নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কখনো নিজের নাম লুকোই না। আকাইমা শব্দ দিয়ে বানানো ছন্ম নাম আমার পছন্দ নয়। মা-বাবা\'র দেয়া নাম দিয়েই প্রোফাইল খুলেছি।

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন

আমি কেউ না।একদা পথ শিশু ছিলাম। বড় হয়ে এখন পথ মানব হয়েছি। বাবা এক দিন স্বপ্ন দেখানোর সুরে বলেছিলেনঃ দেখিস, এক দিন আমাদেরও....! আমার দেখা হয়নি কিছুই । এখনো অপেক্ষায় আছি কিছু একটা হবো, কিছু একটা দেখবো।

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কানাইয়ের খেয়া/গোদারা *************

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

আমার অনেক বাল্যকালে কানাই ছিলেন দোহারের বিশেষ করে জয়পাড়া, চর লটাখোলা, পূর্বচর, রামনাথপুর, রাধানগর, বিলাসপুর, হরিচন্ডী ও এর আশেপাশের সব এলাকার মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি। আবাল –বৃদ্ধ-বণিতা এমন কেউ ছিল না যে তাকে এক নামে চিনতো না। কেননা, তিনি সবাইকে নদী পার করতেন। নদীমাতৃক দোহার উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের জন্য জয়পাড়া সদরে তথা দেবীনগরের হাটে আসা-যাওয়াটা সেই আমলে খুবই কঠিন ছিল। এই অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ছিল জয়পাড়া ও দেবীনগরের হাট। সেই সময়ে এখনকার মতো এতো বেশী রাস্তা-ঘাট ছিল না। ছিল না সেতুর কারবার। কোথাও বাঁশের সাকো ছিল। ফলে মানুষ খেয়া নৌকার উপর বেশী নির্ভরশীল ছিল।

বিশেষ করে ভরা বর্ষার মৌসুমে যখন নদী-খাল-বিল পানিতে কানায় কানায় ভরে যেত তখন নদীর এপার থেকে ওপার যেতে কানাইয়ের সেবা নিতে হতো বিরাট সংখ্যক মানুষকে। কানাইয়ের খেয়া পার হয়ে মানুষের প্রতিদিনের জীবন যেন পূর্ণতা পেত।

সেই আমলে দোহারে আনাচে কানাচে এখনকার মতো বাজারের ছড়াছড়ি ছিল না। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে হাট বসতো। অন্যান্য দিনে বসতো বাজার । ফলে সপ্তাহের হাটটি ছিল সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বেশীর ভাগ মানুষই সাপ্তাহিক বাজারের বেশীর ভাগ মালামাল কিনতেন জয়পাড়া দেবীনগর হাট থেকে। কৃষকের ক্ষেতে উৎপাদিত পণ্যসমূহ বিক্রি হতো এই হাটে। এখান থেকে পাইকাররা এসে মালপত্র কিনে দূরের বড় বড় গঞ্জে নিয়ে যেত।

সেই সময় বড় বড় হাট ও বাজারের বার ও তারিখ পর্যন্ত মানুষের মুখস্ত থাকতো। যেমন- বিষ্যুদবার জয়পাড়া দেবীনগরের হাট, শুক্রবার মেঘুলার হাট, সোমবার – কোমরগঞ্জের হাট, বুধবার বান্দুরার হাট ইত্যাদি। এই সব হাটে আশেপাশের উপজেলার মানুষজন বিপুল সংখ্যায় আসতেন তাদের পণ্যদ্রব্য কেনা-বেচা করতে।

এই সময় কানাই এর খেয়ায় বিপুল চাপ পড়তো। খেয়ায় উঠার জন্য নদীর উভয়পারে অনেক মানুষ লাইন ধরে অপেক্ষা করতো। এক পর্যায়ে কানাই বাবু একটা বুদ্ধি করলেন। নৌকা চালানোর কঠিন কাজকে সহজ করার জন্য নৌকার দুই মাথায় দড়ি বাঁধলেন । এপর নৌকায় উঠার পর উৎসাহীরা টেনে নিয়ে নৌকা অপর পারে যেত।


কানাই বাবুর সব চেয়ে বড় সুবিধা ছিল তিনি হাজারে হাজারে মানুষ পার করতেন । কিন্তু কেউই তাকে নগদ সেলামী দিত না। তিনি বছরে একবার মাত্র দক্ষিণা নিতেন। তাও আবার টাকা নিতেন না। বেশীর ভাগই নগট টাকা দিত না। ব্যতিক্রম থাকতে পারে।

সেই আমলে যখন কৃষকের ঘরে নতুন ধান আসতো তখন কানাই বাবু তার নৌকা নিয়ে বাড়ি যেতেন দক্ষিণা নেবার জন্য। নৌকা নিয়ে বাড়ি বাড়ি যেতেন। এক সময় পাকা সোনার ধানেতে ভরে উঠতো তার সোনার তরী।


কানাই এর সময় ও তার পরবর্তীতে অনেক খেয়া ও তাদের সেবা দেখেছি। টাকা না দিলে বকা ঝকা করতে দেখেছি অনেক মাঝিকে। অথচ কানাই গণহারে পার করতেন। কোন হিসাব রাখতেন না কে পার হলো আর কে পার হলো না।

আজ অনেক বছর পর কানাইয়ের খেয়া/গোদারার কথা খুব মনে পরছে। কানাইয়ের মতো উদার মানুষ এই আমলে থাকলেও খুব বেশী নেই্। এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৩

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: ভাল লেখেছে ভালই লাগল

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৮

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:



গ্রামের মানুষ ।
আজন্ম গ্রামে থেকেছি ।
আবারো গ্রামেই ফিরে যাচ্ছি।

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১১

সোনাগাজী বলেছেন:



আপনি এখন কি এই এলাকায় থাকেন?

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:



জ্বি আমি জন্ম থেকে এই এলাকায় থাকি।
এই এলাকার মাটি, পানি,বাতাস সবই আমার খুব পরিচিত।

৩| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: আমি শুনেছি মাঝিদের টাকা দেওয়া হতো না। চাল ডাল দেওয়া হতো। সেই চাল ডাল দিয়ে তার মাস পেরিয়ে যেতো।
নাপিতরা বাসায় এসে চুল কেটে দিয়ে যেত। তারা চাল ডাল নিতো না। তারা টাকা নিতো।

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:



এটা এলাকা ভেদে বিভিন্ন রকম হলেও হতে পারে ।
তবে মূল বিষয়টি হচ্ছে মানুষের হাতে নগদ টাকা থাকতো না।
আর বেশিরভাগ মানুষই ছিল মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল ।
তাই এই জাতীয় সার্ভিস দেওয়ার পরে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় ধান চাল ইত্যাদি জিনিস দিয়েই তাদের মূল্য পরিশোধ করার চেষ্টা করা হতো ।
নগদ থাকা খুব কম লোকই দিত।

৪| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

সোনাগাজী বলেছেন:



আপার আগের বাড়ীতে?

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:



পৈতৃক নিবাস ।
আমার নিজের তো কিছুই নাই।

৫| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
এখন সব নদীর ওপর ব্রিজ হয়ে যাওয়ায় খেলা পরাপার তেমন চোখে পড়েনা।

০৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:



আপনি সঠিক বলেছেন।
তারপরেও এখনো টুকটাক কোথাও কোথাও দেখা যায়।
তবে আগের মত আর আশা করা যায় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.