নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ

সরোজ মেহেদী

The inspiration you seek is already within you. Be silent and listen. (Mawlana Rumi)

সরোজ মেহেদী › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীনতা, দেশপ্রেম আর চালচুলোহীন এই আমার লাজের বেসাতি!

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২২

সদ্যোজাত এক শিশুকে তার মা রাস্তার ধারে ফেলে পালিয়ে গেছে শুনে আমি লজ্জিত হই। কখনো গভীর রাতে হঠাৎ নামা বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য কোন মার্কেটের বারান্দায় মূর্তির মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোকে দেখে যতটা না লজ্জিত হই তার চেয়ে বেশি অনুতপ্ত হই। ভাবি একজন মানুষ হিসেবে আমার কী কিছুই করার ছিল না!

অন্তত এ প্রশ্নটুকু কী আমি তুলতে পারি না কেন আমরা দুর্নীতির জন্য পৃথিবীর সেরা দেশগুলোর একটি। কেন জ্যাম আর অনিয়মের জন্য বারবার শিরোনাম হই। আমার রাজনীতিবীদদের কাছে প্রায়ই জানতে ইচ্ছে করে, ৪৬ বছর পরেও কেন আমাদের নিয়ে অন্য একটি দেশের পার্লামেন্টে “আমাদের দেওয়া তাদের সাহায্য কমিয়ে আনা বা বন্ধ করা নিয়ে” আলোচনা হয়। ক্লাসের ফাঁকে আড্ডায় আমার একজন আফগান বন্ধুর করা “আফগানিস্থান না হয় যুদ্ধ বিধ্বস্থ কিন্তু এত বছর পরেও বলার মতো তোমাদের কোন উন্নতি নেই কেন,” প্রশ্নের উত্তর আমি আজও পাইনি।

এই যে আমার চাওয়া, লজ্জা বা অনুতপ্ততা এগুলোও প্রেম। দেশপ্রেমের সংগায় ফেলা যাবে কি না জানি না। একজন মানুষ হিসেবে জন্মেছি বলে আমার মধ্যে কোন গর্ববোধ নেই। গ্লানিবোধও নেই। একজন মুসলমান বলে, বাঙালি বলে, বাংলাদেশী বলে গর্ব করার কিছু আমি দেখি না, করিও না। বাবা মুক্তিযোদ্ধা বলে গর্বিত হওয়াটা আমার কাছে অথর্বতারই নামান্তর। একজন মানুষ হিসেবে যদি কোন মানুষের ক্ষতির কারণ না হই, তবে এতেই আমার স্ব:স্তি, গর্ব। একজন মানুষ হিসেবে আমি যদি আরকেজনের কাজে আসি তবেই আমার গর্ব। আমি আমার ক্ষুদ্র মেধা ও চেষ্টায় তা করারও চেষ্টা করি।


আর হ্যাঁ। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও এসে যখন দেখি একটি দেশ ১৬ ডিসেম্বরকে তাদের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করছে আর মুক্তিবাহিনী ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে সাহায্য করেছে দাবি করে বিবৃতি দেয় তখন বিস্মিত হই। আমার দেশের কর্ণধারদের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু দেশের মালিকদের নিশ্চুপ থাকতে দেখে আমার লজ্জায় কুঁকড়ে যেতে ইচ্ছে করে। ভাবি স্বাধীনতার মানে কি! জানতে ইচ্ছে করে, ক্ষমতার চেয়ারের স্বাদ আসলে কতোটা সুস্বাদু! আমাদের দেশপ্রেমিক তরুণ প্রজন্ম এসব এড়িয়ে যায়, এবেলা তাদের দেশপ্রেম জাগে না, কেন জাগে না নিচে ব্যাখা করছি।

