নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজ্জাদ হোসেন

সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ

জানতে ও জানাতে আমার খুব ভাল লাগে।

সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস ও কিছু আক্ষেপ

১০ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৩৪

আজ ১০ নভেম্বর। দিনটিকে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস বা International Accounting Day or Day for Accountant বলা হয়। বাংলাদেশে দিবসটাকে তেমন ঘটা করে পালন করা হইই না তা নয় কেবল, এটা সম্পর্কে হিসাববিজ্ঞানের সাথে জড়িত অধিকাংশই জানে না।



একটা প্রতিষ্ঠানে হিসাব বিভাগের প্রয়োজনীয়তা যে কি সেটা অনেকেই অনুধাবন করেই না। পেশাগত দিক থেকে আমি একজন হিসাববিদ, নিরীক্ষক। নিরীক্ষকতার সুবাদে এটা দেখেছি যে, বাংলাদেশের ৯০% এরও বেশি প্রতিষ্ঠান মনেই করে না যে তাদের হিসাববিদ বা হিসাব বিভাগ নামক একটা বিভাগ বা ডিপার্টমেন্টের আদৌ দরকার। তারা মনে করে সেলসের লোকেরাই টুকে লিখে রাখলেই হল, আর ব্যাংকে টাকা থাকলেই বোধহয় প্রতিষ্ঠান লাভে আছে।
এবার আসুন, এত "বড়" একটা অপবাদের কারণ কি?
- আমাদের দেশে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগের লোক বল ৪~৬ এর মধ্যে। এমনকি শুধু একজনই সব সামলায় এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।



আর হিসাবের অফিসিয়াল অর্থে দরকার পড়ে রিটার্ন দেবার সময়, যেমন- অডিট রিপোর্ট। এই অডিটেড হিসাব বা একাউন্টস কোম্পানিরা তাদের মন মতন হিসাব করে সাইন করে নিতে পারে তাদের ক্ষমতার জোড়ে। আর টাকার জোড়ে ট্যাক্স অফিস পার হয়ে যায়। কয়েক লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার অনিয়ম, কয়েক কোটি টাকার ট্যাক্স – এসব ম্যানেজ করে ফেলে। ফলে দক্ষ হিসাববিদের কোন দরকারই পড়ে না। এমনকি হিসাব বিভাগ রাখারও প্রয়োজন পড়ে না।
এসব অনিয়ম চলছেই যার প্রতিরোধে কেউ কোন কথা বলে না। একজন লোক দশজনের কাজ করে পেটের দায়ে, আর বেতন পায় অর্ধেক লোকের চেয়েও কম। ফলে হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মানসিক রোগ, অবসাদ, হতাশা - এসব নিয়ত সঙ্গী হিসাব বিভাগে কাজ করা লোকের। অফিসে অতিরিক্ত সময় থাকা, বসের অকারণ ঝাড়ি - এসব মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু এই লোকগুলা কোন সেলস বা আয়ের সাথে জড়িত না প্রতিষ্ঠানে, তাই প্রতিষ্ঠানও এদের বোঝা হিসেবেই দেখে।

আসুন একটা তথ্য দেখিঃ
আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে লোকেরা ৮০০~১২০০ টাকা বেতনে চাকরিতে যোগদিত। সে সময় একজন চার্টার্ড একাউন্টেন্স এর বেতন শুরু হত ১ লাখ ~ দেড় লাখে। আজকে ২০১৭ তে, সেটা শুরু হয় ঠিক সেই একই বেতনে বা আরও কমেছে। তথাপি, সাধারণেরা শুরুতে ২০,০০০~৮৫,০০০ পর্যন্ত পায় কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই। অর্থাৎ, ২৫~৭১ গুণ হয়েছে বেতন। হবার কথা একজন চার্টার্ড একাউন্টেন্স এর বেতন শুরু হত ২৫ লাখ ~ ১০৭ লাখ ! সেখানে কোন উন্নতিই হয়নি।


