভয় ধর্ম কীভাবে মানুষকে মানুষ খেকো বানিয়ে দেয় সে ভয়। ধর্ম হচ্ছে এমন এক নেশা, যা নিরীহ এক গরুকে পবিত্রতার প্রতীক বানায় শুরুতে। তারপর সে গরু রক্ষার নামে মানুষকে খুন করে, সে খুনের জন্য গর্ব করতে শেখায়।
৩. এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে আশ্রিত। তাদের সাথে যা করা হয়েছে তা পবিত্র ধর্ম রক্ষার নামে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক রোহিঙ্গা নারীর গর্ভে বর্মি সেনাদের অবৈধ সন্তান। তারা রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করেছে ধর্মীয় পবিত্রতা রক্ষার নামে। বার্মাকে মুসলিম মুক্ত করে তার পবিত্রতা রক্ষা করতেই তারা রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে মারছে। রোহিঙ্গাদের সাথে যা হয়েছে তা এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় বর্বরতা। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ বর্মিরা এ বর্বরতার পক্ষে প্রকাশ্যে সাফাই গাইছে। তাদের সেনাবাহিনীকে জাতীয় বীরের মর্যাদা দিচ্ছে। এই যে তাদের এমন অমানবিক অবস্থান তা কিন্তু ধর্মের জন্যই। বলছে, তারা অপবিত্র রোহিঙ্গা মুক্ত বৌদ্ধ পূন্য ভূমি মিয়ানমার পুন:প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
রোহিঙ্গাদের উপর চালানো বর্বরতার কোন ভিডিও আমি দেখিনি, ছবিও খুব একটা দেখিনি। না দেখেও মাঝেমধ্যে সংবাদপত্র পড়ে চোখে পানি এসেছে। কখনো মনে হয়েছে, সম্ভব হলে যুদ্ধ যাই, গিয়ে বলি আমিও রোহিঙ্গা, অধিকার দে। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে এ ঘটনায় দু:খিত হওয়া ছাড়া, নিন্দা জানানো ছাড়া, প্রতিবাদে ফেটে পড়া ছাড়া আর কীইবা করতে পারি! দেখে ভালো লেগেছে, বাংলাদেশের মানুষ এদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছে। একটা মানবিক জায়গা থেকে প্রধানমন্ত্রী তাদের এদেশে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু ওই যে বলছি, এখানে মানবতার চেয়েও ধর্মটাই আমাদের মূল আবেগের কারণ। রোহিঙ্গারা মুসলমান না হলে সংখ্যাগরষ্ঠি বাঙালি মুসলমান টু শব্দটিও করত না। তারা বরং মুচকি হাসত। আজ যা করছে ওপার বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা।
আমি এই প্রজন্মের মানুষ। তবু মানতে পারি না, শুধু ধর্মের কারণে ভাগ হয়েছিল আমার দেশ। কিন্তু রোহিঙ্গা ও জেরুজালেম ইস্যু আমাকে ৪৭ এর বাস্তবতায় নিয়ে যায়। বুঝতে বাধ্য করে, এখানে ধর্মই সব। যে ধর্ম মুসলমানদের রোহিঙ্গা প্রশ্নে কাঁদাচ্ছে, সে ধর্ম হিন্দুদের বলছে, বুনো উল্লাস করতে। একদল মানুষকে জবাই করা হচ্ছে এ যেন আনন্দের বিষয়। ওপার বাংলার বাঙালি হিন্দুদের এমন উল্লাস দেখে শুরুতে ভেবেছিলাম, একই ভাষাভাষির হওয়ায়, বিভিন্ন সামাজিক গ্রুপে বাংলাদেশের মানুষের সাথে প্রতিনিয়ত তাদের ঝগড়া লেগে থাকে। হয়তো এজন্য তারা এমনটা করছে। কিন্তু না, এটা ছিল বিজেপি সমর্থক সব ভারতীয় সনাতনীর অভিব্যক্তি। তারা যেন বর্মি সেনাদের রোহিঙ্গা নিধনের অভিযোগ থেকে নৈতিক মুক্তি দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছে। টুইটার, বিভিন্ন পশ্চিমা গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংগঠনসহ নানা জায়গা বিজেপি সমর্থক হিন্দুরা বর্মিদের চেয়েও বেশি সক্রিয়। তারা নানাভাব বোঝানোর চেষ্টা করছে, রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসী, বর্মি সেনারা যা করছে এটা তাদের আত্মঅধিকার। খৃস্টানদের একটি অংশকেও দেখেছি, বর্মি সেনাদের পক্ষে লড়তে।
