নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেখ বিল্লাল হোসেন

Shaikh Billal Hossain

গল্প কবিতা উপন্যাস লেখার চেষ্টা করছি। মন চাইলে কবি বা লেখক বলতে পারেন।

Shaikh Billal Hossain › বিস্তারিত পোস্টঃ

কামনা

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩১

কামনা রাতে ঘুমিয়েছিল কি না কে জানে। দিনের আলো ফুটতেই সে ঘরের বাহির হল।রোদে চুপসে যাওয়া শাপলার পাপড়ির ন্যায় তার মুখখানি মলিন কিন্তু এ মলিনতা তার মায়াবি মুখে নতুন এক আভা সৃষ্টি করেছে।হাত মুখ না ধুয়েই সে পশ্চিম দিকে হাটা আরম্ভ করল তার মা পিছন হতে এক নাগাড়ে ডাকল, অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে খান্ত হল কিন্তু কামনা সে দিকে ফিরল না। শরৎ এর শিশির পায়ে মাড়িয়ে সামনে এগিয়ে চলল । হেঁটে সে জমির মোল্লার বাড়ি পৌছে সোজা ঘরে প্রবেশ করল জমির মোল্লা ও তার পত্নীর হাতে পায়ে ধরে কামনার অশ্রু জলে তাদের পা ভিজিয়ে তাদের বাড়িতে শুধু ঝিয়ের মর্যাদা টুকু চাইল কিন্ত তাদের মন গলল না। তারা উত্তেজিত হল না কিন্তু শান্ত স্বরে যা বলল তা হয়ত কোন নারী মনই সইতে পারবে না। কামনা আর দেরি করল না তাদের কথা শেষ না হতেই সে উঠে হাঁটা আরম্ভ করল। ফিরবার পথে পুকুর পাড়ে কাদেরের সাথে দেখা হল, কাদের তার দিকে তাকালেও কামনা সে দিকে ফিরল না। ফিরলেই বা কি লাভ এ কদিনে তো তার হাতে পায়ে কম ধরে নাই চোখের জলে কাদেরের বুক কম ভিজাই নাই কিন্তু তাতে লাভ হইনি এজন্য কামনাকে আজ তাদের বাড়ি পর্যন্ত যেতে হল। কামনা বাড়ি পৌছালে তার মায়ের কন্ঠে স্বর এল ভৎসনা করতে লাগল তাকে কিন্তু তা যেন কামনার কানেই পৌছায় না। কামনা ঘরে যেয়ে ক্ষনিক বাদে বাইরে এসে উঠানে রাখা ইটের উপর একটা কাচের সিসি আছাড় মেরে ভাংলো, কামনার মা তাতে চমকে উঠে রান্নাঘর হতে এ দিকে ফিরলেও কিছু বলল না, রাগে রাগে চুলায় জ্বাল দিল। কামনা এক চালা ঘরের বারান্দার বাসের খুটিতে হেলান দিয়ে বসে রইল। উঠানে ঝলশানো রোদ, সে রোদ ভেদ করে ও বাড়ির সামনের মাঠের জলে ভাসা ধানক্ষেত পানে স্থির নয়নে তাকিয়ে রইল। আস্তে আস্তে তার কানের কাছে লক্ষ ভ্রঁমর গুন্জন করে কি যেন বলে, চোখে জল জমে দৃষ্টি ক্ষিণ হয়ে আসে তবুও সে মুর্তির ন্যায় বসে থাকে। সকালের সূর্য মধ্য গঁগনে উঠলে বাড়ির অন্য সকলের পেটে পান্তা পানি পড়লেও কামনা একইরূপ বসে রয়।কামনার মা রেগে আগুন হয়ে কামনার চুলের ঝুঁটি ধরে হেঁচড়া টান মেরে কিছু বলতে যেয়ে কামনার মুখ পানে তাকিয়ে থমকে গেল। কামনার চোখ ফ্যাকাসে স্থির, তার গোলাপি ঠোট রক্তশুন্য সাদা তাতে কি যেন মাখানো রোদে ঝলসানো শিঁশিরের ন্যায় চিকচিক করছে, মুখমন্ডল নিলাভ। কামনার মা শুন্য কন্ঠে জিঙ্গেস করল কি হইছে রে তোর? কামনা ক্ষিন কন্ঠে বলল“ মা তুই ছাড়া আমাকে কেও একটু আশ্রয় দিল না, আর আমি যে পাপ করেছি এখন তুই যদি আমাকে আশ্রয় দিস তাহলে যে, তুই তোর আশ্রয় টুকুও হারাবি। তাই তো আমি বিষ খাইছি।” কামনার কথা শেষ না হতেই তার মা আর্তনাদ করে উঠল, তাতে আশেপাশের কয়েকজন জড়ো হল কিন্তু কেও বিশ্বাস করল না যে সে বিষ খেয়েছে, কারন তা হলে তো বমি হবে মুখ ফেনা বের হবে। তাছাড়া কামনার মায়ের আর্তনাদ শুনেও সকলে অবাক হল, যে মেয়েকে সে সর্বক্ষণ অভিশাপ দিয়ে ভশ্য করে, মৃত্যু কামনা করে সে বিষ খেলেইবা কেন এমন আর্তনাদ করবে। কিন্তু কামনার মায়ের বুকের যাতনা সে আর তার মত কেও যদি এক মৃত স্বামীর সন্তান অন্য স্বামীর ঘরে লালন করে সেই বুজবে অন্য কারও হয়ত এ যাতনা বুঝার সাধ্য নেই। তবুও দু একজন কামনার মুখে কাচা ডিম তেঁতুল ঢালল। কোন কিছুতেই কোন কাজ হল না সূর্য পশ্চিমে হেলতেই কামনাও নিস্তেজ হতে অারম্ভ করল। অবশেষে কামনার মা হাতে পায়ে ধরে দুজন কে রাজি করিয়ে কামনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলল। নৌকা করে সরু খালটা বেয়ে কাঁশবন ধানক্ষেত পেরিয়ে ডাক্তারের কাছে তারা ঠিকই পৌছাল, কিন্তু কামনা জীবিত থাকতে নয়। ডাক্তারের কাছে যাবার কামনা তার মার কাছে আব্দার করে বলেছিল তাকে যেন মসজিদ এর গায়ে কবর দেয়া হয়। তা তো হলই না, তার জানাযা পর্যন্ত কোন মোল্লা মুন্সি করল না। অবশেষে মাঝ রাতে দু চার জন মিলে মড়া পূতার মত করে তাকে জঙ্গলে মাটি চাপা দিয়ে রেখে আসল। আর এর সাথে অনন্ত গহিনে তলিয়ে গেল কিশোরী কামনার জীবনের সকল কামনা বাসনা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.