কারণটা খুব সাধারণ, হিসাববিদের দরকারটাই যে কি সেটা তারা কখন নিজেরাও বোঝে না, কাউকে বোঝাতেও পারে না। যারা চার্টার্ড একাউন্ট, তাদের মধ্যে "হীনমন্যতা" গুণটা অনেক প্রকট। এর প্রমাণ হল আজ অবধি সেই ১৯৭২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত চার্টার্ড একাউন্টে এর সংখ্যা ২,০০০ ও ছাড়ায়নি। যেটা হওয়া দরকার ছিল অন্তত ২লাখেরও বেশি!
এমনটা অনেক চার্টার্ড একাউন্টে বিশ্বাস করে যে, সংখ্যা বাড়লে তাদের রুটির ভাগ বাড়বে, আর রুটির পরিমাণ কমবে। তারা এটা ভুলে যায় যে, রিযিক আল্লাহ বা ভগবান বা বিধাতার থেকেই আসে। সংখ্যা বাড়া বা কমার সাথে সেটার সম্পর্ক নেই। বরং বেশি হলেই ভাল।
যেমনঃ আপনি বাড়ির জন্য কিছু কাটলারি কিনতে চান। আপনি কি সেখানে যাবেন যেখানে মাত্র ২/১টা দোকান আছে, নাকি ১০~১২টা তারও বেশি দোকান আছে? অবশ্যই বেশিটাই যাবেন; কারণ সেখানে সংগ্রহ ভাল হবে আর আপনার প্রতারিত হবার সম্ভাবনাও কম।
যেমন ACCA এর সদস্য বেশি, ICAI এরও সদস্য বেশি। তাদের মানও ভাল, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
দক্ষরা অপেকৃত কম দক্ষদের তাদের সমকক্ষ করতে চায় না বলেই এই হিসাব বিজ্ঞান পেশার তেমন কোন দাম নেই। লোকে নাক সিঁটকায়। বলে যে, কি সব কাজ আর তোমাদের? ঐ কয়টা যোগ বিয়োগই ত, নাকি?
যারা এমনটা মনে করেন, তাদের বলছি, আসুন, নিজে যোগ বিয়োগ করে দেখান। ২০০% গ্যারান্টি পারবেনই না। হিসাব বিদদের কাজ শুধু ঐ যোগ বিয়োগ না, আরও অনেক কিছু আছে জড়িয়ে। যদি তাইই হত, বিশাল বিশাল সফটওয়্যারেই কাজ হত, কোন লোকই লাগত না। বরং, বাস্তবে দেখা যায়, তারাই দক্ষ ও সংখ্যায় বেশি হিসাব বিভাগে লোক রাখে যাদের বিশাল বিশাল সফটওয়্যার আছে হিসাব কাজের জন্য।

কথায় আছে, ১ দিন খেতে চাও, নিজে রান্না করে খাও, আর প্রতিদিন খেতে চাইলে অন্যদের রান্না করে খাওয়াও। নিজে উন্নতি করতে চাইলে, বাকীদেরও উন্নতি দরকার। নইলে যখন সবাইই নিতে চাইবে, কেউ দিতে চাইবে না, তখন কেউইই কিছুই পাবে না। আর সবাইই দিতে চাইলে জোর করেই বাকীরা দিয়ে যাবে না চাইলেও। বলুনঃ কোনটা ভাল?

পরিশেষে বলতে চাই, হিসাব বিজ্ঞান দিবসে যেন সবাই আমাদের কষ্ট, ত্যাগ, উৎসর্গ বুঝতে পারে।





লেখকঃ
সাজ্জাদ হোসেন, আইটিপি, সিএসসিএ
Sazzad Hossain, ITP, CSCA™
লেখক একজন পেশাগত হিসাব বিজ্ঞানী ও নিরীক্ষক
সময়ঃ রাত, ১১ঃ২০
১০, নভেম্বর, ২০১৭







মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৭

সাগর শরীফ বলেছেন: ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য অনেক গুরূত্বপূর্ণ ছিল লেখাটি । একজন হিসাববিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে অনেক কিছু জানার সুযোগ হল । অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৬

সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ বলেছেন: ধন্যবাদ। আরও কিছু জানার ও জানানোর থাকলে অবশ্যই বলবেন।

২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টি ভালো লেগেছে।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৬

সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.