হায় ধর্ম, কেমন মানবিকতা সে শেখায় একজন মানুষকে! যে ধর্ম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের রোহিঙ্গা হত্যায় কাঁদাল সে ধর্মই তাদের একজন বর্মির মৃত দেহ দেখে সুবানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ বলে উল্লাস করতে বলল। রোহিঙ্গাদের বিতারণ দেখে যে মুসলমানরা কাঁদছে, তারাই সমস্বরে দাবি তুলল, নিজ দেশের পাহাড়ি-বৌদ্ধ সংখ্যালঘুদের বার্মায় বিতারণের। এসব সংখ্যালঘুদের রাস্তা ঘাটে দেখে হয়রানি করাটা নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে নিল। এসবই তারা করেছে ধর্মের নামে। তারা নাফ নদীর ওপারে রোহিঙ্গা বাড়িঘরে আগুন থেকে ক্ষুব্ধ হয়, কী সেলুকাস! বাড়ির পাশের সাঁওতাল পল্লীর আগুন চোখে পড়ে না!
৪. ভারতে একটি হিন্দু মৌলবাদী গোষ্ঠী ক্ষমতায়। পবিত্র হিন্দু সরকার যাকে বলে। বাংলাদেশে মুসলমান মৌলবাদীদের মোটাদাগে প্রতিনিধত্ব করে জামায়াতে ইসলামি। স্বাভাবিক বোধে এই দুই ধর্ম গোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক থাকার কথা। কিন্তু জামাতিরা দিনরাত বিজেপির সমালোচনায় মুখর। আর গেরুয়া বিজেপি জামায়াতকে মনে করে এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। জামায়াতিরা বিজেপিকে মৌলবাদী বলে গালি দেয় আর আরএসএস-বিজেপি দেয় জামাতিদের। এই দুই দলই দাবি করে, ধর্ম ওদের মানবিক করে, সাচ্চা মানুষ বানায়, শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত করে। আবার এই খাঁটি মানুষগুলোই একে অপরের উপস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়, অস্তিত্ব সংকটে ভোগে! এ থেকে কী বুঝে নেব আমরা???
১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:১৩
সরোজ মেহেদী বলেছেন: ধর্মের মূল শিক্ষার মধ্যে "আমিই সত্য ও সেরা" এই সুপ্রিমিসি ক্রাইসিস ভয়ঙ্করভাবে বিদ্যমান। আর এটাই সংঘাতের অন্যতম কারণ।
২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: ইদানিং মনে হচ্ছে- পৃথিবীতে ধর্ম না থাকলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।
১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:১৪
সরোজ মেহেদী বলেছেন: দুনিয়াজোড়া ধর্মীয় উগ্রবাদের যে উত্থান হচ্ছে, তার পরিণতি ভেবে শঙ্কিত হই।
৩| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:০১
প্রামানিক বলেছেন: ধর্ম খারাপ নয় ধর্মীয় লোকগুলো খারাপ।
১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২৮
সরোজ মেহেদী বলেছেন: তাদেরকে তাহলে খারাপ বানায় কে! কী করে তারা এতো নৃশংস হতে পারেন?
৪| ০৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:১৯
মো মুসফিকুর রহমান রুম্মান বলেছেন: কাজী নজরুল ইসলাম আজীবন আমাদের এই শিক্ষায় দেওয়ার চেস্টা করে গেছেন...
মানবতাই আগে সেটা আমিও মানি। আর ইসলাম ধর্মও ভালোভাবে বুঝে মানি। তাই বলে তো আমি উগ্রবাদী নয়।
কিন্তু একটা বিষয় আপনার থেকে জানতে ইচ্ছা করছে আপনি মানবতা বিবেককে কাজে লাগিয়ে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেন নাকি করেন না?
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:৩৭
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ধর্মের মূল শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেলে এসব শুরু হয়। তার সাথে থাকে রাজনৈতিক কারণ...