বুঝ হওয়ার পর থেকেই দেখছি। যারাই বাঙালির বৃদ্ধিবৃত্তিক জায়গাটায় নাড়া দিতে চেয়েছেন, আক্রান্ত হয়েছেন। যারা দেশে চলমান বাস্তবতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন তাদেরকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। দেশকে নিয়ে গর্বিত বনে যাওয়া মেকি বাঙালি কখনো গভীরে যেতে চায় না। গেলে যে ন্যাংটি খুলে পড়ার ভয় থাকে। তারা গর্বিত, কোন কারণ ছাড়াই। গর্বিত দাবি করে, পতাকার রংগে প্রোফাইল পিকচার রাঙিয়ে নিজেকে দেশপ্রেমিক হিসেবে জাহির করার কী চেষ্টা বাঙালির মধ্যে। আমার কাছে, গর্ব হচ্ছে অথর্ব মানুষের ধর্ম, নিস্ফল বেঁচে থাকার একটা হাঁতিয়ারও। নিজের কাজটা ঠিক করে করা গেলে গর্ব করা লাগে না। পশ্চিমারা গর্ব করে কম, কাজ করে বেশি। তারা এটা করে বলেই আমরা তাদের ছায়ার স্পর্শ পেয়ে গোষ্ঠীসুদ্ধ ধন্য বনে যাই।



আর যে তরুণ প্রজন্ম, তাদের নিয়ে যারা আশাবাদের কথা বলেন, তাদের আমার কাছে মোটা দাগে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মনে হয় বা বুদ্ধিবেশ্যা। ওরা অন্ধ না হয়েও অন্ধ, বোধ থেকেও নির্বোধ। ওরা ব্যস্ত ফেসবুকিয় শো-অফে। দেশপ্রেমের একটা অদ্ধূত সুবিধাবাদী সংগা ওরা নির্ধারণ করে নিয়েছে। যে দেশপ্রেমের প্রদর্শনে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে না। ওরা ক্রিকেটকে বেছে নিয়েছে নিরাপদ দেশপ্রেম প্রদর্শনের হাঁতিয়ার হিসেবে। পতাকায় নিজের প্রোফাইল পিকচার রাঙানোই ওদের কাছে দেশপ্রেম। মাশরাফিকে নিয়ে অযথা হইচই হচ্ছে ওদের দেশপ্রেম।




এই প্রজন্ম ভুলেও কোনদিন প্রশ্ন তুলবে না বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বিভাগে গবেষণায় বরাদ্ধ নেই কেন? শিক্ষানীতি সংস্কারে পদক্ষেপ নাই কেন, প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হচ্ছে না কেন, কেন ভাঙা রাস্তার সংস্কার চলে বছর জুড়ে। ওরা কখনো জানতে চায় না, কেন ধর্ষণের শিকার এক কিশোরির ইজ্জ্বতের মূল্য একটি গাভী আমার দেশে, কেন? এবেলা ওদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। যাবে না এজন্য যে, দেশেপ্রেমের এমন প্রদর্শনে ঘাড়ে বারি পড়ার আশংকা থাকে যে। দেশপ্রেমের এমন প্রদর্শনে মাশুল গুণা লাগতে পারে বলে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩১

চাঁদগাজী বলেছেন:


১ম ছবিতে ৩ জনের মাঝে কি আপনি আছেন?

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৪৫

সরোজ মেহেদী বলেছেন: এটা কার্টুন। আপনারা যানা জ্ঞানী, গুণী, দেশপ্রেমিক তাদের কোন প্রতীকী চিত্র হতে পারে।

২| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২৭

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আফগানিকে বলবেন, আগে ১৪৪০০০ বর্গমাইলে ১৭ কোটি মানুষ ওয়ালা কোন দেশের চলার উদাহরণ দেখাতে...যেসব সমস্যা আছে সেগুলো দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক সমস্যা। এর মাঝেই এগিয়ে যেতে হচ্ছে, হবে...

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৪৬

সরোজ মেহেদী বলেছেন: চলতেছেন না থেমে আছেন তা আগে শিওর হয়ে নেন। তারও আগে আফগান বন্ধুর প্রশ্নটা আরও একবার পড়তে পারেন।

৩| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:১৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: লজ্জিত বা অনুতপ্ত হওয়ার কিছু নেই। সাধ্যমতো চালিয়ে যেতে হবে।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৪৭

সরোজ মেহেদী বলেছেন: এটা একজন মানুষ হিসেবে আমার বোধের জায়গা। চেষ্টা আছে বলেই এর প্রতিক্রিয়া আছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.